Category: কৃষি

  • ঠাকুরগাঁওয়ে পতিত জমিতে শাক সবজি উৎপাদন

    ঠাকুরগাঁওয়ে পতিত জমিতে শাক সবজি উৎপাদন

    ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি :পতিত জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ করে চমক লাগিয়েছেন ঠাকুরগাঁওয়ের নন্দি কুমার বর্মনের । তিনি পৌর শহরের জমিদারপাড়ায় বাড়ির সামনের ফাঁকা জমিতে তিনি বিভিন্ন ধরনের এ সবজি চাষ করেন। তার সবজি বাজানে উৎপাদনকৃত শাক-সবজি নিজের পরিবারের সদস্যদের চাহিদা মিটিয়ে আশ পাশের মানুষজনকে দিয়েছেন। এছাড়াও বাড়তি সবজি বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার খবরও জানান তিনি। বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) দেখা যায় পৌর শহরের জমিদারপাড়া (সার্প) অফিসের সামনে ফাঁকা প্রায় ৮৫ শতক জমিতে তিনি সবজি চাষ করছেন। তাকে সবজি বাগানে পানি দিতে দেখা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সবজি ক্ষেতের আগাছা পরিস্কার করতে দেখা যায় তাকে। সেখানে তিনি, লাল শাক, পালং শাক, নাপা শাক, বিভিন্ন ধরনের ঘাস, শসা চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে লাল শাক, পালং শাক বেশ কয়েকবার তুলে নিজের খেয়েছেন, আশ পাশের মানুষ, আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বিলিয়েছেন এবং বাজারে বিক্রিও করেছেন। পৌর শহরের জমিদারপাড়া মহল্লার বাসিন্দা নন্দি কুমার বর্মন বলেন, জমিদারপাড়ায় শাকের বাগানের এখানকার প্রায় ৩ বিঘা (১৫০ শতক) জমি মরহুম তাহের জামাল চৌধুরীর। এখানে একটি বেসরকারী সংস্থাকে কিছু জমিতে ঘর তুলে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রায় ৮৫ শতক জমি দীর্ঘদিন ধরে ফাঁকা পরে ছিল। করোনা মহামারী শুরুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন বাড়ির এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী রাখা যাবে না। সেই ধারনা থেকেই এখানে সবজি বাগান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। পরে ফাঁকা জমিতে লাল, পালং, নাপা শাক, শসাসহ বিভিন্ন জাতের ঘাষ চাষ করি। আবাদও ভালো হয়; পরে শাক-সবজি নিজের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে আত্মীয়-স্বজনদের দেওয়া হয়। তার পরও উদ্বৃত্ত শাক-সবজি বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছি।এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার নাঈম মিনহাজ কৌশিক বলেন, মেধাবী জাতি গঠনে পুষ্টির কোন বিকল্প নেই। শাক-সবজি আমাদের পুষ্টির চাহিদা অনেকাংশে পূরণ করে থাকে। এটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শাক-সবজির পুষ্টি গুন মেধাবী প্রজন্ম গড়তে সহায়তা করে। তাই আমাদের বেশি করে শাক-সবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এ কারনে নন্দি কুমার বর্মনের পতিত জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষের বিষয়টি সত্যিই প্রশংসনীয়।ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, নন্দি কুমার বর্মনের পতিত জমিতে সবজি চাষের বিষয়টি যুগোপযোগী। তিনি চাইলে যে কোন ধরনের পরমর্শ ও সুবিধা কৃষি বিভাগ থেকে প্রদান করা হবে। চলতি শীতকালীন মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ে ৭ হাজার ৮৯৫ হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাক-সবজির উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। বর্তমানে প্রায় সব ধরনের শাক সবজি বাজারে রয়েছে; আরও কিছু সবজি আবাদ চলমান রয়েছে। আশা করা যায় এ বছরও সবজির ভাল ফলন হয়ে কৃষকেরা ন্যায্য মূল্য পাবেন।

    গৌতম চন্দ্র বর্মন
    ঠাকুরগাঁও

  • টঙ্গীবাড়ী‌তে  শেষ সময়ে সরিষা তোলায় ব্যস্ত কৃষকেরা

    টঙ্গীবাড়ী‌তে শেষ সময়ে সরিষা তোলায় ব্যস্ত কৃষকেরা

    মোঃ‌লিটন মাহমুদ ,মুন্সীগঞ্জঃ

    টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন হয়েছে। শেষ সময়ে সরিষা ঘরে তুলতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন কৃষক-কৃষাণীরা । এ বছর টঙ্গীবাড়ী উপজেলার প্রত্যেক গ্রামেই ছিলো সরিষার হলুদে ফুলের সমারোহ। এসব ফুলে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহেও ব্যস্ত ছিলো ।

    কয়েকদিনের ব্যবধানেই এসব ফুলের পরিবর্তে ফল হয়ে সবুজ দানায় পরিপূর্ণ হয়েছে সরিষা। সে দানায় আশায় বুক বেঁধেছে চাষীরা। এখন জমি থেকে সরিষা তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। তাদের প্রত্যাশা সরিষা বিক্রিতে ন্যায্যমূল্য পেলে লাভবান হতে পারবেন বলে আশা করছেন কৃষকরা। সরেজমিনে টঙ্গীবাড়ী উপজেলার যশলং ও দী‌ঘিড়পাড় ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক কৃষাণীরা সরিষার তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

    সময়মতো বীজ বপন, সার-কীটনাশক দেওয়া ও আবহাওয়া ভালো থাকায় আশানুরূপ ফলন ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা করছেন তাঁরা। আটকান গ্রামের কৃষক হাসান আলী, জালাল শেখ ও রিয়াদ ইসলাম আমা‌দের কে জানান,

    গতবারের চেয়ে এ বছর সরিষার ফলন বেশী হয়েছে। শেষ সময়ে কৃষক-কৃষাণী নিয়ে সরিষা তোলার কাজে ব্যাস্ত সময় পার করছি। বর্তমানে তেল এবং খৈলের দ্বিগুন দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আশা করছি এবার সরিষার ভাল দাম পাওয়া যাবে। তবে দাম ভালো পেলে আগামীতে সরিষার আবাদ আরো বাড়াবো।

    উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃজয়নুল আবদেীন বলেন, এ বছর টঙ্গীবাড়ী উপজেলায় ৪শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদের করা হয়েছে।‌তি‌নি আ‌রো ব‌লেন হাসাইল বানারী ইউ‌নিয়‌নের সন্পূর্ন নতুন ১০০শ হেক্টর বে‌শি জম‌ি তে স‌রিষার চাষ হয়ে‌ছে ।আমরা সরকারী ভা‌বে ১০০০জন কৃষক‌দের মা‌ঝে স‌রিষার বীজ বিনা মূল‌্যে বিতরন ক‌রে‌ছি ।তাছাড়া টঙ্গীবাড়ী কৃ‌ষি কর্মকর্তা‌দের নিজ উদ্দ‌ে‌্যগে ২৫০ কৃষক‌দের মা‌ঝে বিনা মুল‌্যে স‌রিষার বীজ বিতরন করা হ‌য়ে‌ছে ।

  • পীরগঞ্জে স্ট্রবেরি চাষ করে সফল সুজাত আলী

    পীরগঞ্জে স্ট্রবেরি চাষ করে সফল সুজাত আলী

    আবু জাহেদ,পীরগঞ্জ(ঠাকুরগাও)প্রতিনিধি ঃ ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় বানিজ্যিক ভাবে স্ট্রবেরি চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন সুজাত আলী নামের এক কৃষক। তার খেতের সারি সারি বেডের ওপর এখন শোভা পাচ্ছে চোখ জুড়ানো লাল টসটসে স্ট্রবেরি। এরই মধ্যে স্ট্রবেরি তোলা শুরু হয়েছে এবং তা চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন অ লে। এতে এক দিকে যেমন লাভবান হচ্ছেন তিনি অন্যদিকে অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে সেখানে। কৃষি বিভাগ বলছেন, ফসলটি সম্প্রসারনে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি নানা ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

    পীরগঞ্জ উপজেলার ৯নং সেনগাঁও ইউনিয়নের বেলদহি গ্রামের কৃষক সুজাত আলী। চলতি বছরের নভেম্বরের দিকে জয়পুরহাট থেকে ১৮ হাজার টাকার স্ট্রবেরির চারা ক্রয় করে নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে নিজের ২ একর ৫৫ শতক জমিতে রোপন করেন সেই চারা। বর্তমানে তার খেতে স্ট্রবেরির গাছ রয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার। সব গাছেই প্রচুর ফল এসেছে। ফল পাকতে শুরু করেছে। পাকা ফল তুলে বিক্রি করাও শুরু করেছেন তিনি। প্রতিদিনই পাকা স্ট্রবেরি খেত থেকে তুলছেন তিনি। খেতেই পাকা স্ট্রবেরি ৮’শ থেকে ১২শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় ভাবে বিক্রির পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। এ ফসল আবাদ করতে এখন পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে ১২ লাখ টাকার মতো। এরই মধ্যে ৭ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন তিনি। খেত থেকে আরো কমপক্ষে এক মাস লাগাতার ভাবে পাকা স্ট্রবেরি তুলতে পারবেন বলে জানান ঐ কৃষক। এতে সব মিলিয়ে ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা তার। সুজাত আলী জানান, তার খেত থেকে স্ট্রবেরি তুলা, বাছাই ও প্যাকেট করা সহ পরিচর্যার কাজে ১২ জন নারী-পুরুষ কাজ করছেন। এখানে কিছুটা হলেরও তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।
    এদিকে ব্যতিক্রমি এ ফসল আবাদ করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলে ঐ কৃষক। বিভিন্ন এলাকা থেকে খেত দেখতে আসছেন অনেকে। দিনাজপুর থেকে আসা মকলেসুর নামে এক ব্যক্তি জানান, স্ট্রবেরি খেত দেখে তিনি অভিভুত। আগামী তিনি স্ট্রবেরি চাষ করবেন বলে জানান। বথপালিগাও গ্রামের ফাইদুল জানান, স্ট্রবেরি আবাদ করে এত লাভ হয় তা আগে জানা ছিল না। আগামী বছর তিনিও পরীক্ষামুলক ভাবে কিছু জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করবেন।
    উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, অত্যন্ত লাভজনক ও সম্ভাবনাময় এ ফসল আবাদে কৃষদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। এ বছর উপজেলার আড়াই একর জমিতে স্ট্রবেরি চাষ হয়েছে। আগামীতে আরো বেশি পরিমান জমিতে যেন স্ট্রবেরি চাষ হয় এজন্য কাজ করছেন তারা।

  • নড়াইলে মধুর উৎপাদন বাড়লেও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেনা চাষীরা

    নড়াইলে মধুর উৎপাদন বাড়লেও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেনা চাষীরা

    উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে:
    নড়াইলে উৎপাদন বাড়লেও মধুর ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেনা চাষীরা। স্বল্প বিনিয়োগে ভালো লাভ ও অনুকূল পরিবেশ থাকায় নড়াইলে মৌচাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতি বছরই এ জেলায় বাড়ছে মধু উৎপাদন। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছর মধু উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল মৌসুমের অর্ধেক সময়ের মধ্যেই সে লক্ষ্য ছুঁয়েছেন জেলার মৌ-খামারিরা। সব ঠিক থাকলে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ মধু উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরিষা খেত থেকে মধু সংগ্রহ করায় ফলনও বেড়ে গেছে। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান,
    উৎপাদন বাড়লেও স্থানীয় চাষীরা মধুর ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। খামারিদের অভিযোগ, খেত থেকে পাইকাররা মধু কিনে নিয়ে গেলেও দাম কম দিচ্ছেন। সরকারিভাবে মধু সংগ্রহ করার দাবি জানিয়েছেন মৌ-খামারিরা।
    বিসিক সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ বছর আগে (২০১৮ সালে) নড়াইলে মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল মাত্র দুই টন। প্রতি বছরই মধু উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৬ টন। এ বছর মৌসুমের অর্ধেক সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়ে গেছে। জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে বর্তমানে মৌ-খামারির সংখ্যা শতাধিক। আর নিবন্ধনকৃত খামারির সংখ্যা ৭০। খামারির সংখ্যাও প্রতি বছর বাড়ছে।
    খামারি বসির আহমেদ জানান, ১০০টি মৌ-মাছির বাক্স থেকে চলতি মৌসুমের তিন মাসে ৫৪ মণ মধু সংগ্রহ করেছেন। আগামী তিন মাসে আরো অন্তত ৫০ মণ মধু সংগ্রহ করতে পারবেন বলে আশা তার।
    আরেক খামারি মো. জুয়েল বলেন, ‘আমার ৫০টি বাক্স থেকে এরই মধ্যে ৩০ মণ মধু সংগ্রহ করেছি। অনুকূল পরিবেশ থাকলে বাকি সময়ে আরো ২০-২৫ মণ মধু উৎপাদন করতে পারব।’ পৌরসভার পুরাতন বাজার এলাকার মধুচাষী খন্দকার মাকসুদ হাসান জানান, এ বছর পাইকাররা প্রতি মণ মধু ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা দাম দিচ্ছেন। এত কম টাকায় মধু বিক্রি করলে তাদের কোনো লাভ হয় না। চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত তার ৮৩ মণ মধু সংগ্রহ হয়েছে। এরই মধ্যে ৪ হাজার ২০০ টাকা দরে দুই টন মধু পাইকারি বিক্রি করেছেন। তিনি সরকারিভাবে ন্যায্যমূল্যে মধু সংগ্রহ করার দাবি জানান
    আকাশ শেখ নামে এক খামারি অভিযোগ করে বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে মধুর দাম কম দিচ্ছেন। লাভের অংশ পুরাটাই ব্যবসায়ীদের পকেটে যাচ্ছে। অথচ নড়াইল শহরের বিভিন্ন দোকানে ৪০০-৫০০ টাকা কেজি দরে মধু বিক্রি হচ্ছে।’
    জানা গেছে, মধু আহরণের মৌসুম নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত। এ ছয় মাসে মৌ-খামার নিয়ে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটতে হয় মৌ-চাষীদের। যেখানেই ফসলের মাঠজুড়ে সরিষা, মসুর, খেসারি, তিল, তিসি, ধনিয়াসহ নানা ফুলের হাতছানি সেখানেই মধু আহরণে আস্তানা গাড়েন মৌ-চাষীরা। নভেম্বরে সরিষা, মসুর, খেসারি, ধোনে ফুলসহ বিভিন্ন রবি ফসলে ফুল এলে নড়াইলসহ পাশের মাগুরা ও ফরিদপুর জেলায় মধু সংগ্রহ শুরু করেন তারা। লিচু ফুল থেকে মধু আহরণ করতে গাজীপুর, পাবনা, যশোরেও চলে যান তারা। এভাবে সর্বশেষ মে মাসে সুন্দরবনে গেওয়া, গরান, খলিষা, বাইন, কেওড়া ফুলের মধু আহরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় মধু সংগ্রহের মৌসুম
    খলিষা, বাইন, কেওড়া ফুলের মধু আহরণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় মধু সংগ্রহের মৌসুম।
    মৌ-চাষীরা জানান, বর্ষার আগমনে মধু আহরণ মৌসুম শেষ হয়। বর্ষাকালীন মৌ-খামার পরিচর্যার জন্য নড়াইল অত্যন্ত উপযুক্ত স্থান। এ সময় প্রকৃতিতে বিশেষ কোনো ফুল না থাকলেও এ অঞ্চলে নারিকেল, সুপারি গাছের প্রাচুর্যের ফলে বর্ষায় এর ফুল থেকে আহরণকৃত মধু মৌমাছির জীবন ধারণ ও বংশবিস্তারে অত্যন্ত সহায়ক। তাই বর্ষাকালে পাশের বিভিন্ন জেলা থেকেও চাষীরা খামার নিয়ে নড়াইলে চলে আসেন। জুন-নভেম্বর—এ ছয় মাস প্রকৃতিতে ফুল তথা মধুর সংকটে মৌমাছিদের খাদ্য হিসাবে চিনিমিশ্রিত পানি সরবরাহ করা হয়।
    মৌ-চাষী নাসিম শেখ জানান, উদ্যোগের অভাবে বাজার সম্প্রসারিত না হওয়ায় উৎপাদিত মধু বিক্রি করতে তাদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। উপরন্তু বিদেশী বিভিন্ন কোম্পানির মধু দেশে আমদানি করা হয়। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে কষ্টার্জিত মধু বিক্রি করতে হয় কখনো নামমাত্র মূল্যে কখনো বাকিতে। তা না হলে প্রচুর মধু অবিক্রীত থেকে যায়। ফলে মধুর ন্যায্যমূল্যপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মৌ-চাষীরা। তার দাবি সরকারিভাবে চাষীদের কাছ থেকে মধু সংগ্রহ করা হোক।
    বিসিক নড়াইল জেলা কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সোলায়মান হোসেন বলেন, ‘প্রায় ১৫ বছরের চেষ্টায় মৌ-চাষের একটা ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে বিসিক আধুনিক প্রযুক্তিতে মৌচাষ প্রকল্পের আওতায় পর্যায়ক্রমে মৌচাষীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। জেলায় মৌ-চাষীদের উন্নয়নে স্বল্পসুদে ঋণ দেয়া হয়েছে। আগামীতে আরো কিছু খামারিকে ঋণ দেয়ার পরিকল্পনা আছে। তাদেরকে মৌ-বাক্সসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে নতুন নতুন মৌচাষী তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করছি অল্পদিনের মধ্য নড়াইল জেলা মৌচাষে একটা উদাহরণ তৈরি করবে।’

  • গমের কাঁচা-পাকা শীষে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন

    গমের কাঁচা-পাকা শীষে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন

    মোঃ‌লিটন মাহমুদ ,মুন্সীগঞ্জ প্রতি‌নি‌ধিঃ

    সবুজ মাঠের দিকে তাকালে দেখা যায়, গমের কাঁচা-পাকা শীষ বাতাসে দোল খাচ্ছে। সোনালী রোদে চিকচিক করছে প্রতিটি গমের শীষ। আর কাঁচা-পাকা শীষের সাথে চাষির মন ও শরীরও দোল খাচ্ছে। সবুজ মাঠের দিকে তাকিয়ে কৃষকের মুখে ফুটে উঠেছে হাসি। এযেন এক অনাবিল তৃপ্তির হাসি। আগামী ১০ থেকে ১৫ দিন পর জমি থেকে চাষিরা গম কাটা শুরু করতে পারবেন। আর তখন কৃষকের স্বপ্ন মিশে যাবে সোনালী গমের শীষে।

    রবি শস্যের মধ্যে অন্যতম একটি লাভজনক আবাদ হচ্ছে গম। বর্তমানে গমের বাজার ভালো থাকায় গম চাষে লাভের আশা করছেন চাষিরা।

    এ বছর টঙ্গীবাড়ী উপ‌জেলায় গমের বাম্পার ফলন আশা কর‌ছেন কৃষ‌কেরা । গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর গমের ফলন বেশি ভালো হয়েছে। গম ক্ষেতে কোনো ধরণের রোগ-বালাই না হওয়ার কারণে বিঘা প্রতি আগের তুলনায় ফলন বেড়েছে।

    কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে ৪৫০ হেক্টর জমিতে কৃষক গম চাষ করেন। অধিকাংশ জমিতে কৃষক উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে পরিচিত বারি-৩০, ৩২ ও ৩৩ রোপণ করেছেন। এছাড়া বারি-২৫, ২৭ ও ২৮ জাতের গমও চাষ করা হয়েছে। গমের ১০টি প্রদর্শনী প্লটও রয়েছে।

    অনুকূল আবহাওয়া এবং কৃষি বিভাগের সঠিক তদারকি ও পরামর্শে গম ক্ষেতে কোনো রোগবালাই ছিলো না। তাই গমের বাম্পার ফলন পাওয়ার ব‌্যপা‌রে কৃষক‌েরা খুবই আশাবা‌দি ।

