Category: কৃষি

  • পাইকগাছায় নার্সারী গুলোতে তালের চারা উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে

    পাইকগাছায় নার্সারী গুলোতে তালের চারা উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে

    ইমদাদুল হক,পাইকগাছা, খুলনা।। পাইকগাছা বানিজ্যিক ভিত্তিতে নার্সারীতে তালের চারা উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তালের চারার চাহিদা বাড়ায় নার্সারীগুলিতে প্রচুর পরিমাণ চারা তৈরি করা হচ্ছে। পাইকগাছার সততা নার্সারীতে গত মৌসুমে প্রায় ৮০ হাজার তালের চারা তৈরীর পরিচর্যা চলছে।চলতি মৌসুমে মায়ের দোয়া নার্সারীতে প্রায় ৩২ হাজার চারা তৈরির প্রস্তুতি চলছে।তাল গাছ প্রকৃতির বন্ধু ও প্রাকৃতিক ভারসম্য রক্ষাকারী বৃক্ষ। তালগাছ পরিবেশ বান্ধব ও বজ্রপাত থেকে রক্ষাকারী গাছ। তালগাছ ভুমির ক্ষয়রোধ ও পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।তাই তালের চারা রোপন করা হচ্ছে প্রচুর পরিমানে।
    তাল একটি অতি প্রাচীন ফল। একক কান্ড বিশিষ্ট এদেশে অতি পরিচিত একটি বৃক্ষ। এর কান্ড সোজা এবং চমৎকার আকৃতির পাতাগুলো পাখার মত গোলাকার। তালের জন্মস্থান মধ্য আফ্রিকা বলে ধারণা হলেও অনেকে বলেন এটি আমাদের উপ-মহাদেশীয় বৃক্ষ। তালের পত্রে অনেক উচু শিরা আছে। শিরাগুলো পত্রদন্ডের গোড়া হতে অগ্রভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত, পত্রের কিনারা কাঁটার মত। পত্রদন্ডের উভয় কিনারায় করাতের মত কালবর্ণের দাঁত আছে। পুরুষ ও স্ত্রী আলাদা গাছ উৎপন্ন হয়। বাংলাদেশের সব এলাকায় কমবেশী তাল উৎপাদন হলেও ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, রাজশাহী ও খুলনা এলাকায় সবচেয়ে বেশী উৎপাদন হয়। তালের কোন অনুমেদিত জাত নেই। তবে এদেশে বিভিন্ন আকার ও রংয়ের তাল দেখা যায়। আবার কোন কোন তাল গাছের বারমাসই কমবেশী তাল ধরে থাকে।
    প্রায় সব ধরনের মাটিতেই তাল ফসলের আবাদ করা যায়। তবে উঁচুজমিতে এবং ভারী মাটি ইহা চাষের জন্য বেশী উপযোগী। এদেশে বাগান আকারে কোন তাল ফসলের আবাদ নেই। আগষ্ট মাস থেকে তাল পাকতে শুরু করে এবং অক্টোবর মাস পর্যন্ত পাকা তাল পাওয়া যায়। ভালো তাল বীজ সংগ্রহ করে চারা তৈরী করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য নির্বাচিত মাতৃবৃক্ষ হতে তালের বীজ সংগ্রহ করা উচিত।
    দুই ভাবে তাল গাছ লাগানো যায়। একটি পদ্বতি হলো সরাসরি বীজ বপন করে অথবা বীজতলায় চারা উৎপাদন করে চারা রোপনের মাধ্যমে এর আবাদ করা যায়। ভাদ্র হতে কার্তিক মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। সারি থেকে সারি ৭ মিটার এবং চাবা থেকে চারা ৭ মিটার বীজের মাধ্যমে তালের বংশ বিস্তার হয়ে থাকে।
    পাইকগাছার গদাইপুরে সততা নার্সারীতে তালের চারা তৈরীর জন্য গত বছর দেড় লাখ তাল বীজ বপন করা হয়। মাটির ২ ফুট উঁচু বেড তৈরী করে তালের বীজ বপন করা হয়। অংকুরিত বীজ মাটির নিচের দিকে বাড়তে থাকে। চলতি মৌসুমে মাটি খুড়ে বীজপত্র তুলে চটের তৈরী পলিব্যাগে রোপন করে চারা তৈরীর পরিচর্যা করা হচ্ছে। সততা নার্সারীর মালিক অশোক কুমার পাল জানান, বানিজ্যিক ভিত্তিতে তালের চারা উৎপদন করছে। গত বছর দেড় লাখ তালবীজ থেকে ৮০ হাজার তালের অংকুরিত বীজ রোপনসহ আনুসাঙ্গিক খরচ হয়েছে ৯ লক্ষ টাকা। এখনো চারা তৈরীর পরিচর্যার কাজ চলছে। মায়ের দোয়া নার্সারীর মালিক মো: ইউছুপ গাজী জানান, প্রায ৩২ হাজার চারা তৈরির প্রস্তুতি চলছে।২৫ হাজার চারা টিকতে পারে, সব আটি থেকে চারা বের হয় না। চারা তৈরি করতে তার প্রায় ছয় লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। উৎপাদিত তালের চারার প্রায় ১২ থেকে ১৪ লাথ টাকা বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন। চট্রগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন নার্সারী, এনজিও ও সরকারি ভাবে তালের চারা ক্রয়ের জন্য তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হযেছে। তাছাড়া উৎপাদিত তালের চারা সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বানিজ্যিক ভিত্তিতে বিক্রি করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
    তার নার্সারীতে তাল বীজতলা তৈরীর পর সবসময় ভিজিয়ে রাখা হচ্ছে। ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যেই বীজ অংকুরিত হতে শুরু করবে। বীজ অংকুরোদগমের সময় বীজপত্রের যে আবরণী বের হয়ে আসে তা দেখতে শিকড়ের মত কিন্তু আসলে তা শিকড় নয়। এই বীজপত্রের আবরণীর মাঝে ফাঁপা থাকে, অগ্রভাগে ভ্রূণ অবস্থান করে এবং টিউবের আকৃতিতে বৃদ্ধি পায়। হলদে রং-এর জার্মটিউবের অগ্রভাগে ভ্রূণ আবৃত থাকে এবং তা সাধারণত মাটির নীচের দিকে বৃদ্ধি পায়।
    জার্মটিউব লম্বা হবার পরেই ভ্রূণের কান্ডের আবরণী এবং ভ্রূণ মূলের আবরণী-এর বৃদ্ধি শুরু হয়। জার্মটিউবের মতো ১৫-৪০ সে. মি. লম্বা হয়ে থাকে। জার্মটিউব লম্বা হবার ১০-১৫ সপ্তাহের মধ্যে একটি পাতলা আবরণীতে পরিণত হয়। এ অবস্থায় চারায় কেবল ১টি শিকড় থাকে। চারার গোড়া ও শিকড়ের গা হতে ছোট ছোট অনু শিকড়ও গজাতে শুরু করে। মৌসুমী বৃষ্টিপাত আরম্ভ হওয়ার পরপরই পলিব্যাগে উত্তোলিত ৩০-৩৫ সে. মি. লম্বা পাতা বিশিষ্ট চারা মাঠে রোপন করা হবে। তবে মাটিতে প্রচুর পরিমাণে আর্দ্রতা থাকলে অথবা পানি সেচের ব্যবস্থা থাকলে চারা এপ্রিল- মে মাস পর্যন্ত লাগানো যেতে পারে। চারা রোপণের পর অন্তত প্রথম তিন বছর রোগ- বালাই ও কীট -পতঙ্গের আক্রমণের হাত হতে চারা রক্ষা করা আবশ্যাক। এ বিষয় উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অসিম কুমার দাশ বলেন, তালের চারা তৈরি করে নার্সারী মালিকরা যেমন লাভবান হচ্ছে তেমনি তালের চারার গুরুত্ব সম্পর্কে সাধারণ জানতে পারছে।তালগাছ বজ্রপাত রোধক বৃক্ষ।কৃষকরা বজ্রপাতে বেশী আক্রান্ত হয়, তাদের খোলা মাঠে কাজ করেতে হয় তাই বজ্রপাতে কৃষক বেশী মারা যায়। রাস্তার পাশে ও খোলা মাঠের উচু স্থানে সরকারি ভাবে ও কৃষি অফিস থেকে তাল বীজ ও চারা রোপন করা হচ্ছে। পাশাপাশি কৃষকদের তালের চারা রোপন করতে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

    ইমদাদুল হোক
    পাইকগাছা খুলনা।

  • জমে উঠেছে পাইকগাছার  সুপারির পাইকারি বাজার গুলো

    জমে উঠেছে পাইকগাছার সুপারির পাইকারি বাজার গুলো

    ইমদাদুল হক, পাইকগাছা, খুলনন।।
    পাইকগাছায় সুপারির পাইকারি বাজার গুলো জমে উঠেছে। এখন সুপারির ভরা মৌসুম চলছে। ফলে বাগান মালিক, খুচরা ও পাইকারী বিক্রেতারা সুপারি ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। উপজেলার আগড়ঘাটা,গদাইপুর,বাকা, নতুন বাজার, কপিলমুনিসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রচুর পরিমাণে সুপারি বিক্রি হচ্ছে। এ বছর সুপারির ফলন খুব বেশি ভাল হয়নি।সুপারি পাকা শুরুতে দাম বেশী ছিলো, এখন দাম কমে গেছে।ব্যবসাহীরা জানান, বাজারে প্রচুর পরিমানে সুপারি উঠছে সে জন্য দাম কমে গেছে তবে কয়েক দিনের মধ্যেই দাম বেড়ে যাবে।
    উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে,উপজেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে সুপারি বাগান রয়েছে। গাছের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার ৪শতটি। গাছ প্রতি গড়ে ৪শ ৪০টি সুপারির ফলন হয়েছে। প্রায় গাছে ৩ থেকে ৪ কাধি সুপারির ফলন ধরে। কোন কোন গাছে সর্বনিন্মে ৫০ থেকে ১৫০ আবার কোন কোন গাছে ৬ থেকে ৭শ সুপারি ফলন হয়। লবণাক্ত এ উপজেলার ভূমির অবস্থান উচু ও বিলান, নিচু ও বিলান জমির পরিমাণ বেশী। উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মধ্যে গদাইপুর,হরিঢালী,কপিলমুনি,রাড়ুলী সুপারি গাছের পরিমাণ বেশী। চাঁদখালী ও পৌরসভার আংশিক এলাকায় সুপারি গাছ রয়েছে।বাকী ইউনিয়ন গুলোতে গাছ নেই বললেই চলে।
    সুপারি বাংলাদেশের একটি অর্থকারী ফসল। সুপারি স্থানীয় সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। সুপারি কাঁচা, শুকনা, মজানো-ভিজা পান পাতা দিয়ে মুড়িয়ে খিলি বানিয়ে খাওয়া হয়। সুপারি ছাড়া পানের পূর্ণতার কথা ভাবা যায় না। বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সুপারি ব্যবহার হয়। অনেকের আবার শুধু সুপারি খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে। বিশ্বের মোট জনগোষ্ঠির এক দশমাংশ সুপারি খান। শিশু, নারী ও পুরুষ সুপারি ব্যবহার করেন। তবে পুরুষের মধ্যে সুপারির ব্যবহার বেশী। উল্লেখ্য সুপারির কারণে মুখে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভবনা থাকে বেশি।

    এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: জাহাঙ্গীর আলম জানান, সুপারি এ অ লের একটি অর্থকারী গুরুত্বপূর্ণ ফসল। তাছাড়া এ এলাকার সুপারির মানও ভালো। তবে লম্বা সুপারি গাছ গুলো মরে যাওয়ায় অথবা কেঁটে ফেলায় নতুন করে সুপারির বাগান তেমন একটা গড়ে উঠছে না। তাই কৃষি অফিস থেকে নতুন করে সুপারি বাগান তৈরীর জন্য বাগান মালিক ও কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

  • তানোরে আমণখেতে পচন রোগ দিশে হারা কৃষক

    তানোরে আমণখেতে পচন রোগ দিশে হারা কৃষক

    আলিফ হোসেন,তানোরঃ
    রাজশাহীর তানোরে বন্যার পানিতে প্লাবিত আমনখেত জেগে ওঠতে শুরু করেছে। তবে জেগে ওঠা আমণখেতে পচন রোগ এবং উঁচু জমির আমনখেতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কিন্ত্ত কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীদের কাছে পাচ্ছেন না কৃষকেরা। উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) কৃষ্টপুর, মাঝিপাড়া, বাতাসপুর, শ্রীখন্ডা, দমদমা, নেজামপুর। পাঁচন্দর ইউনিয়নের (ইউপি) যশপুর, ইলামদহী, মোহাম্মদপুর, বনকেশর, কোয়েলমাঠ। চাঁন্দুড়িয়া ইউনিয়নের (ইউপি)বেড়লপাড়া,চাঁন্দুড়িয়া
    পুর্বপাড়া, হাড়দহ, সিলিমপুর ও জুড়ানপুর মাঠ। বাঁধাইড় ইউনিয়নের (ইউপি) হরিশপুর, মাড়িয়া, বাধাইড় ও হাপানিয়া মাঠ। তালন্দ ইউনিয়নের (ইউপি) দেউল ও বিলশহর ইত্যাদি মাঠের আমনখেতে বোগাপোড়া, পচন ও পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাওয়া আমনখেতে পোকা, পচন ও পাতা পোড়া রোগ দেখা দিয়েছে। কৃষি বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ব্যতিত অনুমান নির্ভর হয়ে বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক স্প্রে করেও কোন সুফল পাচ্ছেন না।
    কামারগাঁ ইউনিয়নের (ইউপি) পাড়িশো দূর্গাপুরনাড়িপাাড়া গ্রামের কৃষক বকুল হোসেন ও মোমিনুল ইসলাম জানান, তাদের ৬ বিঘা আমন ধান বন্যায় ডুবে গেছে। আর যেসব জমিতে পানি উঠে আছে সেইসব জমিতে পচন রোগ ধরেছে। কিছুতেই কীটনাশক বিষ ব্যবহার করে দূর করা যাচ্ছে না পচন রোগ। তারা আরো বলেন, এবার আমন মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তারা আরো জানান, গত বারের চাইতে এবছর আমন চাষের সঠিক সময়ে বৃষ্টির দেখা পাওয়া যায়নি,সেই সাথে সংকট পড়ে পটাশ সারের। তাঁর পরেও কৃষকেরা যেভাবেই হোক সার পটাশ পানি কিনে আমন ধান চাষ করেছেন। এরমধ্যে নতুন করে আকাশের টানা বৃষ্টির পানিতে ডুবে যাওয়া একরের পর একর জমির আমন ধানে ধরেছে পচন। কিছুতেই দূর করা যাচ্ছেনা এ পচন রোগ। এমনকি মাঠেও পাওয়া যাচ্ছেনা কৃষি অফিসের উপসহকারী কর্মকর্তাদের। এতে পচন রোগ নির্ণয়ের জন্য কৃষি দপ্তরের পরামর্শ ছাড়াই বাজার থেকে বিভিন্ন কোম্পানির কীটনাশক কিনে জমিতে স্প্রে করে আরো ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন কৃষকরা। প্রতিনিয়ত পচন ও কারেন্ট পোকা এবং পাতা পোড়া রোগে আক্রান্ত হয়ে পুড়ে যাচ্ছে ধানের পাতা। কীটনাশক স্প্রে করেও কোন প্রতিকার মিলছেনা। শ্রীখন্ডা গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান জানান, আমন ধানে পচন ও কারেন্ট পোকা এবং পাতা পোড়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরেও কৃষকের মাঝে কোন প্রকার পরামর্শ দিতে কৃষি অফিসের কোন উপসহকারী কর্মকর্তাদের দেখা পাচ্ছেন না কৃষকরা। বাধাইড় ইউনিয়নের হরিশপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল বলেন,বাজারে যেভাবে নামি-দামি কোম্পানির কীটনাশক বিষ বিক্রি করা হচ্ছে, তাতে কোনটা আসল আর কোনটা নকল কীটনাশক বোঝা বড় দায় হয়ে পড়েছে কৃষকের। উপজেলায় এবার প্রায়
    সাড়ে ২১ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা-আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবিষয়ে জানতে তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ আহম্মেদের ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

  • ভারি বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামারে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে

    ভারি বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামারে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে

    ইমদাদুল হক,পাইকগাছা,খুলনা ॥
    টানা ভারি বৃস্টি ও ঝড়ো বাতাসে পাইকগাছার বোয়ালিয়া বীজ উৎপাদন খামারের আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।বৃস্টির পরে ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষেতের ব্যাপক পরিচর্যা করা হচ্ছে। একটানা বৃষ্টি ও ঝড়ের তাণ্ডবে পাকা ধান মাটিতে পড়ে পানিতে ডুবে থাকায় ও ধানের কুশি ভরা ফুল ঝরে পড়ে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় বীজ উৎপাদনে লক্ষ্য মাত্রা উৎপাদন না হওয়ার আশংখা করছে খামার কতৃপক্ষ।
    খামার সুত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২০২৪ মৌসুমে খামারে ৬০ একর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে।এর মধ্যে ব্রি ধান ৩০ জাতের ৩৪ একর,ব্রি ধান৭৩ জাতের ৪ একর,ব্রিধান ৭৮ জাতের ৪ একর,ও বি আর ২৩ জাতের১৮একর জমিতে আবাদ করা হয়েছে।
    গত সেপ্টেম্বর মাসের ২৮ তারিখ থেকে গুড়িগুড়ি বৃস্টি শুরু হয়, তা অক্টোবরের শুরুতে থেমে থেমে বা একটানা হালকা ও ভারি বৃস্টি ৮ তারিখ পর্যন্ত গিযে থামে।একটানা বৃস্টি, বৈরি আবহাওযায় ও ঝড়ের তাণ্ডবে ধানের কুশি পর্যায় ও ধানের কুশি ভরা ফুল ঝরে পড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।ধানের পরিচর্যায় সার ও কিট নাশক ব্যবহার করার পরে তা বৃস্টিতে ধুয়ে যায়।এতে ধানের কোন উপকার হয়নি, আবারও কিট নাশক ছিটাতে হয়েছে।এত খরচের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে।আর মাটিতে নুয়ে পড়া ধান পানিতে ডুবে থাকায় ধান পরিপূর্ণ পুষ্ঠ না হওয়া ও ধানের কালো কালো দাগ পড়ার সম্ভাবনা খুব বেশি রয়েছে। তাছাড়া কুশি ভরা ধানের ফুল ঝড়ো বাতাসে পড়ে যাওয়ায় পরাগায়ন না হলে চিটা হয়ে যেতে পারে। খামারে আমন ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছিল। উপকূলে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বোয়ালিয়ার এ খামারটিকে লবন পানিসহ প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলা করে ফসল ফলাতে হয়।
    এ বিষয়ে খামারের সিনিয়র সহকারী পরিচালক কৃষিবিদ নাহিদুল ইসলাম জানান, একটানা ভারি বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে চলতি মৌসুমে ৭ একর আমন ক্ষেতের ধানের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। খামারে ব্রি-ধান ৭৮ জাতের তিন একর জমির ধান ফুল পর্যায় থাকায় ফুল ঝরে পড়ে পরাগায়ন বিঘ্নিত হয়ে ধানের শীষে কালো স্পট পড়েছে। ব্রি ধান ৭৩ জাতের এক একর জমির পরিপক্ক ধান মাটিতে হেলে পড়েছে। বি আর ২৩ জাতের চার একর জমির ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। সবে মাত্র ফুল ফুটতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় ঝড়ো হাওয়ায় ফুল ঝরে যাওয়ায় পরাগায়ন না হলে ধান চিটা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। তাছাড়া পুষ্ট না হলে ধান চিটা হবে।ধানের গুনগত মান নষ্ট হব্ এতে আশানারুপ বীজ উৎপাদন হবে না বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। তিনি আরও বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমানোর লক্ষ্যে দ্রুত পানি নিষ্কাসন করা,নিয়মিতভাবে ছত্রাকনাশক, কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।কৃস্টির পানিতে সার ধুয়ে য়াওয়ায় গাছের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমানের অতিরিক্ত সার ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষন করে ক্ষতিগ্রস্থ বীজ ফসলের পরিচর্যা করা হচ্ছে।

  • বাংলাদেশের  জলবায়ু ড্রাগন চাষের উপযোগি

    বাংলাদেশের জলবায়ু ড্রাগন চাষের উপযোগি

    মোঃ হায়দার আলী।। কি বিষয়ে লিখব, তা চন্তা করছিলাম, শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম এবার কি কৃষির প্রাণ কৃষক কী সরকারী খাদ্য গুদামগুলিতে তাদের কষ্ট করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উৎপাদিত ইরি ধান বিক্রি করতে পারবেন, না তৃতীয় প্রভাবশালী অসৎ পক্ষ কৃষক সেঁজে খাদ্য গুদাম গুলি ভর্তি করবেন। কেন না বাংলার কৃষকেরা ইরি ধান চাষ করে ধান উৎপাদন করতে সার, বীজ, কীটনাশক, নিড়ানী, কৃষি শ্রমিক ইত্যাদিতে যে পরিমান ব্যয় করেন এবং বর্তমানে ধানের বাজার মূল্যেতে কি কৃষক লাভবান হবেন না ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ধান চাষে অগ্রহ হারাবেন সেটা একটি মুখ্য বিষয়। এ সম্পর্কে লিখার জন্য, তথ্য উপাত্ত নিয়ে ল্যাপটপ ওপেন করলাম এমন সময়, ক্লাস সেভেন এ পড়া আমার ছোট ছেলে আজিজ আরিফিন জীম বললো আব্বু ড্রাগন ফলের গাছ কত বড় হয়, দেখতে কেমন হয়, আমি বললাম ব্যস্ত আছি, তোমাকে পরে এ সম্পর্কে পরে বলছি, তখন সে বলল তোমার স্মাট ফোনটা দাও আমি নিজেই গুগল থেকে দেখে নিচ্ছি, সে গুগলে সার্চ দিয়ে ড্রাগন ফলের অনেক কিছু বের করলো আমি অবাক হয়ে দেখলাম এ সুস্বাদু ফলের সম্পর্কে অবগত নয় তাই ছেলে কথায়, লেখার থিমটি পরিবর্তন করে ড্রগন ফল, এর ইতিহাস, বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু ড্রাগন চাষের জন্য উপযোগি কি না লিখার জন্য তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে লিখা শুরু করলাম।
    কৃষক ও কৃষি বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। প্রধান মন্ত্রী, মানবতার মাতা শেখ হাসিনার নির্দেশে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারী দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন, আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষকদের ধান কাটা, কৃষকদের বাড়ীতে পৌঁছে দেয়া, বসতবাড়ীর আশেপাশে কোন জমি যেন পতিত পড়ে না থাকে সে দিকে দৃষ্টি দিয়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
    সত্যি বলতে কি কৃষি বিভাগ আশার আলো দেখাচ্ছেন। উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন জাত সফলভাবে উৎভাবণ করছেন। নতুন নতুন ফসল, ফলজ ও বনজ বাগান করার জন্য কৃষকদের আগ্রাহ সৃষ্টি করছেন। এখন দেশে দিনে দিনে ড্রাগন চাষ বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে।

    প্রাচীন রূপকথা জুড়ে আছে ড্রাগন নামক ভয়ংকর শক্তিশালী এক প্রাণীর গল্প। রূপকথার বা কোনো কল্পকাহিনির ড্রাগন নয়, একটা জলজ্যান্ত ফল। হ্যাঁ এখানে কথা বলা হচ্ছে ড্রাগন ফলের। এটি এক ধরনের ফণীমনসা (ক্যাক্টাস) প্রজাতির ফল, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে এর মহাজাতি হায়লোসিরিয়াস (অনেক মিষ্টি)। একে এক এক দেশে এক এক নামে অভিহিত করা হয়। গণচীন -এর লোকেরা এটিকে ফায়ার ড্রাগন ফ্রুট এবং ড্রাগন পার্ল ফ্রুট বলে, থাইল্যান্ডে ড্রাগন ক্রিস্টাল, ভিয়েতনামে সুইট ড্রাগন, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াতে ড্রাগন ফ্রুট নামে পরিচিত। অন্যান্য স্বদেশীয় নাম হলো স্ট্রবেরি নাশপাতি। ডিম্বাকৃতির উজ্জ্বল গোলাপি রঙের এই ফলের নাম শুনলে কেমন জানি অদ্ভুত মনে হয়। এ আবার কেমন ফল। এটা কি আদৌ খাবার উপযোগী কিনা মনে সন্দেহ জাগে। কিন্তু এই ফল বাংলাদেশে অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করছে। এই চাষ করে অনেকেই কোটিপতি হচ্ছে।
    কথায় আছে “বৃক্ষরোপণ করে যে, সম্পদশালী হয় সে” এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ঢাকার সাভারে আশুলিয়া মরিচকাটা গ্রামে রূম্পা চক্রবর্তী নামে এক ফলচাষি ১০ একর জমিতে সাড়ে ১৬ হাজার ড্রাগন ফলের চাষ করে সাফল্য অর্জন করেছেন। এছাড়া অন্যান্য অনেক চাষিরাও এই ফলের চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হচ্ছে।

    কেন এ ফলের নাম ড্রাগন? ড্রাগন ফল দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর। পাতাবিহীন এই ফলটি দেখতে ডিম্বাকার ও লাল রঙের। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই ফলের বাইরের খোসা দেখতে রূপকথার ড্রাগনের পিঠের মতো। এই রূপকথার ড্রাগনের মতো কিছুটা মিল থাকার জন্য একে ড্রাগন ফল বলে। ড্রাগন গাছ দেখতে কেমন? ড্রাগ গাছ দেখতে একদম ক্যাকটাসের মতো। গাছ দেখে অনেকেই একে চির সবুজ ক্যাকটাস বলেই মনে করেন। এশিয়ার মানুষের কাছে এ ফল অনেক জনপ্রিয়, হালকা মিষ্টি-মিষ্টি। এই ফলের খোসা নরম এটা কাটলে ভিতরটা দেখতে লাল বা সাদা রঙের হয়ে থাকে এবং ফলের মধ্যে কালজিরার মতো ছোট ছোট নরম বীজ আছে। নরম শাঁস ও মিষ্ট গন্ধ যুক্ত গোলাপি বর্ণের এই ফল খেতে অনেক সুস্বাদু। গাছ ১.৫ থেকে ২.৫ মিটার হয়।

    ড্রাগন ফলের ইতিহাসঃ
    ড্রাগনফলের উদ্ভিদতাত্বিক নাম Hylocereus undatus। এই ফল মূলত সেন্ট্রাল আমেরিকার প্রসিদ্ধ একটা ফল। সেন্ট্রাল আমেরিকাতে এ ফলটি ত্রয়োদশ শতাব্দীতে প্রবর্তন করা হয়। দক্ষিণ এশিয়া বিশেষ করে মালয়েশিয়াতে এ ফলের প্রবর্তন করা হয় বিংশ শতাব্দীর শেষে। তবে ভিয়েতনামে এ ফল সর্বাধিক বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। বর্তমানে এ ফলটি দক্ষিণ আমেরিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ চীন, মেক্সিকো, ইসরাইল, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ বাংলাদেশেও চাষ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত অনেকগুলো বিদেশী ফল প্রবর্তন করা হচ্ছে। তার মধ্যে এ্যাভোকেডো, ম্যাঙ্গোঁস্টিন, কিউই, স্ট্রবেরী, রাম্বুটান, লংগান, ল্যাংসাট, ব্রেড ফ্লুট, চেরী ফল, জাবাটিকাবা, পীচ ফল, ফ্লুট এবং ডুরিয়ান অন্যতম। এদের মধ্যে কিউই ও ডুরিয়ান ছাড়া প্রায় সব ফলই এদেশে কম বেশি হচ্ছে এবং কোন কোনটা থেকে আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাচ্ছে। যা দেখে অনেকে এসব বিদেশি ফলের বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করার চিন্তা-ভাবনা করছে। লক্ষ করা যাচ্ছে যে, এদেশের অনেক জায়গাতেই বিশেষ করে উত্তর বঙ্গ ও ময়মনসিংহে বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরী চাষ করা হচ্ছে। এছাড়া বিদেশী ফলগুলোর মধ্যে ড্রাগন ফলের চাষ সম্ভাবনাময়। গবেষকরা মনে করেছেন, এ ফলটি এদেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশে এ ফল প্রথম প্রবর্তন করে ২০০৭ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্লাজম সেন্টার। এ সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. এম. এ রহিম এ ফলের জাত নিয়ে আসেন থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে। এখন এ সেন্টার থেকে এ ফলটি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য বংশ বিস্তার করা হচ্ছে

    রাতের রাণী ড্রাগন ফুলঃ
    ড্রাগন গাছে শুধুমাত্র রাতে ফুল দেয়। ফুল লম্বাটে সাদা ও হলুদ রঙের হয়। অনেকটা ‘নাইট কুইন’ ফুলের মত। এ কারণে ড্রাগন ফুলকে ‘রাতের রাণী’ নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে । ড্রাগন ফলের গাছ লতানো ইউফোরবিয়া গোত্রের ক্যাকটাসের মত কিন্তু এর কোন পাতা নেই। ফুল স্বপরাগায়িত; তবে মাছি, মৌমাছি ও পোকা-মাকড় এর পরাগায়ণ ত্বরানবিত করে এবং কৃত্রিম পরাগায়নও করা যেতে পারে। ড্রাগন ফুলকে বলা হয় ‘মুন ফ্লাওয়ার’ বা ‘কুইন অব দ্য নাইট’। ফুল থেকে ডিম্বাকার ফল গঠিত।
    ড্রাগন ফলের ব্যবহারঃ
    ড্রাগন ফল কাঁচা বা পাঁকা অবস্থায় খাওয়া যায়। ড্রাগন ফল ফ্রিজে রেখে ঠাণ্ডা করে খেলে ভালো লাগে। ফলকে লম্বালম্বিভাবে কেটে ২/৪ টুকরা করে চামচ দিয়ে কুরে এর শাঁস খাওয়া যায়। এ ছাড়াও খোসা ছাড়িয়ে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে কাঁটা চামচ দিয়ে খাওয়া যায়। এটা মুলত ফ্রুট সালাদ হিসেবে, মিল্ক শেক তৈরিতে, জুস তৈরির জন্যও ফলটি অত্যন্ত উপযোগী। এর ফুলও খাওয়া হয়।

    এ ফলের পুষ্টি উপাদানঃ
    এ ফলটি প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবার যুক্ত। জুস তৈরিতে জন্যও ফলটি অত্যন্ত উপযোগী। প্রতি ১০০ গ্রাম ফলে — ফাইবার ০.৯ গ্রাম, ফ্যাট ০.৬১ গ্রাম, ক্যারোটিন ০.০১২ গ্রাম, পানি ৮৩.০ গ্রাম, ফসফরাস ৩৬.১ মি. গ্রাম, এসকোরবিক এসিড ৯.০ মি. গ্রাম, রিবোফাবিন ০.০৪৫ মি. গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৮.৮ গ্রাম, নায়াসিন ০.৪৩০ মি.গ্রাম, আয়রন ০.৬৫ মি. গ্রাম,
    কার্বোহাইড্রেট ৯ থেকে ১৪ গ্রাম, প্রোটিন ০.১৫ থেকে ০.৫ গ্রাম, চর্বি ০.১ থেকে ০.৬ গ্রাম, অ্যাশ ০.৪ থেকে ০.৭ গ্রাম ক্যালরি ৩৫ থেকে ৫০ থাকে। এই লাল শাঁসের ড্রাগন ফলে ভিটামিন সি থাকে বেশি।
    ড্রাগন ফলের উপকারিতাঃ
    এই ফল দেখতে খুব আকর্ষনীয়, এর কার্যকারিতা ও সুফলতা অনেক বেশি। এশিয়ার মানুষের কাছে এ ফল অনেক জনপ্রিয়, হালকা মিষ্টি-মিষ্টি, কোনোটা আবার হালকা টক।
    ক) ড্রাগন ফলে ক্যালোরির পরিমাণ খুব কম থাকে। তাই ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীরা খেতে পারবেন।
    খ) ড্রাগন ফলে ভিটামিন সি বেশি থাকার ফলে এই ফল খেলে আমাদের শরীরের ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ হয়। লাল শাঁসের ড্রাগন ফল থেকে বেশি পরিমানে ভিটামিন সি থাকে।
    গ) ড্রাগন ফলে আয়রন থাকার কারনে রক্ত শূন্যতা দূর হয়।
    ঘ) ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমানে পানি থাকার কারনে এই ফল জুস আকারে খেলে শরীরের পানি শূন্যতা সহজেই দূর হয়ে যায়।
    ঙ) নিয়মিত ড্রাগন ফল খেলে রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই এই ফল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উত্তম।
    চ) ড্রাগন ফলের শাঁস পিচ্ছিল হওয়ায় এই ফল খেলে কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর হয়।
    ছ) ড্রাগন ফলে প্রচুর ফাইবার থাকে যা পেটের পীড়া এবং লিভার এর জন্য ভালো।
    জাতঃ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সফলভাবে চাষ করার জন্য বাউ ড্রাগন ফল – ১ (সাদা), বাউ ড্রাগন ফল – ২ (লাল) নির্বাচন করা যেতে পারে। এছাড়া হলুদ ড্রাগন ফল, কালচে লাল ড্রাগন ফল চাষ করা যেতে পারে। দুটি জাত বাংলাদেশে চাষ করা হচ্ছে। ড্রাগন চাষের জন্য কাটিং চারাই বেশি উপযোগী। কাটিং থেকে উৎপাদিত গাছে ফল ধরতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে।

    উপযুক্ত সময়ঃ
    ড্রাগন ফল সাধারণত সারা বছরেই চাষ করা যায়। এটি মোটামুটি শক্ত প্রজাতির গাছ হওয়ায় প্রায় সব ঋতুতেই চারা রোপন করতে পারেন। তবে ছাদে ড্রাগন ফল চাষ করে ভালো ফলন পেতে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসে চারা রোপন করলে আপনি অবশ্যই সুফল পাবেন।
    ড্রাগন কেন এত উপকারীঃ ক্যাকটাস গোত্রের ড্রাগন ফল বাংলাদেশে তেমন প্রচলিত না হলেও সারা পৃথিবীতে অনেক জনপ্রিয় একটা ফল।
    এই ফলটি কয়েক রঙের হয়ে থাকে। ড্রাগন ফলের তিনটি প্রজাতি রয়েছে লাল ড্রাগন ফল বা পিটাইয়া, কোস্টারিকা ড্রাগন ফল এবং হলুদ ড্রাগন ফল। লাল ড্রাগন ফলের খোসার রঙ লাল কিন্তু শাঁস সাদা। এ প্রজাতির ফলই বাংলাদেশে বেশি দেখা যায়। কোস্টারিকা ড্রাগন ফলের খোসা ও শাঁসের রঙ লাল। হলুদ ড্রাগন ফলের খোসা হলুদ রঙের কিন্তু শাঁসের রঙ সাদা।

    মিষ্টি স্বাদের ফলবিশিষ্ট ড্রাগন গাছে ফুল ফোটে রাতে যা দেখতে অনেকটা নাইট কুইন ফুলের মতো, লম্বাটে, সাদা ও হলুদ। এই ফল দেখতেও অত্যন্ত আকর্ষণীয় এবং এটি কাঁচা অবস্থাতেই খাওয়া হয়। বিদেশি এই ফল চাষ করা খুব সহজ। কাটিং পদ্ধতিতে লাগালেই গাছ হয়ে গাছ। বাড়ির ছাদে ড্রাম/বালতিতে/গ্রো ব্যাগে কিংবা মাটিতে অনায়াসে লাগানো যায় এবং আমাদের দেশের আবহাওয়ায় দারুণ হয় এই ড্রাগন ফল।
    এতে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে তাই ‘ডায়েট’ এর জন্য উত্তম। ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীরা খেতে পারেন অনায়াসেই। ড্রাগন ফলে প্রচুর ভিটামিন সি থাকার ফলে এই ফল খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে ও ত্বক হয়। অন্যান্য প্রজাতির তুলনায় লাল শাঁসের ড্রাগন ফলে বেশি পরিমানে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। পিচ্ছিল হওয়ায় ও আঁশ থাকার কারনে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এই ফল। এই ফল পেটের পীড়া দূর করতে সহায়তা করে এবং লিভার এর জন্যও উপকারী। এই ফলের কালো বীজ হজমে সাহায্য করে। আয়রন থাকার কারনে ড্রাগন ফল খেলে রক্ত শূন্যতা দূর হয়।
    ড্রাগন ফল চাষ করে একর প্রতি বছরে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা আয় করা সম্ভাব। আর অল্প সময়েই অল্প পুঁজিতে ড্রগন ফল চাষ করে বেকার যুবকদের কোটিপতি হওয়ার বিশাল সুযোগ রয়েছে।
    বিদেশে সুস্বাদু দামি ফল ড্রাগন ফল এখন বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে। বিভিন্ন প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, ২০০৭ সালে বাংলাদেশে পরীক্ষামূলকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ করা হয়। ড্রাগন ফলের চাষের জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া এবং মাটি উপযোগী হওয়ায় এর ফলন ভালো হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকার সাভার, রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চর, নাটোর, পাবনা, বগুড়া, চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলে ড্রাগন ফলের চাষ করা হচ্ছে।
    দেশের প্রায় দুই হাজার বাগানে ড্রাগন ফল চাষ হচ্ছে। ড্রাগন ফল চাষ লাভজনক হওয়ায় এর চাষ ক্রমেই বাড়ছে। বর্তমানে দেশের বড় বড় শহরগুলোর বাজার, সুপার শপগুলোতে এমনকি ফেরি ভ্যানেও ড্রাগন ফল পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি কেজি ড্রাগন ফলের দাম ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।
    ড্রাগন ফলের আদি স্থান হচ্ছে থাইল্যান্ড। থাইল্যান্ডের জনপ্রিয় ফল ড্রাগন ফল বাংলাদেশে উৎপাদিত হওয়ায় এদেশের মানুষ ড্রাগন ফলের স্বাদ নিতে পারছে। ড্রাগন ফল অত্যন্ত সুস্বাদু মিষ্টি হয়ে থাকে। ড্রাগন ফলে ঔষধি গুণ রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। ড্রাগন ফল হার্টের রোগ, ব্লাড প্রেসার, ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। উঁচু মাটিতে, অল্প জায়গায় দীঘর্জীবী ড্রাগন ফলের চাষ করা যায়। ড্রাগন ফুল নাইট কুইনের মতোই রাতে ফোটে। ফুলের আকার লম্বাটে এবং রং সাদা ও হলুদ।
    প্রতি বিঘা জমিতে ২০০টি ড্রাগন ফলের গাছ রোপণ করা যায়। বীজ ও কাটিং পদ্ধতিতে ড্রাগন ফলের চাষ করা যায়। ফুল থেকে ডিম্বাকৃতি ফল উৎপন্ন হয়। ফলটি হালকা মিষ্টি ও ক্যালরি কমযুক্ত এবং এতে কালোজিরার মতো অসংখ্য বীজ থাকে। একটি গাছ থেকে বছরে ৬০ থেকে ১০০ কেজি ফল পাওয়া যায়। ড্রাগন গাছ শতকরা ৫০ ভাগ খাবার বায়ুমন্ডল থেকেই সংগ্রহ করে। বাকি খাবার সংগ্রহ করে জৈব সার থেকে। দেশে এখন এই ফলের চারাও পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রুট জার্মপ্লাজম সেন্টারে।

    ড্রাগন ফলের গাছ দেখতে একদম ক্যাকটাসের মতো। ডিম্বাকৃতির উজ্জ্বল গোলাপি রঙের এই ফলের নামটিও অদ্ভুত। সাধারণত ডায়াবেটিস রোগ নিবারণে ড্রাগন ফল বেশ উপকারী। এতে ভিটামিন ‘সি’র পরিমাণ খুবই বেশি। তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, ড্রাগন ফলের জন্ম দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গলে। ১০০ বছর আগে এই ফলের বীজ ভিয়েতনামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকেই ড্রাগন ফলের চাষ বিস্তারলাভ করে। ড্রাগন ফলের চাষ সবচেয়ে বেশি হয় ভিয়েতনামে। এ ছাড়া তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, চীন, ইসরাইল, অস্ট্রেলিয়াতেও ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে। আমাদের দেশে ড্রাগন চাষ ও এর সম্প্রসারণ ঘটাতে চাষাবাদ কৌশল জানতে কৃষি মন্ত্রণালয় তদানীন্তন বড়াইগ্রাম উপজেলা কৃষি অফিসার দেশের প্রখ্যাত ফল গবেষক ও উদ্ভাবক এস এম কামরুজ্জামানকে ভিয়েতনাম পাঠানো হয়। এ প্রসঙ্গে কামরুজ্জামান বলেন, দেশে প্রথম বারের মতো তিনি বিদেশ থেকে উন্নত জাতের কিছু ড্রাগন ফলের চারা নিয়ে আসেন। পরবর্তী সময়ে আমরা বিদেশে গিয়ে হাতে-কলমে এর চাষ শিখে দেশে চাষ শুরু করি।’ এখন মডার্ন টির্কালচার সেন্টারে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা এবং চায়না থেকে আনা বিভিন্ন জাত ছাড়াও উদ্ভাবিত সবাির্ধক ১২টি জাতের দুই হাজার গাছে সবাির্ধক লাল, সাদা, গোলাপি, হলুদ এবং মাল্টি কালার এই পাঁচ রঙে ড্রাগন ফল উৎপাদন হচ্ছে।
    উৎপাদিত ড্রাগন যাচ্ছে রাজধানীর কাওরান বাজার আর শ্যাম বাজারে। ওখান থেকে পাঁচ তারা হোটেল, অভিজাত ডিপাটের্মন্টাল স্টোর এবং সারা দেশে।

    ড্রাগন চাষে লাভ বেশি: জৈব পদার্থসমৃদ্ধ বেলে দোআঁশ মাটিই ড্রাগন চাষের জন্য উত্তম হলেও প্রায় সব ধরনের মাটিতেই ড্রাগন ফল চাষ করা যায়। ড্রাগন গাছের কা- লতানো প্রকৃতির। ড্রাগন ফল চাষ খুব সহজ। অন্যান্য ফসলের চেয়ে চাষিদের পরিশ্রম অনেক কম, আয় বেশি। ড্রাগন ফলের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় হলো জুন-জুলাই মাস।
    আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মে মাস থেকে অক্টোবর মাসে ফল সংগ্রহ করা যায়। বাউ ড্রাগন ফল-১ (সাদা) ও বাউ ড্রাগন ফল-২ (লাল)। এ দুটি জাত বাংলাদেশে চাষ করা হচ্ছে। ড্রাগন চাষের জন্য কাটিং চারাই বেশি উপযোগী। কাটিং থেকে উৎপাদিত গাছে ফল ধরতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে। উপযুক্ত যত্ন নিলে একরপ্রতি ৬ থেকে ৭ টন ফলন পাওয়া যায়। কেজিপ্রতি দাম ২০০ টাকা হলেও, যার বাজর মূল্য ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা। খরচ ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা বাদ দিলেও নীট লাভ হবে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা। আমাদের দেশে ড্রাগন ফল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
    ড্রাগন ফল চাষে সফল হচ্ছেন অনেকে: ঢাকার সাভারে আশুলিয়ার মরিচকাটা গ্রামের রুম্পা চক্রবর্তী নামে শৌখিন এক ফলচাষি বাণিজ্যিকভাবে ১০ একর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ করে রীতিমতো হইচই সৃষ্টি করে ফেলেছেন। ঢাকার সাভারে আশুলিয়ার মরিচকাটা গ্রামে ওই ফলচাষি প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার গাছ লাগিয়ে এরই মধ্যে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছেন। মাত্র এক বছরের মধ্যে গাছগুলো ফলবতী হয়ে উঠছে। এ বছরই তিনি ৮ থেকে ১০ হাজার ফল পাওয়ার আশা করছেন।
    ড্রাগন ফলের দেশ হিসেবে পরিচিত থাইল্যান্ডে একটি গাছ পরিপূর্ণ ফলবান হতে সময় লাগে তিন বছর। ২০০৯ সালে থাইল্যান্ড থেকে ড্রাগন ফলের চারা এনে জমিতে লাগানোর মাত্র এক বছরের মধ্যে ফল ধরতে দেখে তিনি নিজেই হতবাক হয়ে যান। তাই তিনি রফতানিযোগ্য এই ফলের ভবিষ্যৎ বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নিয়ে বেশি আশাবাদী। দেশে এখন এই ফলের চারাও পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রুট জার্মপ্লাজম সেন্টারে। সাভারের জিরানীতেও বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এই ফল। এল আর এগ্রোর স্বত্বাধিকারী লুৎফর রহমানও গড়ে তুলেছেন ড্রাগন ফলের বাগান।
    পাহাড়ে ড্রাগন চাষ: আশার খবরটি হলো, রাঙামাটির কাপ্তাই কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা ড্রাগন ফলের পরীক্ষামূলক গবেষণায় সফল হয়েছেন। তাদের মতে, পাহাড়ের মাটি এই ফল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে এই ফলের ব্যাপক চাষাবাদ সম্ভব। পাহাড়ে বাড়ছে বিদেশি ফল ড্রাগনের চাষ। বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বিদেশী ফল হলেও পাহাড়ের জলবায়ু এবং মাটি দুটিই ড্রাগন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। পাহাড়ে ড্রাগন ফল চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
    পোকামাকড়ের আক্রমণ কম এবং পানির সেচ কম লাগায় এ চাষে আগ্রহী হচ্ছে পাহাড়িরা। স্বল্প সময়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় বান্দরবানে জুমচাষ ছেড়ে ড্রাগন ফল চাষে ঝুঁকছেন পাহাড়িরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিম্বুক পাহাড়ের বসন্ত পাড়ায় বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ করে লাভবান হয়েছেন তারা।

    বরেন্দ্র অঞ্চলে ড্রাগন চাষ: খরাপ্রবণ এলাকা হিসেবে বরেন্দ্র অঞ্চলে খরাসহিষ্ণু ক্যাকটাস প্রজাতির এ ফলের ফলন ভালো হওয়ায় ‘ড্রাগন’ চাষের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। রাজশাহীর কিছু অঞ্চলে স্থানীয়দের মধ্যে অপরিচিত এ ফল চাষ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, সীমিত পরিসরে রাজশাহী অঞ্চলে ড্রাগন ফলের আবাদ শুরু হয়েছে। বিঘাপ্রতি খরচ পড়ছে ২ লাখ টাকা বছরে আয় ৫ লাখ টাকা।

    ছাদে ড্রাগন চাষ: ড্রাগন ফলটি জমির পাশাপাশি বাড়ির ছাদেও চাষ করা য়ায়। বাড়ির ছাদে টবে চাষ করে সাফল্য লাভ করেছেন উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুস ছালাম। আব্দুস ছালাম ২০১১ সালে এপ্রিল মাসে গাজীপুর জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমি (নাটা) হতে ৩টি চারা নিয়ে টবে লাগান। ২০১২ সালে ফূল ফোটে ফল হয়। টবে লাগানো একেকটি ফলের ওজন ১৫০ গ্রাম হতে ৩০০ গ্রাম পযর্ন্ত হয়। সাঁথিয়া তথা পাবনা জেলার মধ্যে তিনিই প্রথম দালানের ছাদে সফলভাবে ড্রাগন ফল চাষ করেছেন।
    অনুসন্ধানে জানা গেছে, থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে ড্রাগনের জাত এনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্মপ্লাজম সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. এমএ রহিম বাংলাদেশে ড্রাগন ফলের ওপর নিরলস গবেষণার মাধ্যমে দেশে ফলটির আবাদ উপযোগী নতুন জাতের উদ্ভাবন করেন। পরবর্তীতে ড্রাগন চাষে সফলতা অর্জনের ফলে জার্মপ্লাজম সেন্টারের পক্ষ থেকে নাটোর, রাজবাড়ী, রাঙামাটিসহ এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ড্রাগন চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০০৯ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বড়াইগ্রামে হবিদুল ইসলামের বাড়িতে বাংলাদেশে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ উদ্বোধন করেন।

    ২০০৭ সালে বাংলাদেশে প্রথম ড্রাগন ফলের গাছ নিয়ে আসা হয়। দেশে বাণিজ্যিক ড্রাগন চাষ করা সম্ভব হলে পুষ্টি চাহিদা পূরণে বিরাট অবদান রাখবে বলেও কৃষি বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
    তাদের মতে দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আবাদের জন্য বাউ ড্রাগন ফল-১ (সাদা), বাউ ড্রাগন ফল-২ (লাল), হলুদ ও কালচে লাল ড্রাগন ফলে চাষ বাড়ানো যেতে পারে। খেতে সুস্বাদু পুষ্টিকর এ ফলের চাষ ব্যাপকভাবে গড়ে উঠলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ড্রাগন ফল বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব বলে কৃষিবিদরা মনে করছেন। বাউ ড্রাগন ফল-১ (সাদ) ও বাউ ড্রাগন ফল-২ (লাল)। এ দুটি জাত বাংলাদেশে চাষ করা হচ্ছে। বীজ ও কাটিং পদ্ধতিতে ড্রাগন ফলের চাষ করা যায়। তবে বীজের গাছে মাতৃগাছের মতো ফলের গুণাগুণ না-ও থাকতে পারে। এতে ফল ধরতে বেশি সময় লাগে। ড্রাগন চাষের জন্য কাটিংয়ের চারাই বেশি উপযোগী। কাটিং থেকে উৎপাদিত গাছে ফল ধরতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে। উপযুক্ত যত্ন নিলে একর প্রতি ৬ থেকে ৭ টন ফলন পাওয়া যায়।
    মোঃ হায়দার আলী
    সহঃ সাধারন সমাপাদক,
    জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা;
    রাজশাহী জেলা শাখা।

    প্রধান শিক্ষক
    মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়,
    গোদাগাড়ী, রাজশাহী।

  • পাইকগাছায় পাটের ন্যায্য দাম না পাওয়ায়  লোকসানে চাষীরা

    পাইকগাছায় পাটের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় লোকসানে চাষীরা

    ইমদাদুল হক, পাইকগাছা, খুলনা।।
    চলতি মৌসুমে পাইকগাছায় পাটের আশ ভালো হলেও হঠাৎ পাটের দাম কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। পাট চাষে উৎপাদন খরচ বাড়লেও বাজারদর নিন্মমুখী হওয়ায় ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না তারা।দাম কমে যাওয়ায় হতাশাজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকরা। ফলে উৎপাদন খরচ তুলতে না পেরে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে কৃষক। এমনি পরিস্থিতিতে আগামী মৌসুম থেকে অনেকে পাট চাষ ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবছেন ।
    উপজেলার পাট চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, পাট চাষের সময় এবার নানা বিড়ম্বনার শিকার হয়।বড় সমস্যা পাট জাগ দেওযার জায়গা পাওয়া যায় না। পাটের আবাদের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ কিছুটা কমে এসেছে। কারণ পাট পচানোর সমস্যা। এখন পুকুর-জলাশয় মাছ চাষের আওতায় এসেছে। ফলে মাছ চাষ করা পুকুর-জলাশয়ে পাট পচানো সম্ভব হচ্ছে না। বীজ বপণের সময় খরা হওয়ায় ঠিকমতো চারা গজায়নি। এতে ব্যাহত হয়েছে পাটের ফলন।প্রতি বিঘা জমিতে হালচাষ ও বীজ বপণ থেকে শুরু করে সার-কীটনাশকের খরচ, পানি সেচ শ্রমিক খরচ, জাগ দেয়া, আঁশ ছড়ানোসহ ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ পড়েছে ১৫-১৬ হাজার টাকা। অথচ মৌসুমের শুরুতে বাজারে পাট ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা বিক্রি হলেও, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৯শত থেকে ২ হাজার টাকা মন। অথচ গত বছরে এই পাট ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা বিক্রি হয়।
    পাটের দাম কম হলেও পাটকাঠির প্রচুর চাহিদা ও দাম বেশি হওয়ায় পাট চাষীরা খরচ বাচানোর চেস্টা করছে। ছোট ছোট আটি হিসাবে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। জ্বালানী হিসাবে গৃহবধুদের কাছে পাটকাঠির চাহিদা খুব বেশি। পাটকাঠি দিয়ে সহজে উনুন জ্বালানো যায় ও সহজে রান্না করা যায়। এইজন্য গৃহবধুদের কাছে পাটকাঠির চাহিদা বেশি। উপজেলার গদাইপুর গ্রামের পাটচাষী কেসমত সরদার জানান, শ্রমিকের দাম বেশি হওয়ায় পাটের আবাদে খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।তারপরও পাটকাঠির দামের উপর নির্ভর করে পাট চাষ করছি।
    উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৩৯০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এএইচএম জাহাঙ্গীর আলম জানান, আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় পাটের আবাদ ভাল হয়েছে।সরকার পাটচাষিদেরও প্রণোদনা দিচ্ছে যাতে নতুন জাতের পাটের চাষাবাদ বাড়ে। রবি-১ পাটের নতুন জাত, এরজন্য প্রণোদনা রয়েছে। পাটের দাম আপাতত কিছুটা কম হলেও খুব দ্রুত সময়ে দাম বেড়ে যাবে বলে আশা করেন তিনি। দাম বাড়লে কৃষক লাভবান হবে এবং ভবিষ্যতে উপ জেলায় পাট চাষির সংখ্যা বাড়বে বলে দাবি করেন।

  • নড়াইলের মাঠে মাঠে সোনালি পাকা ধানের হাতছানি উৎসবের আমেজে চাষিরা

    নড়াইলের মাঠে মাঠে সোনালি পাকা ধানের হাতছানি উৎসবের আমেজে চাষিরা

    উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে:
    নড়াইলে কৃষকের আউশ ধান ঘরে তোলা নিয়ে শরতের প্রকৃতিতে।
    মাঠে মাঠে সোনালি পাকা ধানের হাতছানি, উৎসবের আমেজে আশার ফসল কাটতে ব্যস্ত চাষিরা, ডিঙি বোঝাই করে কাটা ধান নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরছেন কৃষকরা। উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে জানান,
    নড়াইলে কৃষকের আউশ ধান ঘরে তোলা নিয়ে শরতের প্রকৃতিতে এই নৈসর্গিক দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে।
    চাষিরা জানান, মাটি, আবহাওয়াসহ চাষের অনুকূল নানা পারিপার্শ্বিকতায় জেলার অপেক্ষাকৃত নিম্নাঞ্চলবর্তী বিলগুলোতে চাষিরা আউশ ধানের আবাদ করে থাকেন। আউশের নানা দেশি জাতের মধ্যে রাতুল ধান অন্যতম। পরবর্তী সময়ে আবহাওয়া সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে ক্রমাগত ফলন বিপর্যয়ের কবলে নড়াইলের ঐতিহ্যবাহী এ জাতটি হারিয়ে যেতে বসে।
    তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাষের নানা অনুকূল পরিবেশের ফলে জনপ্রিয় এ ধান পুনরায় চাষে ফেরাতে পেরে খুশি চাষিরা। প্রতিকূল নানা পারিপার্শ্বিকতায় এ অঞ্চলের চাষিরা আউশ ধান বোনা ছেড়ে দেয়ায় চিরায়ত বাংলার শরতের এই ছবি নড়াইলের প্রকৃতি থেকে এক সময় হারিয়ে গিয়েছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতসহ চাষ উপযোগী অনুকূল আবহাওয়ায় চাষিরা নবোদ্যমে লাভজনক দেশি আউশ ধান আবাদ শুরু করে। এতে প্রকৃতি আবারও ফিরেছে স্বমহিমায়। দেশি আউশ চাষে ব্যাপক লাভের মুখ দেখছেন কৃষক।
    সরেজমিন লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলার বিভিন্ন বিলে গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে ধান কাটার ভরা মৌসুম। দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠজুড়ে আউশ ধানে পাক ধরায় ফসল কাটতে ব্যস্ত চাষিরা। কোমর পর্যন্ত জলে নেমে হাসির সঙ্গে নানা আলাপচারিতায় চলছে এ ধান কাটা। একদিকে চলছে ধান কাটা, অন্য দিকে ডিঙি বোঝাই করে ধান নেয়া হচ্ছে বাড়িতে। দক্ষ চাষির লগির সুনিপুণ খোঁচায় ধানের ডিঙির সঙ্গে তরতরিয়ে অভীষ্ট গন্তব্যে বাধাহীন এগিয়ে চলে চাষিদের সুখস্বপ্ন।
    কালিয়া উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামের চাষি ওয়াদুদ মিয়া জানান, বোনা রাতুল আউশ ধান আবাদে বিঘাপ্রতি (স্থানীয় বিঘা=৪৮ শতাংশ) ২০০০ হাজার টাকা খরচে প্রায় ২০ মণ ফলন পাওয়া যায়।
    লোহাগড়া উপজেলাধীন লক্ষ্মীপাশা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মানছুরুল হক সুমন বলেন, সুস্বাদু রাতুল আউশ প্রাকৃতিক সেচেই ফলানো সম্ভব, বাড়তি সার-কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না বললেই চলে। এ ছাড়া অন্যান্য ধান কেটে পরবর্তী ফসলের জন্য জমি পরিষ্কারে ব্যাপক খরচ গুনতে হলেও রাতুলের গোড়া পচে জমিতে মিশে গিয়ে জমি উর্বর করে তোলে।
    কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, নড়াইলে এবার মোট ৯ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হয়েছে, এর মধ্যে রাতুলসহ স্থানীয় জাতের আউশের আবাদ হয়েছে সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে।
    উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে।

