December 3, 2024, 8:14 pm
এম এস সাগর,
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের মাধ্যমিক স্কুলে চলছে পাঠদান, নেই তেমন শিক্ষার্থী তবুও এমপিওভুক্তির তালিকায় ৫৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিদ্যালয়গুলোতে সাইন বোর্ড টাঙ্গিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম আছে শুধু কাগজ কলমে। বিভিন্ন স্কুলের ঝড়ে পড়া ছেলে-মেয়েদের ভর্তি দেখানো হয়েছে স্কুল হাজিরা খাতায়। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা দপ্তরে কাগজে কলমে দেখানো হচ্ছে ব্যপক শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে উঠছে নানা অনিয়মের অভিযোগ।
গত ৬জুলাই সারাদেশের ন্যায় কুড়িগ্রাম জেলায় ৫৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। এসব এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নাগেশ্বরী উপজেলার বানূরখামার নিন্ম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, চন্ডিপুর আদর্শ নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মমিনগঞ্জ নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আস্করনগর এ এস নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের ঘর স্থাপন করে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালিত না করেই এমপিওভুক্তির জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষায় থাকেন। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে স্কুলগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম আছে শুধু কাগজ কলমে। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জায়গা থাকলেও ভবন এবং পাঠদানের জন্য উপযুক্ত ছিলো না কোনো শ্রেণিকক্ষ আর ছিলো না শিক্ষার্থী। পাঠদান তো দুরের কথা নিয়মিত করেনি জাতীয় পতাকা উত্তোলন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বানূরখামার নিন্ম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, চন্ডিপুর আদর্শ নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মমিনগঞ্জ নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আস্করনগর এ এস নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় আধা পাকা ঘরের কক্ষগুলো সংস্কার করে কয়েকজন শিক্ষার্থী নিয়ে জোরেসোরে চলছে পাঠদান। শ্রেণিকক্ষের চেয়ার-বেঞ্চ এখনো অনেকটা এলোমেলো।
স্থানীয় সহিদুল ইসলাম, আঃ গফুর, মাগফুর রহমান, মোসলেম উদ্দিন, সবুজ, রফিকুল ইসলাম, রিয়াজুল হক সহ একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, বানূরখামার নিন্ম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহুরুল হক গত ২০০৩সালে স্কুল প্রতিষ্ঠার সময় দেখালেও মূলক ২০১৩সালে আধা পাকা ঘর তুলে বেশ দুই বছর পাঠদান করার এক পর্যায়ে বেতন-ভাতা না থাকায় অটো শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী শেষমেশ চাকরী বাদ দিয়ে অন্য পেশায় নিযুক্ত হন। জহুরুল হক নাগেশ্বরী ডিএম একাডেমিক উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরী করে আসার পাশাপাশি বানূরখামার নিন্ম মাধ্যমিক বালিকা স্কুল প্রতিষ্ঠা করে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কাগজে কলমে পাঠদান আর বিদ্যালয় পরিচালিত করতেন। অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক জহুরুল হক তদবির করে প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে এনে বর্তমানে বেকডেটে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দিতে অর্থ বানিজ্যর মাধ্যমে ফায়দা লুটছেন।
চন্ডিপুর আদর্শ নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোস্তম আলী ও শিক্ষক-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন বেতন-ভাতা না পাওয়ায় স্কুল বন্ধ করে দিয়ে জীবন বাঁচানোর তাগিদে অন্যত্র কাজ করতেন। এ সুযোগে অত্র প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ ১০টি বছর নুরানী ও হাফেজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম চলতো। একজন জন-প্রতিনিধির মাধ্যমে তদবির করে অবশেষে স্কুল এমপিওভুক্ত হয়। আবারো প্রধান শিক্ষক রোস্তম আলী স্থানীয় জন-প্রতিনিধিদের সহযোগিতা নিয়ে বিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্যর পায়তারা করছেন।
মমিনগঞ্জ নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কোন ঘর না থাকায় প্রধান শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস নিজের জমিতে কৃষি কাজে ব্যস্ত ছিলেন। চলতি বছর ঢাকা গিয়ে তদবির করে বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করেন। প্রধান শিক্ষক স্কুল চালাতেন কাগজে কলমে ও ছিলোনা ভবন। তবে চলতি বছর বল্লভেরখাস ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক এলজিএসপির উন্নয়ন খাতের প্রকল্প দিয়ে একটি টিনসেট ঘর নির্মাণ করে দেন। তিনিও শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্যে ব্যস্ত।
আস্করনগর এ এস নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামছুল হকের একই অবস্থা। নেই বিদ্যালয়ে পাঠদান শুধু প্রতিষ্ঠান চলছে কাগজে কলমে।
বানূরখামার নিন্ম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহুরুল হক বলেন, বিদ্যালয় নিয়ে অনেক ব্যস্ত কথা বলার সময় নেই।
চন্ডিপুর আদর্শ নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রোস্তম আলী বলেন, ইতিপূর্বে টিনশেড ঘর ভেঙে যাওয়ায় স্কুল দীর্ঘদিন বন্ধ ছিলো তাই বিদ্যালয়ে নুরানী ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা চলতো। প্রতিষ্ঠানে এমপি এসেছে। আমাদের ভয় কিসের।
মমিনগঞ্জ নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, প্রতিষ্ঠানে বেতন-ভাতা না থাকা সহ কোন ঘর না থাকায় অনেকদিন ধরে পাঠদান করতে পারিনি। এখন থেকে নিয়মিত পাঠদান করবো।
আস্করনগর এ এস নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামছুল হক বলেন, আপনাদের যা লেখার লেখেন বুঝেন তো আমাদের প্রতিষ্ঠান এখন এমপিওভুক্ত। সংবাদ প্রচারে কি আর হয়।
নাগেশ্বরী উপজেলা শিক্ষা অফিসার কামরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পাওয়া মাত্র তদন্ত সাপেক্ষে উদ্ধর্তন কর্মকর্তা কে অবহিত করা হবে।
রংপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ে উপ-পরিচালক মোঃ আখতারুজ্জামান জানান, এমপিওভুক্তির তালিকায় নাম আসলেই যে প্রতিষ্ঠান বেতনভুক্ত হবে এমনটির কোন নিশ্চয়তা নেই। যেসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে অভিযোগ পাবো সেসব প্রতিষ্ঠান আরও যাচাই বাছাই করে তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠানো হবে।