March 18, 2025, 2:38 pm
মোঃ বাবুল হোসেন পঞ্চগড়;
ষাট দিন বয়সে বাবা-মাকে হারিয়ে এতিম হলো নবজাতক বাবু ও তার দুই বোন। এমনি এক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নে উত্তর সর্দারপাড়া গ্রামে। এতে মর্মাহত ও শোকাবহ অবস্থা বিরাজ করছে ওই এলাকায়। চারদিকে বিরাজ করছে শোকের ছায়া। শোকে কাতর পরিবার ও আত্মীয়স্বজন। মাত্র পাঁচ বছর দাম্পত্য জীবনে দুই কন্যা সন্তানের পর ঘর আলোকিত করে জন্ম নিয়েছিল এক পুত্র সন্তানের। বাবু নামে ডাকলেও নাম রাখা হয়নি ছেলের ।
বাবা-মায়ে’র স্বপ্ন ছিল আপাতত ডাক নাম হিসেবে ছেলেকে ‘বাবু’ নামে ডাকবেন এবং অল্প কয়েক দিনের মধ্যে টাকা-পয়সা জোগাড় করে ধূম-ধাম করে আকিকা করে ইসলামি শরিয়ত মতে একটি সুন্দর নাম রাখবেন। এজন্য প্রস্তুতিও ছিল পরিবারের সবার। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তাদের সেই ইচ্ছে আর পূরণ হলো না।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার লক্ষীপুর এলাকায় ট্রাক ও মোটর সাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হন তাদের পিতা। ঘাতক ট্রাক কেড়ে নেয় ওই নবজাতকের বাবা একরামুলের জীবন প্রদীপ। নিহত একরামুল (৩৫) উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের উত্তর সর্দারপাড়া গ্রামের নাসির উদ্দিনের ছেলে।
তিনি অলিম্পিক কোম্পানিতে পঞ্চগড় জেলা শাখায় মার্কেটিং অফিসার হিসেবে কাজ করতেন। ওইদিন নবজাতক বাবু’র বয়স হয়েছিল মাত্র ৪০ দিন। এ অবস্থায় ছেলের আকিকার দিন তারিখ ঠিক করার জন্য আলোচনা করতে যান শ্বশুর বাড়ি একই উপজেলা লক্ষীপুর গ্রামে। সেখান থেকে ফেরার পথেই সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যান তিনি।
এদিকে স্বামীর অবর্তমানে শোকে কাতর হয়ে দিন কাটতে থাকেন একরামুলের স্ত্রী, দুই কন্যা ও এক পুত্র এবং বৃদ্ধ বাবা-মায়ের। দুই কন্যা শিশু বড় মেয়ে নূরে জান্নাতের বয়স সাড়ে চার বছর এবং দ্বিতীয় মেয়ে উম্মে সুরাইয়া’র বয়স দেড় বছর। আর নবজাতক পুত্রের বয়স ৬০ মাত্র দিন। সড়ক দূর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যূ শোকে ভেঙ্গে পড়েন স্ত্রী লাবনী বেগম। শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই স্বামীর শেষ ইচ্ছে পুরণের জন্য পুত্রের আকিকা দেওয়ার মনস্থির করেন লাবনী ও তার পরিবার। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস স্বামীর মৃত্যূর ১৮ দিনের মাথায় ঠান্ডাজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন লাবনী বেগম। প্রাথমিক চিকিৎসাও নেন তিনি। কিন্তু ৫ জানুয়ারী দুপুরে ৩ শিশু সন্তানকে এতিম করে পরকালে পাড়ি জমান লাবনী। এতে এতিম হয়ে যায় ৬০দিন বয়সের একমাত্র পুত্র সন্তান বাবু, বোন নূরে জান্নাত ও উম্মে সুরাইয়া। পিতামাতার মৃত্যুতে ৩ সন্তানের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। বর্তমানে ওই তিন শিশু পার্শ্ববর্তী লক্ষীপুর গ্রামে তার নানা সহিদুল ইসলামের বাড়িতে রয়েছে।