September 9, 2024, 5:50 pm
পঞ্চগড় প্রতিনিধি:
দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন হস্তান্তর অযোগ্য ‘মোহাজের সম্পত্তি’ কেনা-বেচার রেওয়াজ বেশ পুরনো। তবে রীতিমত ব্যক্তি মালিকানা জমির ন্যায় পঞ্চগড়ে রেজিষ্ট্রি হচ্ছে এসব জমি। তাও আবার স্বয়ং সাব-রেজিষ্ট্রারের মাধ্যমে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার টুনিরহাট সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক আব্দুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে মোহাজের সম্পত্তি রেজিষ্ট্রির দলিল প্রস্তুতের এমন গুরুতর অভিযোগ ওঠেছে। ভুয়া খতিয়ান দেখিয়ে সব প্রতিবন্ধকতা ডিঙ্গিয়ে এসব জমি রেজিষ্ট্রিতে তার দক্ষতাও বেশ। এসবে যোগসাজশ রয়েছে সংশ্লিষ্ট রেজিষ্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারিদেরও।
গত বছরের ২২ জুন এই সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে সম্পন্ন হওয়া একটি দলিলের নম্বর ৩৮৩/২২। এই দলিলে উল্লেখ করা এবং সংযুক্ত তথ্যের সবই যেন প্রতারণা। এই দলিলমুলে হস্তান্তর অযোগ্য সরকারি জমি রেজিষ্ট্রি করেছেন তৎকালিন সাব-রেজিষ্ট্রার। দলিলে দেখানো হয়েছে জাল খতিয়ান। এ কাজে ভুক্তভোগিদের ভুলভাল বুঝিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ দলিল লেখক আব্দুল কুদ্দুসের বিরুদ্ধে। এই দলিল লেখকের বিরুদ্ধে এ ঘটনার বাইরেও ভূমিসংক্রান্ত নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। একইভাবে ইতোপূর্বেও অনিয়ম করে বিভিন্ন দলিল করেছেন তিনি। তবে অফিসে কর্মরত কেরানী থেকে সাব-রেজিষ্ট্রার সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে এসব দলিল হচ্ছে- এ নিয়ে প্রশ্ন জনমনে।
জানা গেছে, দলিল লেখক আব্দুল কুদ্দুসের প্রস্তুত করা দলিলটি সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর মৌজার ৮২২, ৮২১ এবং ৮২৪ নম্বর দাগের। এই তিনটি দাগই ৩০৮ নম্বর এসএ খতিয়ানভুক্ত। যা দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন হস্তান্তর অযোগ্য সম্পত্তি। যার বাস্তবতাও মিলেছে ভূমি অফিসের তথ্যে। অথচ আব্দুল কুদ্দুস তার প্রস্তুত করা দলিলে ৮২২ নং দাগের খতিয়ান দেখিয়েছে এসএ ১৮৮ আর ৮২১ নং দাগের খতিয়ান দেখিয়েছে এসএ ১৯৮ এবং ৮২৪ নং দাগের খতিয়ান দেখিয়েছে এসএ ১০৮।
ভূমি অফিসের তথ্যমতে, এসএ ১৮৮ নং খতিয়ানে মোট ৫টি দাগ রয়েছে। সেগুলো হলো- ১০৮, ১২৪, ১০১ এবং ১০২। এসএ ১৯৮ খতিয়ানে একটি দাগ হলো- ১০৭ এবং এসএ ১০৮ খতিয়ানের একটি দাগ হলো- ৩৫৬।
স্থানীয়রা জানান, মোহাম্মদপুর মৌজায় বিপুল পরিমাণ হস্তান্তর অযোগ্য মোহাজের সম্পত্তি রয়েছে। যার বেশিরভাগই দলিল লেখক আব্দুল কুদ্দুসের নখদর্পনে। তিনি এসব জমির ভোগদখলে থাকা ব্যক্তিদের ভুলভাল বুঝিয়ে কয়েকবছর ধরেই অবৈধভাবে রেজিষ্ট্রি করাচ্ছেন। বিনিময়ে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
হাড়িভাসা ইউনিয়নের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা অমর চক্রবর্তী বলেন, মোহাজের সম্পত্তি দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন। এসএ ৩০৮ খতিয়ানভুক্ত এই জমি রেজিষ্ট্রির প্রশ্নই আসেনা। কেউ করলে সেটা অবৈধভাবে করছে, যা মূল্যহীন এবং মারাত্মক অন্যায়।
একই কথা বলেন টুনিরহাট দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহামদ আলী। খতিয়ান জাল করে সরকারি জমি রেজিষ্ট্রি মারাত্মক অপরাধ মনে করেন তিনি।
এদিকে, টুনিরহাট সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে দীর্ঘদিন ধরেই হ-য-ব-র-ল অবস্থা। নৈশপ্রহরী দিয়ে চলছে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। হাতে এসেছে উমেদার পদে চাকরি করা নৈশপ্রহরী মোঃ দবির উদ্দীনের একটি ভিডিও ক্লিপ। রাতের চাকরি হলেও তাকে দেখা যায় অফিস চলাকালীন চেয়ার টেবিল নিয়ে অফিসার বেশে বসে থাকতে। দলিল রেজিষ্ট্রির পূর্বাহ্নে দলিল লেখকরা দলিলের ভুল সংশোধনের জন্য দ্বারস্থ হন তার। তিনি সবকিছু ঠিকঠাক মনে করলে দলিল যায় পরের ধাপে। তবে নৈশপ্রহরী হয়ে এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজে তিনি কেন- এমন প্রশ্নের সদোত্তর মিলেনি।
অভিযুক্ত দলিল লেখক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, সরকারি সম্পত্তি রেজিষ্ট্রির দলিল আমরা করিনা। ওই দলিলটি হেবা দলিল। বাবা তার সন্তানদের সম্পত্তি দান করেছে, এজন্য দলিলটি করে দিয়েছি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে গেলে চটে যান সাব-রেজিষ্ট্রার নিশাদুর রহমান। বলেন, একজন সাব-রেজিষ্ট্রার যেটা সঠিক মনে করবে সেটাই সঠিক। কারো কোন বিষয়ে অভিযোগ থাকলে সে আদালতে যাক।