এতিম ভাতিজার পুকুরে বি-ষ প্রয়োগে মাছ নি-ধনের অভি-যোগ, ক্ষ-তি প্রায় লক্ষ টাকা

শেখ সাইফুল ইসলাম কবির বিশেষ প্রতিনিধি:
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৬নং খাউলিয়া ইউনিয়নের পূর্ব চিপা বারইখালী গ্রামে পৈত্রিক সম্পত্তি ও পারিবারিক চলাচলের রাস্তা নিয়ে দীর্ঘদিনের পারিবারিক বিরোধ নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। সর্বশেষ ঘটনায় স্থানীয় এক এতিম যুবকের মালিকানাধীন পুকুরে বিষাক্ত দ্রব্য প্রয়োগ করে মাছ নিধনের অভিযোগ উঠেছে আপন চাচার বিরুদ্ধে। এতে প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার।

অভিযোগকারী মোসাঃ লিলি বেগম (৫৪), মৃত মাওলানা আঃ ওহাবের স্ত্রী, মোরেলগঞ্জ থানায় দায়ের করা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন—তার দেবর আঃ ওয়াহেদ ও তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে জমি ও পারিবারিক রাস্তাকে কেন্দ্র করে তাদের হয়রানি করে আসছেন। গত ১৫ জুন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তার একক মালিকানাধীন পুকুরে মলমূত্র, আবর্জনা ও বিষাক্ত পদার্থ ফেলে মাছ নিধন করা হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। এ ঘটনায় পুকুরের অধিকাংশ মাছ মারা যায় এবং কিছু মাছ চুরি হয়ে যায়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, পারিবারিক চলাচলের একমাত্র রাস্তাটিও অভিযুক্ত পক্ষের সদস্যরা বেআইনিভাবে বন্ধ করে রেখেছেন। প্রতিবাদ জানালে গালিগালাজ, হুমকি এবং সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন আঃ ওয়াহেদ, তার স্ত্রী সালেহা বেগম, ছেলে মোঃ সানি শেখ এবং মেয়ে রুমানা তাওসিয়া।

স্থানীয় ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিন ও অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, উভয় পরিবারের মধ্যে জমি ও রাস্তা সংক্রান্ত বিরোধ দীর্ঘদিনের। বিরোধপূর্ণ সম্পত্তির এস.এ খতিয়ান নং ৫৯৬ ও দাগ নং ১৭১০; জমির পরিমাণ প্রায় ০.৩৭ একর।

ভুক্তভোগী লিলি বেগম বিষয়টি লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মোরেলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে জানান। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযোগ আমলে নিয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে প্রাথমিক তদন্তও করা হয়েছে। থানার একটি সূত্র জানায়, উভয় পক্ষকে শান্তিপূর্ণ মীমাংসার লক্ষ্যে থানায় উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সরাসরি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পুকুরের পানিতে মৃত মাছ ভেসে রয়েছে এবং কিছু মাছ অস্বাভাবিক আচরণ করছে। লিলি বেগমের ছেলে সাইফুল বলেন, “আমি অনেক কষ্টে এই মাছগুলো চাষ করেছি। কয়েকদিনের মধ্যেই বিক্রি করার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু চাচারা পুকুরে ময়লা ও বিষাক্ত দ্রব্য ফেলে সব নষ্ট করে দিয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”

অন্যদিকে অভিযুক্ত আঃ ওয়াহেদ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমার ছেলে গাছের কিছু ডাল পুকুরে ফেলেছিল, যা পচে গ্যাস তৈরি করে মাছ মরতে পারে। মাছ চুরির অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।” তিনি আরও দাবি করেন, ২০০৭ ও ২০২৩ সালে পারিবারিক বৈঠকে রাস্তা ও জমি সংক্রান্ত যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তা লঙ্ঘন করে সাইফুল বিকল্প পথ ব্যবহার করছেন। “আমি শুধু গরু-ছাগলের হাত থেকে রক্ষা পেতে বেড়া দিয়েছি, চলাচলে বাধা দিইনি,” বলেন তিনি।

বর্তমানে ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়দের দাবি, বিষয়টির নিরপেক্ষ তদন্ত ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দ্রুত একটি স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *