Category: ইতিহাস ঐতিহ্য

  • আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে মাটির তৈরী বাড়ী

    আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে মাটির তৈরী বাড়ী

    রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলীঃ পিছিয়ে নেই গ্রামাঞ্চল আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে এখানেও। মাটির ঘর/ছনের ঘরের জায়গায় তৈরি হচ্ছে প্রাসাদসম অট্টালিকা। মাটির ঘরের স্থান দখল করে নিচ্ছে ইট-পাথরের দালান। একটু সুখের আশায় মানুষ কত কিছুই না করছে। মাটির ঘরের শান্তি ইট পাথরের দালান কোঠায় খুঁজে পাওয়া ভার।

    তারপরও মানুষ যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নগরায়ণের সাথে সাথে পাঁকা দালান কোঠায় তৈরি করছেন। এতে করে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী মাটির ঘর কিংবা মাটির দোতলা বাড়ী। বেশিদিন আগের কথা নয়, প্রতিটি গ্রামে একসময় মানুষের নজর কাড়তো সুন্দর এ মাটির ঘর। ঝড়, বৃষ্টি থেকে বাঁচার পাশাপাশি প্রচুর গরম ও খুবই শীতে বসবাস উপযোগী মাটির তৈরি এসব ঘর এখন আর তেমন চোখে পড়ে না।

    আধুনিকতার ছোঁয়া আর কালের বিবর্তনে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এ চিরচেনা মাটির ঘর বিলুপ্তির পথে বললেই চলে। অতীতে মাটির ঘর গরীবের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর বলে পরিচিত ছিল। এ ঘর শীত ও গরম সব মৌসুমে আরামদায়ক তাই আরামের জন্য গ্রামের দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি অনেক বিত্তবান ও মাটির ঘর তৈরি করতেন।

    জানা যায়, প্রাচীনকাল থেকেই মাটির ঘরের প্রচলন ছিল। এটেল বা আঠালো মাটি কাঁদায় পরিনত করে দুই-তিন ফুট চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হত। ১০-১৫ ফুট উচু দেয়ালে কাঠ বা বাঁশের সিলিং তৈরি করে তার ওপর খড় থড় অথবা টিনের ছাউনি দেয়া হত। মাটির ঘর অনেক সময় দোতলা পর্যন্ত করা হতো। এসব মাটির ঘর তৈরি করতে কারিগরদের তিন-চার মাসের অধিক সময় লাগতো। গৃহিনীরা মাটির দেয়ালে বিভিন্ন রকমের আল্পনা একে তাদের নিজ বসত ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তুলতেন।
    এক সময় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার অনেক পরিবার মাটির ঘরে বাস করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো। তবে বর্ষার সময় মাটির ঘরের ক্ষতি হয় বেশি। ভূমিকম্প বা বন্যা না হলে একটি মাটির ঘর শত বছরেরও বেশি স্থায়ী হয়।

    কিন্তু কালের আর্বতনে দালান-কোঠা আর অট্টালিকার কাছে হার মানছে সে চিরচেনা শান্তির নিড় ‘মাটির ঘর’। গোদাগাড়ী উপজেলার কম বেশি সব গ্রামেরই দেখা যেতো শান্তির নীড় ‘মাটির ঘর’ কিন্তু সে মাটির ঘর এখন আর চোখে পড়ে না।

    গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল ইউনিয়নের সৈয়দপুর, এনায়েতপুর গ্রামের দুলাল হাজির বাড়িতে সেই পুরোনো স্মৃতিভরা শান্তির নীড় মাটির ঘরে চোখ পড়লো, কথা হলো বাড়ির মালিকের সাথে তিনি বলেন, বাবা ও দাদাদের সেই পুরোনো স্মৃতি ধরে রাখতে এখনো মাটির ঘর রেখে দিয়েছি। তবে যুগের সাথে তাল মেলাতে এখন অনেকে ইটের ঘর তৈরি করছে, তাই ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে মাটির ঘর।

    গোদাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুল গণি মাসুদ জানান, বাপ দাদার স্মৃতি এখনও ধরে রেখেছি। যা এখনো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রচন্ড তাপদাহে বাড়ির লোকজন শান্তির পরশ হিসেবে আমাদের মাটির ঘরকে বেঁছে নেয়। বিদ্যুৎ না থাকলেও মাটির দোতলায় আরামে বসবাস করা যায়।

    দিগরাম উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ ইফতেখার হোসেন বলেন, মাটির ঘর বসবাসের জন্য আরামদায়ক হলেও যুগের বিবরর্তনে অধিকাংশই মানুষ মাটির ঘর ভেঙে অধিক নিরাপত্তা ও স্বল্প জায়গায় অনেক লোকের বসবাসের জন্য ইটের ঘরকে প্রথম প্রচন্দের তালিকা নিয়ে আসছে। তাই তো দিনে দিনে হারিয়ে যেতে বসেছে ওই সব মাটির ঘরবাড়ী।

    মোঃ হায়দার আলী
    রাজশাহী।

  • হক্কা পড়ে না এখন চোখে

    হক্কা পড়ে না এখন চোখে

    এস মিজানুল ইসলাম, বিশেষ সংবাদদাতা।। হক্কা বর্তমানে এখন বিলুপ্তির পথে। অথচ এক সময় এ হুক্কা এ ছিলো বাংলার সামাজিক অবস্থানের একটি অংশ। হুক্বা ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ তার সামাজিক অবস্থানকে চি›িহত করতে পারতো। তার আভিজাত্যের পরিচয় বহন ও করতো।

    গ্রাম বাংলার কিছু স্থানে এখনো বৃদ্ধরা নামিদামি সিগারেট, বিড়ি জাতীয় দ্রব্য ব্যাবহার না করে হক্কার সুখ টানেই আমেজ কাটাচ্ছেন। হক্কা নারিকেলের খোল দিয়ে তৈরি করা হয়। অনেক প্রভাবশালী খান্দানীদের পিতলের বাহারী হুক্কা ব্যবহার করতো। পোড়া মাটি দিয়ে তৈরি হয় হক্কার ছিলিম। এ ছিলিমে তামাক ও আগুন মিলে তৈরি হয় এক প্রকার নেশা জাতীয় মহৌষধ। নারিকেল বা পিতলের খোলে পানি দিয়ে হুক্কায় লাগানো পাইপটি মুখে
    লাগিয়ে টানলে গড় গড় শব্দ হয়। আর হক্কার ধোঁয়া নেশায় পরিনত হয়।

    এ সভ্যতার যুগে মানুষ এখন হক্কা ছেড়ে নামি-দামি সিগারেট, বাবা, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল ও বিড়ি টেনে নেশা মিটিয়ে মরণের দিকে নিয়ে যায়। এরা স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন-যাপন করলেও গ্রাম বাংলার বৃদ্ধরা এ ঐতিহ্য হুক্কা এখনও ছাড়েনি। অতীতে রাজা-বাদশা ও ঋষি-মুনিরা হুক্কার নেশায় আমেজ মেটাতেন। তবে এ হুক্কার ব্যবহার কবে শুরু হয়েছে তা জানা যায়নি।

    বর্তমানে বানারীপাড়ার হুক্কা বিক্রির দোকান নেই। শহর থেকে হুক্কা বিলুপ্ত হয়েছে। গ্রামা লের হাটবাজারে এখনো দু’একটা দোকানে কদাচিত চোখে পরে। তবে, আগের মতো বাহারী হুক্কা আর বিভিন্ন নকশার হক্কা এখন আর দেখা যায় না। তেমন চোখেও পড়েনা।#

    এস মিজানুল ইসলাম
    বিশেষ প্রতিনিধি।

  • কালের বিবর্তনে হারিকেন হারিয়ে যাচ্ছে

    কালের বিবর্তনে হারিকেন হারিয়ে যাচ্ছে

    মো.হাসমত উল্লাহ,লালমনিরহাট।।
    লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘হারিকেন’। হারিকেনকে এক সময় রাত্রিকালীন বন্ধু হিসেবে অনেকেই অখ্যায়িত করত। এক সময় হারিকেন হাতে নিয়ে ডাকপিয়ন ছুটে চলতেন গ্রামের পর গ্রামে। বৃদ্ধ থেকে শুরু করে সবাই রাতের বেলাই হারিকেন হাতে নিয়ে বের হতেন।হারিকেনের আলো গৃহস্থালির পাশাপাশি ব্যবহার হতো বিভিন্ন যানবাহনে। কিন্তু আধুনিকায়নে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক বাতিতে বাজার ভরপুর।যার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে রাত্রিকালীন আলোর একমাত্র উৎস ঐতিহ্যবাহী হারিকেন।

    সরেজমিনে কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়,তখনকার সময়ে হারিকেন মেরামতের জন্য উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে মিস্ত্রী বসতো।এছাড়া উপজেলার প্রতিটি বাজারে ছিল হারিকেন মেরামতের অস্থায়ী দোকান।এরা বিভিন্ন হাট বাজারে ঘুরে ঘুরে হারিকেন মেরামতের কাজ করত।এছাড়া অনেকে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে হারিকেন মেরামত করত। কিন্তু এখন আর হারিকেন ব্যবহার না করার ফলে হারিকেন মিস্ত্রীদের এখন আর দেখা যায় না।কালীগঞ্জ উপজেলার বুড়িরহাট এলাকার ভ্যান চালক দুলাল বলেন, এক সময় হারিকেন ছাড়া রাতে ভ্যান নিয়ে চলাচল করা যেত না।কিন্তু এখন বাজারে কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের এলইডি লাইট বের হওয়ায় এখন আর হারিকেনের প্রয়োজন হয় না।

    শিক্ষক শাহ্ আলম বলেন, আগে রাতে পড়তে বসার আগেই হারিকেন নিয়ে টানা টানি করতে হতো।কিন্তু এখন ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। তাছাড়া বাজারে বিভিন্ন ধরনের এলইডি বাল্ব অনেক কম দামে পাওয়া যায়। যার কারণে এখন আর হারিকেনের প্রয়োজন হয় না। চন্দ্রপুর ইউনিয়নের চাপারহাটের এক হেরিকেন মেকার জানায়,এক সময় নিজের হাতে অনেক হেরিকেন মেরামত করেছি। কিন্তু এখন কার সময়ে ঘরে হেরিকেন থাকলেও তা কেউ ব্যবহার করে না।এতে মেরামতের কাজ ও তেমন হয় না।যার কারণে এই পেশা ছাড়তে হয়েছে।
    তিনি আরও বলেন, সময়ের আবর্তে এক সময় হারিকেন দেখতে যেতে হবে জাদুঘরে। নতুন প্রজন্ম হয়তো জানবেও না হারিকেনের ইতিহাস।

    হাসমত উল্লাহ ।

  • পৃথিবীর  অন্যতম ব্যস্ত ও বৃহত্তম ট্রেন স্টেশন  ভারতের হাওড়া স্টেশন

    পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত ও বৃহত্তম ট্রেন স্টেশন ভারতের হাওড়া স্টেশন

    লেখকঃ মোঃ হায়দার আলীঃ কি বিষয়ে লিখব, তা চন্তা করছিলাম, শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম এবার দেশের হরতাল, অবরোধ, আগামি সংসদ নির্বাচন, তফসিল ঘোষনা এ নিয়ে লিখার চেষ্টা করলাম কিন্তু ভারত থেকে ঘুরে আসার পর বিদ্যালয়ের ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত চারতলা একাডেমিক ভবন উদ্বোধন করেন রাজশাহী ১ আসনের এমপি সংসদ আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী।। ব্যস্ত থাকার কারণে থিম পরিবর্তন করে ভারতের হাওড়া স্টেশন নিয়ে লিখার জন্য তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করলাম।
    ১৮৫৪ সালের ১৫ অগস্ট। সকাল ৮টা নাগাদ হাওড়া থেকে হুগলির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে একটি ট্রেন। ঐতিহাসিক এই যাত্রা দিয়েই হাওড়া স্টেশনের পথ চলা শুরু। শুরুর মুহূর্তটির জন্য অপেক্ষা ছিল লাখ লাখ মানুষ।

    হাওড়া রেল ষ্টোশন (হাওড়া জংশন বা অনানুষ্ঠানিকভাবে হাওড়া স্টেশন নামেও পরিচিত) হল একটি রেলওয়ে স্টেশন। এটি ভারতের প্রাচীনতম, বৃহত্তম এবং ব্যস্ততম রেলওয়ে কমপ্লেক্সের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ততম এবং বৃহত্তম ট্রেন স্টেশন।

    হাওড়া হল কলকাতা মেট্রোপলিটন এলাকা এবং এর যমজ শহর কলকাতা পরিষেবা প্রদানকারী ছয়টি আন্তঃনগর ট্রেন স্টেশনগুলির মধ্যে একটি, অন্যগুলি হল শিয়ালদহ, ডানকুনি জংশন, সাঁতরাগাছি, শালিমার এবং কলকাতা রেলওয়ে স্টেশন। স্টেশন থেকে প্রথম পাবলিক ট্রেনটি ১৫ই আগস্ট ১৮৫৪-এ ছিল, যা এখন হাওড়া – হুগলি মেন লাইন। বর্তমানে প্রায় ৬০০টি যাত্রীবাহী ট্রেন স্টেশনের মধ্য দিয়ে যায় যা দৈনিক ভিত্তিতে এক মিলিয়নেরও বেশি যাত্রীকে সেবা দেয়। উপরন্তু, এর ২৩টি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে, এটি মোট ২৫২টি । মেল এক্সপ্রেস ট্রেন, প্রতিদিন ৫০০টি শহরতলির। ২৩টি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে ১০টি ২৪টির বেশি কোচের ট্রেনের জন্য যথেষ্ট দীর্ঘ। ভারতীয় রেলওয়ে বছরের জন্য পণ্য এবং পার্সেল ট্রেনগুলিও এখানে উৎপন্ন হয় এবং শেষ হয়। হাওড়া-বর্ধমান মেইন লাইন হল সবচেয়ে ব্যস্ত লাইন যা এই স্টেশনকে সংযুক্ত করে।

    এটি ভারতের বৃহত্তম রেলওয়ে স্টেশন, এর ২৩ টি প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬০০ ট্রেন চলাচল করে। দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে স্টেশনটি যে আমাদের রাজ্যেই রয়েছে তা জানেন। আজ্ঞে হ্যাঁ, অনেকেই হয়তো জানেন না যে আমাদের হাওড়া স্টেশনটি ভারতের বৃহত্তম রেলওয়ে স্টেশন। শুধু বৃহত্তমই নয়, এটি দেশের প্রাচীনতম রেলওয়ে স্টেশনও। প্রতিদিন প্রায় ৬০০ ট্রেন এই রেল স্টেশন দিয়ে যাতায়াত করে। তাই এর আরেক নাম রেল নগরী। দেশের সবচেয়ে সুন্দর রেলস্টেশনের তালিকাতেও জায়গা করে নিয়েছে এই স্টেশনটির।

    কম সময়ে ও কম খরচে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে গেলে ভারতবাসীর প্রধান ভরসা রেলপথ। প্রতিদিন ট্রেনে যাতায়াত করেন লক্ষ লক্ষ ভারতবাসী। দূরপাল্লার ট্রেনযাত্রা অনেকের কাছেই বেশ রোমাঞ্চকর। সেই ভ্রমণ কিছু লোকজন যতটা উপভোগ করে, তার চেয়েও বেশি আগ্রহ দেখায় ভারতের স্টেশনগুলি সম্পর্কে। আমরা অনেকেই জানি যে ভারতের দীর্ঘতম রেলওয়ে স্টেশন হল গোরখপুর। কিন্তু দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে স্টেশন কোনটি জানেন? হাওড়া জংশন। এটিই ভারতের বৃহত্তম রেলওয়ে স্টেশন। শুধু বৃহত্তমই নয়, এটি দেশের প্রাচীনতম রেলওয়ে স্টেশনও এটা।

    বৃহত্তম স্টেশন ছাড়াও, এটি ভারতের ব্যস্ততম রেলওয়ে স্টেশনের মর্যাদা পেয়েছে। হুগলি নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত হাওড়া স্টেশনে প্রতিদিন প্রায় ৬০০টি ট্রেন এখান দিয়ে যাতায়াত করে। এখানে প্রতিদিন প্রায় ১০ লক্ষ লোক চলাচল করে। প্রথমবার এই রেল স্টেশনে পা রেখে অনেকেরই নাকি ধারণা হয় যে এটা একটা গোটা শহর। আমাদের সকলের প্রিয় এই স্টেশনটি সম্পর্কে অনেকেই হয়তো এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলি জানেন না।

    বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ
    বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ
    হাওড়া জংশন ভারতের বৃহত্তম এবং প্রাচীনতম রেল স্টেশনগুলির মধ্যে একটি। ১৮৫৪ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দ্বারা এই স্টেশন নির্মিত হয়। ব্রিটিশ আমলের এই রেলস্টেশনটি আজও দাঁড়িয়ে আছে স্বমহিমায়। হাওড়া শহরের নামানুসারে এর নামকরণ করা হয়েছিল। এটি ভারতের একমাত্র রেলওয়ে স্টেশন, যার সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি রেল যোগাযোগ রয়েছে। মৈত্রী এক্সপ্রেস, কলকাতা এবং ঢাকার মধ্যে চলাচল করে উভয় শহরকে সংযুক্ত করে রেখেছে।

    রেলস্টেশনটি ব্রিটিশ আমলের তৈরি। একসময় এই মোড় ছিল বিপ্লবীদের কেন্দ্রস্থল। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় তাঁদের সভা-সমাবেশ ও যাবতীয় পরিকল্পনা এখানেই প্রস্তুত করা হত। কাকোরি ঘটনার আগে হাওড়া স্টেশনে থেকে গ্রেফতার হয়েছিলেন বিখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী যোগেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।

    হাওড়া জংশন দেশের সবচেয়ে সুন্দর স্টেশনের মর্যাদাও পেয়েছে। শুধু বাইরে থেকে নয়, ভিতর থেকেও এই স্টেশনটিও আন্তর্জাতিক মানের। শহরের এই রেলওয়ে স্টেশনে রয়েছে টার্মিনাল ১ এবং টার্মিনাল ২। লোকে বলে পুরোনো স্টেশন ও নতুন স্টেশন। এই জংশনে একই সময়ে অনেকগুলি ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। ভারতের অন্য কোনও রেলস্টেশনে এই ব্যবস্থা নেই।

    স্টেশনের পথ
    বিমান : হাওড়ার নিকটতম বিমানবন্দর হল কলকাতা বিমানবন্দর। এই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইট ধরা যায়।
    রেলপথ : হাওড়া রেলওয়ে স্টেশনের সঙ্গে ভারতের সমস্ত বড় শহরের ভালো সংযোগ রয়েছে।
    সড়কপথে : রাজ্য পরিবহন বাসের পাশাপাশি প্রাইভেট বাসগুলি শহরটিকে দেশের অন্যান্য শহরের সঙ্গে সংযুক্ত করে।

    হাওড়া স্টেশনের চাপ কমাতে একাধিক দূরপাল্লার এ বার ছাড়বে শালিমার স্টেশন থেকে। হাওড়া স্টেশনের পরিবর্তে শালিমার স্টেশন থেকে ট্রেনগুলি ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী মাস অর্থাৎ অগস্ট মাস থেকেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে পারে।

    প্রাথমিক পর্বে চার থেকে পাঁচটি ট্রেনকে হাওড়া স্টেশনের পরিবর্তে শালিমার স্টেশন থেকে ছাড়া হচ্ছে। যে সব ট্রেন শালিমার থেকে ছাযা হবে, সেই তালিকায় রয়েছে হাওড়া- লোকমান্য তিলক এক্সপ্রেস, হাওড়া – সম্বলপুর এক্সপ্রেস। বছর কয়েক আগেই শালিমার স্টেশনকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। এ বার দূরপাল্লার ট্রেন চালানোরও বন্দোবস্ত করছে রেল কর্তৃপক্ষ। আপাতত চার-পাঁচটি ট্রেন চালানো হলেও আগামিদিনে আরও বেশ কয়েকটি দূরপাল্লার ট্রেন হাওড়া স্টেশনের পরিবর্তে শালিমার থেকে ছাড়া হবে। শালিমার রেল ইয়ার্ডটি ১৮৮৩ সালে তৈরি। পণ্য পরিবহণ করা হয় মূলত এই স্টেশন থেকে। ২০০০ সালে যাত্রী পরিবহন পরিষেবা শুরু হয় এই স্টেশন থেকে।
    রেল ভ্রমনের এক অনন্য দৃষ্টান্ত ভারত, বহুদূর দুরান্তে আরাম দায়ক ভ্রমন করা যায় এখানে। তাই ট্রেন ভ্রমন এখানে পচ্ছন্দের তালিকা থাকে ভ্রমন পিপাসুদের তালিকায় ।

    মোঃ হায়দার আলী
    গোদাগাড়ী, রাজশাহী।

  • ব্রিটিশ যুগে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন হাজারদুয়ারি

    ব্রিটিশ যুগে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন হাজারদুয়ারি

    লেখকঃ মোঃ হায়দার আলী।। (ভারতের হাজারদুয়ারী থেকে) কি বিষয়ে লিখব, তা চন্তা করছিলাম, শেষ পর্যন্ত ঠিক করলাম এবার দেশের হরতাল, অবরোধ, আগামি সংসদ নির্বাচন, দেশী, বিদেশীদের
    চাপসহ দেশের রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে লেখার চিন্তা ভাবনা করলাম কিন্তু হাঠাৎ করে ভারতের কলিকাতা চলে এলাম। তাই এ সম্পর্কে লিখা হলো না। আমার এক ভ্যাগনে ও সহযাত্রী এক প্রধান শিক্ষকের সাথে ঘুরতে আসলাম হাজার দুয়ারী। লিখার থিম পরিবর্তন করে এ সম্পর্কে লিখার জন্য তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করলাম।

    বাঙালি যেমন ঐতিহ্যকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়, তেমনি কোন ভ্রমণপিপাসু বাঙালির মন সবসময়ই ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বাঁধন ভেঙ্গে মুখোমুখি হতে চায় নতুন কোন সাংস্কৃতিক জগতের। আর পৃথিবীতে সংস্কৃতি কিংবা ঐতিহ্য উভয়েরই শিকড় প্রোথিত থাকে অতীত ইতিহাসের অন্তঃস্থলে। তাই ঐতিহাসিক স্থান ভ্রমণের আগ্রহ বাঙালির সর্বকালের।

    ব্রিটিশ যুগে বাংলার এক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন হল হাজারদুয়ারি। বিশালাকার এই প্রাসাদে প্রত্যেকটি হলঘর অনুপম সৌন্দর্যের আলোকে সজ্জিত। বাংলার নবাবি আমলে স্থাপত্যকলার এক উজ্জল প্রতিফলন হল এই হাজারদুয়ারি প্রাসাদ।

    হাজারদুয়ারি প্রাসাদ এখন ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, এখানে দেশ বিদেশের ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের জন্য একটি অন্যতম সেরা ঐতিহাসিক নিদর্শন এখানে মাসে অন্তত ৭০ হাজার মানুষ এর অনুগমন হয়, হাজারদুয়ারির অবস্থান ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলায় লালবাগ নামক অঞ্চলে। এর পাশ দিয়ে ভাগীরথী আপন রূপ নিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বহুদূরে। সাধারণত এই প্রাসাদটি বহু দরজাবিশিষ্ট বলে তাই একে ‘হাজারদুয়ারি’ নামকরণ করা হয়ে থাকে। বাইরে থেকে ও ভিতর থেকে হাজারদুয়ারিতে অনেক দরজা দৃশ্যমান হলেও এর মধ্যে অনেক দরজাই আদপে নকল। অথচ দূর থেকে পুরোপুরি আসল বলে মনে হয়। হাজারদুয়ারির চমক শুধু তার দুয়ারেই না, ঘরগুলোও মনোমুগ্ধকর।

    ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের মুর্শিদাবাদে
    অবস্থিত একটি রাজপ্রাসাদ।এই প্রাসাদে অনেক দরজা আছে৷ তার থেকেই প্রাসাদের এই নামকরণ হয়েছে৷ অবশ্য সব দরজা সত্য নয়, অনেক নকল দরজাও রয়েছে ৷

    বাংলার নবাবদের রাজধানী মুর্শিদাবাদ। মুঘলদের অধীনে যখন সুবাহ বাংলার রাজধানী ছিল ঢাকা, ওই রকম সময়ে সম্রাট ঔরঙ্গজেব মুর্শিদকুলি খাঁকে বাংলার দেওয়ানের পদে নিযুক্ত করেছিলেন। তখন অবশ্য মুর্শিদকুলির নাম ছিল করতলব খাঁ। করতলবের সততা এবং দক্ষতা সম্রাটকে মুগ্ধ করেছিল। তিনি করতলব খাঁকে ভাগীরথী গঙ্গার তীরে মকসুদাবাদে রাজধানী সরানোর অনুমতি দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, তাঁকে ‘মুর্শিদকুলি খাঁ’ উপাধি প্রধান করেছিলেন সম্রাট ঔরঙ্গজেব, মকসুদাবাদের নাম পাল্টে মুর্শিদাবাদ করার অনুমতিও দেন তার সঙ্গে। ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর বেশ কিছু বছর পর ১৭১৭ সালে মুর্শিদকুলি খাঁ ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে বাংলার প্রাদেশিক রাজধানী সরিয়ে আনেন। ততদিনে তিনি বাংলার সুবাহদার। দিল্লির রাজশক্তি তখন ক্রমশ ক্ষয় পাচ্ছে, সেই সুযোগে প্রায় স্বাধীনভাবে বাংলা শাসন করতেন। হয়ে ওঠেন বাংলার প্রথম নবাব।

    ১৭শ শতাব্দী থেকে ইংরেজ শাসনের আগে পর্যন্ত সুবা বাংলা, বিহার ও ওড়িষার রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদ শহর৷ এখানে রাজত্ব করতেন নবাবরা ৷এখানকার নবাব হুমায়ুন জা ইউরোপিয় স্থপতি দিয়ে এই প্রাসাদ বানান৷ অনেকে ভুল করে ভাবেন যে, এই প্রাসাদ বুঝি নবাব সিরাজউদ্দৌলার দৌলার তৈরি। এই প্রাসাদ তৈরী হয় সিরাজ জমানার পরে। সিরাজের প্রাসাদের নাম ছিল হীরাঝিল প্রাসাদ৷ তা এখন ভাগীরথী নদীতে তলিয়ে গেছে৷ এই প্রাসাদ ইউরোপিয় ধাঁচে বানানো। এটি ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত৷ তিনতলায় বেগম ও নবাবদের থাকার ঘর, দোতলায় দরবার হল, পাঠাগার, অতিথিশালা এবং একতলায় নানা অফিসঘর ও গাড়ি রাখার জায়গা ছিল।

    বর্তমানে ভারতের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ এখানে একটা সংগ্রহশালা বানিয়েছেন৷ তবে দুর্বল কাঠামোর জন্য দর্শকদের তিনতলায় উঠতে দেওয়া হয় না৷ শুক্রবার মিউজিয়াম বন্ধ থাকে।

    এটি ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত৷ তিনতলায় বেগম ও নবাবদের থাকার ঘর, দোতলায় দরবার হল, পাঠাগার, অতিথিশালা এবং একতলায় নানা অফিসঘর ও গাড়ি রাখার জায়গা ছিল। বর্তমানে ভারতের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ এখানে একটা সংগ্রহশালা বানিয়েছেন৷ তবে দুর্বল কাঠামোর জন্য দর্শকদের তিনতলায় উঠতে দেওয়া হয় না।

    তারপর ভাগীরথী দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। বাংলার মসনদে বসেছেন সুজাউদ্দিন, সরফরাজ খাঁ, আলিবর্দি খাঁ, সিরাজ-উদ-দৌলা। সিরাজকে পরাজিত করে ১৭৫৭ সালে বাংলার দখল নিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। মিরজাফরকে নবাব বানাল তারা। তারপর মিরকাশিম নবাব হলেন, তারপর আবার মিরজাফর। ততদিনে বাংলার রাজনৈতিক ক্ষমতা পুরোপুরি ব্রিটিশদের দখলে। একের পর এক পরিবর্তনের সাক্ষী থেকেছে মুর্শিদাবাদ। সেই জীবন্ত সাক্ষীকে চাক্ষুস দেখতে পর্যটকরা মুর্শিদাবাদে ভিড় জমান।

    মুর্শিদাবাদে দর্শনীয় স্থানগুলির তালিকায় মধ্যে পর্যটকরা সবার আগে রাখেন হাজারদুয়ারি প্রাসাদকে। এই দুর্গপ্রাসাদ যেখানে অবস্থিত, সেই পুরো চত্বরটাকে বলে নিজামত কিলা বা কিলা নিজামত। হাজারদুয়ারি ছাড়াও ইমামবাড়া, ঘড়ি ঘর, মদিনা মসজিদ, চক মসজিদের মতো বেশ কিছু স্থাপত্য রয়েছে কিলা নিজামত এলাকায়।

    জানা যায়, নবাব নাজিম হুমায়ুন জা তৈরি করিয়েছিলেন হাজারদুয়ারি। ১৮২৯ সালে তিনি এই প্রাসাদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। গোটা স্থাপত্যের রূপকার ছিলেন ডানকান ম্যাকলিওড। দেখলেই বোঝা যায়, এই প্রাসাদের স্থাপত্যশৈলী ইউরোপীয় ঘরানার, বিশেষ করে ইতালীয় রীতির সৌধগুলোর সঙ্গে মিল প্রচুর। ১৮৩৭ সালে মুর্শিদাবাদের প্রধান আকর্ষণ হাজারদুয়ারির নির্মাণকার্য শেষ হয়।

    ৪১ একর জায়গা নিয়ে এই প্রাসাদ দাঁড়িয়ে আছে। ১ হাজারটা দরজা আছে বলে এর নাম হাজারদুয়ারি। অবশ্য দরজাগুলির মধ্যে ১০০ টাই নকল। তবে চট করে দেখে নকল দরজাগুলোকে চিহ্নিত করা বেশ মুশকিল। দেওয়ালের মধ্যে এমনভাবে ডিজাইন করা, বাইরে থেকে দেখলে হুবহু আসল দরজা মনে হবে। দুর্গপ্রাসাদে যদি হঠাৎ করে শত্রুরা আক্রমণ করে বসে, তাদের বিভ্রান্ত করার জন্যই নকল দরজাগুলো বানানো হয়েছিল। সাধারণভাবে প্রাসাদটি হাজারদুয়ারি নামে প্রচলিত হলেও, হুমায়ুন জা একে ‘বড়ো কুঠি’ নামেই ডাকতো

    এখন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের তত্ত্বাবধানে প্রাসাদটির মধ্যে জাদুঘর গড়ে উঠেছে। বাংলার নবাব, অভিজাত এবং ব্রিটিশদের ব্যবহৃত ও শৌখিন নানা জিনিস স্থান পেয়েছে এখানে। রয়েছে তখনকার আসবাব, বাসনপত্র, বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা ছবি, নবাবি আমলের বই, পুঁথিপত্র। যেমন আইন-ই-আকবরির পাণ্ডুলিপি এবং সোনা দিয়ে মোড়া কোরান শরিফ। ২ হাজারেরও বেশি অস্ত্রের সম্ভার আছে। তার মধ্যে পলাশীর যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র যেমন দেখা যায়, তেমনই দর্শকদের জন্য রাখা হয়েছে সেই ছুরি, যা দিয়ে মহম্মদি বেগ সিরাজকে হত্যা করেছিলেন। আলিবর্দি খাঁ এবং সিরাজ-উদ-দৌলার তলোয়ারও সেখানে দেখতে পাবেন। আরো যে কত কিছু রয়েছে, বলে শেষ করা যাবে না। গোটা জাদুঘরটি ঘুরে দেখতে বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে। শুক্রবার বাদে প্রতিদিনই সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য জাদুঘর খোলা থাকে।

    হাজারদুয়ারির ঠিক বিপরীতে রয়েছে নিজামত ইমামবাড়া। মহরমের দিন এটি সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়। বাকি দিনগুলি এই স্থাপত্য কেবল বাইরে থেকেই দেখতে পাবেন। হাজারদুয়ারির প্রাঙ্গণেই আছে বিখ্যাত ঘড়ি মিনার। প্রাসাদের সামনেই দেখতে পাবেন বাচ্চাওয়ালি তোপ। কাছাকাছি অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলি হল খোশবাগ, মোতঝিল, কাটরা মসজিদ, নসিপুর প্রাসাদ, কাঠগোলা বাগানবাড়ি, কাশিমবাজার রাজবাড়ি ইত্যাদি। তবে এগুলির বিভিন্ন স্থানে ২০/২৫ রুপি টিকেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবস্থান গুলিতে ব্যপকহারে ইতিহাস বিক্রিত করা হয়েছে, বিভিন্নভাবে মূর্তি তৈরী করে রাখা হয়েছে, সত্যি দুঃখজনক, অনেকের ধারনা এক সময় মসুলমানদের জিনিসের অস্তিত্ব থাকবে না। এক শ্রেনীর প্রভাবশালী মানুষ জমিজায়গা দখল করে নির্মান করছেন ঘর, বাড়ী, দোকান, হোটেল,, লজ।
    এখানে আগত মানুষদের সুয়োগ সুবিধার দারুন অভাব রয়েছে। শুধু কি তাই সুকৌশলে মাস্তানী ও চাঁদাবাজি করা হচ্ছে কথিত গাইডার দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার রুপি, সহজ সরল ভ্রমন পিপাসুরা বাধ্য হয়েই প্রতারিত হচ্ছেন।
    বিভাবে যাওয়া যায়ঃ ট্রেনে যেতে চাইলে শিয়ালদহ স্টেশন থেকে লালগোলা প্যাসেঞ্জার কিংবা ভাগীরথী এক্সপ্রেস অথবা কলকাতা স্টেশন থেকে হাজারদুয়ারি এক্সপ্রেসে টিকিট কেটে নামতে হবে মুর্শিদাবাদ স্টেশনে। এছাড়া এসপ্ল্যানেড থেকে মুর্শিদাবাদ যাওয়ার বাস পাওয়া যায়।
    থাকার স্থানঃ বহরমপুরে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের বহর ট্যুরিজম প্রপার্টি। সেখানে থেকেই মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন। বহরমপুর থেকে মুর্শিদাবাদের দূরত্ব ১১ কিলোমিটারের মতো। এছাড়া মুর্শিদাবাদ শহরেও বেশ কিছু হোটেল এবং রিসর্ট,লজ রয়েছ।
    মুর্শিদাবাদের হাজার দুয়ারীতে কি হাজারটা দরজা আছে? হাজার দুয়ারীর ইতিহাস কী?
    হাজারদুয়ার কথাটির অর্থ ১,০০০টি দরজা। সুতরাং, হাজারদুয়ারিতে ১,০০০টি দরজাই আছে। তবে এদের মধ্যে ১০০টি দরজা কিন্তু কৃত্রিম, দেয়ালের গায়ে দরজার অনুকরণে ছবি আঁকা।তাই সত্যিকারের দরজা আছে ৯০০টি। সুতরাং, আক্ষরিক অর্থে এখানে ১,০০০টি দরজা থাকলেও সবগুলি আসল দরজা নয়।
    ভাগীরথী নদীর তীরে ১২ বিঘা জমিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ৮০ ফুট উচ্চতার হাজারদুয়ারি প্রাসাদ। বর্তমানে এটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া। এর বর্তমান নাম হাজারদুয়ারী প্যালেস মিউজিয়াম। এই প্রাসাদের নির্মাণকাজ ১৮২৯ সালে শুরু হয়ে ১৮৩৭ সালে শেষ হয়। মূল স্থপতি ছিলেন ডানকান ম্যাকলয়েড। নবাব নাজিম হুমায়ুনজার আদেশ অনুযায়ী তার তত্ত্বাবধানে প্রাসাদটি নির্মিত হয়। বাঙালি সগুর মিস্ত্রী ছিলেন তার সহকারী। এখানে একটি কথা জানিয়ে রাখি, সিরাজউদ্দৌলার মৃত্যুর ৮০ বছর পরে এই প্রাসাদ তৈরি হয়। সুতরাং, সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে হাজারদুয়ারির সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। বর্তমানে এই প্রাসাদটিকে একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছে। হাজারদুয়ারি ভাল করে দেখতে কমপক্ষে ৪ ঘণ্টা সময় লাগবে। ত্রিতল প্রাসাদটির প্রথমতলে আছে অস্ত্রাগার, অফিস-কাছারি ও রেকর্ড রুম। অস্ত্রাগারে মোট ২,৬০০টি অস্ত্র আছে। এখানে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত মহম্মদী বেগের অস্ত্র, পলাশীর যুদ্ধে ব্যবহৃত মীরমদনের কামান ছাড়াও অনেক রকমের অস্ত্র রাখা আছে। আছে আলীবর্দী খাঁয়ের ব্যবহার করা তলোয়ার ও বহুনলা বন্দুক, মীরকাসিমের ছোরা, নাদির শাহের মাথার বর্ম, বিভিন্ন ধরন ও আকারের কামান, বিভিন্ন ধরনের ছোরা-সহ দুর্লভ সংগ্রহ।

    ‘একতলা প্যালেসের সামনের বিশাল সিঁড়িটি দরবার পর্যন্ত উঠে গেছে। সামনে লম্বা গোলাকার স্তম্ভে সুন্দর নকশার কাজ। সিঁড়ির দু’পাশে দুটি সিংহ মূর্তি ও দুটি ছোট সেলামি কামান। তিনতলায় বেগম ও নবাবদের থাকার ঘর, দোতলায় দরবার হল, পাঠাগার, অতিথিশালা। দোতলা ও তৃতীয় তলায় আর্ট গ্যালারি ও লাইব্রেরি। গ্যালারিতে বহু বিখ্যাত চিত্রশিল্পীর চিত্রকলা আছে এখানে। লাইব্রেরিতে রয়েছে বহু ধর্মপুস্তক, চুক্তিপত্র, নাটক, উপন্যাস, তাম্রলিপি, ইতিহাস, প্রয়োজনীয় দলিল-দস্তাবেজ, বিদেশি ভাষার গ্রন্থ ইত্যাদি।

    সম্রাট আকবরের সময়কার আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরির পাণ্ডুলিপি ও বাগদাদের বিখ্যাত লেখক হারুন অর রশিদের হাতে লেখা ‘কোরান শরীফ’ আছে এখানে। এছাড়াও আছে নবাব আর ইংরেজদের ব্যবহৃত বহু অস্ত্র, বাসন, আসবাব, বহু বিখ্যাত শিল্পীদের হাতে আঁকা ছবি রয়েছে। প্যালেসের সামনে রয়েছে মনোরম বাগান।

    ‘হাজারদুয়ারির ঠিক মুখোমুখি রয়েছে বড়া ইমামবরা। হাজারদুয়ারি ও ইমামবরার মাঝখানে মদিনা মসজিদ। সিরাজউদ্দৌলার তৈরি করা স্থাপনার মধ্যে শুধু এই মসজিদটিই টিকে আছে। মদিনা মসজিদের সামনে বাঁধানো বেদীর ওপর রাখা আছে ১৮ ফুট দৈর্ঘ্যের বাচ্চাওয়ালি কামান। ‘ শোনা যায়, এই কামান ১৩-১৪ শতকে গৌড়ের কোনও নবাবের আমলে বানানো হয়েছিল। কেউ বলেন এটি বাংলার সুলতান ইলিয়াস শাহের কামান। তবে সবচেয়ে চালু মতটি হল, ১৬৪৭ সালে এটি বানিয়েছিলেন ঢাকার বিশিষ্ট লোহার মিস্ত্রি জনার্দন কামার। এই কামান দাগার জন্য ১৮ সের বারুদের প্রয়োজন হত। প্রশ্ন হল, কামানের নাম বাচ্চাওয়ালি কামান হল কেন? শোনা যায়, এই কামান দাগা হয়েছিল মাত্রই একবার। কিন্তু সেই তোপ দাগার শব্দ এতটাই প্রচণ্ড ছিল যে আশেপাশের অনেক অন্তঃসত্ত্বা মহিলার গর্ভপাত ঘটে যায়। সেই থেকে কামানের নাম বাচ্চাওয়ালি।
    ‘হাজারদুয়ারির সামনের পূর্ব পাশে আকাশছোঁয়া ঘড়ি ঘর পশ্চিমমুখী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুর্শিদাবাদবাসী ও ভাগীরথী নদীতে চলাচলকারী যাত্রীবাহী নৌকা ও জলযানের মাঝি-মল্লার ও যাত্রীদের সুবিধার্থে ঘড়িটি নির্মাণ করা হয়।’

    ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলেও সংস্কারের অভাবে অনেক কিছু ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে, দেখার জন্য কেউ নেই। ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ হাজার দুয়ারীর ইতিহাস বিকৃতি থেকে এর সংস্কার ও উন্নয়ন করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন সচেতন মহল।।

    হায়দার আলী
    গোদাগাড়ী, রাজশাহী।

  • নাট-বোল্ট ছাড়া  ব্রিটিশ আমলে তৈরী ভারতের হাওড়া ব্রীজ

    নাট-বোল্ট ছাড়া ব্রিটিশ আমলে তৈরী ভারতের হাওড়া ব্রীজ

    হাওড়া ব্রীজ এলাকা থেকে মোঃ হায়দার আলীঃ পুরনো হওড়া ব্রিজের নকশা বানিয়েছিলেন ব্র্যাডফোর্ড লেসলি। ব্রিটিশ শাসনে রেল কোম্পানির খ্যাতনামা কারিগর। ভারতের বহু বড় রেলসেতুর নকশা তিনিই বানিয়েছিলেন। যেমন, ব্যান্ডেল ও নৈহাটির মধ্যে জুবিলি ব্রিজ। কলকাতার একটি আইকনিক ল্যান্ডমার্ক, হাওড়া ব্রিজ হুগলি নদীর উপর একটি বিশাল ইস্পাত সেতু। এটিকে বিশ্বের দীর্ঘতম ক্যান্টিলিভার সেতু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। রবীন্দ্র সেতু নামেও পরিচিত, এটি হাওড়া এবং কলকাতাকে সংযুক্ত করে। এটি প্রতিদিন ১ লাখ যানবাহন এবং অগণিত পথচারী বহন করে। নাট-বোল্ট ছাড়াই ব্রিটিশ আমলে তৈরি এই সেতু আজও কলকাতার গর্ব

    কলকাতা প্রবেশ দ্বার বললে আজও সবাই হাওড়া ব্রিজকেই ধরে। কলকাতার গর্ব হাওড়া ব্রিজ। হুগলি নদীর উপর অবস্থিত কলকাতা এবং হাওড়া শহরের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী সেতুগুলির মধ্যে অন্যতম। কলকাতার অতীত ইতিহাসের নানা গল্পের সাক্ষী হয়ে ইংরেজদের তৈরি হাওড়া ব্রিজ আজ আদ্যোপান্ত বাঙালি।

    হুগলি নদীর উপর অবস্থিত কলকাতা এবং হাওড়া শহরের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী সেতুগুলির মধ্যে অন্যতম। ১৮৭৪ সালে প্রথম হাওড়া সেতু নির্মিত হয়। পরে ১৯৪৫ সালে পুরনো সেতুটির বদলে বর্তমান বহির্বাহু সেতুটির উদ্বোধন হয়। ১৯৬৫ সালের ১৪ জুন সেতুটির নাম পরিবর্তন করে হয় রবীন্দ্র সেতু। রবীন্দ্র সেতু বঙ্গোপসাগরীয় প্রবল ঝড়ঝঞ্ঝা সহ্য করতে সক্ষম। এই সেতু দিয়ে দৈনিক ১ লাখ যানবাহন এবং প্রায় ১০ লক্ষ পথচারী চলাচল করেন। এই জাতীয় সেতুগুলির মধ্যে রবীন্দ্র সেতু বিশ্বে ষষ্ঠ বৃহত্তম।
    নিজেদের বাণিজ্যিক সুবিধার স্বার্থেই হাওড়া ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল ইংরেজরা। প্রথমে তা ব্যবহার করা হত বাণিজ্যিক কারণেই। মালবাহী গাড়ি যাতায়াত করত সেতু দিয়ে। সেই সময় গঙ্গা নদীতে জাহাজ স্টিমারের যানজট ইংরেজ ব্যবসায়ীদের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই সমস্যা মেটাতেই গঙ্গার উপরে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা। কলকাতার অতীত ইতিহাসের নানা গল্পের সাক্ষী হয়ে ইংরেজদের তৈরি হাওড়া ব্রিজ আজ আদ্যোপান্ত বাঙালি।

    হাওড়া ব্রিজ হুগলি নদীর উপর অবস্থিত বড় খিলানযুক্ত একটি ঝুলন্ত সেতু। প্রথমে সেতুটির নাম ছিল নিউ হাওড়া ব্রিজ। কারণ আগে একই স্থানে অবস্থিত কলকাতা এবং হাওড়া জেলার মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী একটি ভাসমান সেতু ছিল। সেই সেতুর পরিবর্তেই এই নতুন সেতু নির্মাণ করা হয়৷ নাম রাখা হয় নিউ হাওড়া ব্রিজ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামানুসারে ১৯৬৫ সালে সেতুটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় রবীন্দ্র সেতু। ( photo credit : unsplash.com)

    ​ব্রিটিশ আমলে নির্মাণ -সেতু নির্মাণের ভাবনা শুরু হয়েছিল সেই ইংরেজ আমলে। তখন সালটা ১৮৫৫-৫৬। সেতু নির্মাণের জন্য একটি কমিটিও তৈরি হয়। কারণ, তত দিনে গঙ্গার দুই পাড়েই জাঁকিয়ে বসে ইংরেজদের কারবার। তৈরি হয়েছিল নতুন নতুন কারখানা। তাই হাওড়া-কলকাতার জন্য একটি সেতুর দরকার পড়ে। সেতু কমিটিতে এই নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে বছর চারেক পর ১৮৫৯-৬০ সালে সেতু নির্মাণের প্রস্তাব ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

    ​১৯ বছর পর বাস্তবায়ন- এর পর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। অবশেষে সেতুর প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব বুঝে ১৮৭১ সালে তৈরি হয় একটি ট্রাস্ট। সেই ট্রাস্টের অধীনেই হাওড়ার প্রথম ভাসমান সেতু নির্মাণের ভার দেওয়া হয়। নদীর ওপর ছিল পন্টুন ব্রিজ বা ভাসমান সেতু। নীচে নৌকা। উপরে পাটাতন। মাঝ বরাবর খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা। জাহাজ-স্টিমার চলাচলের জন্য সেতুর মাঝখানে ২০০ ফিট খুলে দেওয়া যেত। স্টিমার এলেই সেতু বন্ধ। ১৮৭৪ সালে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় সেই সেতু। অর্থাৎ ১৮৫৫ সালে ব্রিটিশ প্রশাসন যা পরিকল্পনা করেছিল, তা রূপায়িত হয় ১৯ বছর পর।
    ​সাড়ে ২৩ হাজার টন ইস্পাতের ব্যবহার –
    শুনতে অদ্ভুত লাগলেও সুবিশাল হাওড়া ব্রিজটি তৈরি করতে একটি নাট-বল্টু ব্যবহৃত হয়নি। ইস্পাতের পাত উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে জুড়ে এই সেতু তৈরি হয়েছে। সেতু নির্মাণে সাড়ে ২৩ হাজার টন ইস্পাত দিয়েছিল টাটা আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি। এই সেতুই সম্ভবত ভারতের প্রথম মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্প।।কলকাতার অন্যতম দর্শনীয় স্থান হল হাওড়া ব্রিজ চত্বর। আদি কলকাতার স্বাদ পেতে গেলে একবার না একবার এই এলাকায় আপনাকে আসতেই হবে। ব্রিজের উপরে উঠে গঙ্গার দৃশ্য ভোলার নয়। হাওড়ার দিক থেকে হোক অথবা কলকাতার দিক থেকে, হাওড়া ব্রিজকেও দেখতে অসাধারণ লাগে। ইংরেজ আমলে তৈরি হলেও এই ব্রিজটি ভারতীয়ত্বের প্রতীক। ৭৫ বছর পেরিয়েও এটি দেশের অন্যতম পরিচিত একটি সৃষ্টি। হাওড়া ব্রিজ নিয়ে অজানা এই তথ্যগুলি সমস্ত পশ্চিমবঙ্গবাসীর জানা প্রয়োজন।

    নাট-বোল্ট ছাড়া ব্রিজঃ
    হাওড়া ব্রিজের মতো সুবিশাল ব্রিজ তৈরিতে একটিও নাট-বোল্ট লাগাতে হয়নি। মেটাল প্লেটগুলিকে এমনভাবে বসিয়ে চেপে দেওয়া হয়েছে যাতে কোনও নাট-বোল্ট ও স্ক্রু ছাড়াই এত বড় ব্রিজ সফলভাবে জুড়ে দেওয়া গিয়েছে।
    ব্রিজের অভিনবত্ব
    হাওড়া ব্রিজের ছবি ভালো করে দেখলে দেখবেন, কোনও পিলার বা স্তম্ভ ছাড়াই ব্রিজটি দাঁড়িয়ে রয়েছে। এটিকে বলা হয় সাসপেন্ডেড-টাইপ ব্যালান্সড কান্টিলিভার ব্রিজ।
    পুরানো ব্রিজঃনতুন ব্রিজটির বয়স সাত দশকের বেশি হয়ে গেলেও এটিকে নতুন হাওড়া ব্রিজ বলে ডাকা হয়। তার কারণ, এই জায়গায় আগে আর একটি ব্রিজ ছিল। তার নাম, পুন্টুন ব্রিজ। সেটি তৈরি হয়েছিল ১৮৭৪ সালে। সেই ব্রিজের সীমিত ধারণ ক্ষমতা ছিল।

    নতুন হাওড়া ব্রিজঃকলকাতা, সুতানূটি ও গোবিন্দপুর নিয়ে তৈরি কলকাতা তখন ঝড়ের গতিতে কলেবরে বাড়ছে। অন্যদিকে হাওড়া হল কমার্শিয়াল হাব। দুটি গঙ্গাপাড়ের এলাকাকে জুড়ে দেওয়ার আশু প্রয়োজন ছিল। ১৯০৬ সালে হাওড়া স্টেশন তৈরি হওয়ার পরে সেই চাহিদা আরও বেড়ে যায়। তাই নতুন ব্রিজ তৈরির জন্য পরিকল্পনা শুরু হয়ে যায়।
    প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধাক্কাঃ উনিশ শতকের শেষদিকে পুরনো পুন্টুন ব্রিজ সরিয়ে নতুন ব্রিজ তৈরির প্রস্তাব সামনে আসে। তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে তা থেমে যায়। ১৯১৭ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে পুরনো পুন্টুন ব্রিজ সারাই হয়। শেষপর্যন্ত ১৯৪৩ সালে নতুন হাওড়া ব্রিজের পথ চলা শুরু হয়। বিশ্বযুদ্ধের কারণে বারবার থমকে গিয়েছিল ব্রিজ তৈরির কাজ।
    কোনও উদ্বোধন হয়নিঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝেই ১৯৪২ সালে হাওড়া ব্রিজ তৈরির কাজ শেষ হয়েছিল। এবং ১৯৪৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রিজটি জনগণের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তবে এই বিষয়টিকে সারা বিশ্বের সামনে গোপন রাখা হয়েছিল। কারণ ইতিমধ্যে জাপান পার্ল হারবারে বোমা ফেলেছিল। এই ব্রিজের কথা জানলে যদি এটিকেও টার্গেট করা হয়, সেই ভেবেই ঘটা করে উদ্বোধন না করে ব্রিজটি খুলে দেওয়া হয়।

    ভারতের অবদান-ব্রিটিশ ভারতে কোনও কিছু তৈরি করতে হলে শুধু কাঁচামাল নয়, পুরো তৈরি প্রোডাক্টই জাহাজে চাপিয়ে ভারতে আনা হতো। তারপর এখানে এনে জুড়ে দেওয়া হতো। ব্রিজের সরঞ্জাম ইংল্যান্ড থেকে কলকাতা আসার কথা ছিল। সেজন্য প্রয়োজন ছিল ২৬ হাজার টন স্টিল। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলায় সেই জাহাজ ঘুরিয়ে নেওয়া হয়। মাত্র তিন হাজার টন কাঁচামাল ইংল্যান্ড থেকে সাপ্লাই হয়েছিল। বাকী ২৩ হাজার টন কাঁচামাল বা স্টিল সরবরাহ করেছিল ভারতের টাটা স্টিল কোম্পানি। এমনকী নতুন ব্রিজ তৈরির সময়ে স্থানীয় ইঞ্জিনিয়ারদের সাহায্যেই কাজ হয়েছিল।
    ট্রাম চলাচলঃ হাওড়া ব্রিজে প্রতিদিন লাখো লোক হেঁটে অথবা গাড়ি-বাসে যাতায়াত করেন। তবে ব্রিজ তৈরি হওয়ার পর প্রথম যুগে কলকাতা ও হাওড়ার দুদিক থেকেই লোককে পার করার জন্য ট্রাম ব্রিজের উপরে চলাচল করত। বস্তুত, প্রথম যে গাড়িটি ব্রিজে চলেছিল সেটি ট্রামই ছিল। তবে বাড়তে থাকা ট্রাফিকের চাপে ১৯৯৩ সালে ট্রাম চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

    হাওড়া ব্রিজের রেকর্ডঃ যখন তৈরি হয় তখন এটি বিশ্বের তৃতীয় দীর্ঘতম ছিল। বর্তমানে এটি বিশ্বের ষষ্ঠ দীর্ঘতম কান্টিলিভার ব্রিজ। দৈর্ঘ্যে ব্রিজটি ৭০৫ মিটার লম্বা ও চওড়ায় ৭১ ফুট। সঙ্গে পথচারীদের জন্য ১৪ ফুট চওড়া ফুটপাথ দুদিকে।

    রবীন্দ্র সেতঃ ভারতের সমস্ত এলাকা ও সৌধের নাম কোনও না কোনও বিখ্যাত মানুষের নামে দেওয়া। ১৯৬৫ সালে এই সেতুর নামকরণ করা হয় রবীন্দ্র সেতু নামে। তবে সেই নামকে ছাপিয়ে হাওড়া ব্রিজই লোকের মুখে মুখে ঘোরে।
    সবচেয়ে ব্যস্ততম ব্রিজঃ হাওড়া ব্রিজ সম্ভবত বিশ্বের ব্যস্ততম কান্টিলিভার ব্রিজ। দিনে ১ লক্ষ গাড়ি-ঘোড়া ও দেড় লক্ষ মানুষ হেঁটে এই ব্রিজের উপর দিয়ে যাতায়াত করে। ১৯৪৬ সালে দিনে ২৭ হাজার গাড়ি, ১ লক্ষ ২১ হাজার পথচারী ও ৩ হাজার গরুর গাড়ি নবনির্মিত হাওড়া ব্রিজের উপর দিয়ে যাতায়াত করত।
    জানেন পশ্চিমবঙ্গেই রয়েছে ভারতের সবথেকে বেশি প্লাটফর্ম যুক্ত স্টেশন?
    বহু ঘটনার সাক্ষী হাওড়া ব্রিজ কেমন আছে? খোঁজ নেবে আইআইটি চেন্নাই
    দিলীপের মিছিল আটকাতে ধুন্ধুমার কাণ্ড! পুলিশের বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ

    মোঃ হায়দার আলী
    হাওড়া ব্রিজ। ভারত থেকে।

  • সম্ভাবনা সত্বেও ভ্রমন পিপাসুদের হাত ছানি দিচ্ছে  মোরেলগঞ্জ  আজও গড়ে ওঠেনি পর্যটনকেন্দ্র

    সম্ভাবনা সত্বেও ভ্রমন পিপাসুদের হাত ছানি দিচ্ছে মোরেলগঞ্জ আজও গড়ে ওঠেনি পর্যটনকেন্দ্র

    এস এম সাইফুল ইসলাম কবির. বিশেষ প্রতিনিধি: সম্ভাবনা সত্বেও ভ্রমণ পিপাসুদের হাত ছানি দিচ্ছে মোরেলগঞ্জ আজও গড়ে ওঠেনি পর্যটনকেন্দ্র।
    বাগেরহাটের ‍‍`মোরেলগঞ্জ‍‍` খুলনা বিভাগের সর্ববৃহৎ একটি উপজেলা। বৃটিশ শাসক ইংরেজ মোরেল পরিবারের নামেই নামকরণ হয় এই উপজেলার। নীল কুঠিরের কুঠিবাড়ি আর বীর রহিমউল্লাহ স্মৃতি বিজারিত, কালাচাঁদ আওলিয়ার বদ্যভুমি, দেশের সর্বদক্ষিনের উপকুলীয় এই উপজেলায় স্বাধীনতার ৫২ বছরের কোন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। ৪৩৭ বর্গমাইলের এই উপজেলাটি সুন্দরবনের কারনে সকলের কাছে অনেকটাই পরিচিত। ৫টি নদীর মোহনায় জেগে ওঠা মোরেলগঞ্জের এই পানগুছি নদী। এই নদীর তীরে অনেক স্থানে চর জেগে উঠলেও সেসব স্হানে পর্যটন কেন্দ্রের জন্য কোন প্রকল্প গ্রহন করা হয়নি। রবার্ট মোরেলের কুঠিবাড়ির ঐতিহাসিক স্হাপনটিও সংস্কারের অভাবে পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে আছে। সুন্দরবনের গা ছুয়ে যাওয়া পানগুছির তীরে এই উপজেলায় কোন পর্যটন কেন্দ্র না থাকায় হতাশ বিভিন্ন স্থান থেকে আগত অতিথিবৃন্দ ও উপজেলাবাসী।

    তবে গত বছর স্হানীয়দের বিনোদনের জন্য তৎকালীন বাগেরহাট জেলা প্রশাসক আজিজুর রহমানের সহযোগীতায় মোরেলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র এ্যাডঃ মনিরুল হক তালুকদার পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডে শেখ রাসেল শিশুপার্ক নির্মান করা হয়েছে,বর্তমানে এটির কাজ চলমান রয়েছে।

    প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি মোরেলগঞ্জের পানগুছি নদীর দুপাশের যে কোন স্থানে একটি বৃহত্তর পার্ক নির্মান হলে এ অঞ্চলের মানুষের জন্য বিভিন্ন সুবিধাসম্বলিত একটি আধুনিক পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র হতো বলে মনে করছেন স্হানীয়রা।

    তবে এই উপজেলায় পর্যটন শিল্পের বিপ্লব বিকাশে বড় বাধা পানগুছি নদীর উপরে সেতু নির্মান। অবহেলিত মোরেলগঞ্জের এই পানগুছি নদীর উপর সেতু নির্মাণ হলে এই অঞ্চলের শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ পর্যটন শিল্পের বিপ্লব ঘটবে এবং কর্মসংস্হানের বিভিন্ন ক্ষেত্র সূচিত হবে।

    মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম তারেক সুলতান জানালেন বাংলাদেশের মধ্যে একটি নৈসর্গিক সৌন্দর্যের উপজেলা মোরেলগঞ্জ। মোরেলগঞ্জে পর্যটন শিল্পের বিপ্লব বিকাশে নীল কুঠিরের কুঠিবাড়ি পানগুছি নদীর পাশেই ডিসি পার্ক নির্মানের জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে,পার্কটি নির্মানের জন্য মাটি ভরাটের কাজ প্রক্রিয়াধীন এবং মোড়েলের স্হাপনাটি সংস্কারের জন্য স্হাপত্ব্য অধিদপ্তরকে চিঠি দেয়া হয়েছে।

    এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালিদ হোসেন বলেন, পর্যটনশিল্পই একমাত্র শিল্প যা কোনো সমাজের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়ন ঘটায়,বর্তমান সরকারের উন্নয়ন ভাবনায় পর্যটন শিল্প অন্যতম। মোরেলগঞ্জে পর্যটন শিল্পের বিপ্লব বিকাশে রবার্ট মোড়েলের স্হাপনা সংস্কারসহ ডিসি পার্ক নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, খুব শীগ্রই কাজ শুরু হবে।

    স্হানীয় সংসদ সদস্য এ্যাডঃ আমিরুল আলম মিলন এম‍‍`পি বলেন,শেখ হাসিনা সরকারের এক অনন্য সাফল্য দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন, মোরেলগঞ্জে পানগুছি নদীর উপরে সেতু নির্মান কাজ শীগ্রই শুরু হবে,পাশাপাশি এই উপজেলায় পর্যটন শিল্পের বিপ্লব বিকাশে পানগুছি নদীর তীরে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য বৃহৎ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

  • কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গরুর গাড়ী

    কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গরুর গাড়ী

    মো.হাসমত উল্লাহ,লালমনিরহাট।।

    লালমনিরহাট জেলায় কালের আবর্তে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘গরুর গাড়ী।গরুর গাড়ী এক সময় যাত্রী বান্ধব বন্ধু হিসেবে অনেকেই অখ্যায়িত করত। এক সময় গরুর গাড়ী নিয়ে ছুটে চলতেন গ্রামের পর গ্রামে।বৃদ্ধ থেকে শুরু করে যুবোগ ও মধ্যবয়সী সহ সবাই গরুর গাড়ী নিয়ে বের হতেন।গরুর গাড়ী নিজের কাজের পাশাপাশি ব্যবহার হতো বিভিন্ন মালা মল বাহনের কাজে। কিন্তু আধুনিকায়নে বিভিন্ন যানবহন বৈদ্যুতিক গাড়ী এলাকা ভরপুর।যার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে একমাত্র উৎস রত ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ী।

    সরেজমিনে কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়,তখনকার সময়ে গরুর গাড়ী মেরামতের জন্য হাট বাজারে দোকান দিয়ে বসত।এছাড়া অনেকে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে গরুর গাড়ী মেরামত করত। কিন্তু এখন আর গরুর গাড়ী ব্যবহার না করার ফলে গরুর গাড়ীর মিস্ত্রীদের এখন আর দেখা যায় না।কালীগঞ্জ উপজেলার বুড়িরহাট এলাকার গরুর গাড়ী চালক দেলবার হোসেন,বলেন এক সময় গরুর গাড়ী ছাড়া রাতে ও দিনে চলাচল করা যেত না।কিন্তু এখন এলাকায় কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের যনবহন বের হওয়ায় এখন আর গরুর গাড়ী প্রয়োজন হয় না।

    শিক্ষক শাহ্ আলম বলেন, আগে রাতে ও দিনে বেরহলে গরুর গাড়ী ছারা অনন্য কোন যানবহন পাওয়া যেতনা। কিন্তু এখন ঘরে থেকে বেরহলে বিদ্যুৎতের গাড়ী ও অনন্য যানবহন পাওয়া যায় কারণে এখন আর গরুর গাড়ীর প্রয়োজন হয় না। চন্দ্রপুর ইউনিয়নের চাপারহাটের এক গরুর গাড়ীর মেকার জানায়,এক সময় নিজের হাতে অনেক গরুর গাড়ী মেরামত করেছি। কিন্তু এখন কার সময়ে বাড়ী গাড়ী থাকলেও তা কেউ ব্যবহার করে না।এতে মেরামতের কাজ হয় না।যার কারণে এই পেশা ছাড়তে হয়েছে।তিনি আরও বলেন,সময়ের আবর্তে এক সময় গরুর গাড়ীর দেখতে যেতে হবে জাদুঘরে। নতুন প্রজন্ম হয়তো জানবেও না গরুর গাড়ীর ইতিহাস।

    হাসমত উল্লাহ।

  • দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে আত্রাইয়ের বাঁশ ও বেতের তৈরি সামগ্রী

    দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে আত্রাইয়ের বাঁশ ও বেতের তৈরি সামগ্রী

    রওশন আরা শিলা, নওগাঁ প্রতিনিধিঃ-

    নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশ ও বেতের তৈরি বিভিন্ন পন্য সামগ্রী,বাজারে প্লাষ্টিক, মেলামাইন ও স্টিলের তৈরি পণ্যের দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে ওই পণ্য, ফলে এসব পেশার সাথে জড়িত মানুষগুলোকে আর্থিক অনটনের মধ্যে দিয়ে দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে, নিজ পেশার সাথে টিকতে না পেরে ভিন্ন পেশায় চলে গেছে উপজেলার পাঁচ শতাধিক শিল্পের কারিগর, পুঁজি স্বল্পতা, বাঁশ ও বেতের উৎপাদন হ্রাস, আর্থিক অসচ্ছতা, উপকরণের অভাবেই আজ বিলুপ্তির পথে।ঐতিহ্যবাহী বাঁশ বেত শিল্প, সারা দেশের মত একসময় ব্যাপক প্রচলন ছিল বাঁশের তৈরি কুলা,ঝুড়ি,চাটাই,হাঁস মুরগির খাঁচা, বেতের চেয়ার, ধামা,চালুনি, খলই, হাতপাখা, কিন্তু বাজারে প্লাষ্টিক, মেলামাই ও স্টিলের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রীর চাগিদা বেড়ে যাওয়ায় বাঁশ ও মাটির তৈরি জিনিষগুলো প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে।উপজেলার কালিকাপুর, তিলাবাদতুরি,জামগ্রাম, নওদুলী,ঝনঝনিয়া, ব্রজপুরসহ আরও কয়েকটি এলাকর বংশপরস্পরায় বাঁশ ও বেত শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিল প্রায় পাঁচশতাধিক পরিবার। কিন্তু বতমানে বেশিরভাগই পরিবারের সদস্যরাই পেশা বদল করে জীবিকা নিবাহ করছেন।নিত্য নতুন প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী তৈরি করে থাকেন যা উপজেলার বিভিন্ন হাচ-বাজারে এবং গ্রামগঞ্জে কাঁধে করে ফেরি করে বিক্রি করে থাখে, এমনকি তৈরি এসব কুটির শিল্প সামগ্রী বেশ কয়েকটি দেশে যাচ্ছে।বৃহস্পতিবার (20 জুলাই) আহসানগঞ্জ ইউপি’র ঐতিহ্যবাহি আহসানগঞ্জ হাট সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিংসাড়া গ্রামের আব্দুল জলিল,ভাদঘরপাড়া গ্রামের ইনতাজ আলী, মিজাপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম ও নওদুলী গ্রামের ব্যবসায়ী শাহাদত হোসেন জানান, এক সময় তাদের কাছে দশ-বারো করে বাঁশ ও বেত শিল্পের কারিগর ছিল। তধনকার দিনে একজন কারিগরের বেতন ছিল প্রতিদিন দুই শত থেতে আড়াইশত টাকা। এখনকার দিনে সে কারিগরের বেতন দিতে হয় চার’শ থেকে পাঁচ শত টাকা। তাও সিজনের সময় পাওয়া যায় না, তারা আরো জানান, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। আগে একচি বাঁশের দাম ছিল পঞ্চাশ থেকে ষাইট টাকা, সেখানে এখন প্রতিটি বাঁশ কিনতে দুই শত থেকে তিনশত টাকায়, আর নির্বিচারে বন জঙ্গল উজার হওয়ার ফলে বেত গাছ খুব একটা চোখে পড়ে না। তাই এ শিল্পের সাথে জড়িত পরিবারগুলো আর্থিক অনাটনের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে। উপজেলার নওদুলি হাট এলাকার শশীকান্ত জানান কয়েকবছর হলো পৈত্রিক পেশা ছেড়ে দিয়ে এখন দিন মজুরি কুরছেন।। তিনি বলেন বেত শিল্পে টাকা বিনিয়োগ করে খুব একটা লাভ হতো না। এখন গতর খেটে কাজ করি,দিনবাদে চার-পাঁচ’শ রোজগার হয়। পরিবার নিয়ে খেয়ে পড়ে চলছি। তবে যে দিন কাজ না থাকে সে দিন অনেক কষ্ট হয়। তবে আগের চেয়ে অনেক ভালো আছি।
    ভস্পপপঃ-মিজাপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম।
    ভস্পপপঃ-নওদুলী গ্রামের ব্যবসায়ী শাহাদত হোসেন।
    অস্পপপঃ- ভাদঘর পাড়া গ্রামের ইনতাজ আলী।

  • কালের বির্বতনে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে আত্রাইয়ের মৃৎশিল্প

    কালের বির্বতনে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে আত্রাইয়ের মৃৎশিল্প

    রওশন আরা শিলা. নওগাঁ প্রতিনিধি
    কালের বিবতনে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে নওগাঁর আত্রাইয়ের মৃতশিল্প। প্রয়োজনীয় অর্থ ও উপকরণের অভাবে আত্রাই উপজেলার মৃতশিল্প ঐতিহ্য হারাতে বসেছে,মৃৎ শিল্পীরা নিজ পেশা ছেড়ে এক প্রকার বাধ্য হচ্ছে অন্য পেশায় আত্ন নিয়োগ করতে। কালের বিবতন,প্রতিকুলতা আর প্রযুক্তির এ যুগে মেলামাইন শিল্পের বিকাশে মৃৎলিল্প বিলুপ্ত প্রায়। নওগাঁর আত্রাই উপজেলার আটটি ইউনিয়নে মৃৎশিল্পীদের হাতের তৈরি মাটিড় হাঁড়িপাতিল ও ভৈজসপত্রের প্রশংসা ছিল পুরো রাজশাহী বিভাগ জুড়ে।
    স্থানীয় কুমারদের হাতে তৈরি মাটির হাড়িপাতিল,কলস, প্রদিপ,খেলনার তৈজসপত্র আর ঘর ছাওনির টালি ছিল মানুষের নজর কাড়া।শহর অঞ্চলে মাটির তৈরিভৈজসপত্র ব্যবহার না থাকলেও এক সময় গ্রামঞ্চলে এগুলোর ব্যবহার ও চাহিদ ছিল প্রচুর,গ্রাামে বসবাসকারি বিভিন্ন পরিবারের মেয়েদের পয়সা সংগ্রহের জন্য মাটির তৈরি ব্যাংকের কথা সবার জানা।বিদ্যুৎ চলে গেলে গ্রামের বাড়িতে মাটির প্রদীপের চাহিদাও ছিল।যা বতমানে বিরল। তবে বিভিন্ন রোগ বালাই সারতে এখনও গ্রামের মানুষেরা ব্যবহার করে আসছে পিঠা তৈরীর বাসন, মাটির কলস,হাড়ি ও দই ভরানোর জন্য ছোট ছোট পাতিলসহ ইত্যাদিআর একারনেই নওগাঁর আত্রাই উপজেলার মির্জাপুর,পাঁচুপুর, সাহেবগঞ্জ, বিশা,হাটকালুপাড়া,কালিকাপুর পল্লীতে এখনও চাকা ঘুরছে। কিন্তু আগের মত জাঁকজমক আর নেই। দুদিনে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি,কষ্ট,হতাশায় যেন সবকিছু স্থবির হয়ে পড়েছে পল্লীগুলোতে। এক সময়ের নন্দিত মৃতশিল্প বিলুপ্তির পেছনে নানাবিধ সমস্যা বিরাজ করছে।কুমারদের শ্রমের মজুরি খুবই কম। প্রয়োজননীয় মাটি ও জ্বালানীয় অভাব,সমস্যা বাজারজাত করনেও। সবপরি আধুনিক মেলামাইন শিল্পের বিকাশের জন্য মৃতশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। মঙ্গবার (4 জুলাই) সকালে মৃৎ শিল্পের সাথে জড়িত উপজেলার মির্জাপুর পালপাড়ায় গিয়ে কথা হয় শ্রী গজেন্দ্র নাথ পাল,শ্রী অমল চন্দ্র পাল,শ্রীমতি সম্পারানী পাল,শ্রীমতি ইতিরানী পাল, ম্রীমতি সুসমা রানী পালের সাথে তারা জানান, মাটির তৈরি জিনিসপত্ত্রের চাাহিদা কমে গেছে অনেকাংশে, প্রয়োজনীয় মাটির অবাবে,দ্রব্যমূল্য সহ বিভিন্ন কারনে তারা তাদের পুরাতনঐতিহ্য ধরে রাখতে পারছে,তাদের এ পাড়ায় এক সময় তিন’শ পরিবার ছিল এর মধ্যে সব পরিবার ভারতে চলে গেছে। বতমানে চল্লিশটি পরিবার রয়েছে। তারাই একমাত্র মৃৎশিণ্পের চাহিদা আবারো ফিরে আসবে বলে মনে করছেন। এবিষয়ে আত্রাই উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ সোহেল রানা বলেন, এই উপজেলার মৃতশিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে একটি প্রাথমিক জরিপ করা হয়েছে। তাদের পুজিঁ ব্যপারে অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। আশা করছি এবছরে মৃৎ শিল্পকে টিকিয়ে রাখকতে বিনা সুদে তাদের লোন দেয়া হবে।#