  • ড্রাগনের নিঃশ্বাসে অর্থনৈতিক স্বস্তি ঝিনাইদহে সাড়ে তিন’শ কোটি টাকার বাজার

    ড্রাগনের নিঃশ্বাসে অর্থনৈতিক স্বস্তি ঝিনাইদহে সাড়ে তিন’শ কোটি টাকার বাজার

    আতিকুর রহমান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
    আফ্রিকা দেশের ফল ড্রাগন এখন ঝিনাইদহের মাঠে মাঠে আবাদ হচ্ছে। ফলে ঝিনাইদহ ড্রাগন ফলের জেলায় রূপ নিয়েছে। চলতি মৌসুমে ঝিনাইদহ জেলায় সাড়ে তিন’শ কোটি টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি হবে বলে চাষিরা আশা ব্যক্তি করেছেন। কৃষকদের ভাষ্য এ জেলায় দ্রুত বাড়ছে ড্রাগন ফলের চাষ। লাভ বেশি হওয়ায় ঝিনাইদহের কৃষকরা ড্রাগন চাষে ঝুকছে। চলতি বছরে ঝিনাইদহে ৬ হাজার ২২৫ বিঘা জমিতে (৮৩০ হেক্টর) ড্রাগন ফলের চাষ হয়েছে। ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই জেলায় আনুমানিক সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার ড্রাগন ফল উৎপাদন হবে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ২০০২ সালের দিকে প্রথম ঝিনাইদহে জেলায় শখের বশে অনেকে ড্রাগন ফল চাষ করতেন। ২০১৬ সালের দিকে জেলার কালীগঞ্জের কৃষক বোরহান উদ্দিন ও শহিদুল ইসলাম বানিজ্যক ভাবে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর ড. আব্দুর রহিমের মাধ্যমে ঝিনাইদহের কৃষকরা চারা সংগ্রহ করেন। তাদের দেখাদেখি আরও অনেকে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফল চাষ শুরু করেন। অনেকে এ ফলের চাষ করে লাভবান হয়েছেন। তাদের একজন কালীগঞ্জ উপজেলা শিবনগর গ্রামের সুরত আলী। তিনি জানান, ২০১৭ সাল থেকে তিনি ড্রাগনের চাষ শুরু করেন। ২৫ বিঘা জমির ওপর তার ড্রাগন বাগান। প্রথম বছর ফল কম ধরে। বাগানের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে ফল উৎপাদন বাড়তে থাকে। কৃষক সরোত আলীর ভাষ্যমতে, এক বিঘায় ড্রাগনের বাগান করতে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়। এ বছর আবহাওয়া বৈরী। এজন্য ফল কম ধরছে। তবে বিঘাপ্রতি ৫ লাখ টাকার ফল বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করেন। কালীগঞ্জ উপজেলা তত্তীপুর গ্রামে ১৬ বিঘাতে ড্রাগনের বাগান করেছেন ঝিনাইদহের তরুণ উদ্যোক্তা আহসানুল ইসলাম ডন। তিনি পাঁচ বছর ধরে ড্রাগনের চাষ করছেন। ড্রাগন চাষ করে তিনি স্ববলম্বি হয়েছেন। জেলার হরিণাকুন্ডু পৌরসভার মান্দারতলা গ্রামের কৃষক বিপ্লব জাহান ওরফে রবিউল পায়রাডাঙ্গা গ্রামের চারাতলা বাজার এলাকায় ১১ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন আল্ট্রা হাইডেনসিটি ড্রাগন বাগান। যার নাম দিয়েছেন “বাংলা পদ্ধতি”। যেখানে এক বিঘায় ৮৫০টি চারা রোপণ করেন, সেখানে বিপ্লব জাহানের এই বাগানে ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ চারা লাগানো হয়েছে। যা স্বাভাবিকের চেয়ে তিন গুণ বেশি। এতে ফলনও হচ্ছে তিন গুণ। কৃষক বিপ্লব জাহান জানান, ডিপ ইরিগেশন সিস্টেমের মাধ্যমে লাগানো তার বাগানের প্রতিটি গাছ সমান ভাবে খাদ্য, পানি ও পুষ্টি পাচ্ছে। পানির কোনো অপচয়ও নেই এই পদ্ধতিতে। এই বাগানে বিঘা প্রতি ১০ টন করে ফলন আশা করছেন তিনি। কোটচাঁদপুর উপজেলার ড্রাগন চাষী হারুন-অর রশিদ মুসা বলেন, প্রথম দিকে এই ফলের বাগান তৈরি করতে খরচের পরিমাণ বেশি হয়। যে কারণে সাধারণ কৃষকরা ইচ্ছে করলেও ড্রাগান চাষ করতে পারেন না। ফলে তাদের নাগালের বাইরেই রয়ে যাচ্ছে এ অপার সম্ভাবনার হাতছানি। কালীগঞ্জ উপজেলা বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের শেখ আবুল কাশেমের ছেলে ড্রাগন চাষী রাসেল আহমেদ বলেন, একবার এই ফলের বাগান তৈরি করতে পারলে ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এতে একজন কৃষকের ভাগ্য বদলাতে সহজ হয়। ঝিনাইদহ শহরের উপ-শহর পাড়ার ড্রাগন চাষি হাফেজ আকতার হোসেন জানান, বর্তমান পাইকারি বাজারে এ গ্রেড ড্রাগন ফল ২৬০ টাকা কেজি ও বি গ্রেড ফল ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ফল ভালো হলে বিঘাপ্রতি ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা আয় হয়। ফলের দোকানগুলোতে অন্যান্য ফলের সঙ্গে ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে। চাহিদাও ভালো। এদিকে ঝিনাইদহের কিছু অসাধু কৃষক ড্রাগনে ক্ষতি কারক হরমোন বা টনিক প্রয়োগ করে দ্রæত ফল বর্ধমান প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। এতে মানবদেহের জন্য ক্ষতি সাধিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মহেশপুর উপজেলা গৌরীনাথপুরে ড্রাগন ফলের হাট বসেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে এখান থেকে ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। মহেশপুর উপজেলার গৌরীনাথপুর গ্রামের মফিজুর রহমান বলেন, দুই বছর আগে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেছেন। তার ১৫ বিঘার ওপর ড্রাগন বাগান। তিনি জানান, এ বছর বৃষ্টি কম ও গরমের কারণে ফলন কম হচ্ছে। এতে লাভ কম হবে। গৌরীনাথপুর গ্রাম জুড়ে শুধুই ড্রাগন ফলের বাগান। এসব বাগানে কর্ম করে শত শত মানুষ জীবিকা অর্জন করছেন। গৌরীনাথপুরে ড্রাগনের হাট বসেছে ১০ মাস আগে। সেখানে অন্তত ৫০টি আড়তে ড্রাগন ফল কেনাবেচা চলে। এই বাজার থেকে ড্রাগন ফল ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ফেনী, নোয়াখালী, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, নওগাঁ, সৈয়দপুর ও নিলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে। বাজারের আড়তদার জসিম উদ্দিন জানান, গৌরীনাথপুরে তিনি প্রথম ড্রাগন ফল কেনাবেচার আড়ত খোলেন। তার দেখাদেখি আরও অনেকেই আড়ত খুলেছেন। তিনি জানান, বর্তমানে প্রতিদিন গৌরীনাথপুর হাটে তিন থেকে চার কোটি টাকার ড্রাগন কেনাবেচা হয়। তিনি প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার ড্রাগন ফল কেনাবেচা করেন বলে জানান। বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আজগর আলী বলেন, এই জেলায় অন্য ফসলের চেয়ে ড্রাগন ফলের চাষ বাড়ছে। এ পর্যন্ত ৮৩০ হেক্টর জমিতে ড্রাগনের চাষ হয়েছে। দিনিকে দিন ড্রাগন ফলের চাহিদা বেড়েই চলেছে। হাটবাজারে ফলের দোকানগুলোতে প্রচুর ড্রাগন ফল শোভা পাচ্ছে। বিক্রিও ভালো হচ্ছে। তারা ফলের জাত ও মান উন্নয়নের জন্য কারিগরি পরামর্শ দিচ্ছেন।

    ঝিনাইদহ
    আতিকুর রহমান

  • অসময়ে তরমুজ চাষে সফল মোরেলগঞ্জ শরনখোলার কৃষকরা

    অসময়ে তরমুজ চাষে সফল মোরেলগঞ্জ শরনখোলার কৃষকরা

    এস. এম সাইফুল ইসলাম কবির. বাগেরহাট:অসময়ে অফসিজন তরমুজ চাষে সফল বাগেরহাটের কৃষকরা।
    দূর থেকে দেখলে মনে হবে লাউ বা কুমড়া ঝুলে আছে। কাছে গেলে বোঝা যায় গুনো ও লাইলোনের সুতোর জালে তৈরি বিশেষ মাচায় রসালো তরমুজ ঝুলছে।

    ○ছোট, বড় ও মাঝারি সাইজের বিভিন্ন রংয়ের তরমুজে দেখলে মন জুড়াবে যে কারও। মাত্র চারমাসেই বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ শরনখোলার কৃষকরা মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়ীয়া ইউনিয়নের ভাষানন্দল গ্রামের শাহ জাহানের ছেলে কৃষক রাজিব জাহিদুল ইসলামের ঘেরের ভেড়ীতে অসময়ে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে।
    __RECORD__
    শরণখোলা উপজেলার উত্তররাজাপুর-আমতলা গ্রামের কৃষক বিমল চন্দ্র মাঝির ক্ষেতে এমন বাম্পার ফলন হয়েছে।

    অসময়ের এই তরমুজের দামও ভাল হবে এমন আশা হতদরিদ্র কৃষক বিমল চন্দ্র মাঝির।
    তিনি বলেন, নিজের জমি-জমা নেই।

    এক একর জমি বর্গা নিয়ে মাছ ও ধান চাষ করতাম, এতেই মোটামুটি চলে আমাদের সংসার। কৃষি বিভাগের পরামর্শে ঘেরের পাড়ে অফসিজন বা অমৌসুমী তরমুজের চাষ শুরু করি।

    তরমুজের বিচি, বাস, কাঠ, লাইলোনের সুতোর জাল, গুনা ও শ্রমিক মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। সৃষ্টিকর্তা যে ফল দিয়েছে তাতে এক লক্ষ টাকার উপরে বিক্রি করতে পারব। তরমুজ শেষ হলে, এই মাচায়ই কুমড়ো, লাউসহ অন্যান্য সবজি চাষ করা যাবে।
    অসময়ে তরমুজ চাষ সম্পর্কে কৃষক বিমল চন্দ্র মাঝি বলেন, এই চাষটি স্বাভাবিক লাউ-কুমরো চাষের মতই, মাটিতে জৈব ও রাসয়নিক সার দিয়ে বিচি রোপন করতে হয়। পরে গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করতে হয়। যখন বৃষ্টি থাকে না, তখন পানি দিতে হয়। তেমন খরচ না হলেও, যত্ন করতে হয় অনেক। তবে তরমুজ চাষে আমাদের সবসময় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাগণ সহযোগিতা করেছেন। এভাবে কয়েক বছর ভালভাবে চাষ করতে পারল সংসারে স্বচ্ছলতা আসবে বলে দাবি করেন এই কৃষক।

    বিমল চন্দ্র মাঝির ছেলে বিপুল চন্দ্র মাঝি বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা ৬০ টাকা কেজি দরে তরমুজ ক্রয়ের জন্য যোগাযোগ করেছে। আশাকরি দুই-চারদিনের মধ্যেই আমরা বিক্রি শুরু করতে পারব।

    শুধু বিমল চন্দ্র মাঝি নয়, ভাল দাম ও চাষাবাদ সহজ হওয়ায় জেলার অনেকেই অফসিজন তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, জেলার ৪১ হেক্টর জমিতে প্রায় ৪শ কৃষক তরমুজ চাষ করেছেন। আগামী বছরে চাষের জমি ও কৃষক আরও বাড়বে বলে আশা কৃষি বিভাগের।

    অসীম কুমার তরুয়া নামের আরেক কৃষক বলেন, ৩৩শতক জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। ফলনও ভাল হয়েছে। যদি সব মাছের ঘেরের পাড় ও উঁচু জমিতে অফসিজন তরমুজ চাষ করা যায় তাহলে, কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভববান হতে পারে।

    শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাসিবুল ইসলাম মনি বলেন, আমরা সব সময় মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমাদের ইউনিয়নে অফসিজন তরমুজ চাষিদের সব সময় খোঁজ খবর রাখছি। চাষিদের গাছে কখনও কোন সমস্যা বা রোগব্যাধি দেখা দিলে, দ্রুত আমরা মাঠে এসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি।

    শরনখোলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন, গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অফসিজন তরমুজ চাষীদের সহযোগিতা করা হয়েছে। এই চাষিদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি কৃষি উপকরণ দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে যার কারণে চাষীরা তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠছে।

    কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, আমরা সব সময় কৃষকদের উচ্চমূল্য সম্পন্ন ফসল চাষে উৎসাহ প্রদান করি। এজন্য কারিগরি সহযোগিতাসহ বিভিন্ন পরামর্শও দেওয়া হয়। এই কারণে জেলায় দিন দিন অমৌসুমী তরমুজ চাষি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে প্রায় ৪শ চাষি ৪১ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করছেন। ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে মন্তব্য করেন কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা। ###ছবি সংযুক্ত।
    (এস এম সাইফুল ইসলাম কবির)
    বাগেরহাট জেলা সংবাদদাতা
    তাং ১৬/০৯/২০২৩

  • মোরেলগঞ্জে ১৫কোটি টাকা ছাড়াবে সুপারির বাজার, দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা

    মোরেলগঞ্জে ১৫কোটি টাকা ছাড়াবে সুপারির বাজার, দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা

    এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সুপারির জন্য বিখ্যাত উপকূলীয় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা। এ উপজেলার লোকজনের সারা বছরের আয়ের বড় অংশ আসে সুপারি বিক্রি থেকে। প্রতি বছরই এখান থেকে প্রচুর পরিমাণে সুপারি সারাদেশে ছড়িয়ে যায়। এ বছর সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে।এতে এ বছর ১৫ কোটি টাকার সুপারি উৎপাদন হয়েছে। এ উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুপারির ফলন ভালো হয়। তবে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে সুপারির বাজারদর কম থাকায় হতাশ মোরেলগঞ্জের কৃষক, গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

    কালের বিবর্তনে ধান, পান হারিয়ে গেলেও লাভজনক কৃষিপণ্য হিসেবে স্থান পেয়েছে সুপারি। মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপক হারে সুপারির চাষ হয়ে আসছে। এখনকার সুপারী মানে ভাল বলে সুপারীর বাণিজ্যিক বাজার গড়ে উঠেছে।

    স্থানীয় সুপারি ব্যবসায়ীদের থেকে জানা যায়, মোরেলগঞ্জ পৌরসভা ও উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের সবকটিতেই উৎপাদন হয় সুপারির। একসময় সারাদেশে সরবরাহ করা হতো মোরেলগঞ্জর সুপারি। তবে সেই অবস্থা না থাকলেও এখনো প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে সুপারি মোরেলগঞ্জ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। তবেএ বছর সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে।
    স্থানীয়রা জানান, সুপারী একটি অর্থকরী ফসল। আপদকালীন সময়ে সুপারি বিক্রি করে সংসারের চাহিদা মিটছে অনেক কৃষকের। সুপারির চাষ লাভজনক হওয়ায় অনেকেই এখন সুপারি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার পাকা ও শুকনো সুপারি কেনা-বেচা হয় মোরেলগঞ্জ। ফলে এখানে গড়ে উঠেছে সুপারীর বাণিজ্যিক বাজার।

    উপকূলে সুপারীর সবচেয়ে বড় মোকাম মোরেলগঞ্জ। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মোরেলগঞ্জ উপজেলা১৬টি ইউনিয়নের থেকে ব্যবসায়ীরা সুপারী নিয়ে বিক্রির জন্য মোরেলগঞ্জ শহরে গড়ে উঠা সুপারির হাটে আসেন। এখানে প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও শুক্রবার দুই দিন সুপারীর হাট বসে।

    তবে শুকনো সুপারির পিক মৌসুম ফাল্গুন থেকে আষাঢ় পর্যন্ত এবং কাঁচা সুপারীর পিক মৌসুম শ্রাবণ থেকে পৌষ পর্যন্ত। এ সময় বেশির ভাগ সুপারি ক্রয়-বিক্রয় হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সুপারি কিনে ভারতসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান। আবার দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরাও এখানে আসেন সুপারি কিনতে।মোরেলগঞ্জ থেকে নিয়মিত সুপারি সংগ্রহ করেন। এখান থেকে প্রায় প্রতিদিন ট্রলার ও ট্রাক বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায় সুপারি।

    মোরেলগঞ্জবাজারের সুপারি ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের ফরাজী, আব্দুল হালিম ফরাজী, বাদশা মিয়া,সোহরাব হোসেন মোহন বলেন,মোরেলগঞ্জে প্রতি হাটে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার পাকা ও শুকনো সুপারির কেনা-বেচা হয়। প্রতি বছর এই মৌসুমে বিভিন্ন হাট থেকে সুপারি কিনে মজুদ করে থাকে। শুকিয়ে ও পানিতে ভিজিয়ে সুপারি সংরক্ষণ করা হয়। পরে তা দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। এ সুপারি এলসির মাধ্যমে ভারতে যাচ্ছে।

    তিনি বলেন, গত মৌসুমে সুপারীর দাম ছিল অনেক ভালো। তবে এবার সুপারীর দাম বাড়তির দিকে। বর্তমান মৌসুমে ২১ ঘা (২১০টি) এক কুড়ি কাঁচা সুপারির মূল্য শ্রেণীভেদে ৪৬০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত মৌসুমের তুলনায় অনেক বেশী।

    মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকাশ বৈরাগীবলেন, ‘মাটি এবং আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এ কারণে এখানকার সুপারি আকারে অনেক বড় এবং সুস্বাদু হয়।বলেন, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সুপারিগাছে ফুল আসে। সেই ফুল থেকে সুপারি হয়।
    এ বছর উপজেলার সুপারি বাগানের মালিকরা সঠিক সময়ে সঠিক পরিচর্যা করায় সুপারির এমন ফলন হয়েছে। এ উপজেলায় ৫০০ থেকে ৬০০ টন সুপারি উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এর বাজারমূল্য ১৫ কোটি টাকার বেশি হবে। বাজারে কাঁচা-পাকা সুপারির দাম না থাকায় গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হতাশায় ভুগছেন। তবে আশ্বিন-কার্তিক মাসে চাষি ও গৃহস্থরা দাম বেশি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
    স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই সুপারি কিনে ৬০ শতাংশ পানিভর্তি পাত্রে ভিজিয়ে রাখেন। ৪০ শতাংশ সুপারি দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ ও রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এ বছর কাঁচা-পাকা সুপারির দাম কম হওয়ায় হতাশ কৃষক, গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।

    (এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির)
    বাগেরহাট সংবাদদাতা