November 12, 2024, 9:05 am
উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি:
নড়াইলের চাঁচুড়ী বিলে রূপসী বাংলার রূপের শাপলার রাজত্ব।
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাঁচুড়ী বিলে প্রাকৃতিকভাবে শাপলার অবারিত রঙিন রূপ যে কোনো বয়সী মানুষকে শুধু মুগ্ধই নয়, স্তম্ভিত করে দেবে। শত বছরের পুরনো চাঁচুড়ী বিলের ফুটন্ত শাপলা দেখতে হলে যেতে হবে সকালে কিংবা বিকালে।
সূর্যের স্নিগ্ধ আলো পড়া মাত্রই এক সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিণত হয় চাঁচুড়ী বিল। নৌকায় করে শাপলা বিল বেড়ানো, পানির কল কল ধ্বনি আর তাজা শাপলা ফুলের হাসি মনে ভিন্ন এক অনুভূতির যোগায়। আর নয়নাভিরাম দৃশ্যে চোখ তো জুড়াবেই। উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধি জানান, শাপলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি খাবার হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। ফলে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া শাপলা বিক্রি করে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
চাঁচুড়ী বিলটি বিশেষ করে বর্ষাকালে ‘শাপলা বিল’ নামেই বেশি পরিচিত হয়ে ওঠে। চারপাশে গাঢ় সবুজের পটভূমিতে এ যেন বাংলাদেশের এক ‘লাল স্বর্গ’। প্রাচীন এ বিলে হাজার হাজার হেক্টর জমি জুড়ে অসংখ্য মৎস্য ঘের গড়ে উঠলেও শাপলা ফোটায় বিন্দু মাত্র ভাটা পড়েনি। এই বিলে প্রাকৃতিকভাবেই শাপলা ফোটে।
চাঁচুড়ী বিলের মধ্য দিয়ে এঁকে বেঁকে বয়ে চলেছে ‘লাইনের খাল’,‘নালের খাল’,‘ছোট খাল’,আর ‘বড় খাল’সহ নাম না জানা আরও অসংখ্য খাল। এই খালগুলোতেও রং-বেরংয়ের শাপলা ফুল ফুটেছে। যা এই বিলের সৌন্দর্যকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সাধারণত জুন ও জুলাই মাস থেকে এই বিলে শাপলা ফুল ফোটে। তখন নৌকা নিয়ে এই বিলে বেড়াতে যাওয়া আরেক প্রাপ্তি।
নড়াইল সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী ইউনিয়ন। ওই ইউনিয়নের উত্তরাংশে অবস্থিত পার্শ্ববর্তী লোহাগড়া ও সদর উপজেলার একাংশের কয়েকটি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে এ বিল এখন স্থানীয়দের কাছে শাপলার বিল নামেই পরিচিতি লাভ করেছে। বিলের মোট আয়তন সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানা গেলেও কেউ কেউ বলেছেন হাজার হাজার হেক্টর নিয়ে এ বিল।
চাঁচুড়ী বিলে ঠিক কতো বছর আগ থেকে এভাবে শাপলা জন্মাতে শুরু করেছে সে তথ্যও সঠিকভাবে দিতে পারেননি কেউ। তবে স্থানীয়রা বলছেন, শত বছর আগে থেকেই বছরের অধিকাংশ সময় জলমগ্ন এ বিলে লাল, সাদা ও বেগুনি রংয়ের তিন ধরনের শাপলা জন্মালেও সাদা ও লাল শাপলার আধিক্য বেশি থাকে। সূর্যের সোনালী আভা সহস্র লাল ও সাদা শাপলা পাতার ফাঁকে ফাঁকে বিলের পানিতে প্রতিফলিত হয়ে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় এর সৌন্দর্য।
বিলের লাল শাপলার নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখে আপনা থেকে চোখ জুড়িয়ে যায়। মনোমুগ্ধকর এ বিলের শাপলা দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসছেন ভ্রমণপিপাসু প্রকৃতিপ্রেমীরা। ফলে দিন-দিন দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠছে ‘শাপলার বিল’। বিলের যতো ভেতরে এগুতে যাবেন ততোই শাপলার আধিক্য।
একসময় মনে হবে এটি যেন শাপলার রাজ্য। আর প্রকৃতিপ্রেমীরাও এ বিলে ছবি তুলতে মগ্ন থাকে। বছরের এই নির্দিষ্ট সময়জুড়ে এখানে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে।
এ বিলের শাপলা তুলে অনেক ছেলে বুড়োরা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে ওইসব এলাকার অসংখ্য পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছেন।
বিল সংলগ্ন গ্রামের একাধিক ব্যক্তিরা বলেন, বছরের ছয় মাস তারা অনেকেই এই বিলের শাপলার ওপর নির্ভরশীল। তবে বাজারে সাদা শাপলার কদর বেশি। এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করছেন ওই এলাকার শত শত পরিবার। এদের কেউ শাপলা তুলে,কেউবা বিল থেকে মাছ শিকার করে বাজারে বিক্রি করেন। চাঁচুড়ী বিল সংলগ্ন ডহর চাঁচুড়ী গ্রামের বাসিন্দা ইলিয়াছ শেখ ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে প্রতিদিনই বিলের পানিতে মাছ শিকার ও শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করেন। শাপলার বিল হওয়ায় এখানে খাদ্যের বেশ যোগান থাকায় দেশী প্রজাতির মাছও ধরা পড়ে প্রচুর।স্থানীয়রা এই বিলটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বিকশিত করার জন্য প্রশাসনের সুনজর কামনা করেছেন।
নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) দীপক কুমার রায় জানান, সাধারণত শাপলা ৩ প্রকারের হয়ে থাকে। এর মধ্যে সাদা, বেগুনী (হুন্দি শাপলা) ও অন্যটি লাল রংয়ের। সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলা সবজি হিসেবে ও লাল রঙ্গের শাপলা ঔষধি কাজে ব্যবহৃত হয়। শাপলা খুব পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি। সাধারণ শাক-সবজির চেয়ে এর পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। শাপলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম।