February 5, 2025, 3:48 am
হেলাল শেখঃ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করা হচ্ছে তেল, চিনি, ডিমসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য। অভিযান অব্যাহত থাকলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা কোনভাবেই দাম কমাচ্ছে না, প্রায় প্রতিটি এলাকায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত ২ মাস ধরে ডিম, তেলসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে, বর্তমানে গত ৩-৪দিন ধরে আবার চিনির দাম বাড়ানো হয়েছে, চিনি প্রতি কেজি ৯৫ টাকা থেকে ১২০ টাকা করা হয়েছে। জানা গেছে, গত (২০ আগস্ট ২০২২ইং) তারিখে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে কিন্তু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ডিমের দাম বৃদ্ধি করে একটি চক্র। গত ৭ আগস্ট ২০২২ইং প্রতিটি ডিমের ক্রয় মূল্য ৯টাকা ৪০ পয়সা ছিলো-২০ পয়সা লাভে বিক্রি করে তার মূল্য হয় ৯ টাকা ৬০ পয়সা করার কথা। ১৭ আগস্ট ২০২২ আবার প্রতিটি ডিমের মূল্য ৯ টাকা ১০ পয়সা থেকে বিক্রি মূল্য ১১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়, প্রতিটি ডিমের লাভ ২টাকা ৭০ পয়সা করে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার আশুলিয়ায় ডিমের ৩টি আড়তকে মোট ৪ লক্ষ ৫০ হাজার জরিমানাসহ ১টি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জনস্বার্থে সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেন জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর। ওইদিন শনিবার দুপুর ১২টার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইল বগাবাড়ি বাজার এলাকায় ডিমের আড়তে প্রথমে অভিযান পরিচালনা শুরু করে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর। এসময় কয়েকজন অসাধুডিম ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়, আটককৃতরা হলেন-আসিফ হোসেন এন্টারপ্রাইজ ডিমের আড়তের মালিক শাহ আলম হোসেন ও এসজে এগ্রো এর মালিক স্বপন ইসলাম, পরে তাদেরকে জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ডিমের বাজারে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বৃদ্ধি করেছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আশুলিয়ায় ডিমের আড়তে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এভাবে কারসাজির মাধ্যমে ডিমের দাম বৃদ্ধি করা ইত্যাদি অপরাধে আসিফের ডিমের আড়তকে ১ লক্ষ টাকা, এস জে এগ্রো ডিমের আড়তকে ১ লক্ষ টাকা এবং আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের নরসিংহপুরের সরকার মার্কেটের ফয়সাল এন্টারপ্রাইজকে ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করাসহ সর্বমোট ৩টি প্রতিষ্ঠান ডিমের আড়ৎকে মোট ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। দুইটি প্রতিষ্ঠানের মালিক জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তাদেরকে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয় এবং পরে জরিমানা আদায় করে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।
উল্লেখ্য গত ১৩ আগস্ট ২০২২ইং তারিখে কাজী ফার্মে উৎপাদিত সব ডিম প্রস্তাবিত দরের চেয়ে বেশি দর হাঁকিয়ে নিলামের মাধ্যমে সব ডিম ক্রয় করে অতি মুনাফা লাভের আশায় বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করে তারা। উক্ত প্রতিষ্ঠানে ডিম ক্রয়-বিক্রর কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি, এমনকি প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স ৩০ জুন ২০২২ইং তারিখে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। এ সকল অপরাধে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ফয়সাল এন্টারপ্রাইজের সকল প্রকার কার্যক্রম জনস্বার্থে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়, কিন্তু আইন অমান্য করে তারা পরের দিন থেকেই তাদের প্রতিষ্ঠান খোলা রাখেন।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয়ের নির্দেশনায় ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন পেট্রোল পাম্পে তদারতিমূলক অভিযান পরিচালনা করা হয় এর আগেও কিন্তু তারা এখনও নিয়ম ভেঙে তাদের পাম্পে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এ অভিযান পরিচালনা করেন ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল ও ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ মাগফুর রহমান এবং সহকারী পরিচালক মাহমুদা আক্তার।
উক্ত অভিযান পরিচালনাকালে রাজধানীর মতিঝিল থানাধীন করিম এন্ড সন্স ফিলিং স্টেশনের ২টি ডিসপেনসিং ইউনিট অকটেন পরিমাপক যন্ত্রে কারচুপির প্রমাণ পাওয়া যায় এবং ১টি ডিসপেনসিং ইউনিটে প্রতি ৫লিটার অকটেনে ৫৪০ মিলিলিটার ও অপরটিতে ৪৯০ মিলিলিটার অকটেন কম পাওয়া যায়। অকটেন ডিসপেনসিং ইউনিটে (অকটেন পরিমাপক যন্ত্রে) কারচুপি, ডিজেল বিক্রির উদ্দেশ্যে ওইদিন রাত ১২টার আগেই ফিলিং স্টেশন বন্ধ রাখা ইত্যাদি অপরাধে প্রতিষ্ঠানটিকে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ অনুযায়ী ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় বলে ভোক্তা-অধিদপ্তর কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার মন্ডল জানান। একই সাথে ডিসপেনসিং ইউনিট ২টি থেকে অকটেন বিক্রি জনস্বার্থে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। তবে স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার পূর্বক জরিমানা প্রমান করা এবং সকলের উপস্থিতিতে ডিসপেনসিং ইউনিট ২টি কারেকশন করাসহ ভবিষ্যতে এ ধরণের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবেন মর্মে অঙ্গীকার করেন।
উল্লেখ্য এর পূর্বে রমনা ফিলিং স্টেশনে তদারকি করে মেয়াদোত্তীর্ণ ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া গেলেও বিস্ফোরক ও ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। উল্লেখ্য ফিলিং স্টেশনটিতে ২৭ হাজার ৬শ’ ২৩ লিটার অকটেন বর্তমান মজুদ পাওয়া গেলেও বিনা নোটিশে গতকাল বিকেল ৬টা থেকে ফিলিং স্টেশনটি বন্ধ রাখার প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির প্রবেশ দ্বারে “ভিআইপি চলাচলে নিরাপত্তার সার্থে সাময়িকভাবে তেল বিক্রয় বন্ধ” লেখা টানানোর প্রমাণ পাওয়া যায়। সত্যি কোনো ভিআইপি চলাচল করছে কিনা এবং সরকারের কোনো সংস্থা কর্তৃক প্রতিষ্ঠাটিকে অনুরুপ অনুরোধ/নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে সেব্যাপারে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুযায়ী ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ নিশ্চিতকরণসহ স্থিতিশীল বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান মোঃ আব্দুল জব্বার মন্ডল গণমাধ্যমকে বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর কর্তৃক এ ধরণের অভিযান ও তদারকি অব্যাহত থাকবে। দেখা যাচ্ছে, প্রায় প্রতিটি এলাকায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তেল, চাল, চিনিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য বেশি দামে বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা, কোনো ভাবেই দাম কমানোর বালাই নেই। এতে সরকারের বদনাম হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীসহ সচেতন মহল জানায়।