রাঙ্গাবালীতে বন মামলার ভয় দেখিয়ে বনকর্মীদের চাঁদাবাজি

রফিকুল ইসলাম, রাঙ্গাবালী পটুয়াখালী ঃ
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলায় তিন যুগ ধরে বন গবেষণা ইন্সস্টিউটে কর্মরত রয়েছেন দুই কর্মচারী। দীর্ঘদিন একই জায়গায় চাকরির সুবাদে তারা জরিয়ে পড়েছেন অনিয়ম দুর্নীতিসহ নানান অপকর্মে। বনের দোহাই দিয়ে মানুষের ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখল এবং গাছকাটা মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত মো. মোস্তফা স্পিডবোট ড্রাইভার পদে এবং হারুন অর রশিদ নৌকাচালক পদে বাংলাদেশ বন গবেষণার ইনস্টিটিউটের প্লানটেশন ট্রেইল ইউনিটে রাঙ্গাবালী উপজেলায় কর্মরত আছেন।
জানা গেছে, বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্লানটেশন ট্রেইল ইউনিটে রাঙ্গাবালী উপজেলায় ১৯৮৫ সালে নৌকাচালক পদে হারুন অর রশিদ এবং ১৯৯৩ সালে স্পিডবোট ড্রাইভার পদে মো. মোস্তফা যোগ দেন। সেই থেকে তারা একই কর্মস্থলে রয়েছেন।
ভুক্তভোগীরা জানান, দীর্ঘদিন চাকরির সুবাদে তারা জড়িয়ে পড়েছেন নানান অপকর্মে। দুর্গম এলাকা হওয়ায় কর্মকতা থাকেন না এখানে। এই সুযোগে তারা যোগসাজশ করে বনের গাছ বিক্রি করছেন। ব্যক্তি মালিকানাধীন বিভিন্ন গাছ কাটতেও তাদের দিতে হয় মোটা অংকের টাকা। বনের গাছ কাটা মামলা দেয়ার হুমকি দিয়ে মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। কেউ টাকা না দিলে তাদের নানানভাবে হয়রানি করা হয়। রাঙ্গাবালী সদরের বাহেরচর বাজারের বাসিন্দা ভুক্তভোগী মো. নাফিজ আহমেদ বলেন, রাঙ্গাবালী বন গবেষণা অফিসের রাস্তার অপর পাশে আমাদের পৈতৃক সম্পতি রয়েছে। রেকর্ডভুক্ত এই জমি এক সময় খালি পড়ে ছিল। তখন মোস্তফা এবং হারুন এই যায়গা দখলের জন্য রাতের আধারে কয়েকটি কেওরা গাছ লাগান। পরে দিনের বেলা আমাদের বলে দেয় গাছের পাশে গেলে বা জায়গার কাছে গেলে গাছ কাটা মামলা দিয়ে দেবে। এই ভয়ে আমরা গত কয়েক বছর ধরে সেখানে যাই না। এরমধ্যেই গত মার্চ মাসে তারা আমাদের কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। টাকা না দেয়ায় আমাদের জায়গাকে কাটা তারের বেড়া দিয়ে আটকিয়ে দেয়।
গহীনখালী এলাকার বাসিন্দা খোকন মিয়া বলেন, বেড়িবাঁধের অপর পাশে তাদের রেকর্ডভুক্ত জায়গায় একটা বাড়ি আছে। সেই বাড়ির পিছনে মোস্তফা ও হারুন কয়েকটা কেওরা গাছ লাগায়। বিষয়টি তখন আমরা বুঝতে পারি নাই। পরে তারা হঠাৎ করে এসে বলে গাছ যেখানে আছে, সেই জায়গা আমাদের। টাকা না দিলে মামলা দিয়ে দেব।
বাহেরচরের বাসিন্দা আব্দুর রউফ বলেন, আমাদের টাকা দিয়ে ক্রয় করা রেকর্ড জমিতে কাটা তারের বেড়া দিয়ে রেখেছে। বনের দোহাই দিয়ে আমাদের জমি দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তাদের কাগজপত্র দেখাতে বললে তারা বলে বন বিভাগ যেখানে ইচ্ছে সেখানে জায়গা নিতে পারে। কাগজপত্রের দরকার পরে না। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মোস্তফা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এখানে আছি। আমরা কাগজপত্র বুঝি না। যেখানে গাছ আছে সেটাই আমাদের জায়গা। এখানে কোনো আইন নেই। একই ধরনের কথা বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান হারুন অর রশিদ। বন গবেষণার সিনিয়র রিসার্চ অফিসার এ কে আজাদ বলেন, রেকর্ডভুক্ত জমিতে কাটা তারের বেড়া দেয়ার সুযোগ নেই। তবে বন হয়তো তাদের কাছে রক্ষার্থে দিয়েছে। যদি মালিকানা জমিতে বন বিভাগ কাটা তারের বেড়া দিয়ে থাকে তাহলে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় যার জমি তিনি বুঝে নিতে পারেন। আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আর আমাদের বিভিন্ন জায়গাতেই কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে একই জায়গায় কর্মরত আছে।

রফিকুল ইসলাম
রাঙ্গাবালী পটুয়াখালী সংবাদদাতা।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *