Category: কৃষি

  • পাইকগাছায় বারোমাসি আমের চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষীদের

    পাইকগাছায় বারোমাসি আমের চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষীদের

    ইমদাদুল হক, পাইকগাছা(খুলনা)।।
    পাইকগাছায় বারোমাসি আমের ফলন ভালো হয়েছে। আম বাগানে মুকুলের সঙ্গে শোভা পাচ্ছে আম। গাছের এক ডালে মুকুল তো অন্য ডালে আম ঝুলছে। আমের আকার এবং রংও হয়েছে বেশ আকর্ষণীয়। শরতের এই সময়ে বাগানে গাছ ভরা আম ছড়াচ্ছে আকর্ষণ ও সৌরভ। গাছে বারোমাস আম ধরে বলে এ আমের নাম রাখা হয়েছে বারোমাসি। গাছের আকৃতি ছোট। আম খেতে সুস্বাদু। একই গাছে মুকুল, গুটি ও পাঁকা আমের নজরকাড়া দৃশ্য দেখতে কৌতুহলীরা ভীড় করছে।বারোমাসি আমের ফলন ভালো হওয়ায আম বাগানের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
    পাইকগাছায এখন যেসব আমগাছে মাত্র মুকুল ধরেছে, সেসব আমের গাছ থাইল্যান্ডের কাটিমন জাতের। এ জাতের গাছ থেকে বছরে তিনবার আম পাওয়া যায়। কাটিমন আম বারোমাসি জাতের বছরে তিনবার ফল প্রদান করে থাকে। নভেম্বর, ফেব্রুয়ারি ও মে মাসে গাছে মুকুল আসে এবং মার্চ-এপ্রিল, মে-জুন এবং জুলাই-আগস্ট মাসে ফল আহরণের উপযোগী হয়। ফল লম্বাটে এবং প্রতিটি আমের গড় ওজন ২০০-৩০০ গ্রামের হয়ে থাকে। কাঁচা অবস্থায় ত্বক হালকা সবুজ এবং পাকলে হলুদে সবুজ ভাব রং হয়।
    দেশে এখন অন্তত বারোমাসি সাতটি জাতের আম চাষ হচ্ছে, যেগুলোকে অসময়ের আম বলা হয়। কাটিমন ছাড়া বাকি জাতগুলো হলো বারি-১১, কিং অব চাকাপাত, কিউজাই, বানানা ম্যাঙ্গো, তাইওয়ান গ্রিন, মিয়াজাকি অর্থাৎ সূর্যডিম। এসব আমের যেমন বাহারি নাম, দেখতেও তেমন নজরকাড়া। বারি- ১১ ও কাটিমন আমের জাত আবার বারোমাসি।
    অসময়ের আমের মধ্যে এখন দুটি জাতের বাগান বেশি হচ্ছে। থাই কাটিমন ও বারি- ১১। বারি আম ১১ বারোমাসি জাতের আম সারা বছরই ফল দিয়ে থাকে। বছরে তিনবার ফল পাওয়া যায়। নভেম্বর, ফেব্রুয়ারি ও মে মাসে গাছে মুকুল আসে এবং মার্চ-এপ্রিল, মে-জুন এবং জুলাই-আগস্ট মাসে ফল আহরণের উপযোগী হয়। কাঁচা আমের ত্বক হালকা সবুজ। আর পাঁকলে ত্বক হয় হলুদাভ সুবজ।
    আম গাছটির উচ্চতা ৬-৭ ফুট। গাছটির কোনো অংশে মুকুল, কিছু অংশে আমের গুটি, কিছু অংশে কাঁচা আম, আবার কোথাও পাঁকা আম। একটি গাছেই ফুটে উঠেছে আমের ‘জীবনচক্র’। এটি খেতে সুস্বাদু, তবে একটু আঁশ আছে। ফলের শাঁস গাঢ় হলুদ বর্ণের। এই জাতের ৪-৫ বছর বয়সী গাছ থেকে প্রতিবার ৬০-৭০টি আম আহরণ করা যায়। এছাড়াও এই জাতের একটি গাছে বছরে প্রায় ৫০ কেজি পর্যন্ত আম হয়ে থাকে। বারি আম ১১ এর এক বছর বয়সী গাছে আমের মুকুল আসে। আম গাছের একটি থোকার মধ্যে ৫-৬ টি আম থাকে। আমের উচ্চফলনশীল এই জাতটি বাংলাদেশের সব এলাকায় চাষ উপযোগী। আমের আকার এবং রং ও হয় বেশ আকর্ষণীয়।
    উপজেলার কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় বারোমাসি আমের একক কোন বাগান গড়ে উঠেনি। তবে বিভিন্ন গ্রামের গাছ লাগানো হয়েছে।আরও জানা গেছে, ১০/১২ বছর আগে নার্সারীর মালিক আক্তারুল দো-ফসলি আমের আবাদ করে এলাকায় সাড়া ফেল।এরপর পাইকগাছার রজনীগন্ধা নার্সারীর মালিক সুকনাথ পাল ২০২০ সালে বারোমাসি আমের চারা রোপণ করেন। রোপণের পরের বছরেই ফল ধরে। এ বছর তার আম বাগান থেকে প্রায় ১০ মন আম বিক্রি করেছেন। তার নার্সারীতে প্রায় ২ হাজার বারোমাসি আমের ছোট ছোট চারা রয়েছে।ছোট চারা ৩০-৫০ টাকা দরে বিক্রয় করছেন। সততা নার্সারীর মালিক অশোক পালের নার্সারীতে বারোমাসি কাটিমন জাতের আমের ফলন ভালো হয়েছে। ৬/৭ ফুট একটি গাছে ১৫/২০ টি করে আম ধরেছে। তার নার্সারীতে প্রায় শতাধিত বারোমাসি আমের চারা রয়েছে। ছোট চারা ৫০ টাকা ও ৬/৭ ফুট উঁচু চারা ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আমগাছগুলোতে সারা বছর আম ধরে। গাছে কখনো মুকুল, কখনো আমের গুটি আর কখনো বড় আম দেখা যায়। বাগানে আমের জাতের মধ্যে রয়েছে থাই কাটিমন, বারি-৪, কিউজাই ও ব্যানানা ম্যাঙ্গো।
    পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বারি আম -১১ বা বারমাসি আমের এই জাতটি এখন বাংলাদেশের সব উদ্যানতত্ব গবেষণা কেন্দ্রে ও নার্সারীতে চাষ হচ্ছে। আমের এই জাতটি দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দেশের সকল আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কাজ করে যাচ্ছে।পাইকগাছার উপকূল এলাকায় যার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে নার্সারী মালিকরা।

  • পাইকগাছায় কাগজি লেবুর বাম্পার ফলন;দাম কমে চাষী হতাশ

    পাইকগাছায় কাগজি লেবুর বাম্পার ফলন;দাম কমে চাষী হতাশ

    ইমদাদুল হক,পাইকগাছা (খুলনা)।।
    পাইকগাছায় কাগজি লেবুর বাম্পার ফলন হয়েছে। চাহিদা ও কম মূল্যে বাগান মালিক হতাশ। আর বাজারে লেবুর চাহিদা কম থাকায় ব্যবসায়ীদের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে।
    উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ছড়ানো ছিটানো ভাবে প্রায় ২২ হেক্টর জমিতে কাগুজি লেবুর চাষ হয়। সব মিলিয়ে উপজেলায় ৫০ হাজারের উপরে লেবুর গাছ আছে। উপজেলার গদাইপুর, হরিঢালী, কপিলমুনি ও রাড়ুলী ইউনিয়নে আংশিক এলাকায় লেবুর বাগান রয়েছে। গদাইপুর ইউনিয়নের মটবাটী, হিতামপুর,গদাইপুর ও গোপালপুর গ্রামে বাণিজ্যিক ভাবে লেবুর বাগান গড়ে উঠছে। বিশেষ করে বাগান মালিকরা বাগানের বেড়া দিতে প্রয়োজনীয় বাঁশের মূল্য বেশি হওয়ায় তারা বাগানের চারপাশে সীমানা দিয়ে লেবু গাছ লাগিয়ে বাগান সুরক্ষা করছে। লেবু গাছে ছোট ছোট কাঁটা থাকায় গরু, ছাগল, ভেড়া প্রবেশ করতে পারে না। একদিকে বেড়া দেয়ার খরচ বাঁচে ও অন্যদিকে আইলে লেবু গাছ লাগিয়ে বাগান মালিকরা লাভবান হচ্ছে।
    ঔষধী গুণেভরা কাগজি লেবু সকলের প্রিয়। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কাগজি লেবু না হলেই নয়। এপ্রিল মাসে লেবু গাছে ফুল ধরে। জুন ও জুলাই মাস লেবুর ভরা মৌসুম থাকে। এক একটি লেবু গাছে ৫শ থেকে ১ হাজার লেবুর ফলন হয়। উপজেলার চেচুয়া গ্রামের লেবু ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম জানান, এ বছর লেবুর ব্যবসা খুব খারাপ যাচ্ছে। তারা লেবু বাগানে মালিকের কাছ থেকে প্রতিটি লেবু ৫০-৭৫ পয়সা দরে ক্রয় করেছে। এ বছর স্থানীয় বাজরেও চাহিদা নেই লেবুর। এলাকার হাট-বাজারে খুচরা ছোট লেবু ১ টাকা ও বড় লেবু ২টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। গদাইপুর গ্রামের লেবু বাগান মালিক আবুল কাশেম বলেন, এ বছর লেবুর চাহিদা নেই, দামও কম। গাছের লেবু হলুদ হয়ে ঝরে পড়ছে। তা ছাড়া এ বছর বারোমাসি লেবুও প্রচুর পরিমানে ধরেছে। কোন কোন গাছে একটি বোটায় চার থেকে কুড়িটি লেবু ধরেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: জাহাঙ্গীর আলম জানান, পাইকগাছা উপকূলের এ এলাকা লবণাক্ত হওয়ায় ৩/৪টি ইউনিয়নে কাগুজি লেবু আবাদ হয়। কাগজি লেবু লাভ জনক হওয়ায় ক্ষেতের আইলের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভিত্তিকে লেবু বাগান তৈরী শুরু হয়েছে। লেবু বাগান লাগাতে তেমন কোন খরচ হয় না, সামান্য পরিচর্যা করলে লেবু বাগান থেকে প্রচুর ফলন পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে কৃষি অফিস থেকে লেবু বাগান তৈরী করার জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

    প্রেরকঃ
    ইমদাদুল হক,
    পাইকগাছা,খুলনা।

  • নড়াইলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা

    নড়াইলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা

    উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে:
    নড়াইলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা।
    নড়াইল জেলার বিভিন্ন খাল-বিল ও জলাশয়ে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। ফলন ভালো হলেও পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে পারছেন না তারা। গত কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি নামলেও তাতে পর্যাপ্ত পানি জমছে না জলাশয়ে। ফলে চরম দুঃশ্চিন্তায় আছেন কৃষকেরা। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ বছর পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২৩৪৭০ হেক্টর জমিতে। সেখানে আবাদ হয়েছে ২৩৬৪৫ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭৫ হেক্টর বেশি জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এবং গতবছরের তুলনায় এ বছর ৩০৫ হেক্টর বেশি জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে।
    সরেজমিন জেলার বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, ডোবা-নালার সামান্য ময়লা পানিতে পাট জাগ দিচ্ছেন কৃষক। জাগ দেওয়ার জায়গা না থাকায় কেউ কেউ পাট কাটতে ভয় পাচ্ছেন। কারো কারো পাট কাটার পর পড়ে আছে জমিতে। কোথাও শ্যালো মেশিন দিয়ে জলাশয়ে পানি ভরে সেখানেই পাট জাগ দিচ্ছেন কৃষক।
    আবার কোথাও ক্ষেত থেকে গাড়িতে করে দূরবর্তী স্থানে নদীতে বা জলাশয়ে পাট নিয়ে যাচ্ছেন জাগ দিতে। এতে করে বাড়ছে পরিবহন খরচ। মৌসুমের শুরু থেকে সেচ দিয়ে চাষাবাদ করার পর এখন পাট পঁচাতেও গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। ফলে উৎপাদন খরচ উঠিয়ে লাভের মুখ দেখতে পারবেন কি না তা নিয়ে শঙ্কায় কৃষক।
    পৌরসভার দক্ষিণ নড়াইল এলাকার পাট চাষি নূর মিয়া বলেন, কোথাও পানি নেই। পাটের আটি প্রতি ৬-৭ টাকা দিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে করে পাট এনে অন্যের জায়গায় শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি ভরে জাগ দিতে হচ্ছে।
    সদর উপজেলার ডুমুরতলা গ্রামের পাট চাষি জুবায়ের মোল্যা বলেন, এ বছর পাট চাষের শুরু থেকেই বৃষ্টি নেই। সেচ দিয়ে পাট চাষ করতে হয়েছে। সেখানে অনেক খরচ হয়েছে। পোকা দমনে বিষ প্রয়োগ করতে হয়েছে। সার-ওষুধের দাম বেশি। এখন পাট কাটার সময় জলাশয়ে পানি নাই। জাগ ঢাকার উপকরণ কচুড়িপানাও নেই।
    উজিরপুর এলাকার এক কৃষক বলেন, পাটের ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু পাট নিয়ে এবার প্রধান সমস্যা হলো পানির সংকট। প্রথমে সেচ দিয়ে পাট চাষ শুরু করতে হয়েছে। এখন শ্যালো মেশিন দিয়ে বিভিন্ন জলাশয়ে পানি দিয়ে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। ফলে পাট চাষে এবছর খরচ বেড়েছে অনেক। পাটের দাম বৃদ্ধি না হলে লাভের মুখ দেখবে না কৃষক।
    কালিয়া উপজেলার বি. পাটনা গ্রামের কৃষক মনোজ সরকার বলেন, পাটের ফলন ভালো হলেও পাট জাগ দিতে সমস্যা হচ্ছে। ৮০০-৮৫০ টাকা পারিশ্রমিকে শ্রমিক দিয়ে মাঠ থেকে পাট কেটে নিয়ে জাগ দেওয়ার জায়গা নিতে হচ্ছে। তাদের এলাকায় যেসব জায়গায় পাট জাগ দিচ্ছে সেখানে পানি কম থাকায় পাটের মান খারাপ হচ্ছে। ফলে সেই পাটের বাজারদরও কম পাচ্ছে তারা।
    জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দীপক কুমার রায় বলেন, পাট চাষের শুরুর দিকে বৃষ্টি ছিল না বললেই চলে। পরবর্তীতে মে থেকে এখন পর্যন্ত সাড়ে ৪০০ মি.মি. বৃষ্টি হয়েছে। আশা করছি আরো বৃষ্টি হবে। কৃষক নির্বিঘ্নে পাট পচাতে সক্ষম হবেন। পাটের বাজারদরও সামনে বাড়বে বলে মনে করছেন এই কর্মকর্তা। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে।

  • পাটের দাম নিয়ে হতাশায় চাষিরা

    পাটের দাম নিয়ে হতাশায় চাষিরা

    রওশন আরা শিলা, নওগাঁ প্রতিনিধিঃ- সোনালি আঁশ খ্যাত পাটে বিখ্যাত নওগাঁর আত্রাই। এ জেলার মধ্যে আত্রাই উপজেলা পাট উৎপাদনে সেরা। গুনে-মানে সেরা আত্রাইয়ের পাট দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হয়। তাই এখানকার কৃষকদের ভালো-মন্দ নির্ভর করে পাট আবাদের সাফল্যের ওপর। জানা গেছে, নওগাঁর আত্রাইয়ের বিভিন্ন হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে পাট। সংসারের দৈনন্দিন খরচ মেটাটে উৎপদিত নতুন পাট হাট-বাজারে এনে ভালো দাম না পেয়ে রীতিমতো হতাশ চাষিরা। লাভ তো দুরের কথা উৎপাদন খরচও যেন উঠছে না। ফলে ফলন ভালো হলেও দাম না পেয়ে হতাশ পাট চাষিরা। সরেজমিনে দেখা যায়, আত্রাই, রাণীনগর, মান্দা, ধারমইহাট, মহাদেবপুর সহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিটি হাটেই নতুন পাট উঠতে শুরু করেছে। এবার সময় মতো পাট জাগের পানি না পাওয়ায়, অধিকমূল্য দিয়ে ডিজেল চালিত শ্যালো পাম্প দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে জাগ দিতে হয়েছে। অনেকেই পানির অভাবে মাটি খুঁরে পাট জাগ দিয়েছেন। এতে পাট চাষীদের খরচ বেড়েছে কয়েকগুন।পাটের বাজার হিসেবে প্রসিদ্ধ নওগাঁর আত্রাইয়ে আহসানগঞ্জহাট সপ্তাহে বৃহস্পতিবার হাট বসে এবং উপজেলার মির্জাপুর হাট সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার দুদিন বসে। তাই প্রান্তিক চাষিরা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে তাদের উৎপাদিত পাট নিয়ে আসে ঐ সব বাজার গুলোতে। উপজেলার আহসানগঞ্জ হাটে উৎপাদনের ভরা মৌসুমে প্রতিহাটে বিশ হাজার থেকে পঁচিশ হাজার মন পাট কেনাবেচা হয়। বর্তমানে আহসানগঞ্জ হাটে পাটের দাম রয়েছে দুই হাজার দুই শত থেকে দুই হাজার পাঁচ শত টাকা। তবে এ দামে সন্তষ্ট নন চাষিরা। এদিকে পাট ক্রেতাদের ভাষা, এবার পাটের গুনগত মান সঠিক নেই। পানির সমস্যার কারণে পাটের রং এবার নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে ভালো দামে পাট কিনতে পারছি না আমরা। আত্রাই উপজেলার ঘোষপাড়া গ্রামেরবাবর প্রামানিক সাংবাদিককে বলেন, গত বছর যে পাট প্রতিমন সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। রং খারাপ হওয়ায় সেই পাট এবার সর্বোচ্চ দুই হাজার থেতে দুই হাজার দুইশত টাকায় বিক্রি করছি।তাও ব্যবসায়ীরা নিতে চাচ্ছে না।খারাপ মানের পাটের প্রভাবে ভালো মানের পাটেও পড়েছে এর প্রভাব এবার। ভালো মানের পাট সবোচ্চ দুই হাজার ছয় শত থেকে তিন হাজারের উপরে বিক্রি করতে পারছি না। এতে কাঙ্খিত খরচও উঠবে না। অনেক লোকসান গুনতে হবে।পাট ব্যবসায়ী আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের ঘোষপাড়া গ্রামের আব্দুল গফুর বলেন,গত বছর একমন পাট পঁয়ত্রিশ শত থেকে আটত্রিশ শত টাকা পর্যন্ত পাটের দাম ছিল।তেল ও সারের দামও কম ছিল। এত কৃষকরা মোটামুটি ভাবে চলতে পারেছে। তবে এবার পাটের অবস্থা খুবই খারাপ। পানির অভাবে কৃষকরা সঠিক সময় ঠিকমত পাট জাগদিতে পারেনি। মাটি খুড়ে ও নোংরা-পঁচা পানিতে পাট জাগ দেয়ায় পাটের রং কালো হয়ে গেছে।আবার তেল সার ও দ্রব্যমূল্যের দামও বেশি।তিনি আরো বলেন আহসানগঞ্জ হাটপাটের জন্য একটি বড় হাট। এখানে সরকারি ও বেসরকারি পাটকল কর্তৃপক্ষের এজেন্ট রয়েছে। তারা চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি পাট ক্রয় করে থাকে। কিন্তু এবারে পাটের ভালো রং না থাকায় চাষিরা ভালে দর পাচ্ছে না। এ বিষয়ে আত্রাই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্ত সূত্রে জানা যায়,উপজেরায় এবার পাটের উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ পঙ্চাশ হাজার মেট্রিক টন।এর বিপরীতে লক্ষমাত্রা ছারিয়ে গেছে।একই সঙ্গে এবার পর্যাপ্ত পানি না থাকার কারনে একই পানিতে বারবার পাট পঁচানোর কারণে পাটের আঁশের গুনগত মান খারাপ হয়েছে। যে কারনে পাটের দামও কমেছে এতে কৃষকরাও চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।#

    রওশন আরা পারভীন শিলা
    নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি

  • সুন্দরগঞ্জে ধান কাটাইমারিতে কম্বাইন হারভেস্টারের চাহিদা বাড়ছে

    সুন্দরগঞ্জে ধান কাটাইমারিতে কম্বাইন হারভেস্টারের চাহিদা বাড়ছে

    মোঃ আনিসুর রহমান আগুন, গাইবান্ধা থেকেঃ
    গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ধান কাটাইমারিতে কম্বাইন হারভেস্টারের চাহিদা দিনদিন বেড়েই চলেছে।
    জানা গেছে,সুন্দরগঞ্জ উপজেলা দ্রুত কৃষি যান্ত্রিকীকরণ হচ্ছে কৃষক মহলে। আজকাল কম্বাইন হারভেস্টারের সাহায্যে আউশ ধান ( জাতঃ ব্রি ধান ৪৮) কর্তনসহ প্রতি মৌসুমে সব ধরনের ধান কাটাইমারিতে কম্বাইন হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কেটে নিতে আগের তুলনায় বর্তমানে কৃষক বেশি আগ্রহী হয়ে পড়ছে। এই যন্ত্রের সাহায্যে একই সাথে ধান কাটা, ধান মাড়াই ও ঝাড়াই করা যায়। এতে করে কৃষকের অনেক সময়, শ্রম ও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। একারণে কৃষির বাণিজ্যিক ধারনা দ্রুত সম্প্রসারণ হচ্ছে বলে জানা যায়। বুধবার উপজেলার দহবন্দ ইউনিয়নের জরমনদী গ্রামে কম্বাইন হারভেস্টারের দিয়ে কাটা পরিদর্শন করতে যান উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রাশিদুল কবির। এসময় তার সাথে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ মিজানুর রহমান, উপ-সহকারি কৃষি অফিসার মুশফিকুর রহমান, মিজানুর রহমান মণ্ডল প্রমূখ। এর আগে উপজেলার ছাপরহাটি ইউনিয়নে রংপুর বিভাগ কৃষি ও গ্রামীন উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মালটা ফল পরিদর্শন করতে যান ওইসব অফিসারগণ।

  • নড়াইলে ড্রাগন ফল চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা ব্যাপক সফলতা পাচ্ছেন তারা

    নড়াইলে ড্রাগন ফল চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা ব্যাপক সফলতা পাচ্ছেন তারা

    উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে:

    নড়াইলে ড্রাগন ফল চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। নড়াইলের লোহাগড়ায় ড্রাগন ফল চাষে অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেছেন সৈয়দ রওশন আলী। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও
    নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার এসএইচবিআর আলিম মাদরাসার সাবেক সিনিয়র শিক্ষক। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান, নড়াইল জেলায় ড্রাগন ফল চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। টক-মিষ্টি ও মিষ্টি স্বাদের ড্রাগনের চাষে ব্যাপক সফলতা পাচ্ছেন তারা। ৯০ শতাংশ জমিতে ড্রাগন চাষ করা কৃষকের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ফলটির চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মাঝে।
    স্বল্প মূলধন ও অল্প জায়গায় ড্রাগন চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন সৈয়দ রওশন আলী। তার সাফল্য দেখে ড্রাগন চাষে এগিয়ে এসেছেন এ উপজেলার অন্য কৃষকেরা। উপজেলার ৩নং শালনগর ইউনিয়নের শেখ পাড়া বাতাসি গ্রামের মাঠে ড্রাগন চাষ করেছেন তিনি।
    সৈয়দ রওশন আলী বলেন, একটি বীজতলা থেকে প্রতি ১৫ দিন পর পর অন্তত ২০০টি ফল সংগ্রহ করা যায়। তেমন রোগ বালাই না থাকায় একটু পরিচর্যায় অনেক ভালো ফলন পাওয়া যায়, ৭৩০টি খুঁটিতে চারা রোপণ করেছি, প্রতিটি খুঁটিতে পাঁচটি চারা রোপণ করে মোট ৩ হাজার চারা রোপণ করি। এতে প্রায় দশ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এপ্রিল থেকে মে মাসে ফুল আসে আর শেষ হয় নভেম্বর মাসে। ফুল আসার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফুল ফোটা এবং ফল ধরা অব্যাহত থাকে।
    তিনি আরও বলেন, একটি ফলের ওজন ২৫০ গ্রাম থেকে এক কেজির ও বেশি হয়ে থাকে। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে ১০০ থেকে ১৩০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে একটি গাছ হতে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব। ড্রাগন প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে ফল বিক্রি হয়। এ সময় চলতি মৌসুমে প্রায় পঁচিশ লাখ টাকার ফল বিক্রির আশা ব্যক্ত করেন তিনি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাউড়িখোলা গ্রামের শিক্ষিত যুবক প্রসাদ কুমার গাইন বলেন, বতর্মান যে অবস্থা তাতে চাকরি পাওয়া অনেক সমস্যা। আমি ড্রাগন বাগান করতে চাই। সৈয়দ রওশন আলী স্যারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে আমি এখান থেকে চারা নিয়ে ড্রাগন ফলের বাগান করব।
    আরেক যুবক মুনতাছির রাফি বলেন, ড্রাগন ক্ষেতটি খুব সুন্দর ও পরিপাটি। প্রতিটি গাছে ফুল ও ফল ধরছে। এছাড়া ড্রাগন ফলের দামও বাজারে বেশ ভালো পাওয়া যায়। এজন্য তিনিও ভাবছেন কিভাবে এটার আবাদ শুরু করবেন।
    ড্রাগন বাগানের এক কর্মচারী বলেন, সৈয়দ রওশোন আলী ভাইয়ের বাগান গড়ে তোলার শুরু থেকে আমি আছি। এখানে আমি দুই বছর ধরে কাজ করছি। এ বাগানটিতে কাজ করতে অনেক ভালো লাগছে।
    লোহাগড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার বলেন, সৈয়দ রওশন আলীর ড্রাগন চাষের সফলতা দেখে উপজেলায় অনেকেই এখন ড্রাগন ফলের চাষ করছেন। বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ বেশ জনপ্রিয় হলেও লোহাগড়ায় তেমন সাড়া পড়েনি। তবে সম্প্রতি ড্রাগন চাষ বেড়েছে। কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে উপজেলাতে বাণিজ্যিকভাবে ফলটির চাষ করা সম্ভব।
    উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে।

  • ফুলের চারা উৎপাদন করে স্বাবলম্বী   আত্রাইয়ের মেছের আলী আকন্দ

    ফুলের চারা উৎপাদন করে স্বাবলম্বী আত্রাইয়ের মেছের আলী আকন্দ

    রওশন আরা শিলা, নওগাঁ প্রতিনিধিঃ-প্রায় দশ/ বারো বছর আগের কথা। হাটে হাটে সবজি বিক্রি করতেন মেছের আলী আকন্দ। এতে স্ত্রী ওচার সন্তান নিয়ে দু,বেলা খাবার যোগাড় করাই মুশকিল হয়ে পড়তো তার। অভাব দূর করতে রেলওয়ের পরিত্যাক্ত দশ শতক জমিতে ফুলের চারা উৎপাদন শুরু করেন তিনি।পাশাপাশি অন্যান্য ফলদ,বনজ ও ওষধি গাছের চারাও উৎপাদন শুরু করেন।আর তাতেই পাল্টে যায় জীবন। বছরের চার পাঁচ মাস শুধু ফুলের চারা বিক্রি করে আয় করেন এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা। আর বাকি সময়ে অন্যান্য চারা উৎপাদন করেও কয়েক লক্ষ টাকা আয় হয় তার। আত্রাই উপজেলার ভঁরতেতুলিয়া গ্রামের মেছের আলী আকন্দর সাফল্য দেখে ফুল চাষ শুরু করে অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। এমনই একজন উপজেলার মধুগুড়নই গ্রামেরর নুর মোহম্মাদ,তিনি জানান, গত ডিসেম্বর মাসে মোট পঞ্চাশ শতক জমিতে তিনি ফুলের চাষ শুরু করেছেন। এর মধ্যে ত্রিশ শতক নিজের,বাকিটা লিজ নেওয়া। তাতে খরচ প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা। আর উৎপাদন করেছেন প্রায় দেড় লাখ টাকার ফুলগাছ।মেছের আলী আকন্দ জানান,ফুলের পাশাপাশি ওষধি, আম, পেঁপেঁ কাঁঠাল, লিচুর চারাও উৎপাদন হয়তার নার্সারিতে। এক সময় মেছের আলী আকন্দ এক সময় আত্রাইয়ে মাছের ব্যবসায়ী ও হ্যাচারীর মাধ্যমে রেনু চাষ করেন। ব্যবসায় তিনি নিঃস্ব হয়ে জান। পরর্বতীতে খাজা মঈনদ্দিন চিশতিয়া আশেকান মুরিদ হয়ে মনের জোরে আবার ফুলচারা চাষ করে ঘুড়ে ‍ দাঁড়ান। অক্টোর মাসের প্রথম দিকে চাষিরা দেশি গোলাপ, বিদেশি গোলাপ,চাইনিচ গাঁদা,বর্ষালীগাঁদা,ডালিয়া,সূযমূখি,হাসনাহেনা,গস্ধরাজ,জবা,গেটফুল,চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা জাতের ফুলগাছের চাড়া উৎপাদন শুরু করেন।ডিসেম্বর মাসের প্রথম থেকে মাচ মাস পযন্ত এসব ফুলের চারা বিক্রি হয়। তাদের সাফল্য দেখে এলাকার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা ফুলচাষে আগ্রহী হচ্ছেন। বলে জানান তারা ।শুধু ফুলের চারা নয়, পহেলা ফাল্গুন, একুশে ফেব্রুয়ারী সহ বিশেষ বিশেষ দিনকে সামনে রেখে তারা ফুল বিক্রি করেও অনেক টাকা আয় করেন।এই পেশার মানুষ বেশি ভাগ হতদরিদ্র।এলাকার মানুষ বেশ কয়েক বছর ধরেফুল,ফলদ,বনজ ও ওষধি গাছের চারা উৎপাদন করছেন। এতে দীর হচ্ছে দারিদ্রতা।

  • নড়াইলে নদীর চরে চাষিদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদাম চাষ

    নড়াইলে নদীর চরে চাষিদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদাম চাষ

    উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে:
    নড়াইলের লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলার মধুমতি ও নবগঙ্গা নদীর ভাঙ্গন কবলিত চর অঞ্চলের চাষিদের বাদাম চাষে ভাগ্য বদলাতে শুরু করেছে। এ অঞ্চলের চাষিদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বাদাম চাষ। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান, সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে বাদামের আবাদ শুরু হয় এবং জুন-জুলাই মাসে জমি থেকে বাদাম উত্তোলন করা হয়।
    অল্প খরচে ভাল ফলন ও অধিক লাভ হওয়ায় নদী তীরবর্তী চরবাসী কৃষক বাদাম চাষের দিকে ঝুঁকছে। জনপ্রিয় চিনাবাদাম চাষ নদীগর্ভে বিলিন নিঃশ্ব কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রান্তিক চাষিরা বাদাম চাষে লাভবান হয়ে নতুন করে একটু ভালভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন বুনছেন।
    কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নতুন চর জাগা মাটিতে ধান, পাট, গম, সরিষাসহ অন্যান্য ফসল হয় না। বাদাম চাষ ভাল হয়। পর পর তিন বছর জমিতে বাদাম চাষ করলে মাটির গুনাগুন ফিরে আসে। এর ফলে সেই জমিতে ধান, পাট, গম, সরিষাসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদের উপযোগী হয়। জেলায় এ বছর ৩৫০ হেক্টর আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও ৩৯৩ হেক্টরে বাদাম আবাদ হয়েছে। নড়াইলের তিনটি উপজেলার মধ্যে লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলায় বাদামের আবাদ হয়। জেলায় চলতি বছর ৭৪৪ মেট্রিক টন বাদাম উৎপাদন হয়েছে।
    কৃষক মো. বুলু মিয়া জানান, কৃষি জমি সবটুকু নদীতে চলে (ভেঙে) যাওয়ার পরে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম তখন অনেক কষ্টে সংসার চলেছে। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে বাদাম চাষ করে ভাল আছি। এ বছর এক একর জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম খরচ বাদে এক লাখ ২০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।
    ধানাইড় গ্রামের কৃষক জুয়েল মৃদ্ধা জানান, নতুন চর জাগা জমিতে তিন থেকে চার বছর বাদামের আবাদ ভাল হয়। পরে সেই জমিতে বাদামের আবাদ তেমন ভাল হয় না। তবে তিন চার বছর বাদাম চাষ করা হলে সেই জমিতে পরবর্তী বছর অন্যান্য ফসল ভাল হয়।
    আড়িয়ালা গ্রামের কৃষক আলমগীর জানান, বিশ বছরের ও বেশি সময় ধরে প্রতি বছরই তারা বাদামের আবাদ করেন। চলতি বছরে প্রায় তিন একর (১শ শতকে এক একর) জমিতে বাদামের আবাদ করে ৭০-৭২ মণ বাদাম পেয়েছেন। এবছর তিনি ৩ লাখ টাকারও বেশি লাভ হবে বলে আশা করছেন।
    ব্যবসায়ী লিটন শেখ বলেন, প্রতি বছর তিনি নড়াইল থেকে বাদাম কিনে সিলেট, রংপুর, চিটাগং ও ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি জেলায় বিক্রি করেন লাভও ভাল হয়।
    নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক দীপক কুরার রায় বলেন, চলতি বছর ৯শ জন বাদাম চাষিদের মাঝে বিনা মূল্যে বীজ বিতরণ করা হয়েছে। মধুমতি ও নবগঙ্গা নদী চর এলাকায় বাদাম চাষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সব সময় কৃষকের পাশে থাকে। এ চাষ লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বাদাম চাষ বাড়ছে। চর অঞ্চলের জনপদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাদাম চাষ ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। ভাঙ্গনে নিঃস্ব হওয়া পরিবারগুলো বাদাম চাষের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছে। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে।

  • কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পাইকগাছায় চুইঝালের চাহিদা বেড়েছে

    কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পাইকগাছায় চুইঝালের চাহিদা বেড়েছে

    ইমদাদুল হক,পাইকগাছা,খুলনা।। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পাইকগাছায় চুইঝালের দাম ও চাহিদা বেড়েছে। মাংসের স্বাদ বাড়াতে দক্ষিণা লের মানুষ যুগ যুগ ধরে অন্যান্য মশলার সাথে চুইঝাল ব্যবহার করে আসছে। এই অ লের মানুষের কাছে মশলাটি অনেক প্রিয়।চুই ঝালের কাণ্ড মাংসের মসলা হিসেবে ব্যবহার হয়। খুলনা সাতক্ষীরা, বাগেরহাট যশোর এলাকায় বিখ্যাত মসলা এই চুই ঝাল। চুইঝালের শিকড়, পাতা ও ফুল ,ফলে ঔষধি গুণ আছে। চুইঝাল মাছ ও মাংসের সাথে রান্না করে খাওয়া হয়। বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিম অ লের জেলা খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট এ সব এলাকায় চুইঝাল মসলা খুব জনপ্রিয়। বর্তমানে দেশের অন্যান্য জেলাতেও ঝাল হিসেবে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
    খুলনা অ লে চুইঝালের কাণ্ড, শিকড় বা লতাকে ছোট ছোট টুকরো করে মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেকোনো ধরনের মাংস, গরুর বা খাসির মাংস রান্না করা হয়। যা এ অ লের ঐতিহ্যবাহী এবং খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। তবে চুই এর শিকড়ের মধ্যে কাণ্ডের তুলনায় কড়া সুঘ্রাণ ও ঝাঁঝালো স্বাদ বেশি থাকার কারণে এটি কাণ্ডের তুলনায় বেশি ব্যবহৃত হয়। চুইঝাল দিয়ে রান্না করলে মাংসে একধরনের কড়া সুঘ্রাণ এবং ঝাল প্রকৃতির, ঝাঁঝালো ও টক স্বাদ যুক্ত হয় যা মাংসের মধ্যে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের স্বাদ এনে দেয়।
    সারাবছরই চাহিদা ও দামের দিক থেকে উপরে থাকে মশলাটি। তবে ঈদ আসলেই চুইঝালের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা পকেট কাটেন ভোক্তাদের। কুরবানির সময় যত ঘনিয়ে আসছে পাইকগাছায় চুইঝালের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে চুইঝালের দোকান নিয়ে বসেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। দোকানগুলোতে ভীড়ও বাড়ছে ক্রেতাদের। সাধারণ সময়ে চুইঝাল কেজি প্রতি ৪০০ থেকে হাজার টাকা থাকালেও বর্তমানে আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮শত থেকে ১২শত টাকা পর্যন্ত।
    দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমা লের জেলা খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল, যশোর, সাতক্ষীরা,নড়াইল এলাকায় চুইঝালের চাষ হয়। মশলাটি এসব জেলায় ব্যাপক জনপ্রিয়। বর্তমানে দেশের অন্যান্য জেলাতেও মশলা হিসেবে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
    গদাইপুর বাজারে চুইঝাল বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, চুইঝাল সারাবছর মোটামুটি ভালোই বিক্রি হয়। তবে কোরবানির উৎসবে চুইয়ের বিক্রি কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। যার ফলে পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন,তাই ক্রেতাদের কাছে আমাদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়।
    আর এক বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম বলেন, আগে চুইঝাল চিকন (আকারে ছোট) ৪ শত থেকে ৬শ টাকায় ও কিছুটা বড় চুইঝাল ৮শত টাকা কেজিতে বিক্রি করতাম। কোরবানি উপলক্ষে বাজারে চাহিদা বাড়ায় পাইকারী দরে কিনতেই বেশি টাকা গুণতে হচ্ছে। তাই চুইঝালের সাইজ অনুযায়ী কেজি প্রতি ৮শত থেকে ১২শত টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। চুইঝাল কিনতে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন, সারা বছর মাঝে মাঝে চুইঝাল খাওয় মাংসের সাথে। কিন্তু কুরবানির সময় গরুর মাংসের সাথে চুইঝাল না হলে চলে না।
    গদাইপুর বাজারে চুইঝালের ক্রেতা মিজানুর বলেন, চুইঝালের দাম ঈদের আগে আরো বাড়তে পারে। তাই ভিড় এড়াতে আগেভাগেই চুইঝাল কিনতে এসেছি। আমরা শুধু গরুর মাংস না, সব ধরণের মাংস,বড় মাছ ও মজাদার খাবারেই চুইঝাল খাই। তবে কুরবানি উপলক্ষে দাম কিছুটা বেড়েছে।
    ঈদের সময় চুইঝাল দিয়ে রান্না করা মাংস অতিথিদের খুবই পছন্দের। দাম একটু বৃদ্ধি পেলেও, মাংস খেতে চুইঝাল লাগবেই।

  • তানোরে বৃষ্টির পরে ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষকের

    তানোরে বৃষ্টির পরে ব্যস্ততা বেড়েছে কৃষকের

    আলিফ হোসেন,তানোরঃ
    রাজশাহীর তানোরে বৃষ্টির পরে ব্যাস্ততা বেড়েছে কৃষকের। প্রস্তুতি নিচ্ছেন আসন্ন রোপা আমন মৌসুমের। চারা উৎপাদনে হাল-চাষ-মইয়ে তৈরি করছেন বীজতলা। টানা তাপদাহের পর গত রোববার দেখা মেলে স্বস্থির বৃষ্টির। তারপর থেমে থেমে দুই-এক পসলা বৃষ্টি হলে কিছুটা পানি জমে খাল-বিল, নদী-নালা, জলাশয় ও অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে। যেহেতু উচু এবং উর্বর জমিতে রোপা আমন বীজতলা তৈরি করতে হয়, সেখানে পানি না জমায় পিছিয়ে যায় এর কাজ। বাড়ে বৃষ্টির অপেক্ষা। গত বোরবার বৃষ্টির পর পানি শুকিয়ে যাওয়ার আগে কৃষকেরা ব্যাস্ত হয়ে পড়ে তার সদ ব্যাবহারে। যেখানে বন্যার পানি উঠার সম্ভাবনা নেই সেখানে উচু জমিতে বীজতলা তৈরিতে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। যেমন ভাল ফলন পেতে ভাল চারার বিকল্প নেই। তেমনি ভাল চারা পেতে ভাল বীজের বিকল্প নেই। এটি মাথায় রেখে এই উপজেলার আমন চাষীরা বীজতলা তৈরি ও বীজ বপনে অনেক বেশি যত্নশীল। উঁচু এবং পরিমিত ও মধ্যম উর্বর জমিতে বীজতলা তৈরিতে কোন সার ব্যবহার করতে না হলেও নিম্ন, অতি নিম্ন ও অনুর্বর মাটির ক্ষেত্রে সার প্রয়োগ করতে হয়। তাই যারা নিম্ন, অতি নিম্ন ও অনুর্বর জমিতে বীজতলা তৈরি করছেন তারা সেখানে গোবর অথবা খামারজাত সার প্রয়োগ করছেন। একই চিত্র উপজেলার সর্বত্রই। কৃষকেরা জানান উপযোগি জমিতে রোপা আমন বীজতলা তৈরি করে সেখানেই বুনছেন বাছাই করা ধানবীজ।
    কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে, এবছর তানোরে আমনের মোট লক্ষ্যমাত্রা নির্ধধারণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ২২ হাজার হেক্টর।#