    টঙ্গীবাড়ী উপজেলার যশলং ইউ‌নিয়নের বায়হাল, , নয়াকান্দী,চর বশনাল,ধীপুর ইউ‌নিয়‌নের রায়‌ভোগ,মটুকপুর,বেতকা ইউ‌নিয়‌নের বেতকাচক সহ অন্যান্য ইউনিয়নেও বিক্ষিপ্তভাবে গমের আবাদ হয়েছে। তবে নয়াকান্দী ,আটখান ,বায়হালচ‌কে গমের আবাদি বেশি হয়েছে।

    নয়াকান্দী,চর বশনাল,রায়‌ভোগ গ্রামের গমচাষি ইলিয়াস কাঞ্চন, আব্দুল মতিন, বাবুল, ইসলাম উদ্দিন, আব্দুস সামাদ, আবু তাহের, ইদ্রিসসহ অনেকেই জানান, বিগত সময়ের চেয়ে এবার গমের দানা খুব ভালো এসেছে। প্রতিটি শীষ অনেক বড় হয়েছে। যদি আবহাওয়া শেষ পর্যন্ত গমের অনুকূলে থাকে ও গমের বাজার ভালো থাকে তাহলে চাষিরা লাভবান হবেন।

    গম চাষে বীজ, কীটনাশক ও দিনমজুরসহ ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা খরচ হলেও বিঘাপ্রতি ৭ থেকে ৮ মণ গম পাবেন বলে জানান চাষিরা। প্রতি মণ গম বর্তমান বাজার দর ১ হাজার ২ শত টাকারও বেশি, তাই বিঘা প্রতি প্রায় ১০ হাজার টাকার গম বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান কৃষকেরা।

    গম চাষ একটি অধিক লাভজনক আবাদ। গম চাষে তেমন পানি, সার, কীটনাশক, বালাইনাশক ও নিড়ানীর প্রয়োজন হয় না এতে খরচ অনেক কম। আর কম পরিশ্রমে অধিক লাভ করা যায়। এছাড়াও গমে পোকা-মাকড়ের আক্রমণও তেমন একটা হয় না। গম গাছ জ্বালানি ও বেড়া হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

    উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার মোঃজয়নুল আলম তালুকদার বল‌েন,গত বছরের চাইতে এবছর হেক্টরপ্রতি ফলন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাজার দর ও ফলনও ভালো হয়েছে। তাই চাষীরা অন্য বছরের তুলনায় এ বছর বেশি লাভবান হবেন। চাষিরাও এবার আশাবাদী।

  • নওগাঁ কেমিক্যাল ও বিষমুক্ত পঁয়ত্রিশ জন পুরুষ ও মহিলা সব্জি চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা

    নওগাঁ কেমিক্যাল ও বিষমুক্ত পঁয়ত্রিশ জন পুরুষ ও মহিলা সব্জি চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা

    নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁয় ৩৫ জন পুরুষ ও মহিলা সমন্বিতভাবে যে কোন রাসায়নিক সার এবং বিষমুক্ত সব্জি উৎপাদন করে লাভবান হয়েছেন। স্বাস্থ‍্য সচেতন মানুষ এসব বিষমুক্ত সব্জি ক্রয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

    পিকেএসএফ এর সহযোগিতায় স্থানীয় দাবী নামের একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থার উদ‍্যোগে নওগাঁ সদর উপজেলার কির্ত্তীপুর, উলিপুর এবং ইকরকুড়ি এই এলাকায় পৃথক পৃথক তিনটি ক্লাষ্টারে ভাগ করা হয়। এ তিনটি ক্লাষ্টারের মোট ৩৫ জন মহিলাকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ, প্রশিক্ষণ এবং আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে তাদের নিজস্ব ৩০ বিঘা জমিতে এসব সব্জি চাষ করানো হয়। এসব সব্জির মধ‍্যে রয়েছে বেগুন, টমেটো এবং লাউ।

    যেহেতু কীটনাশক বা রাসায়নিক সার ছাড়াই তারা সব্জি চাষ করছেন সেহেতু উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা অধিক লাভবান হচ্ছেন।

    ইকরকুড়ি গ্রামের মোছা: বুলবুলি বেগম। তার স্বামীর সাড়ে তিন কাঠা জমিতে উৎপাদন করেছেন লুনা বেগুন। সব মিলিয়ে এই বেগুন চাষে তাঁর খরচ হয়েছে ২ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত তিনি ঐ জমি থেকে ১৫০০০ টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন।

    ঐ গ্রামের রইচ উদ্দিন নামের এক কৃষক ৭ কাঠা জমিতে বেগুধ চাষ করেছেন। এতে তার মোট খরচ হয়েছে ২/৩ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত তিনি ২০ টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। খরচ মাত্র ১ হাজার টাকা।

    মোছা: দেলোয়ারা বেগম নিজস্ব ৭ কাঠা জমিতে চাষ করেছেন লাউ। এখন পর্যন্ত ১০ হাজারটাকার লাউ বিক্রি করেছেন। জমিতে রয়েছে আরও লাউ। একইভাবে শামসুন্নহার লাউ চাষ করেছেন ৭ কাঠা জমিতে। এ পর্যন্ত বিক্রি করেছেন ১৩ হাজার টাকার লাউ। নীট আয় করেছেন ১১ হাজার টাকা।

    একই গ্রামের সারাজুল ইসলাম তার ৫ কাঠা জমিতে লাগিয়েছেন টমেটো। তার খরচ হয়েছে মাত্র ৬ শ টাকা। এ পর্যন্ত তিনি টভেটো বিক্রি করেছেন ৭ হাজার টাকা। জমিতে রয়েছে আরও টমেটো।

    এসব বিষমুক্ত সব্জির কথা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার কারনে কৃষকদের উৎপাদিত সব্জি হাটে বা বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। আশে পাশের স্বাস্থ‍্য সচেতন মানুষরা জমি থেকেই এসব রাসায়নিক সার ও বিষমুক্ত সব্জি কিনে নিয়ে যান।

    নওগাঁর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু হোসেন জানিয়েছেন ক্রমেই মানুষ স্বাস্থ‍্য সচেতন হয়েছেন। বিষমুক্ত খাদ‍্যের প্রতি অধিক আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কাজেই বিষমুক্ত এসব সব্জির প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বেশী পরিলক্ষিত হচ্ছে। তারা এসব জমিতে জৈব সার ( ট্রাইকো কম্পোষ্ট), ফেরোমন ফাঁদ, রঙিন ফাঁদ, বিষটোপ ইত‍্যাদি ব‍্যবহার করছেন।

    রওশন আরা পারভীন শিলা
    নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি।।

  • ঝিনাইদহে ফুলের বাজার সরগরম ৫০ কোটির বাজার ধরতে মরিয়া ব্যবসায়ীরা

    ঝিনাইদহে ফুলের বাজার সরগরম ৫০ কোটির বাজার ধরতে মরিয়া ব্যবসায়ীরা

    ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
    ঝিনাইদহে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসব উপলক্ষ্যে ফুলের বাজার সরগরম হয়ে উঠেছে। গতকাল সোমবার থেকেই ফুল বিক্রির ধুম পড়েছে। ফুলের দোকানগুলো সেজেছে অপরূপ সাজে। ঝিনাইদহ শহরের ব্যাপারীপাড়া সড়কে জমিরের ফুলঘর জেলার বৃহৎ ফুলের দোকান। লাখ লাখ টাকার বাহারী ফুল এখান থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌছে যাচ্ছে। জমির নিজেও ফুল সমিতির সভাপতি। তিনি আশশা করছেন তিন উৎসবকে ক্রেন্দ করে জেলায় ৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে। এদিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে বাজার ধরতে ফুল পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষীরা। গাদা, গোলাপ, জারবেরাসহ অন্যান্য ফুলের জমিতে সেচ দেওয়া থেকে শুরু করে মান ভালো রাখতে পোকা দমনে নানা ধরনের ছত্রাক নাশকও স্প্রে করা হচ্ছে। অনেকে আবার ক্ষেতেই রেখে দিচ্ছেন ফুল। তবে পরিচর্যার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার কথা জানান কৃষি বিভাগ। চলতি মৌসুমে জেলায় ফুলের আবাদ হয়েছে ১৬৮ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে গাদা ফুলের পরিমানই শতকরা ৬৫ ভাগ। দেশের মোট গাদা ফুলের চাহিদার সিংহ ভাগই পুরণ হয় ঝিনাইদহের ফুলের মাধ্যমে। আসা করা হচ্ছে চলতি মৌসুমে ২১শে ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ৫০ কোটি টাকার বেশি ফুল বিক্রয় হবে। ফুটে আছে লাল, হলুদ, কমলা রঙের জারবেরা, কোথাও গাদা ফুল গাছে এসেছে কুড়ি, কোথাও বা ফুটেছে ফুল। এমনই চিত্র ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকার ফুল ক্ষেতের। এই ক্ষেতগুলোতে চাষীরা দিনান্ত পরিশ্রম করে চলেছে পরিচর্যায়। ফুল চাষীরা বলছেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্ত আর আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবস। এই উৎসব ঘিরে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুন। দামও হয় অনেক বেশী। তাই শেষ মুহূর্তের পরিচর্যা চলছে। সামনের বাজার পেতে অনেক ফুলই ক্ষেতে রেখে দেওয়া হয়েছে। এদিকে ফুল ব্যবসায়ীরা বলছেন, আজ ১৪ ফেব্রয়ারি থেকে চাহিদা ও দাম বেড়ে যাবে কয়েকগুন। প্রতিদিন এক একটি বাজারে গড়ে ৫০ লাখ থেকে ৬০ লাখ টাকার ফুল বিক্রি হবে। বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসে হলুদ কালারের ফুলের চাহিদা সব থেকে বেশী। ফুল ব্যাবসায়ী সমিরি সভাপতি জমির উদ্দীন জানান, এবছর ফুলের বাজার চড়া। বৈশ্বিক মন্দা ও সব কিছুর দাম বৃদ্ধির কারণে ফুলের দামও বেড়েছে। তিনি আশা করছেন এসব সত্তেও ফুল প্রেমীরা প্রিয়জনকে হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিতে ভুলবেন না। ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আজগর আলী বলেন, ফুলের শেষ মুহূর্তের পরিচর্যা ও ফুল সংরক্ষণে কৃষকদের নিয়মিতই পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে এবার পদ্মা সেতু চালুর ফলে ঢাকা, চট্রগ্রাম সহ বিভিন্ন স্থানে যানজটের বিড়ম্বনা ছাড়াই সঠিক সময়ে ফুল পৌছাতে পারবে ব্যবসায়ীরা। গ্রাহকরাও পাবে তাজা ফুলের সুগন্ধ।

    ঝিনাইদহ
    আতিকুর রহমান

  • পাইকগাছায় মুকুলে ভরে গেছে আম গাছ

    পাইকগাছায় মুকুলে ভরে গেছে আম গাছ

    ইমদাদুল হক,পাইকগাছা,খুলনা।। পাইকগাছার বিভিন্ন এলাকার আমের গাছে মুকুল সৌরভ ছড়াচ্ছে। সুমিষ্টি ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে প্রকৃতি। বসন্তের শুরু থেকেই মুকুলে শোভা পাচ্ছে গাছ। মৌমাছির দল গুনগুন করে ভিড়তে শুরু করছে আমের মুকুলে। মুকুলের সেই সু-মিষ্টি সুবাসে আন্দোলিত হয়ে উঠেছে চাষীর মনও। এ বছর আশানারুপ মুকুল না হওয়ায় পরও মনে আশা নিয়ে আমচাষি ও বাগান মালিকরা বাগানের পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অবশ্য গাছে মুকুল আশার আগে থেকেই গাছের পরিচর্যা করে আসছেন তারা। যাতে করে গাছে মুকুল বা গুটি বাঁধার সময় কোন সমস্যার সৃষ্টি না হয়।
    পাইকগাছাসহ উপকুল এলাকায় চলতি বছর অনেক দেরিতে আম গাছে মুকুল বের হওয়া শুরু হয়েছে। অধিকাংশ গাছের মুকুল ভালো হয়েছে। কোন গাছের একটি দুইটি ডালে মুকুল বের হয়েছে আর বাকী ডালের পল্লবে মুকুল হয়নি। অনেক গাছে কোন মুকুলই বের হয়নি। হিসাবে শীতের মধ্যে অতি বৃস্টি ও ঝড়ো হাওয়া এর কারণ হিসাবে বিবেচনা করছে কৃষিবীদরা।
    পাইকগাছার কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্যে ৪টি ইউনিয়ন গদাইপুর, হরিঢালী, কপিলমুনি, রাড়ুলী ও পৌরসভা ছাড়া বাকি ইউয়িনগুলোতে সীমিত আমের গাছ রয়েছে। উপজেলায় ৫৮৫ হেক্টর জমিতে মোট আম গাছ রয়েছে। গাছের সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার। কিছু কিছু পরিকল্পিত আম বাগান রয়েছে। এসব বাগানে সর্বনিন্ম ১০টি গাছ রয়েছে। ৫ শতক, ১০ শতক, ১ বিঘা ও ৩ বিঘা পর্যন্ত আমের বাগান রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নে ছড়ানো ছিটানো আম গাছ আছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এসব বাগানের ৮০/৭৯০ ভাগ গাছে মুকুল ধরেছে।তবে গাছের একটি দুইটি ডালে মুকুল বের হয়েছে আর বাকী ডালের পল্লবে মুকুল হয়নি। অনেক গাছে কোন মুকুলই বের হয়নি।১০/১৫ ভাগ আম গাছে কোন মুকুল বের হয়নি। তবে এখনো সময় আছে আরো কিছু গাছে মুকুল বের হতে পারে এমন আশা করছে চাষী ও বাগান মালিকরা। আম বাগান থেকে চলতি মৌসুমে ৫ হাজার ৮ শত মেট্রিক টন আমের ফলন পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তারপরও বাগান মালিক, কৃষিবিদ, আমচাষিরা আশা করছেন বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উপজেলায় আমের ফলন আশানারুপ হবে।উপজেলায় মল্লিকা, চুষা, আশ্বিনা, ল্যাংড়া, হিমসাগর, ফজলি, লতা, বারি ৪, আম্রপলি, গোপালভোগ সহ অন্যান্য জাতের আম চাষের হয়। সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ও বাগান মালিক জানান, নিয়মিত পরিচর্যা, গাছের গোড়ায় বাঁধ দিয়ে পানি সেচের কারণে সব বাগানে গাছগুলো নিয়মিত খাদ্য পাচ্ছে। ফলে আশানুরূপ ফলন বাড়ছে।
    উপজেলার কপিলমুনি, গদাইপুর, হরিঢালী, রাড়ুলী, পৌরসভা, চাঁদখালীসহ বিভিন্ন এলাকা আম বাগানের গাছে মুকুল ভালো হয়নি, এমনই চিত্র দেখা গেছে। কপিলমুনি ইউনিয়নের বিরাশী গ্রামের পুরস্কারপ্রাপ্ত আম চাষি অখিলবন্ধু ঘোষ জানান, বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। বাগানের আম গাছে মুকুল আসা শুরু করেছে। আমরা কৃষি বিভাগে গিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ গ্রহণ করছি। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও আমাদের বাগানে এসে আমের বাগান ভাল রাখার জন্য বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। পুরোপুরিভাবে শীত বিদায়ের আগেই মুকুল না আসলে ভাল ফলন ভালো হবে না। ঘন কুয়াশায় মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যদিও ফাগুনে কুয়াশার আশংকা কম তারপরও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রকৃতির বিরূপ আচারণে আমের মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।হরিঢালীর আকবর হোসেন, গদাইপুরের মোবারক ঢালী, তকিয়ার মুজিবর গাজীসহ বিভিন্ন এলাকার আম ব্যবসায়ীরা জানান, ঋণ করে আগাম আম বাগান নিয়েছে। অনেক চাষী আম বিক্রি ঋণের টাকা পরিশোধ করবে।আমের মুকুল বের হওয়া আর ফলনের উপর নির্ভর করছে করছে আম চাষির সপ্ন।
    কুষিবিদরা জানান, আমগাছের বহু সমস্যার মধ্যে একটি বড় সমস্যা হলো প্রতি বছর ফুল ও ফল না আসা। দেখা গেছে, একেবারেই ফুল হয় না বা হলেও কোনো কোনো বছর খুব কম হয়। যখন অনেক গাছে এক বছর খুব ফুল হয় আর পরের বছর একেবারেই হয় না বা খুব সামান্য হয় এবং তৃতীয় বছর আবার খুব বেশি ফুল আর চতুর্থ বছর কিছুই না বা কম অর্থাৎ এরা একটু ছন্দের মতো চলে। এই রকম হলে বলা হয় ‘অলটারনেট বা বায়িনিয়াল বেয়ারিং’। আবার যেসব গাছে হয়তো এক বছর খুব বেশি ফুল হলো, তারপর দু-তিন বছর হলো না বা কম হলো, কিংবা পরপর দু’তিন বছর বেশ ফুল হলো তারপর এক বছর বা কয়েক বছর বন্ধ থাকে অর্থাৎ এরা একটু এলোপাতাড়ি ধরনের। এদের বলা হয় ‘ইরেগুলার বেয়ারার’। এই দুটি সমস্যা অনেক আমগাছে দেখা যায়। যে বছর খুব বেশি ফুল হয়, সেই বছরটিকে উদ্যান বিজ্ঞানে বলা হয় ‘অন ইয়ার’, আর বিনা ফলন বা কম ফলনের বছরকে বলা হয় ‘অফ-ইয়ার’। আমের একটি ডালে মুকুল আসতে হলে, ফুল আসার আগে ডালটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে শর্করা ও নাইট্রোজেন দুই-ই থাকতে হবে আর শুধু তাই নয়, শর্করার ভাগ নাইট্রোজেনের ভাগের চেয়ে যথেষ্ট বেশি থাকতে হবে তবেই মুকুল আসবে। আর যদি দুটির ভাগ সমান হয় বা বিশেষ করে ডালটির নাইট্রোজেনের মাত্রা শর্করার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে ঐ ডালটির ডগায়, বসন্তকালে মুকুল আসার বদলে পাতা এসে যাবে। আম গাছের এই সমস্যাটির জন্য উদ্ভিদ হরমোন ‘অক্সিন’, ‘জিবেরেলিন’ ও বিশেষ করে ‘গ্রোথ ইনহিবিটর’ জাতীয় হরমোনগুলো দায়ী বলে মনে করা হয়।
    মাটিতে প্রয়োজনীয় পানি/রসের অভাব হলে সার প্রয়োগের পর সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। ফিডার রুটগুলো গাছের গোড়া থেকে দূরে থাকে। যে বছর গাছে প্রচুর ফুল আসে, সে বছর যদি গাছের অধের্ক ফুল ভেঙে দেয়া হয়, তাহলে গাছের সেই অংশ নতুন শাখা উৎপন্ন করবে। আগামী বছর সেই অংশে ফুল ও ফল উৎপন্ন করবে। এভাবে আম গাছ থেকে নিয়মিত ফলন পাওয়া যেতে পারে।
    বাণিজ্যিক জাত যেমন, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, খিরসাপাত, আশ্বিনা ইত্যাদির অলটারনেট বেয়ারিং হ্যাবিট আছে এবং বারি আম-১, বারি আম-২, বারি আম-৩, বারি আম-৪ ইত্যাদি রেগুলার বেয়ারর জাত। তাই বাগানে শুধু ‘অলটারনেট বেয়ারার’ জাতের গাছ না লাগিয়ে, অন্তত কিছুসংখ্যক ‘রেগুলার বেয়ারার’ জাতও লাগানো উচিত। এতে প্রতি বছরই বাগান থেকে কিছু না কিছু ফলন পাওয়া যাবে। বাগানের গাছগুলোকে অধিক উৎপাদনক্ষম করার জন্য অবশ্যই আম বাগান বছরে ৩ বার বর্ষার আগে, বর্ষার পরে ও শীতকালে লাঙল, পাওয়ার টিলার অথবা কোদাল দ্বারা কুপিয়ে ভালোভাবে গভীর চাষাবাদ করতে হবে। ফলে বাগানের আগাছা মারা যাবে এবং মাটির সাথে মিশে জৈবসারে পরিণত হবে। মাটির ভেতরকার পোকামাকড়ও মরে জৈব পদার্থ হিসেবে মাটিতে যোগ হবে। তাছাড়া মাটির আর্দ্রতা ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং পুষ্টি উপাদানগুলো গাছের গ্রহণের উপযোগী হবে।
    উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমাদের পাইকগাছায় ৯০ ভাগ গাছে মুকুল চলে এসেছে, চাষীদের ফুল ফোটার অবস্থায় কোন ঔষধ বা কীটনাশক ব্যবহার না করতে বলা হয়েছে। তিনি আরও জানান, এ সময়ে বাগানে হপার এবং ফুদকী পোকা গুলো গাছের বাকলে লুকিয়ে থাকে। এ ধরনের পোকা খুব বেশী দেখা দিলে অনুমোদিত কীটনাশক নাশক স্প্রে করার পরামর্শ প্রদান করছি। কুয়াশার কারণে আমের মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হতেপারে। এজন্য অনুমোদিত সালফার বা বালাই নাশক স্প্রে’র পরামর্শ দিয়েছেন। আবহাওয়া যদি রৌদ্রজ্জ্বল হয় এবং তাপমাত্রা বাড়ে তবে গুটি ভালো হবে।

    ইমদাদুল হক,
    পাইকগাছা(খুলনা) প্রতিনিধি।।

  • বড়ই চাষে সফল- ইউনুছ ভূঁইয়া

    বড়ই চাষে সফল- ইউনুছ ভূঁইয়া

    মোঃতরিকুল ইসলাম তরুন, কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ
    কুমিল্লার সবচেয়ে বড় বড়ই বাগান মুরাদনগর উপজেলার কাজিয়াতল। বিদেশ ফেরত ইউনুছ ভূঁইয়া গড়েছেন এই বাগান। তিন বছরে বিক্রি করেছেন অর্ধ কোটি টাকার বড়ই। ইউনুছ ভূঁইয়া চৌদ্দ বছর সৌদি প্রবাস জীবন শেষে দেশে আসেন ২০২০ সালে। করোনার বেকার সময়কে কাজে লাগিয়ে হয়ে উঠেন সফল উদ্যোক্তা। নীজের ১০ বিঘা জমির সাথে আরো ৫০ বিঘা পতিত জমি লিজ নেন তিনি। পুরো জায়গা জুড়ে মাছের প্রজেক্ট করে মাছ চাষ করেন। নানা প্রতিকুলতায় মাছের ব্যবসায় লোসান হয় তাকে।
    তাতে ভেঙে যাননি তিনি। সফল হওয়ার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে মাছের প্রজেক্টকে ফলের বাগান বানানো কাজ শুরু করেন। তার এই কাজ দেখে মানুষ উপহাস ও ঠাট্রা -বিদ্রুপ করতে থাকেন। কারণ মাছের প্রজেক্টের ভীতর কিভাবে ফলবাগান হয় ? পানিতে সব গাছ ডুবে মরে যাবে। কেউ কেউ তাকে পাগলও বলেন। লোকের কথায় কান না দিয়ে তিনি তার কাজ করতে থাকেন। বিশ্বাস ছিল সফল হবেন। ইউটিউব ও উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় মাছের প্রজেক্টের ভীতর লাগিয়েছেন ৩ হাজার বড়ই, ৭ হাজার লেবু, ৮শ কলা গাছ, মাল্টাসহ নানা জাতের সাথী ফসল ফলিয়ে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেন । এই মূহর্তে তার বাগানে বড়ইয়ের চমৎকার ফলন রয়েছে। গাছের পাতায় পাতায় বড়ই দোলছে। বল সুন্দরী জাতের বড়ই দেখতে খুবই সুন্দর। খেতে মিষ্টি- অধিক রসালো ও পুষ্টিগুনে ভরপুর। তিন হাজার বড়ই গাছ থেকে ৩ বছরে বিক্রি করেছন প্রায় অর্ধ কোটি টাকার বেশি বড়ই।

    কৃষক ইউনুছ ভূইয়া বলেন, আমি বিদেশে ছিলাম। সেখানে কৃষি খামারের তত্ত¡াবধানে কাজ করেছি। দেশে এসে কোভিডের কারনে আর বিদেশ যেতে পারি নাই। বেকার হয়ে পড়ছিলাম। অনেক ভাবনা চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেই যে আর অন্যের অধীনে চাকুরী করবো না। এবার উদ্যেক্তা হয়ে নীজেই কিছু একটা করব। যেই ভাবা সেই কাজ। তাই আমার পরিত্যাক্ত ১০ বিঘা জমির সাথে আরো ৫০ বিঘা জমি লীজ নিয়ে একটি মাছের প্রজেক্ট তৈরি করি। দুই বছর পর আরো ৫ বিঘা জমি ক্রয় করেছি।

    মাছের ব্যবসা ভালো না হওয়ায় প্রজেক্টের ভীতর বড়ই ও লেবুর বাগান করার সিদ্ধান্ত নেই। মাছের প্রজেক্টের মত নীচু জায়গায় ফলবাগান করছি দেখে এলাকার মানুষ আমাকে পাগল বলছে। সমালোচকদের কথায় কান না দিয়ে নাটোর থেকে আড়াই মাস বয়সী বড়ই ও লেবুর চারা এনে রোপন করি । চারা রোপনের ৩ মাস পর বাগানের প্রতিটা গাছে বড়ই আসে। প্রথম বছর প্রায় দেড় লাখ টাকার বড়ই বিক্রি করেছি। পরের বছর ৩০ লাখ, এবছর ঘুর্ণিজড় সিতরাংয়ের কারণে কম হলেও আশা করছি ২৫ লাখ টাকার বড়ই বিক্রি হবে।
    একটি গাছে ৩০ থেকে ৪০ কেজি বড়ই আসে । পাইকারদের কাছে ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। বাগানে প্রতিদিন ১০ জন শ্রমিক কাজ করে। এছাড়াও বাগান নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষনিক দুইজন লোক নিয়োজিত আছে। আমার বিশ্বাস ছিল সফল হবো এবং হয়েছি।

    মুরাদনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পাভেল খান পাপ্পু বলেন, কুমিল্লার সবচেয়ে বড়-বড়ই বাগান কাজিয়াতল । আমি ও উপসহকারী কর্মকতারা রীতিমত এই কৃষি প্রজেক্টটি দেখাশোনা করছি। কৃষক ইউনুছ ভূইয়ার মত যারা উদ্যোক্তা হয়ে পরিত্যাক্ত জমিতে বাগান ও কৃষি কাজ করতে চায় আমরা তাদের সর্বাত্তক সহযোগীতা দিয়ে পাশে থাকবো।

  • পাইকগাছায় সাদা ফুলে ভরে গেছে সজিনা গাছ

    পাইকগাছায় সাদা ফুলে ভরে গেছে সজিনা গাছ

    ইমদাদুল হক, পাইকগাছা,খুলনা।।
    পাইকগাছায় সাদা সাদা ফুলে ভরে গেছে সজিনা গাছ। ডালের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ফুল আর ফুল। এ সময় সজিনা গাছের পাতা ঝরে পড়ে। তাই পাতা শুন্য ডালে থোকা থোকা সাদা ফুলের শোভা দেখে সকলে মোহিত হচ্ছে।
    উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ২৫ হাজার ৫ শত সজিনা গাছ আছে। প্রতি বাড়ীতে কমপক্ষে ৩/৪ টি গাছ রয়েছে। এসব গাছ বাড়ীর পাশে ও ক্ষেতের আইলে লাগানো। যতœ ছাড়াই এসব গাছ বেড়ে উঠেছে। গাছে ফলনও বেশী হয়। প্রতি বছর সজিনার শাখা বা ডাল রোপন করা হয়েছে। রোপনকৃত ডালের প্রায় ৩০ শতাংশ মারা যায়।
    দেশে ২টি জাত আছে, একটি হালো সজিনা ও আর একটি নজিনা। সজিনার ফুল আসে জানুয়ারীতে আর নজিনা ফুল আসে মার্চ মাস থেকে। তবে সব ফুল থেকে ফল হয় না। একটি থোকায় সর্বাধিক ১৫০টি মত ফুল ধরে। ফুল ৪০ সেঃ মিঃ থেকে ৮০ সেঃ মিঃ পর্যন্ত লম্বা হয়। ফুল ফুটার ২ মাস পর ফল তোলা যায়। একটি বড় গাছে ৪’শ থেকে ৫’শ ফল ধরে। প্রতিটি ফলে ৩০-৪০ টি বীজ হয়। দেশে সাধারণ ডাল কেটে ডাল রোপন করে সজিনা গাছ লাগানো হয়। ভারত থেকে হাইব্রিড সজিনার জাত এদেশে এসেছে। এ জাতের বীজ বপন করে লাগাতে হয়। হাইব্রিড জাতের সজিনা গাছে দু’বার ফুল আসে। ফেব্রুয়ারী-মার্চ ও জুন-জুলাই মাস। গত বছর উপজেলায় ২১ হাজার সজিনার ডাল রোপন করা হয়েছে। এরমধ্যে ৭ হাজার ডাল জীবিত রয়েছে। সজিনার মৌসুম শেষে এ বছরও ডাল রোপন করা হবে। সজিনা চাষিরা উচ্চ মূল্য পাওয়ায় সজিনার ডাল রোপন করতে উৎসাহিত হচ্ছে। বসতবাড়ীর আশে পাশে রাস্তার ধারে ক্ষেতের আইলে লাগানো সজিনা গাছ যতœ ছাড়াই অবহেলার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে। সজিনা পুষ্টি ও ভেজষ গুনে ভরা সবজি হিসাবে খুব দামী। সজিনার ব্যাপক চাহিদা ও উচ্চ মুল্যে বিক্রি হওয়ায় উপজেলার কৃষকরা এখন পতিত জমিতে পরিকল্পিতভাবে সজিনা গাছ লাগিয়ে লাভবান হচ্ছে।
    সজিনা বিশ্বের অন্যতম প্রয়োজনীয় একটি বৃক্ষ। অলৌকিক গাছ হিসাবে সজিনা পরিচিত। ইংরেজিতে সজিনার নাম “ড্রামস্ট্রিক” যার অর্থ ঢোলের লাঠি। নামটি অদ্ভুত হলেও এটি এমটি অতিপ্রয়োজনীয় জীবন রক্ষাকারী উদ্ভিদ। এ গাছের পাতা, ফুল, ফল, ব্যাকল ও শিকড় সবই মানুষের উপকারে আসে। সজিনার পুষ্টি গুন অনেক বেশী। এ গাছের অনেক গুন থাকায়, এ গাছকে যাদুর গাছ বলা হয়। কাঁচা সবুজ পাতা রান্না করে, ভত্তা করে ও বড়া ভেজে খাওয়া যায়। ফল সবজির মত রান্না করে খাওয়া যায়, ফল পাকলে সে সব ফলের বীজ বাদামের মতো ভেজে খাওয়া যায়। সজিনার পাতা, ফল, ফুল, বীজ, ছাল, মুলের ভেজষ গুনও আছে। তাই সজিনা গাছের বিভিন্ন অংশ ভেজষ চিকিৎসায় কাজে লাগে। সজিনার পাতার পুষ্টিগুন বেশী, যেভাবে খাওয়া হোক না কেন তা শরীরে পুষ্টি যোগাবে, আর ঔষধীগুন তো আছেই। সজিনার পাতায় যে পরিমাণ পুষ্টি রয়েছে তা অনেক পুষ্টিকর খাবারেও নেই। যেমন, ডিমের চেয়ে বেশী আমিষ, দুধের চেয়ে বেশী ক্যালশিয়াম, কমলার চেয়ে বেশী ভিটামিন সি, কলার চেয়ে বেশী ক্যালশিয়াম, গাজরের চেয়ে বেশী ভিটামিন এ আছে। তাছাড়া সজিনার পাতা গুড়ো করে খাওয়ায় অন্তত ১৬টি উপকারী কথা জানা গেছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, চোখ ও মস্তিস্কের পুষ্টি যোগায় প্রভৃতি। সজিনা সবজি যেমন উপদেয় এর ভেজষ গুনও অসাধারণ। মৌসুমী নানা রোগব্যাধী নিরাময় ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি করতে অত্যন্ত কার্যকর। বিশেষ করে জন্ডিস, বসন্ত, মূত্র সংক্রান্ত সমস্যা প্রাচীনকাল থেকে সজনে নানা ব্যবহার করে আসছে ইউনিয়ানী ও আয়ূর্বেদ চিকিৎসকরা।এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, ঠান্ডা-গরম, লবণ, খরা সহিষ্ণু এ গাছ বাংলাদেশের সর্বত্রই জন্ম নেয়। এ উপজেলার লবণাক্ত মাটিতে সজিনা আবাদ ভাল হচ্ছে। উপজেলার প্রতি বাড়ীতে কমবেশি ৫/৬টি করে সজিনা গাছ আছে। এ বছর সজিনা গাছে ব্যাপক ফুল ধরেছে। বড় ধরণের দূর্যোগ না হলে সজিনার বাম্পার ফলন আশা করা যায়। সজিনা পুষ্টিকর সবজি হিসাবে ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের পরিকল্পিতভাবে সজিনা ক্ষেত গড়ে তোলার জন্য উদ্ভুদ্ধ করা হচ্ছে।