January 15, 2025, 10:55 am
কে এম শহীদুল সুনামগঞ্জ;
সুনামগঞ্জের ধোপাজান চলতি নদীতে নিলামের নামে ধংশ করা হচ্ছে পরিবেশ। নদীর পশ্চিম পাড়ে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের ডলুরায় গত ১১ জানুয়ারী ২০২৩ ইং টাস্কফোর্স কমিটি কর্তৃক উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে অবৈধভাবে উত্তোলিত ১ লক্ষ ৫৬ হাজার ঘনফুট পাথর ৮৩,৮৪,৯৮৪ টাকায় বিক্রয় করা হয়। উন্মুক্ত নিলামে অংশ গ্রহণকারীদের ২৫ জানুয়ারী ২০২৩ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ইং তারিখে মধ্যে নিলামকৃত পাথর জলপথে ও স্থলপথে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে কাগজ হস্তান্তর করেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদি উর রহীম জাদিদ। গত ২৫ ফেব্রুয়ারী থেকে নিলামকৃত পাথর জলপথে ও স্থলপথে স্থানান্তর শুরু হয়। যেখানে শর্ত থাকে নিলামকৃত পাথর সরিয়ে নেওয়ার জন্য নিলাম দাতাদের ক্ষমতাপত্র দেওয়া হয়।যে ক্ষমতাপত্রে কোথাও উল্লেখ নেই নদী থেকে পাথর উত্তোলণ করা যাবে। সেখানে শুধু নিদিষ্ট মেয়াদ দেওয়া হয়েছে ঐ মেয়াদের মধ্যে নিলামকৃত পাথর সরিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। যা সরিয়ে নিতে এক সপ্তাহ লাগতে পারে আবার এক মাসও লাগতে পারে। সরেজমিনে দেখা যায় নদীতে দুই হাজার ঘনফুট ষ্টিল নৌকা দিয়ে পাথর বাহির হয় অথচ যার হিসাব মাত্র ২শতাধীক ধরা হয় বাকি পাথরের হিসাব নিচ্ছেন না কর্তৃপক্ষের কেউ? এভাবেই প্রতিনিয়ত প্রশাসনের চোখে ধোঁকা দিয়ে নিলামের নামে ধোপাজান নদীর তলদেশ থেকে রাতের আঁধারে ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলণ করে নিলামকৃত মাল বলে সাধারণ মানুষকে বুঝিয়ে ২৪ঘন্টা চলে ছোট বড় শত শত ষ্টিল নৌকা? প্রতিদিন পঞ্চাশ হাজার ঘনফুট পাথর বাহির হলে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার নিলামের পাথর বাহির হতে সময় লাগে মাত্র তিন দিন। আর স্থলপথে প্রতিদিন শতশত অর্ধ শতাধিক ঘনফুট ক্ষমতা বহনকারী ট্রাক্টর চলে যার হিসাব সঠিকভাবে কর্মকর্তার নিকট দেওয়া হয় না বলে জানা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায় বড় বড় নৌকা লোড করে নিয়ে যাচ্ছে নৌপথে। স্থলপথে নিয়ে যাচ্ছে অর্ধশতাধিক ট্রাক দিয়ে। একাধিক নৌকা ও ট্রাকের চালান এবং কাগজ খতিয়ে দেখলে দেখা যায় কোন চালানে মালের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়না। কিছু কিছু জায়গায় দেখা যায় নদীর তীরে বসতবাড়ীর পাশে বালি সরিয়ে গভীর গর্তকরে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে । আর রাতের বেলা দেখা যায় ভিন্ন চিত্র, রাত একটু গভীর হলেই চলে ড্রেজার মেশিনের তান্ডব। ড্রেজার মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করে নৌকায় লোড করে পাথরের পরিমান উল্লেখ না করা কাগজ দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে লাখ লাখ টাকার রমরমা নিলাম ব্যবসা। দেখা যায় নদীর পাড় ভেঙ্গে ছোট ছোট বারকি নৌকা দিয়ে লোড বিক্রয় করে পঙ্গপাল নামের স্টিলের নৌকায়। এই পঙ্গপালের পাথর একইভাবে পরিমান উল্লেখ ছাড়া কাগজ নিয়ে ধোপাজান নদী থেকে বাহির হচ্ছে।
অপরদিকে তাকালে দেখা যায়,দিনে ও রাতে শতাধিক ট্রাক পাথর ভর্তি করে চালানে মালের পরিমাণ উল্লেখ না করে নিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। কত তারিখে কয়টি ট্রাক ও কি পরিমান পাথর নদী থেকে নৌকা যুগে এই নিলামের কাগজ দেখিয়ে বাহিরে নিয়ে যাচ্ছে এগুলো দেখার কি কোন কতৃপক্ষ নেই? নাকি কর্তৃপক্ষের ইশারায় সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিলামের নামে তারা নিজেদের জড়িয়ে নিয়েছেন বালু ও পাথর ব্যবসায়?
অনুসন্ধানে জানা যায় সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নিলামের পর শুরু হয় বিশ্বম্ভপুর উপজেলার। এক মাস সদর আরেক মাস বিশ্বম্ভপুর এভাবেই চলছে ইজারা বিহীন ধোপাজান নদীর রঙ্গ লিলা। এক দিকে সরকার রাজস্ব পাচ্ছে ১লক্ষ টাকা আর অসাধু সিন্ডিকেট পাচ্ছে পাঁচ লক্ষ টাকা? এসমস্ত নাটকিয় নিলামের খেলা না করে ধোপাজান নদী ইজারা দিলে এক দিকে সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব যেমন পেত অন্য দিকে দিন মজুর শ্রমিকদের জীবন জীবিকার চালানোর পথ হত। অপরদিকে পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা অফুরন্ত বালুর চর থেকেই পাথর এবং বালি তুলে সাধারণত ব্যবসায়ীদের ও চলাচলের সুযোগ হত।কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেই উদ্যোগ না নিয়ে রহস্যময় কারনে কেন যে নিলাম নিলাম খেলায় মেতেছেন সেই পশ্নের উত্তর জানা নেই বা জানতে চাইলেও কেউ মুখ খুলতে রাজি নন। আর এসব বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়ে থাকলেও ডিউটিরত সিপাহীরা তাদের ঘুমে রেখে সিন্ডিকেটের সাথে হাত মিলিয়ে ১লক্ষ পাথর বাহির হলে হিসাব দেয় মাত্র পাচ হাজার পাথর বাহির হয়েছে? এমন অভিযোগ রয়েছে ধোপাজান কালের মুখে ডিউটিতে থাকা তিন সিপাহির উপর যারা পুলিশ কর্মকর্তাকে ঘুমে রেখে সিন্ডিকেটর সাথে হাত মিলিয়ে কলঙ্ককৃত করে চলেছে পুলিশ প্রশাসনকে। ওরা কারা? যা আগামী পর্বে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হবে। এবং বিশ্বম্ভপুরের দুই সিপাহি দালাল যারা বিশ্বম্ভপুর উপজেলার কর্মকর্তাদের সাথে পাথর নিয়ে লুকোচুরি খেলা করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিলামের নামে ধোপাজান নদীর তলদেশ থেকে রাতের অন্ধকারে কুয়াশার আড়ালে ড্রেজার মেশিনের তান্ডব লিলা শুরু করেছেন তাদের প্রতিবেদন। এমনটির গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে সাংবাদিক সমাজে। কবে শেষ হবে এসমস্ত কার্যকলাপ? নাকি কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দিনের পর দিন নিলামের নামে ধংশ হতে থাকবে ধোপাজান নদীর পরিবেশ ও ভারসাম্য? ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সঠিক তদারকির মাধ্যমে ধোপাজান নদীর পরিবেশ রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এমনটি দাবী নদীর পারে থাকা সাধারণ মানুষের।