November 6, 2024, 6:27 pm
খলিলুর রহমান খলিল, নিজস্ব প্রতিনিধি
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বৈদ্যনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ইচ্ছে মতো বিদ্যালয় খোলা ও পাঠদান করানোর অভিযোগ উঠেছে। সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নিজেদের খেয়াল খুশি মতো চলায় সঠিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগ উঠেছে, ওই বিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক-শিক্ষিকা তাদের ইচ্ছে মতো বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করেন। এতে শিশুদের সুশিক্ষা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন এলাকার সচেতন অভিভাবকেরা। অনেকে আশানুরূপ ফলাফল না পাওয়ায় শিশুদের ভর্তি করাচ্ছেন অন্য বিদ্যালয়ে।
বিদ্যালয় মাঠে কথা হয় ১ম ও ২য় শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। শিক্ষকেরা কখন বিদ্যালয়ে আসেন জানতে চাইলে বলেন, ‘হামরা স্কুল আসি সকাল ৯টায়। স্যারেরা আইসে ১০টায়। এখন গেটোত ব্যাগ ঝুলি থুইয়া মাঠোত খেলা খেলায়ছি। স্যারেরা আসলে তালা খুলবে তারপর ক্লাস করব।’
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে ১০টা ২৪মিনিটে বিদ্যালয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক রুমি পারভিন। তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক খুলে শিক্ষার্থীদের ভেতরে প্রবেশ করান। দেরিতে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাড়িতে একটু কাজ ছিল। তাই আজ আসতে দেরি হয়েছে। অন্য শিক্ষকেরা কোথায় জানতে চাইলে তিনি জানান, তাঁরা আসতেছে।’
রুমি পারভিন সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে ১০টা ৩৪মিনিটে বিদ্যালয়ে আসেন আরেক সহকারী শিক্ষক আবু জাফর। দেরিতে আসার কারণ হিসেবে তিনি বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২২এর ফাইনাল খেলার অনুষ্ঠানে ছিলেন বলে জানান। সেখানে তিনি কোনো দায়িত্বে আছেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, ভুল বলেছি। আসলে আমি রংপুরে ছিলাম। তাই আসতে দেরি হয়েছে।’
বিদ্যালয় মাঠে কথা হয় বৈদ্যনাথপুর গ্রামের কৃষক নুরনবীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘স্কুলোত ছাওয়ারা আইসে ৯টার সময় আর স্যারেরা আইসে ১০টায়- সাড়ে ১০টায়। এটে লেখাপড়া নাই জন্যে মোর ছাওয়াক তারাগঞ্জের স্কুলোত ভর্তি করি দিছুং। ’
বৈদ্যনাথপুর গ্রামের অনিক ইসলাম বলেন, ‘ভাই এই স্কুলোত লেখাপড়া নাই। সারাদিন ছাওয়াগুলো মাঠোত খেলা খেলায়। মাস্টারেরা কখন আইসে, কখন যায় তাক আল্লায় জানে। তোমরা স্কুলটাক বাঁচান। ছাওয়াগুলা যেনো ভালো করি লেখাপড়া করির পায়।’
বিদ্যালয়ের এমন পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ মুঠোফোনে বলেন, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২২এর ফাইনাল খেলার দায়িত্বে মাঠে আছি। সকাল ৯টায় বিদ্যালয় খোলার কথা, এখনও খোলেনি। বিষয়টি দেখতেছি বলে মুঠোফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে কথা হলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আঞ্জুমান আরা বলেন, বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপ নিয়ে এখন ব্যস্ত আছি। প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকে বলেছি আজও বলব সঠিক সময়ে পাঠদান করানোর জন্য। এরপরও যারা বিদ্যালয় সঠিক সময়ে খুলবেন না তাদের তালিকা সাংবাদিকের কাছে চান এ শিক্ষা কর্মকর্তা। তবেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।