রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলীঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা চরআষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের আষাড়িয়াদহ, চর বয়ারমারী, চর নওশেরা, হবুপাড়া, জামাইপাড়া, দিয়ার মানিকচক এবং
চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার দেবীনগর, হড়মা গ্রামে ব্যাপক হারে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। মানুষ কোন কিছু সরানোর সুযোগ পাচ্ছে না। প্রতিবছর বন্যার পানি কমার সাথে সাথে নদী ভাঙ্গন শুরু হয় এবারও ব্যতিক্রম হয় নি।
যুগে যুগে পদ্মার ভাঙন নিঃস্ব করেছে শত সহস্র মানুষকে। অতীতের সেই দুর্বিষহ স্মৃতি যেন কঠিন বাস্তবতা হয়ে আবারও দরজায় কড়া নাড়ছে ভাঙন কবলিত মানুষের ঘরে। ফলে শিগগিরই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ করার তাগিদ জানাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্থ ও স্থানীয়রা।
বৃষ্টি আর ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে হঠাৎই আগ্রাসী রূপে পদ্মায় স্রোতের সাথে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে পানি। এতে বেড়েছে ভাঙনের তীব্রতা। আগেই আশঙ্কা করেছিল নদী পারের বাসিন্দারা – প্রত্যেক বছরের মতো এবারও গোদাগাড়ী উপজেলার পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় দেখা দিবে তীব্র ভাঙন। সেই শঙ্কা সত্যি করে কিছুদিন ধরে প্রবল স্রোতের কারণে উপজেলার পদ্মাপাড়ের চর আষাড়িয়াদহ, চর বয়ারমারী, চর নওশেরা, হবুপাড়া, জামাইপাড়া, চর দিয়ার মানিকচকসহ আশপাশের এলাকায় নদী ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। এতে ধান, পাট, ভুট্টাসহ মৌসুমি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গৃহহীন হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার, পানিতে তলিয়ে গেছে এক হাজার বিঘা জমির ফসল।
চর আষারিয়াদহা ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন জানান, গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ভাঙন দেখা দিয়েছে পদ্মায় তবে গত চার থেকে পাঁচ বছর যাবত প্রচুর পরিমাণ ভাঙন শুরু হয়েছে। নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির সহ বহু স্থাপনা । নদী ভাঙ্গনের ফলে বহু মানুষ তাদের ভিটেমাটি ও সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন আমাদের জমি যায়গা যদি পদ্মায় বিলিন হয়ে যায় তাহলে আমরা যারা কৃষক, শ্রমিক দিনমজুর কোথায় ফসল উৎপাদন করবো,আমরা খাবো কি, কোথায় মাথা গোঁজার ঠাঁই পাবো। তাই আমি সরকারের কাছে আকুল আবেদন করে বলছি আমাদের চর অঞ্চলের মানুষকে,জমিনকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করুন এবং দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ কাজ যেন শুরু করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিন নতুন বসতবাড়ি ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। বিশেষ করে চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের ১নং ও ২ নং ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশী ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। অন্যদিকে দীর্ঘদিনের সাজানো সংসার চোখের সামনে মুহূর্তেই নদীতে বিলীন হতে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অনেকেই।
ভাঙনের ভয়ে অনেক পরিবার গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে গোদাগাড়ীর অভ্যন্তরীণ গ্রামগুলোতে চলে গেছে। সেখানে তারা আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বা অস্থায়ী আশ্রয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রায় দের যূগ ধরে প্রতিবছর বন্যার পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যাপক নদী ভাঙ্গন শুরু হয় এবারও ব্যাতিক্রম হয় নি। তবুও এই জনপদ অঞলে হয়নি এখনও স্থায়ী বাঁধ।
পদ্মা নদীর ভাঙন একটি গুরুতর সমস্যা যা গোদাগাড়ী চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত করছে। ভাঙনের কারণে অনেকে তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ফসলি জমি হারাচ্ছে।
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ জানান, আমরা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে ত্রান বিতরন করে এসেছি।
তাদের পাশে আমরা সব সময় আছি।
২০ টন জিআর চাউল বরাদ্দ পাওয়া গেছে, প্রচুর শুকনা খাবার আছে। যাদের ঘর, বাড়ী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তাদের তালিকা অনুয়ায়ী টিন দেয়া হবে। একইসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম ভোলা বলেন, প্রতিদিনই নদী ভাঙ্গন বন্যা তীব্র হচ্ছে, ১ হাজার বিঘা জমির মৌসুমী ধান বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। আমরা ৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় কেন্দ্র করেছি সেখানে লোকজনকে যাওয়ার জন্য বলেছি। কিছুটা বন্যা কমেছে, ভাঙ্গন বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের পাশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে ত্রান দিয়ে গেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল আহমেদ।
গোদাগাড়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা একে এম মোমিনুল হকের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করে মোবাইল রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
এ দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নাম মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, দুই একদিনের মধ্যে চলতি বন্যায় আলাতুলি ইউনিয়নের চর আলাতুলি, আলাতুলি ও কোদালকাঠি পাড়া ও নারায়নপুর ইউনিয়নের সেফালি পাড়া, কারেন্ট চর দেবীনগর,এগারো রশিয়া, উত্তর পাড়ায় ৫৫০ পরিবারের মাঝে ১৫ কেজি চাল বিতরন করা হবে। এছাড়া ১৫০ পরিবারকে ১০ কেজি চাল,তেল,লবন, চিনিসহ অন্যন্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেয়া হয়েছে।।
প্রতিদিনই ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনের মুখে অনেকেই বাড়িঘর সরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে সদর উপজেলার আলাতুলি, চরআষাড়িয়াদহ, পোল্লাডাঙ্গা, নারায়ণপুর।
মোঃ হায়দার আলী
নিজস্ব প্রতিবেদক,
রাজশাহী।