সুজানগরে সরিষা চাষে আশার আলো দেখছেন চাষীরা

এম এ আলিম রিপন সুজানগর(পাবনা)ঃ ভোজ্য তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এবং আমদানী নির্ভর ভোজ্য তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে কৃষি বিভাগের সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও প্রণোদনায় সুজানগর উপজেলার কৃষকেরা তাদের জমিতে সরিষা চাষ করে আশার আলো দেখছেন। উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী, গত বছর উপজেলায় ৫১০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল,এবার তা বৃদ্ধি পেয়ে ১১৪০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে। শনিবার(২১ জানুয়ারী) উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সরিষার হলুদ ফুলের সমাহার। যেন দেখে মনে হচ্ছে মাঠে মাঠে হলুদ-সবুজের আলপনা। সেই সাথে সরিষার ক্ষেতে বেড়েছে মৌমাছির আনাগোনা। এসব সরিষার ক্ষেতে ঝাঁকে ঝাঁকে মুখরিত মৌমাছির গুনগুন শব্দ। আমন ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে ওই জমিতেই সরিষা চাষ করেছেন কৃষকেরা। উপজেলার ভাঁয়না ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের কৃষক রফিক হোসেন হোসেন। তিনি সরকারি প্রণোদনায় সুজানগর উপজেলা কৃষি অফিস হতে সরিষা বীজ নিয়ে প্রায় ৩ বিঘা জমিতে বারি সরিষা-১৪ রোপণ করেছেন। বর্তমানে সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ দেখে তিনি আশার আলো দেখছেন। উপজেলার দুলাই ইউনিয়নের আন্ধারকোঠা গ্রামের কৃষক ইয়াকুব আলী প্রামাণিক বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সরিষার দামও বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ফলে বাড়তি লাভের পশাপাশি পরিবারে তেলের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবেন কৃষকেরা। তাই তিনি এবার গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। প্রতি বিঘাতে ৬/৭ মন সরিষার ফলন হতে পারে বলে তিনি আশাবাদী। ভবানীপুর গ্রামের কৃষক মোফাজ্জল হোসেন বলেন,সরিষা চাষাবাদের ফলে আমন ও বোরো ধানের মাঝে উপরি ফসল পেয়ে আমাদের লাভ হয়। পাশাপাশি নিজেদের তেলের চাহিদা পূরণ হয়। খৈল পাওয়া যায়। সরিষার গাছ জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। সরিষার শাক বিক্রি হয়। তবে সরিষা চাষাবাদে তেমন খরচ নেই বললেই চলে। পানি ,সেচ ও সার তেমন লাগে না । সরিষা ক্ষেত গরু-ছাগলেও খায় না। এ জন্য বাড়তি কোন চিন্তাও করতে হয় না। কৃষকেরা জানান, সরিষা চাষ বাড়ায় মধু সংগ্রহের পরিমাণ বেড়েছে, যাতে লাভবান হচ্ছে মধু ব্যবসায়ীরাও। সুজানগর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাফিউল ইসলাম জানান,সরিষা চাষে কৃষককে আগ্রহী করে তুলতে এবারে কৃষি প্রণোদনার আওতায় উপজেলার ২৬০০ জন কৃষক-কৃষাণীর প্রত্যেককে বারি-১৪ জাতের ১ কেজি করে সরিষা বীজ, ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি করে এমওপি সার প্রদান করা হয়েছে। কৃষি অফিস মাঠ পর্যায়ে কর্মীরা ফসলের সার্বক্ষণিক তদারকি করছে। আবাহাওয়া পরিস্থিতির বিপর্যয় না ঘটলে কৃষকেরা সরিষা চাষে ব্যাপক লাভবান হবেন বলে আশাকরি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাবনার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড.মোঃ সাইফুল আলম বলেন,সরকার পরিকল্পনা নিয়েছে,আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ভোজ্যতেলের আমদানি কমিয়ে আনবে। তেলের ক্ষেত্রে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার অংশ হিসেবেই সরিষার চাষ বাড়ানো হচ্ছে। বিদেশ থেকে যেন ভোজ্যতেল আমদানি করতে না হয়। সে কারণে কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের সার, বীজ প্রণোদনা হিসেবে দিয়ে উৎসাহিত করা হয়েছে। কৃষকরাও কম খরচে অধিক লাভের সরিষা চাষে উৎসাহিত হচ্ছে। এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, আমদানিকৃত ভোজ্যতেল স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকারক। সরিষার তেল স্বাস্থ্যসম্মত। আগে তো দেশের মানুষ সরিষার তেলই ব্যবহার করতো।

এম এ আলিম রিপন
সুজানগর(পাবনা)প্রতিনিধি।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *