লক্ষ্মীপুরে নোমান-রাকিব হত্যা প্রধান আসামী জেহাদীর গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:

এক মাস হলে ও লক্ষ্মীপুরের যুবলীগ নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান (৪০) ও ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমাম (৩৫) হত্যা মামলার প্রধান আসামি আবুল কাশেম জিহাদিকে এখনো ধরতে পারেনি পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজ, গ্রেপ্তার আসামিদের জবানবন্দি ও তদন্তে উঠে আসে, কাশেম জিহাদী নোমান- রাকিব হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত। কিন্তু এখনো তিনি লাপাত্তা।
মামলার প্রধান আসামীর গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবীতে আজ বৃহস্পতিবার(২৫ মে) বিকেলে সদর উপজেলার বশিকপুরে মটরসাইকেল ও পিকআপ মহড়ায় বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৩ শতাধিক মটরবাইক ও পিকআপযোগে স্থানীয় বিক্ষুব্দ এলাকাবাসীর অংশগ্রহনে বিক্ষোভ মিছিলটি বশিকপুর বাজার থেকে শুরু করে ইউনিয়নের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ শেষে পোদ্দারবাজার এসে বিক্ষোভ সমাবেশে মিলিত হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন নিহত নোমানের বড় ভাই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মাহাফুজুর রহমান,নিহত রাকিবের বড় ভাই সাইফুল ইসলাম সহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেনীপেশার প্রতিনিধিবৃন্দ।
বক্তব্যে মাহাফুজুর রহমান বলেন, প্রধান আসামি কাশেম জিহাদি ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় তাঁরা এখনো দিন কাটাচ্ছেন আতঙ্কে। ৩০ দিন আগে ভাইকে হারান তিনি। প্রতিটি দিন আশায় থাকেন ভাই খুনের প্রধান আসামি ধরা পড়বে। তিনি বলেন, ‘নোমান-রাকিবের হত্যার সঙ্গে আবুল কাশেম জিহাদি সরাসরি জড়িত। তাঁর নৃশংসতার কাহিনি এরশাদ শিকদারকেও হার মানিয়েছে। আমাদের দাবি এখন একটাই, জিহাদিকে গ্রেপ্তার করা হোক।’

নিহত ছাত্রলীগ নেতা রাকিব ইমামের ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাইয়ের বুকে, মাথায় এতগুলো গুলি লেগেছে। ভাইকে বাঁচানোর জন্য চতুর্দিকে চিৎকার দিয়েছি, হাহাকার করেছি। ভয়ে একটা মানুষও এগিয়ে আসেনি। ভাইয়ের মৃত্যুযন্ত্রণা, আহাজারি আমি দেখেছি। সহ্য করতে পারিনি। মূল হোতা সন্ত্রাসী কাশেম জিহাদিকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এতে সাধারণ মানুষের মতো আমরা ও আমাদের পরিবার হতাশ।’

খুন করে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ পেলে, খুনের ঘটনা বাড়তে থাকবে বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
প্রসঙ্গত: গত ২৫ এপ্রিল রাতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের পোদ্দার বাজার এলাকার নাগেরহাট সড়কে আবদুল্লাহ আল নোমান ও রাকিব ইমামকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নোমান জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং রাকিব জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

নোমান ও রাকিবকে হত্যার পরদিন রাতে নোমানের বড় ভাই ও বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে আবুল কাশেম জিহাদিকে প্রধান করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলার পর থেকে র‍্যাব ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

নোমান-রাকিব খুনের মামলার মূল আসামি আবুল কাশেম জিহাদি চন্দ্রগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও বশিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। নোমান-রাকিব হত্যার ২২ দিন পর ১৭ মে আবুল কাশেম জিহাদিকে বহিষ্কার করে থানা আওয়ামী লীগ।

বশিকপুর এলাকায় কাশেম জিহাদির বিভিন্ন অপরাধ নিয়ে এত দিন ভয়ে কেউ কথা বলতেন না। তবে এখন জোড়া খুনের পর তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবিতে স্থানীয় পোদ্দার বাজারে প্রায় দিনই মানববন্ধনসহ ভিবিন্ন কর্মসূচি হচ্ছে। আগে অনেকে মুখ না খুললেও এখন এই অরাজকতার অবসান চাচ্ছেন তাঁরা।

সম্প্রতি পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ সাংবাদিকদের জানান, কাশেম জিহাদির ঘনিষ্ঠ সহযোগী তারেক আজিজকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর তথ্যমতে, জিহাদীর একটি গোপন বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। গোপন বাসাটির কথা তারেক ছাড়া অন্য কেউ জানতেন না। কিন্তু সে বাসায় অভিযান চালিয়ে জিহাদিকে পাওয়া যায়নি। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।

র‍্যাব বলছে, জিহাদির বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। ২০১৩ সালে দত্তপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন ওরফে শামিম, ২০০০ সালে বিএনপি নেতা আইনজীবী নুরুল ইসলাম, দত্তপাড়া এলাকার আবু তাহের, বশিকপুরের নন্দীগ্রামের মোরশেদ আলম, করপাড়ার মনির হোসেন, উত্তর জয়পুরের সেলিম ভূঁইয়া, কামাল হোসেন হত্যা মামলাসহ নোমান-রাকিব হত্যা মামলার প্রধান আসামি কাশেম জিহাদি। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, কাশেম জিহাদী ও তাঁর বাহিনী ২৪টি খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে বিএনপি নেতা ও আইনজীবী নুরুল ইসলাম মামলার আসামি ছিলেন জিহাদি।নুরুল ইসলাম হত্যাকান্ড সারা দেশে আলোচিত ছিল।

নোমান ও রাকিব হত্যার দায় স্বীকার করে দুজন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার ১৮ নম্বর আসামি আলমগীর হোসেন ও ৩ নম্বর আসামি দেওয়ান ফয়সাল ওই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দির সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় বশিকপুর ইউনিয়নের নাগেরহাট বাজারের কাছে একটি ফাঁকা মাঠে বৈঠক হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ৩৫-৪০ জন। আটজনের একটি দল পোদ্দার বাজারসংলগ্ন নাগেরহাট সড়কের করাতকলের কাছে অবস্থান করে। এই দল ঘটনাস্থলে করাতকলের পাশে প্রায় ৪৫ মিনিট ওত পেতে থাকে। নোমান-রাকিব ঘটনাস্থলে পৌঁছালেই গুলি করে। রাকিব গুলিবিদ্ধ হয়ে করাতকলের পাশে পড়ে যান। নোমান সাত-আটটি লাফ দিয়ে পালাতে থাকেন। তিনজন মিলে তাঁকে ধরে গুলি করে হত্যা করে।

চন্দ্রগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করতে আন্তরিকতার সঙ্গে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। নোমান-রাকিব হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৭ আসামি গ্রেপ্তার ও দুজনের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। যেসব আসামি ধরা পড়েনি, তাদের ধরার জন্য অভিযান চলছে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *