September 15, 2024, 12:04 am
হেলাল শেখঃ ঢাকার আশুলিয়ায় সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনের বাসাসহ বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ছিনতাই, অপহরণ-ফিটিংবাজি, খুন, ধর্ষণসহ নানারকম অপরাধমূলক কর্মকান্ড বেড়েই চলেছে। সূত্র জানায়, নারীরা সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুক মাধ্যমে পরিচয়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে বিভিন্ন কৌশলে বাসায় ডেকে নিয়ে যুবকদের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ মুক্তিপণ আদায় করে। এর আগে এক যুবককে আটক রেখে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে অপহরণকারী ফিটিংবাজ দুই নারীকে গ্রেফতার করে ভিকটিমকে উদ্ধার করে আশুলিয়া থানা পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ইং) জানা গেছে, দেশের প্রায় ৬৪ জেলার মানুষ কাজের সন্ধানে ঢাকার প্রধান শিল্পা ল আশুলিয়ায় আসেন আর আশুলিয়ায় স্থানীয়দের ছত্রছায়ায় চুরি, ছিনতাই, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে অনেকেই, এসব বিষয়ে প্রায় প্রতিদিন দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও অনলাইন এবং বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ-মাঝে মধ্যেই লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ, যার হিসাব রাখা খুবই কঠিন ব্যাপার। এর আগে গত ১০ মার্চ ২০২২ইং দুই অপহরণকারী ফিটিংবাজ নারীকে গ্রেফতারের বিষয়ে নিশ্চিত করেন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শ্যামলেন্দু ঘোষ। গ্রেফতারকৃতরা হলো-মোছাঃ লিপি বেগম (২৭) ও মোছাঃ সীমা বেগম (২৫)। ভিকটিম হলেন, মোঃ সোলায়মান হক (২৬)। ওই ফিটিংবাজ নারীরা সম্পর্কে দুই বোন, তারা ভিকটিম যুবককে টার্গেট করে ফেসবুকে সম্পর্ক গড়ে তুলে এরপর কৌশলে বাসায় ডেকে নিয়ে ফিটিং নেয়ার চেষ্টা করে। জানা যায়, উক্ত ফিটিংবাজ চক্রের সাথে এলাকার প্রভাবশালী সন্ত্রাসী চাঁদাবাজ অপহরণকারী ও ফিটিংবাজ কিছু যুবক রয়েছে, পুলিশ ঘটনাস্থলে আসার খবর পেয়ে তারা কৌশলে পালিয়ে যায়।
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শ্যামলেন্দু ঘোষ গণমাধ্যমকে জানান, এক যুবক জাতীয় সেবা ‘৯৯৯’ নাম্বারে ফোন করে জানান, তার বন্ধু সোলায়মান হক তার বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে অপহরণ হয়েছেন। তার বন্ধু আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় গিয়েছিলো বান্ধবীর সাথে দেখা করতে, পরে তার বন্ধুর মোবাইল ফোন থেকে ফোন করে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে। তাদের কাছে টাকা পাঠানোর জন্য বিকাশ নম্বর দেয় অপহরণকারীরা। জানানো হয়, দাবিকৃত টাকা না পাঠালে তার বন্ধুকে মেরে ফেলবে তারা। পুলিশ আরও জানায়, অপহরণকারীরা সোলায়মান হককে যখন মারধর করে তখন ফোন করেছিলো তার বন্ধুকে, এসময় ওই মারধরের শব্ধ শুনতে পাচ্ছিলেন কলার। তবে গ্রেফতার হওয়ার আগে তার বন্ধু বুদ্ধি খাটিয়ে কৌশলে হোয়াটসঅ্যাপে তার অবস্থানস্থল গুগল ম্যাপে পাঠিয়েছিলেন। সেই তথ্য সূত্র অনুযায়ী কলার জানান, তার বন্ধুকে আশুলিয়া থানার বাইপাইল ন্যাশনাল ব্যাংকের পেছনে একটি ভবনে আটক রাখা হয়েছে। পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, ৯৯৯-এর কলটি কনস্টেবল রেজোয়ান মিয়া রিসিভ করেছিলেন। কনস্টেবল রেজোয়ান দ্রুত আশুলিয়া থানার ডিউটি অফিসারকে এ বিষয়ে জানান। ওই সময়ে রেজোয়ান টেলি কনফারেন্স এর মাধ্যমে কথা বলিয়ে দেন। পরে জাতীয় সেবা ৯৯৯-এর দায়িত্বে থাকা (এসআই) শাহরিয়ার রুবেল কলার এবং সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করে পুলিশি তৎপরতার আপডেট নিতে থাকেন।
আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান (পিপিএম) এর নেতৃত্বে (এসআই) শ্যামলেন্দু ঘোষসহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে যান। এসময় এসআই শ্যামলেন্দু ঘোষসহ পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উক্ত ভিকটিমকে আটকে রাখা বাড়িটি শনাক্ত করেন। সেটি ছিলো আশুলিয়ার গাজীরচট এলাকার তাহের পাটোয়ারীর বাড়ি “কুসুম ভিলা”। এরপর বাড়িটিতে অভিযান চালিয়ে ভুক্তভোগী ভিকটিম সোলায়মান হককে উদ্ধার করেন। এরপর অপহরণকারী ও ভিকটিমের বক্তব্যে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুক মাধ্যমে তাদের পরিচয় হয়। এরপর ধীরে ধীরে অপহরণের ফাঁদে ফেলার জন্য প্রেমের সম্পর্ক সৃষ্টি করা হয়।পরে সোলায়মান প্রেমিকার সাথে দেখা করতে আসলে তাকে আটক রেখে মারধর করে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পুলিশ জানায়, সোলায়মানকে আটকে রেখে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে লিপি বেগম ও তার বোন সীমা বেগমকে গ্রেফতার করে।
জানা যায়, পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে অপহরণকারী চক্রের পুরুষ সহযোগীরা দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত লিপি বেগম ও সীমা বেগম লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা থানার বড়খাতা গ্রামের ইউসুফ আলীর মেয়ে। তারা আশুলিয়ার গাজীরচটসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন বলে স্থানীয়রা জানান। আশুলিয়ায় এরকম অনেক নারী পুরুষ আছে তারা স্থানীয় প্রভাবশালীদের নাম ব্যবহার করে ফিটিংবাজি, চাঁদাবাজি ও অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এরকম ২-৪জন গ্রেফতার হলেও অন্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে বলে অনেকেই জানান। সংবাদ প্রকাশ করলে গণমাধ্যম কর্মীদের ভয়-ভীতি পদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে আশুলিয়ায়। এসব ঘটনার সাথে কিছু বাড়িওয়ালা ও প্রভাবশালীরা অনেকেই জড়িত বলে ভুক্তভোগী এবং সচেতন মহল জানায়।
১৫/০৯/২০২২ইং জানা গেছে, আশুলিয়ার পল্লীবিদ্যুৎ, পলাশবাড়ি. বাইপাইল, ভাদাইল, জামগড়া, শিমুলতলা, গাজিরচট, চিত্রশাইল, কাঠগড়া, ঘোষবাগ, বাগানবাড়ি, নরসিংহপুর, জিরাবো, দূর্গাপুর, পুরাতন আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, চাঁদাবাজি, ফিটিংবাজি, খুন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড বেড়েই চলেছে। কিছু স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করায় ন্যায় বিচার থেকে বি ত হচ্ছে ভুক্তভোগীরা। উক্ত বিষয়ে পুলিশ, র্যাবসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভুক্তভোগীসহ সচেতন মহল।