রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলী : রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের দিনমজুর শরিফুল ইসলামের দুই মেধাবী সন্তান আবু সাঈদ ও আবুবক্কর। একজন ইলেকট্রনিক্স, আরেকজন ইলেকট্রিক্যাল বিভাগে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নরত। বর্তমানে তারা তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। কিন্তু সামনে থাকা সেমিস্টার পরীক্ষার ফরম ফিলাপের টাকা জোগাড় করতে না পেরে দুশ্চিন্তায় পড়েন তারা।
বাবার সামান্য আয়ে চলতে হয় তাদের পুরো পরিবারের। শরিফুল ইসলাম কখনো অন্যের জমিতে কাজ করেন, কখনো রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালান। শহরে থেকে পড়াশোনার খরচ চালাতে আবুবক্কর একটি কোচিং সেন্টারে টিউশনি করেন, আর আবু সাঈদ প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের খরচ সামাল দেন। কিন্তু ফরম ফিলাপের জন্য প্রয়োজন হয় একসঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকা। অসহায়ত্ব নিয়ে বুধবার (১৮ জুন) মা নাসিমা বেগমকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে যান গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল আহমেদের কাছে।
ইউএনও সাহেবের কাছে গিয়ে তাদের আর্থিক দুরবস্থার কথা জানালে তিনি শুধু আশ্বাস দেননি, দিয়েছেন সাড়া। বৃহস্পতিবার (ফরম ফিলাপের শেষ দিন) নিজের বেতনের টাকা থেকে আবু সাঈদ ও আবুবক্করকে ফরম ফিলাপের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন তিনি।
ছেলেদের মা নাসিমা বেগম বলেন, “ইউএনও স্যার খুব ভালো ও মানবিক মানুষ। তিনি আমার সন্তানদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, আল্লাহ যেন তাকে উত্তম প্রতিদান দেন।”
আবুবক্কর বলেন, “ফরম ফিলাপের জন্য যখন টাকার প্রয়োজন, আমরা খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ইউএনও স্যারের কাছে আগেও গিয়েছিলাম, তিনি তখন আশ্বাস দিয়েছিলেন। আজ সেই আশ্বাস বাস্তব হলো। আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই, তিনি আমাদের পরিবারের জন্য একজন অভিভাবকের মতো পাশে দাঁড়িয়েছেন।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ বলেন, “আমাদের সমাজে এমন অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী আছে, যারা শুধু টাকার অভাবে পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করেছি তাদের পাশে দাঁড়াতে। হয়তো এই সহযোগিতা বড় কিছু নয়, কিন্তু যদি তারা এতে উৎসাহ পায়, তাহলেই আমার প্রচেষ্টা সফল।”
দিনমজুর বাবার দুই মেধাবী সন্তানের জন্য এই মানবিক সহযোগিতা শুধু তাৎক্ষণিক স্বস্তি নয়, বরং সমাজের প্রতি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির এক অনন্য উদাহরণ। গোদাগাড়ীর ইউএনও’র এই উদ্যোগ প্রমাণ করে, চাইলেই রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হয়ে একটি হাত বাড়িয়ে দেওয়া যায়-যেখানে ভেঙে পড়া এক ভবিষ্যতের ভিত্তি রচিত হয় সহানুভূতির উপর।
এদিকে ফেসবুকে মূহূত্বে ভাইরাল হয়েছে বিষয়টি। শত শত লাইক, কমান্ড শিয়ার হয়েছে। প্রশাংসায় ভাসছেন ইউএনও ফয়সাল আহমেদ।
আসমাউল হোসনাইন লিখেছেন, সত্যি স্যার আপনার কাজ গুলো অনেক অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
গোলাম মোস্তেফা লিখেছেন, মাশাল্লাহ খুব ভালো একটা উদ্যোগ এগুলো বেশি বেশি নেন যাতে মেধাবী ছাত্রগুলো অকালে ঝরানো যায়।
রুহুল আমিন লিখেছেন, আল্লাহ আপনাকে উত্তম যাযা দান করুন।
মোঃ হায়দার আলী
,নিজস্ব প্রতিবেদক
Leave a Reply