ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের বিএনপির ত্যাগী কয়েকজন নেতা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়েছেন। এদের মধ্যে একজন গৌরীপুর উপজেলা বিএনপির
যুগ্ন আহ্বায়ক-২।
বৃহস্পতিবার (৯অক্টোবর) ময়মনসিংহ আইনজীবী সমিতিতে বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল ময়মনসিংহ বার ইউনিট কর্তৃক আয়োজিত পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন বিষয়ক সেমিনারে আনুষ্ঠানিক ভাবে তিনি বিএনপি থেকে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন।
ময়মনসিংহ আইনজীবী সমিতির অন্যান্য আইনজীবীগণের উপস্থিতিতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দলটিতে যোগ দেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধান অতিথি মহানগর জামায়াতের আমির, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ময়মনসিংহ মহানগর এর আমীর, ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা কামরুল আহসান এমরুল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জামায়াতে যোগ দেওয়া ওই বিএনপি নেতার নাম
অ্যাডভোকেট আব্দুস সুবাহান সুলতান। তিনি
গৌরীপুর উপজেলা ছাত্রদল এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ময়মনসিংহ জেলা উত্তর বিএনপির সাবেক সদস্য,গৌরীপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ন আহ্বায়ক (২য়), পেশায় একজন সিনিয়র আইনজীবি।
বিগত সময়ে আওয়ামী বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় তিনি বহু অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। এলাকায় তিনি ত্যাগী নেতা হিসেবেই পরিচিত।
এডভোকেট সাকিন মোঃ শহিদুল্লাহর সঞ্চালনায় এডভোকেট এ.কে.এম আমানউল্লাহ বাদল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে আরো এডভোকেট আমিনুল ইসলাম, এডভোকেট শামিম হাসান, এডভোকেট মিজানুর রহমান সহ বেশ কয়েকজন আইনজীবীরাও যোগদান করেছেন।
নতুন যোগদানের পর তাদেরকে ফুল দিয়ে বরন করে নেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি, সভাপতি, বিশেষ অতিথিবৃন্দ। নতুন যোগদানকৃত সদস্যগণ তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। তারা ময়মনসিংহে আইনজীবীদের অধিকার, বিচার প্রার্থীদের সেবা নিশ্চিত, ইনসাফ ভিত্তিক একটি রাষ্ট্র গঠনের ভুমিকা রাখার কথা ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ব্যাংকার এটিএম সারোয়ার হোসেন , মহানগর জামায়াত এর বায়তুল মাল সেক্রেটারি গোলাম মহসিন খান সহ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল, ময়মনসিংহ ইউনিট এর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
জামায়াতে যোগ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে সদ্য সাবেক বিএনপি নেতা সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুস সুবাহান সুলতান বলেন, ‘আমি অনেক চিন্তা-ভাবনা করে স্বেচ্ছায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়েছি। বিএনপির সকল পর্যায় থেকে লিখিতভাবে ইস্তফা দিয়েছি। কারও প্রতি কোনও বিদ্বেষ কিংবা মনোমালিন্য থেকে বিএনপি বাদ দেইনি। নেতা হতে নয়, জেনে বুঝে ভালো লাগা থেকে জামায়াতে যোগ দিয়েছি। এখন থেকে জামায়াতের সঙ্গেই থাকতে চাই।’
মহানগর জামায়াতের আমির মাওলানা কামরুল আহসান এমরুল বলেন, সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুস সুবাহান সুলতান
কয়েকদিন আগে থেকে জামায়াতে যোগদান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আমরা তাকে আগে সেখান থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরামর্শ দেই। তিনি ইস্তফা দিয়ে বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেছেন।’
বিএনপি থেকে এসে জামায়াতে নেতৃত্ব পাওয়া নিয়ে প্রশ্নে মাওলানা এমরুল বলেন, ‘প্রশ্নই আসে না। জামায়াতে যোগ দিলেই নেতা হওয়া যায় না। এখানে কর্মী হতে হলে নিয়মিত নামাজ আদায়সহ সিলেবাসভুক্ত বই পড়তে হয়, ব্যক্তিগত রিপোর্ট রাখতে হয়। ব্যক্তিগত মানোন্নয়নসহ সাংগঠনিক নিয়মকানুন মেনে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয়। নেতৃত্বের যোগ্যতা তৈরি হলে তখনই নেতা হতে পারবেন, অন্যথায় নয়।
অ্যাডভোকেট আব্দুস সুবাহান সুলতান সব জেনে বুঝে জামায়াতে যোগ দিয়েছেন।’
যোগদানকারী সদস্যরা জানান, আইনজীবীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, বিচারপ্রার্থী মানুষের ন্যায়বিচার নিশ্চিত এবং ইনসাফনির্ভর রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দিয়েছেন তারা।
ময়মনসিংহ মহানগর জামায়াতের আমির মাওলানা কামরুল আহসান এমরুল আরো বলেন, তারা যে লক্ষ্য নিয়ে এসেছেন– ইনসাফপূর্ণ সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, আইনজীবীদের অধিকার নিশ্চিত করা এবং বিচারপ্রার্থী মানুষের পাশে থাকা– এই লক্ষ্য অর্জনে জামায়াতে ইসলামী সবসময় আপসহীন। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, তাদের মতো জ্যেষ্ঠ ও বিজ্ঞ পেশাজীবীদের যুক্ত হওয়া আমাদের এই সংগ্রামকে আরও শক্তিশালী ও বেগবান করবে।’
ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রোকনুজ্জামান সরকার রোকন বলেন, ‘বিষয়টি আমার ভালো করে জানা নেই। তবে যারা যোগদান করেছে বলে শুনেছি, তারা বিএনপিতে গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে ছিলেন না। ৫ আগস্টের পরে তারা হয়তো বিএনপিতে সুবিধা নিতে চেয়েছিলেন। ব্যক্তিগত সুবিধা না পেয়ে তারা হয়তো জামায়াতে চলে গেছেন।’