লা*শ হয়ে ফেরা সাজু পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয় 

মোঃ বাবুল হোসেন পঞ্চগড় 

সাজু মিয়া (২৬)। বাড়ি পঞ্চগড়। সন্তান সম্ভাবা স্ত্রীকে রেখে জীবিকার তাগিদে গাজীপুরে যান জুলাই মাসের ২৪ তারিখে। সারা দেশে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে তাতে যোগ দেন সাজু মিয়া। বাড়ি থেকে আসার তিন দিনের মাথায় তার স্ত্রীর কোলজুড়ে আসে এক পুত্র সন্তান। নাম রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম শহীদের নামানুসারে আবু সাঈদ। কিন্তু সেই সন্তানের মুখ আর দেখা হলো না তার। বাড়িতে ফিরলেন লাশ হয়ে। 

সোমবার (১২ আগস্ট) বিকেলে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয় সাজু মিয়াকে। এর আগে রোববার (১১ আগস্ট) দিবাগত রাতে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। সাজু মিয়া আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন গত ৫ আগস্ট। তার মৃত্যুতে গ্রামের বাড়িতে বইছে মাতম। নবজাতক সন্তান নিয়ে দিশেহারা তার স্ত্রী শারমিন আক্তার।

সাজু মিয়ার বাড়ি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের টোকরাভাষা মিরপাড়া গ্রামে। বাবার নাম আজাহার আলী। চার ভাই-বোনের মধ্যে সাজু ছিলেন সবার বড়। তিনি গাজীপুরের একটি টেক্সটাইল মিলে চাকরি করে সংসার চালাতেন।

সাজু মিয়া ২০১৫ সালে স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর অভাবের সংসারের হাল ধরতে টেক্সটাইল মিলে কাজ শুরু করেন। তিনি ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদের অঙ্গসংগঠন শ্রমিক অধিকার পরিষদের পঞ্চগড় জেলা কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বেও ছিলেন

সোমবার বিকেলে সাজু মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠোনে রাখা হয়েছে সাজুর লাশ। শেষ বারের মতো তাকে দেখতে আসেন আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে পরিবেশ। বিলাপ করছেন তার দুই বোনসহ ও মা-বাবা। ঘরের ভেতর ১৬ দিন বয়সি ছেলেকে নিয়ে বসে আছেন তার স্ত্রী।  

কান্নারত অবস্থায় তিনি বলেন, এই ছোট বাচ্চাকে নিয়ে কোথায় যাবো আমি, আমার ছেলেকে কে মানুষ করবে? আমি বিচার চাই, আমার স্বামীর খুনিদের বিচার চাই।

জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দাবিতে গাজীপুরের মাওনা থেকে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিলে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে যোগ দিয়েছিলেন সাজু মিয়া। মাওনা থেকে ছাত্রজনতা মিছিলটি নিয়ে গণভবনের দিকে রওনা হয়। ওই সময় ময়মনসিংহ থেকে সাতটি পিকআপে করে আসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি করা হয়। এ সময় দুই দফা সাজুর পিঠে গুলি লাগে। এতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সাজুর বাবা আজহার আলী বলেন, সাজু এই সংসার চালাতো। এখন কে এই পরিবারের হাল ধরবে। ছেলেটা আমার তার সন্তানের মুখ দেখার জন্য হাসপাতালে ছটফট করেছিলো, কিন্তু দেখতে পারলো না। বারবার বলেছিলো- আমি বাঁচবো না আমার ছেলেকে একবার দেখতে চাই। আমরা তাকে তার ছেলের মুখ দেখাতে পারিনি।

সাজুর মা বলেন, হাসপাতালে থেকে ফোনে আমার ছেলে আমাকে বলেছিলো- কান্না করিও না মা, তোমার ছেলে শহীদ হবে। তুমি শহীদের মা হবা। শুধু আমার ছেলেকে দেখে রেখো, মানুষের মতো মানুষ করো।

পঞ্চগড় জেলা গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি মাহফুজার রহমান বলেন, এটি একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা। সন্তানের মুখ দেখারও সুযোগ পাননি আমাদের সহযোদ্ধা সাজু। আমরা অনুরোধ করবো সকলেই যেন তার পরিবারের খোঁজ রাখেন এবং দাবি থাকলো এই হত্যাকাণ্ডের বিচার যেন দ্রুতই করা হয়।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *