April 19, 2025, 9:25 am
মোংলা প্রতিনিধিঃ
ঈদুল আজহার ছুটিতে মোংলার মেরিন ড্রাইভ সড়ক দর্শনার্থীদের পদচারণ মুখরিত হয়ে উঠেছে। পৌর শহরের ফেরিঘাট থেকে শুরু করে কাইনমারী স্লুইস গেইট পর্যন্ত তিন কিলোমিটারের এই সড়কে বিকেল থেকে ভিড় জমছে দর্শনার্থীদের। বিভিন্ন বয়সের মানুষের পদচারণায় উৎসব মুখর হয়ে উঠেছে পৌর কর্তৃপক্ষের এ মেরিন ড্রাইভ সড়কটি। সড়কটি মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেল ও আন্তর্জাতিক বঙ্গবন্ধু মোংলা-ঘাষিয়াখালী ক্যানেলের পাড় ঘেষে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। মেরিন ড্রাইভে এসে সুন্দরবন, পশুর চ্যানেলে সারিবদ্ধ কার্গো-কোস্টার জাহাজসহ নৌযান ধরণের নৌযান, রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লি ও সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করছেন। শুধু মোংলাই নয় পাশের রামপাল উপজেলাসহ দূর দরান্ত এলাকা থেকে এখানে সময় কাটাতে ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা। এছাড়া মেরিন ড্রাইভের পাশে নদীর পাড়ের ড্রেজিংয়ের বালু-মাটির স্তুপের ফলে সেখানে পাহাড়ের মত উচু উচু টিলা রয়েছে। সেখানে সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি সেলফি তুলে সময়টিকে স্মরণীয় করে রাখছেন সকলে।
উপজেলার চাঁদপাই গ্রামের জুয়েল শেখ বলেন, আমাদের এলাকায় তেমন কোন দর্শনীয় স্থান না থাকা ১১ বন্ধু মিলে মোংলা বন্দর ও পৌর শহরের মেরিন ড্রাইভে ঘুরতে এসেছি। এক জায়গা দাঁড়িয়ে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সুউচ্চ চুল্লি, সুন্দরবন, জাহাজ ও নদীর দৃশ্য দেখে খুব ভাল লেগেছে।
মোংলা পৌর শহরের জয়বাংলা সড়কের বাসিন্দা কেয়া আক্তার, শারমিন আক্তার, শেহলাবুনিয়ার ঝুমুর বেগম, বাতেন সড়কের লাভলি ও কাইনমারীর টুটুল মন্ডল বলেন, ঈদের দিন ব্যস্ততা থাকায় ওই দিন না পারলেও পরদিন সোমবার বিকেলে পরিবারসহ মেরিন ড্রাইভে ঘুরতে এসেছি। বাচ্চারা খুব মজা করছে। অনেক কিছু দেখার আছে এখানে। তবে আরো ভালো ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো। বিশেষ করে বসার জায়গা। অনেক বড় জায়গা, হাটতে হাটতে হাপিয়ে উঠতে হয়। বাচ্চাদের ও আমাদের বসার জায়গার জন্য আরো সুব্যবস্থার প্রয়োজন। রাজশাহী থেকে মোংলায় বেড়াতে আসা হাসিবুর রহমান বলেন, ঈদের ছুটিতে এখানে এসে পরিবার নিয়ে মেরিন ড্রাইভে এসেছি। এখানে আসলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। নদী, বাতাস, আকাশের মেঘের ভেলা, জাহাজ ও সবুজ প্রকৃতি দেখতে খুবই ভাল লাগে। এবারসহ তিনবার এসেছি এখানে। মেরিন ড্রাইভের দুই পাশে রয়েছে লাইট পোস্টও। যার কারণে রাতেও পদচারণা রয়েছে লোকজনের। রয়েছে বসার পাকা স্থাপনাও। মেরিন ড্রাইভের এক পাশে নদী আর এক পাশে কাশবনসহ বিভিন্ন ফুল-গাছের সমারোহ রয়েছে। এ সড়কের পাশে রয়েছে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম, নৌবাহিনীর ক্যাম্পও। ঈদের ছুটিতে পূর্বের তুলনায় দর্শনার্থীদের ব্যাপক ভিড় বাড়ায় সেখানে বসেছে বিভিন্ন ধরণের খাবার ও বাচ্চাদের খেলনা সামগ্রীর দোকানপাটও। ঘুরতে আসা মানুষের কারণে ভাল আয়ও হচ্ছে মৌসুমি এসকল দোকানীদেরও। পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আঃ রহমান বলেন, মুলত শহররক্ষার জন্য নির্মিত এ মেরিন ড্রাইভের দুই পাশের সৌন্দর্য বর্ধন করায় দর্শনার্থীদের ভিড় সেখানে লেগেই থাকে। মেরিন ড্রাইভ এলাকায় বিভিন্ন ধরণের গাছপালার পাশাপাশি ফাঁকে ফাঁকে রয়েছে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণের প্রতিকৃতি। রয়েছে সিংহসহ অন্যান্য প্রাণীর মুরালও। আগামীতে এ সড়ককে ঘিরে আরো উন্নয়ন অর্থাৎ দর্শনার্থীদের মনোরঞ্জনে ইকোপার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক কমলেশ মজুমদার বলেন, মেরিন ড্রাইভটি এখানকার মানুষের একমাত্র বিনোদনের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মুলত সুন্দরবন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় দর্শনার্থীরা মেরিন ড্রাইভে ছুটে আসছেন আনন্দ উপভোগের জন্য। মেরিন ড্রাইভের পাশে সাফারি পার্ক তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষের।