প্রকাশ্যে দিবালোকে পুলিশ সদস্যের মা’কে মারধর ও বাড়ি ঘর ভাংচুর-‘বেড়িয়ে আসছে থলের বিড়াল

হেলাল শেখঃ ঢাকার আশুলিয়ার ইয়ারপুর গ্রামের প্রবাসী হযরত আলী’র স্ত্রী ও এক পুলিশ সদস্যের মা’কে মারধর ও বাড়ি ঘর ভাংচুরের ঘটনার রহস্য ফাঁস হয়ে “বেড়িয়ে আসছে থলের বিড়াল” সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় একাধিক অভিযোগ ও আদালতে মামলা। প্রকাশ্যে দিবালোকে পুলিশ সদস্যের বাড়িতে হামলা ও বাড়ি ঘর ভাংচুর, তার মাকে মারধর করার ঘটনা ২০দিন অতিবাহিত হলেও আশুলিয়া থানা পুলিশ মামলা না নেয়ার অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের।
ভুক্তভোগী প্রবাসীর স্ত্রী ও পুলিশ সদস্যের মা ইয়াছমিন বলেন, আশুলিয়ার “ইয়ারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোল্লা মোশারফ হোসেন মুসা’র ছোট ভাই মোঃ নাজিম উদ্দিন (৪০) পিতা- মৃত মুন্নু মোল্লা ও মিয়াজ উদ্দিন (৬০), পিতা-মৃত কিতাব আলী এবং আব্দুল জলিল (৫০), পিতা-মৃত আঃ জব্বার, সর্ব সাং-ইয়ারপুর, থানা-আশুলিয়া, জেলা ঢাকাগন আমাদের একটি জমি অবৈধভাবে দখলের পায়তারা করিতেছে। আমরা বাধা দেয়ার কারণে বিবাদীরা আমাদের জমি দখল করতে পারে নাই। উক্ত বিরোধের জের ধরিয়া অদ্য ইং গত ০৬/০৪/২০২৩ইং তারিখ দুপুর ২টা ৩০ মিনিটের দিকে উল্লেখিত বিবাদীগন তাহাদের সঙ্গে আরো ১০-১২ জন সন্ত্রাসী সহযোগীসহ দা, শাবল,হাতুরী, লোহার রড ইত্যাদি অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হইয়া আমাদের বাড়িতে প্রবেশ করিয়া বাড়ির পূর্ব ভিটিতে থাকা তিন রুম বিশিষ্ট ওয়াল কাম টিনশেড বিল্ডিং ভাংচুর করেছে। অনুমান ১,৫০,০০০/ টাকার ক্ষতি সাধন করেছে সন্ত্রাসীরা। তখন আমি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করিলে ১নং বিবাদী নাজিম উদ্দিন মোল্লা আমাকে চুল ধরিয়া মাটিতে ফেলিয়া আমাকে কিল-ঘুষি ও লাথি মারিয়া আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলা,ফুলা জখম করে। বিবাদী আঃ জলিল আমার ঘরে থাকা আলমারী হইতে নগদ-৭০ হাজার টাকা এবং বিবাদী মিয়াজ উদ্দিন আমার আলমারী হইতে অনুমান ০২ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার নিয়ে গেছে, যাহার মূল্য অনুমান ১লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। বিবাদীরা ঘরের বারান্দার গ্রীল ভাঙ্গীয়া নিয়া গিয়েছে, যাহার মূল্য অনুমান ২৫,০০০/ টাকা। আমাদের ডাক চিৎকার শুনিয়া আশে-পাশের লোকজন আগাইয়া আসিতে থাকিলে বিবাদীরা যাওয়ার সময় এই বলিয়া হুমকি দিয়া গিয়াছে যে, তাহারা যেকোনো সময় আমাদের জমি, বাড়ি ঘর দখল করিয়া নিবে। তাহাদেরকে বাধা দিলে আমাকে ও আমার পুত্রকে খুন করিয়া ফেলিবে। তিনি আরও বলেন, আমার ছেলেকে অনেক কষ্টে লেখা পড়া করিয়েছি, এক ছেলে আল-আমিন এখন বাংলাদেশ পুলিশের একজন সদস্য, সে মিরপুরে চাকরিরত আছে। আমার ছেলের কিছু হলে আমি বাঁচবো না, আমার পরিবারের লোকজন বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় আছি। পুলিশ ও র‌্যাবের হস্তক্ষেপ কামনা করছি, সঠিক ভাবে তদন্ত করে দোষীদের গ্রেফতার করাসহ সঠিক বিচার দাবি জানাচ্ছি ভুক্তভোগী আমি এক পুলিশ সদস্যের মা।
আশুলিয়া থানায় অভিযোগকারী সাদিয়া আক্তার শিল্পী (২১), পিতা মোঃ মোকছেদ আলী, সাং-ইয়ারপুর, থানা আশুলিয়া, জেলা ঢাকা বলেন, বিবাদী ১। আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের উপ-নির্বাচনে নৌকা মার্কা প্রার্থী ছিলেন মোল্লা মোশারফ হোসেন মুসা’র ভাই মোঃ নাজিম উদ্দিন (৪০), পিতা-মৃত মুন্নু মোল্লা, আরো ১০-১২ জন বিবাদীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি যে, আশুলিয়া থানাধীন মনসন্তোষ মৌজাস্থ জমি যাহার সি এস ২১০, আর এস ৪৬০, ৪৬২, বি আর এস ৭৬৫৭, ৭৬৫৮, দাগে মোট জমির পরিমাণ ২৪ শতাংশ ইহার কাতে ২৪শতাংশ জমি বিগত ১৯৮৬ সাল হইতে আমরা ক্রয় সূত্রে মালিক হইয়া উক্ত জমিতে বাড়ি ঘর নির্মাণ করিয়া বসবাস করিয়া আসিতেছি। বিবাদীগন এলাকার ভূমিদস্যু ও জমি দখলদার। বিবাদীগন ১০ বছর পূর্ব হইতে আমাদের উক্ত জায়গা জোরপূর্বক জবর দখল করার পায়তারা করিয়া আসিতেছে। অদ্য গত ইং ০৬/০৪/২০২৩ইং তারিখ দুপুর ২টা ৩০ মিনিটের দিকে বিবাদীগনসহ তাহার সহযোগী আরো ১০-১২জন বিবাদীগন আমাদের বাসার পাশে আসিয়া আমার বাবার নাম ধরিয়া গালি গালাজ করিতে থাকে, তখন আমি বিবাদীদেরকে গালিগালাজ করিতে নিষেধ করিলে ১নং বিবাদীসহ সকল বিবাদীগন আমাকে মারপিট করার জন্য বে-আইনী জনতাবদ্ধ অনাধিকার ভাবে আমাদের উক্ত বাড়ি ঘরের ভিতর প্রবেশ করিয়া দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হইয়া লাঠি শোডা, দা, চাইনিজ কুড়াল, নিয়া বাড়িঘরের ওয়াল, জানালা, দরজা, চালের টিন বাইরাইয়া ও কুবাইয়া ব্যাপক ভাংচুর করিয়া অনুমান প্রায় ১০,০০,০০০/= টাকার ক্ষতি সাধন করে। এর আগে বিবাদীগন আমাদের বিরুদ্ধে সি আর মামলা দায়ের করেন, যাহার মামলা নং-৫৪৩/২০১০। উক্ত মামলা আমাদের পক্ষে রায় হওয়া সত্ত্বেও বিবাদীগন কোর্টের আইন অমান্য করিয়া আমাদের উক্ত জায়গা দখল করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রহিয়াছেন, সঠিক তদন্ত করে দোষীদের গ্রেফতারসহ কঠিন শাস্তি দাবি করছি।
বিবাদী নাজিম উদ্দিন মোল্লা’র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জমি থেকে সরে যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু বাদী ইয়াছমিন এর স্বামী হযরত আলী আমাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিদেশে চলে গেছেন, এ বিষয়ে দুই পক্ষ আদালতে প্রায় ১০-১২ বছর দৌড়ঝাপ করা হয়েছে, বর্তমানে একাধিক মামলা চলমান আছে। তিনি আরও বলেন, কোনো পুরুষ মানুষ সামনে আসলে তার সাথে পারা যায় কিন্তু মহিলাদের কিছু বললে তারা নারী নির্যাতন মামলা দিবে, তবে আমরা চেষ্টা করতাছি যে, একটা স্থায়ী সমাধান করার জন্য।
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ভজন চন্দ্র রায় বলেন, ঢাকা জেলার আশুলিয়ার ইয়ারপুর গ্রামে বাড়ি ঘর ভাংচুরের ব্যাপারে আশুলিয়া থানায় একাধিক অভিযোগ হয়েছে, আমি তদন্ত করেছি, জমিজমা বিষয়ে বসে মিমাংসা করলে ভালো হয়, তা না হলে আদালতে যেতে পারেন তারা। তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত (ওসি) স্যারসহ ৩জন (ওসি) স্যার জানেন। উক্ত বিষয়ে আমাদের প্রতিনিধির হাতে কিছু কাগজপত্র ও তথ্যসহ “থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসছে”। বাদী ও বিবাদীসহ কারা উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছেন, পিবিআই, পুলিশ ও র‌্যাব উক্ত বিষয়ে তদন্তসহ কাছ করছেন। ধারাবাহিক প্রতিবেদনের পর্ব-২।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *