বায়জিদ হোসেন, মোংলাঃ বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা উত্তরণ এর উদ্যেগে ফিশনেট প্রকল্পের আওতায় বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলায় ‘উপজেলা পানি কমিটি’ গঠন করা হয়। বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা উত্তরণ’র বাস্তবায়নে ইউকে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের আর্থিক সহযোগীতায় ১৩ আগষ্ট বুধবার সকালে মোংলা উপজেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিভিন্ন শ্রেনী পেশার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এই পানি কমিটি গঠন করা হয়।
বুধবার সকাল ১১টায় পরিবেশযোদ্ধা মোঃ নূর আলম শেখ’র সভাপতিত্বে কমিটি গঠন সভায় প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন ফিসনেট প্রকল্প ব্যবস্থাপক বিলকিস খাতুন। এসময়ে উপজেলা পানি কমিটি গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন ফিসনেট প্রকল্প ‘উত্তরণ’ এর এডভোকেসি অফিসার মো: মিজানুর রহমান । তিনি বলেন ‘উত্তরণ’ এর পানি কমিটি একটি সামাজিক সংগঠন। ১৯৮০ সালে প্রথম পানি কমিটি গঠিত হয় এবং জলাবদ্ধতা দূর করার আন্দোলন ও সরকারের সাথে পরামর্শ করে আসেছে। তিনি পানি কমিটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি সভায় পানি কমিটির গঠনতন্ত্র উপস্থাপন করেন। এরপর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটি গঠন করা হয়। আলাপ আলোচনা ও প্রস্তাবনার মাধ্যমে ২২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়। কমিটি হলো- সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বিশিষ্ট পরিবেশবাদী কর্মী, সাংবাদিক ও মোংলা উপজেলা পরিষদ এর সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান মোঃ নুর আলম শেখ। সহ-সভাপতি- আঃ মালেক হাওলাদার ও শিখা হালদার, সম্পাদক-মনিন্দনাথ রায়, যুগ্ম-সম্পাদক-মিতালী মন্ডল, সাংগঠনিক সম্পাদক-মোঃ নাজমুল হক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক- মোঃ নান্টু গাজী। দপ্তর সম্পাদক-মেহেদী হাসান। কমিটির অন্যান্য সদস্যগণ হলেন- এ্যড. সার্বভৌম রায়, মোঃ বায়জিদ হোসেন, ওয়াশিংটন হালদার, মিরা রায়, দুলালী সরদার, আঃ রশিদ হাওলাদার, কনিকা মন্ডল, ফাতেমা জান্নাত, ফারজানা খাতুন, অসীমা বিশ্বাস, বৃষ্টি সরকার, মাসুদা আক্তার, ইয়াসমিন বেগম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উত্তরণ ফিসনেট প্রকল্পের এরিয়া ম্যানেজার মোঃ মোখলেুর রহমান কামাল।
Author: desk
-

মোংলা উপজেলা পানি ক-মিটি গঠন – নূর আলম সভাপতি মনীন্দ্র সম্পাদক
-

প্রথিতযশা সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার’র মৃ-ত্যুবার্ষিকীতে বানারীপাড়ায় দো-য়া মো-নাজাত
আব্দুল আউয়াল
বানারীপাড়া(বরিশাল)প্রতিনিধি:বরিশালের বানারীপাড়ায় একুশে পদক প্রাপ্ত দৈনিক সমকাল ও যুগান্তরের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রয়াত গোলাম সারওয়ারের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বানারীপাড়ায় পারিবারিকভাবে দোয়া মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে বানারীপাড়ার বেগম ফজিলাতুন্নেছা এতিমখানা ও বানারীপাড়া এতিমখানায় কোরানখানী ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া মোনাজাত শেষে ওই দুই এতিমখানায় এতিমদের মাঝে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। দোয়ায় অংশ নেন গোলাম সারওয়ারের মেঝ ভাই বানারীপাড়া সাবেক পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম সালেহ্ মঞ্জু মোল্লা ও মহসীন আকন নান্টু, গোলাম সারওয়ারের ভাতিজা গোলাম কিবরিয়া সৈকত, আজকের পত্রিকা বানারীপাড়া প্রতিনিধি সাংবাদিক আব্দুল আউয়াল অন্যান্য আরো উপস্থিত ছিলেন মোঃ মিন্টু, রাহাত হোসেন, হৃদয় প্রমুখ।
প্রসঙ্গত গোলাম সারওয়ার ১৩ আগস্ট ২০১৮ সালের এই দিনে ৭৫ বছর বয়সে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ।গোলাম সারওয়ার ষাটের দশকে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। তখন থেকে টানা পাঁচ দশকের বেশি সময় তিনি এ পেশায় মেধা, যুক্তিবোধ, পেশাদারিত্ব, দায়িত্বশীলতা, অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার নিরবচ্ছিন্ন চর্চার মাধ্যমে নিজেকে এবং বাংলাদেশের সংবাদপত্রকে অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেন। মরহুম গোলাম কুদ্দুস মোল্লা ও মরহুম সিতারা বেগমের জ্যেষ্ঠ সন্তান গোলাম সারওয়ার বাংলাদেশের মুক্তচিন্তা, প্রগতিশীল মূল্যবোধ আর মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে আজীবন সোচ্চার ছিলেন।
দেশের সাংবাদিকতায় প্রতিষ্ঠানতুল্য ব্যক্তিত্ব গোলাম সারওয়ার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্মানসহ এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ঢাবিতে ছাত্র অবস্থায় ১৯৬২ সালে চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীর বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা হিসেবে সাংবাদিকতা পেশায় তাঁর অভিষেক। একই বছর দৈনিক সংবাদের সহ-সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন তিনি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত সংবাদে কর্মরত ছিলেন। এরপর মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি নিজ এলাকা বরিশালের বানারীপাড়ায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।মুক্তিযুদ্ধের পর কয়েক মাস বানারীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত যথাক্রমে প্রধান সহ-সম্পাদক, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। গোলাম সারওয়ার দৈনিক যুগান্তরেরও প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক।দেশের দৈনিক সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকদের প্রভাবশালী সংগঠন বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন গোলাম সারওয়ার। মেধা, নিষ্ঠা ও দক্ষতায় উৎকর্ষের কারণে গোলাম সারওয়ারকে অনেকেই ‘সাংবাদিকদের শিক্ষক’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি ছিলেন এ দেশের সংবাদপত্রে সাফল্য ও পেশাদারিত্বের প্রতীক।সৃজনশীল সাহিত্যেও ছিল তাঁর সাবলীল বিচরণ। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ ছড়াকার। তাঁর লেখা বইয়ের মধ্যে রঙিন বেলুন, সম্পাদকের জবানবন্দি, অমিয় গরল, আমার যত কথা এবং স্বপ্ন বেঁচে থাক উল্লেখযোগ্য।
সাংবাদিকতায় অনন্য ভূমিকার জন্য ২০১৪ সালে একুশে পদক, ২০১৬ সালে কালচারাল জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশের (সিজেএফবি) আজীবন সম্মাননা ও ২০১৭ সালে আতাউস সামাদ স্মারক ট্রাস্ট আজীবন সম্মাননা লাভ করেন তিনি।
আব্দুল আউয়াল
বানারীপাড়া(বরিশাল)প্রতিনিধি।। -

বানারীপাড়ায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যু-ব দিবস উদযাপন
মোঘল সুমন শাফকাত, বানারীপাড়া।
প্রযুক্তি নির্ভর যুবশক্তি, বহুপাক্ষিক অংশীদারত্বে অগ্রগতি” এমন প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বানারীপাড়ায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস উদযাপন উপলক্ষে রেলি ও আলোচনা সভা এবং যুব ঋণের চেক বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১২ আগস্ট মঙ্গলবার সকাল ১০টায় উপজেলা চত্বরে রেলি শেষে উপজেলা মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা যুব উন্নয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আঃ রহমান সন্যমতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ বায়েজিদুর রহমান। উপজেলা সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন শাহিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন
উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহ্ আলম মিঞা,সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ মৃধা,থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোস্তফা, পৌর বিএনপি’র সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম, উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মোকাম্মেল হোসেন মোজাম্মেল, পৌর জামায়াতের আমির মোঃ কাওসার হোসেন,প্রেসক্লাবের সভাপতি ইলিয়াস শেখ, সিনিয়র সাংবাদিক সাইদুল ইসলাম। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল মল্লিক, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল আলম মিঠু,
প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঘল সুমন শাফকাত (শুভ), সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ পলাশ, সাংবাদিক জাকির হোসেন প্রমূখ। আলোচনা সভায় বক্তারা যুবসমাজের উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধি ও জাতি গঠনে তাদের ভূমিকা সহ তরুণ প্রজন্মকে শিক্ষা, সততা ও দেশপ্রেমের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। -

ইন্দোনেশিয়া থেকে রামপাল তাপ বি-দ্যুৎ কেন্দ্রের ক-য়লা নি-য়ে মোংলা বন্দরে ভি-ড়েছে এম,ভি রয়েল ইমেজ
মোংলা প্রতিনিধি
মোংলা বন্দরে ভিড়েছে ইন্দোনেশিয়া থেকে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা নিয়ে বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজ এম,ভি রয়েল ইমেজ। জাহাজটি মঙ্গলবার বিকেলে বন্দরের পশুর চ্যানেলের হাড়বাড়ীয়ায় ভিড়ে। এরপর বিকেলেই শুরু হয় জাহাজটি হতে কয়লা খালাস ও পরিবহনের কাজ।জাহাজটির স্থানীয় শিপিং এজেন্ট টগি শিপিং লাইন্স’র ম্যানেজার (অপারেশন) হুসাইন ইমাম জানান, ইন্দোনেশিয়া থেকে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ২৮ হাজার ৪শ মেট্টিক টন কয়লা নিয়ে এম,ভি রয়েল ইমেজ নামক জাহাজটি মঙ্গলবার বিকেলে মোংলা বন্দরের হাড়বাড়ীয়ার ১১ নম্বর নোঙ্গর করে। বিকেল থেকেই জাহাজটি হতে কয়লা খালাসের কাজ শুরু হয়। খালাসকৃত কয়লা লাইটারে (কার্গো জাহাজ) করে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নেয়া হচ্ছে। এ লাইটার জাহাজ রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে ভিড়ার পর সেখানকার স্বয়ংক্রিয় বেল্টের মাধ্যমে তা সংরক্ষণ করা হচ্ছে কেন্দ্রের স্টোরে।
-

ব-জ্রাপাত থেকে র-ক্ষা পেতে তালগাছসহ উচ্চু বৃক্ষ রোপনের বি-কল্প নেই
লেখকঃ মো: হায়দার আলীঃ তালগাছ সম্ভাবত দেশের সবচেয়ে উচ্চু গাছ। তাল গাছ ও তালের উপকারের কথা লিখার চেষ্টা করবো। তালগাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে, আকাশের বাজ/ বিদ্যুৎ থেকে মানুষের প্রাণ বাঁচান । তাল দিয়ে বিভিন্ন রকম খাবার, তাল গাছ অনেক উপকারে আসে যা লিখে শেষ করা যাবে না। তালের ইংরেজি নাম Pump tree। তালপঞ্চবিংশতি অথবা, পঁচিশ রকমের তাল আছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই ছড়াটি তোমরা কে না পড়েছ? মনে পড়ে ‘তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে।’ পাবনার শাহজাদপুরে আসার সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রচুর তালগাছ দেখতেন। বিশেষ করে যখন পালকি করে আসতেন। তখন নাকি তিনি এই কবিতাটি লেখেন। আসলেই তালগাছের মতো লম্বা গাছ আর নেই। পাঁকা ফল ঢিপঢাপ করে গাছের তলায় পড়ে বলেই এর নাম তাল। তালের জন্ম মধ্য আফ্রিকায়। তোমরা কি জানো, মানুষের মতো তালগাছেরও মেয়ে গাছ আর ছেলে গাছ আছে। ছেলে গাছের মাথায় লম্বা লাঠির মতো জটা হয়, কোনো ফল হয় না; মেয়ে গাছে ফল হয়- অর্থাৎ তাল ধরে। এখন এসো, আমরা শুনি তালের যত কথা।
তালের রস : ছেলে গাছের লম্বা লাঠির মতো জটা কেটে কেটে তালের রস নামানো হয়। গরমকালে তালের রস হয়। তালের রস খুব মিষ্টি, বিশেষ করে রাতের বেলা খেতে খুব মজা লাগে।
তালের বড়া : ছোটবেলা থেকেই শুনছি, “তালের বড়া খাইয়া নন্দ নাচিতে লাগিল”। তালগোলা তেলে ভাজলে বড়া খুব মুখরোচক হয়। তালগুড় : তালের রস জ্বাল দিলে হয় তালের গুড়। তালগুড় থেকে হয় তালের পাটালি। তালমিছরি : তালের রস জ্বাল দিয়ে যেমন গুড় হয়, তেমনি বিশেষ পদ্ধতিতে এর গাদ বা ময়লা ফেলে দিয়ে স্বচ্ছ স্ফটিকের মতো তালমিছরি তৈরি করা হয়। সর্দি-কাশি সারাতে তালমিছরি খুব উপকারী।
কচি তালের শাঁস : কচি অবস্থায় তাল ফলের ভেতরে যে বীজ হয়, তা থাকে খুব নরম। একে বলে তালশাঁস। গরমকালে কচি তালের শাঁস খেতে খুব মজা। তালগোলা : কচি তালের রং সবুজ; কিন্তু পাঁকলে রং হয় কালো। ভাদ্র মাসে তাল পাঁকে। অন্য সময়ও কিছু তাল পাঁকতে দেখা যায়। সেগুলোকে বলে বারোমাসি তাল। কালো পাঁকা তাল থেকে সুঘ্রাণ বের হয়। পাঁকা তাল টিপ দিলে একটু নরম লাগে। মোটা প্লাস্টিকের মতো কালো খোসা টান দিলে উঠে আসে। ভেতরে পাটের আঁশের মতো কমলা রঙের তালের আঁশ ভর্তি থাকে তালগোলায়। আঁশ চিপলে সেই গোলা বের হয়। তালগোলা কাঁচা ও জ্বাল দিয়ে খাওয়া যায়। তালপাটালি : ঘন তালগোলার সঙ্গে একটু পান খাওয়ার চুন মিশিয়ে একটা থালায় আধা ইঞ্চি পুরু করে ঢেলে রাখলে কিছুক্ষণের মধ্যেই তা জমে শক্ত হয়ে যায়। ঢালার সময় এর ওপর অল্প কিছু শুকনো চিঁড়া ছিটিয়ে দিলে তা খেতে সুস্বাদু হয় ও চিঁড়া তালগোলার অতিরিক্ত জল শুষে পাটালিকে শক্ত করে। পাটালি চাকু দিয়ে বরফির মতো কেটে খাওয়া যায়।
তালের ফোঁপা : তাল থেকে গোলা বের করার পর বিচি বা আঁটি গাদা করে রেখে দেওয়া হয়। আশ্বিন-কার্তিক মাসে সেসব আঁটি থেকে গ্যাজ বা অঙ্কুর বের হয়। এরূপ বিচি দুই ফালা করে কাটলে ভেতরে নারিকেলের ফোঁপড়ার মতো তালের ফোঁপড়া পাওয়া যায়। চিবিয়ে খেতে তালের ফোঁপড়া বেশ মজা লাগে। বেগুনির মতো তালের ফোঁপড়া ও চালের গুঁড়ো জলে গুলে মাখিয়ে, তেলে ভেজে খাওয়া যায়।
তালপিঠা : একসময় গ্রামে গ্রামে ধূম পড়ত তালপিঠা বানানোর। তালের রস দিয়ে বানানো হতো মজার মজার পিঠা। কী নাম সেসব পিঠার- কানমুচড়ি, তেলপিঠা, পাতাপিঠা, তালমুঠা, তালবড়া, পাতাপোড়া ও তেলভাজা। আরো কত কি! ভাদ্র-আশ্বিন মাসে তাল দিয়ে পিঠা বানিয়ে আত্মীয়বাড়ি পাঠানোর রেওয়াজও ছিল।তাল ক্ষীর : তালের গোলা নারিকেল, গুড় ও দুধ দিয়ে জ্বাল দেওয়া হয়। একে বলে তাল ক্ষীর। তাল ক্ষীর দিয়ে মুড়ি বা রুটি খেতে খুব মজা লাগে। তালসুপারি : পাঁকা তালের আঁটির ভেতর নারিকেলের মতো যে শাঁস হয় তা কেউ কেউ শুকিয়ে কুচি কুচি করে কেটে পানের সঙ্গে সুপারির মতো খায়। একে বলে তালসুপারি। তবে তালসুপারি নামে আরো একটা গাছও কিন্তু আছে এ দেশে। এর ফলও সুপারির মতো, তবে অনেক ছোটো।
তালের তেল : ফোঁপড়া তোলার পর আঁটির ভেতরে নারিকেলের মতো যে শক্ত শাঁস থাকে, তা তুলে রোদে শুকিয়ে ঘানিতে পিষে তেল বের করা যায়।তালের ডোঙা বা নৌকা : এখনো গ্রামের অনেক মানুষ বিলে-ঝিলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার জন্য তালের ডোঙা নৌকার মতো ব্যবহার করে। তালগাছের গোড়ার লম্বা একটা খ- দুই ফালি করে চিরে ভেতরের শাঁস তুলে খোলার মতো করে এই ডোঙা বানানো হয়। একটা তালগাছে দুটির বেশি ডোঙা বানানো যায় না। তালপাখা : শহরে যারা বড় হয়েছে, তাদের অনেকেই হয়তো তালপাখা দেখেনি। তালগাছের পাতা রোদে শুকিয়ে তারপর বানানো হয় পাখা। তীব্র গরমে তালপাখার শীতল বাতাসে প্রাণ জুড়ায় মানুষ। বাঁশের কাঠির ফ্রেমে তালাপাতা মেলে দিয়ে বানানো হয় তালপাখা। একেকটি তালপাতায় চার থেকে পাঁচটি পাখা হয়। যেভাবে অব্যাহতভাবে লোড শেডিং চলছে এখন মানুষের তালপাখা একমাত্র ভরসা। তালকাঠ : তালগাছের থামের মতো বয়স্ক কাণ্ড করাত দিয়ে চিরে তালকাঠ বানানো হয়। তালকাঠ খুব মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী। টিনের ঘর বানাতে রুয়ো-বাতা হিসেবে তালকাঠ ব্যবহার করা হয়।
তালপাতার ঘর : তালপাতা দিয়ে ঘরও বানানো যায়। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলের গরিব মানুষ তালপাতা দিয়ে ঘর বানিয়ে থাকে। ঘরের ছাউনি, বেড়া- সবই তালপাতা দিয়ে হয়।তালপাতার বাঁশি : সেই গানটা কি তোমরা শুনেছ? ‘আমি মেলা থেকে তালপাতার এক বাঁশি কিনে এনেছি।’ তালপাতা দিয়ে আসলে খুব সুন্দর বাঁশি বানানো যায়, আর সুর করে মুখে ফুঁ দিয়ে তা বাজানো যায়। তালপাতার পুঁথি : এখন তোমরা যেমন কাগজে লেখো, প্রাচীনকালে সেরকম কাগজ ছিল না। কাগজ আবিষ্কারের আগে কয়েকটা তালপাতা বেঁধে খাতা বানানো হতো। তাতে কঞ্চির কলম দিয়ে লেখা হতো। এখনো অনেক জাদুঘরে তালপাতার পুঁথি সংরক্ষিত আছে। তালের টুপি : তালের কাণ্ড জলে পঁচিয়ে এর ভেতর থেকে সেমাইয়ের মতো আঁশ তোলা হয়। সেসব আঁশ দিয়ে সুন্দর করে বুনে তালের টুপি, ঝুড়ি, সাজি ইত্যাদি বানানো হয়। বীরভূম বা বাঁকুড়াতে গেলে তোমরা এসব জিনিস দেখতে পারবে।
তাল নবমী : জন্মাষ্টমীর পরদিন নবমী তিথিকে বলা হয় তালনবমী তিথি। এ দিনটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিশেষভাবে উদযাপন করেন। বারুইরা তাঁদের পানের বরজে এ দিন পূজা দেন।
তালপুকুর : তালের প্রবাদ ও বাগধারাও আছে। কেউ কেউ ব্যঙ্গ করে অনেক সময় বলে ‘তালপুকুর’। তাল শব্দটি বড় অর্থে ব্যবহৃত হয়। তার মানে তালপুকুর হবে বড় কোনো পুকুর বা দীঘি। কিন্তু বিদ্রƒপ করে অনেক সময় বলা হয়, ঘটি ডোবে না আবার তার নাম তালপুকুর। তিল থেকে তাল : এর অর্থ সামান্য বিষয়কে বড় করে তোলা।তালপাতার সিপাই : এর অর্থ রুগ্ন বা ছিপছিপে। কেউ রোগা হলে তাকে বলা হয় তালপাতার সিপাই। তালগাছের আড়াই হাত : এর অর্থ কষ্টকর বা কঠিন কাজ। তালগাছে যারা ওঠে তারা জানে, এর মাথার আড়াই হাত ওঠা কত কষ্টকর।
তালকানা : এর অর্থ বেতাল হওয়া।
তালের গুণাগুণ : তাল অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। ফলে এটি ক্যানসার প্রতিরোধে সক্ষম। এছাড়াও স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য ও অন্ত্রের রোগ ভালো করতে তাল ভালো ভূমিকা রাখে।
তালে মজুত ভিটামিন বি, নানা রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই ফলে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস আছে, যা দাঁত ও হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়ক। গা বমিভাব দূর করতে পাকা তাল কার্যকরী। যদি দীর্ঘদিনের কাশিতে ভোগেন, তাহলে তাল খেয়ে উপকার পাবেন।
তালে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ও সি, জিংক, পটাসিয়াম, আয়রণ ও ক্যালসিয়াম সহ আরও অনেক খনিজ উপাদান।
কাঁচা তালও অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। এতে ভিটামিন এ, সি, বি, কপার, আয়রণ, পটাশিয়াম, ফসফরাস, জিংক, ফাইবার, ক্যালসিয়াম ও অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট যৌগ রয়েছে। পুষ্টিগুণ ও পরিবেশ সুরক্ষায় তালগাছের জুড়ি নেই। বাংলাদেশের অত্যন্ত সুপরিচিত একটি ফলজ বৃক্ষ। এটি পাম গোত্রের অন্তর্গত একটি উদ্ভিদ। ভাদ্র মাসে পাঁকা তালের রস দিয়ে বিভিন্ন মুখরোচক পিঠা তৈরি আবহমান বাংলার চিরায়ত বৈগলগাছ থেকে উৎপন্ন কচি ও পাকা ফল, তালের রস ও গুড়, পাতা, সবই আমাদের জন্য উপকারী।
কচি তালবীজ সাধারণত তালশাঁস নামে পরিচিত যা বিভিন্ন প্রকার খনিজ উপাদান ও ভিটামিনে পরিপূর্ণ। মিষ্টি স্বাদের কচি তালের শাঁস শুধু খেতেই সুস্বাদু নয় বরং পুষ্টিতে ও ভরপুর। শরীরবৃত্তীয় কাজে অংশ নেয়া এই তাল শাঁসের পুষ্টিগুণের পরিমাণ সারণি দ্রষ্টব্য। এসব পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে নানা রোগ থেকে রক্ষা করাসহ রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। যেমন :
তালের শাঁসে প্রায় ৯৩% বিভন্ন প্রকার ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানি ও প্রাকৃতিক জিলেটিন থাকে। জ্যৈষ্ঠ মাসের গরমে পরিশ্রান্ত কর্মজীবী মানুষেরা তালের শাঁস খেলে দেহকোষে অতিদ্রুত ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্সের মাধ্যমে শরীরে পুনরুদন প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং আমাদের শরীরকে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা দূর করে প্রাকৃতিকভাবে ক্লান্তিহীন রাখে। এ কারণে তালের শাঁসকে অনেক পুষ্টিবিদ প্রাকৃতিক শীতলীকারকও বলে থাকেন।অতিরিক্ত রোদে ও গরমের কারণে ত্বকে বিভিন্ন র্যাশ বা এলার্জিতে দেখা দিলে তালের শাঁস মুখে লাগাতে পারেন। তাছাড়া সানবার্ন থেকে মুক্তি পেতে তালের শাঁসের খোসা ব্যবহার করা যায়। কচি তালের শাঁসে থাকা ভিটামিন সি ও বি কমপ্লেক্স আপনার পানি পানের তৃপ্তি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়, বমিভাব দূর করে, খাওয়ার রুচি বাড়ায়। তাছাড়া লিভারজনিত বিভিন্ন সমস্যা দূর করতেও তালের শাঁস বেশ কার্যকর। তালের শাঁসের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অনেক কম (৩৫%) হওয়ায় ডায়বেটিস রোগীর জন্য এটি একটি চমকপ্রদ খাদ্য উপাদান। অতিরিক্ত ওজনের কারণে কি খাবেন এ নিয়ে যারা দুশ্চিন্তায় ভুগছেন তারাও অনায়েসে খাদ্য তালিকায় তালের শাঁস রাখতে পারেন কেনানা এটি তুলনামূলক কম ক্যালরিযুক্ত একটি খাবার। তালের শাঁস অধিক আঁশসমৃদ্ধ হওয়ায় যারা কোষ্ঠকাঠিন্যসহ অন্যান্য পেটের পীড়ায় ভুগছেন তালেরশাঁস হতে পারে তাদের জন্য প্রকৃতি প্রদত্ত এক ঔষধ। এতে থাকা ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট ও অন্যান্য খনিজ উপাদান হাড় ক্ষয়, উচ্চ রক্তচাপ, রক্ত স্বল্পতা ও ক্যান্সারসহ নানাবিধ শারীরিক সমস্যায় বেশ উপকারী ভূমিকা পালন করে।
খেজুর গুড়ের ন্যায় তালের রস জ্বাল দিয়ে তৈরিকৃত তালমিছরিও আমাদের দেশে অতি পরিচিত একটি খাদ্য উপকরণ, যা সাধারণত বিভন্ন অসুখবিসুখে পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তালমিছরি গুণাগুণ বর্ণনা করতে গেলে প্রথমত এর পুষ্টিগুণ বিবেচনা করতে হয়। এতে রয়েছে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৬ বি১২, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক ও ফসফরাস। সর্দি-কাশি, রক্তস্বল্পতা ও পেটের পীড়াসহ নানাবিদ রোগের চিকিৎসায় এটি বেশ কার্যকর। যাদের ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার ভয় রয়েছে বিশেষত কাশি, গলায় জমে থাকা কফ, শ্লেষ্মা দূর করতে হালকা গরম পানিতে গোলমরিচ গুঁড়া ও তালমিছরি গুলে খাওয়ালে বেশ উপকার হয়। তাছাড়া তুলসী পাতার রসের সাথে তালমিছরি গুলে খেলে পুরানো সর্দি-কাশি অতি দ্রুত নিরাময় হয়। চিনির তুলনায় গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশ কম হওয়ায় ডায়াবেটিক রোগীর পাশাপাশি সব বয়সের মানুষের জন্য চিনির বিকল্প হিসেবে এটি বেশ নিরাপদ। মিছরি ক্যালসিয়াম ও আয়রনসমৃদ্ধ হওয়ায় হাড় ক্ষয় ও রক্তস্বল্পতায় ভুগা রোগীরা খাদ্য তালিকায় মিছরি রাখতে পারেন। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা ও অনায়াসে মিছরি খেতে পারেন কেননা মিছরিতে রয়েছে অধিক পরিমাণে পটাশিয়াম এবং উচ্চ রক্তচাপের জন্য দায়ী সোডিয়াম প্রায় নেই বললেই চলে।
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনে কারণে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বত্র অধিকহারে তাল গাছ রোপণ এখন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বজ্রপাতের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে প্রতি বছর সারা বিশ্বে ২০০০-২৪০০ জন মানুষ বজ্রপাতের কারণে মারা যায় এবং ৫০ হাজারেরও অধিক মানুষ মারাত্মকভাবে আহত হয়।
দেশে বজ্রপাতের মৃত্যুর হিসাব নিয়ে বেসরকারি সংস্থা ডিজাস্টার ফোরাম বলছে, বজ্রপাতে ১৪ বছরে (২০১০-২০২৪ সাল) প্রাণ গেল ৪ হাজার ১৫৮ জনের। নিহতদের মধ্যে শিশু ৭৭৪ জন, নারী ৫৪১ জন এবং পুরুষ ২ হাজার ৮৪২ জন। সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ২০২১ সালে। সেবছর ৩৬২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আর এককভাবে সর্বোচ্চ পুরুষের মৃত্যু ঘটেছে ২০২০ সালে। যার সংখ্যা ২৭১ জন।
তথ্য বলছে, ২০১০ সালে বজ্রপাতে প্রাণ হারান ১২৩ জন, যা ধীরে ধীরে বেড়ে ২০২১ সালে দাঁড়ায় ৩৬২ জনে। এরপর ২০২২ সালে কিছুটা হ্রাস পেলেও মৃত্যু হয়েছে ৩১৬ জনের। ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বজ্রপাতে মারা গেছেন ২৮৮ জন, যা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি। এছাড়া, ১৪ বছরে বজ্রপাতে মারা যাওয়া ৪ হাজার ১৫৮ জনের মধ্যে পুরুষ ২ হাজার ৮৪২ জন, যা মোট মৃত্যুর প্রায় ৬৮ শতাংশ। নারী ও শিশুর সংখ্যা যথাক্রমে ৫৪১ ও ৭৭৪ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরুষদের কৃষিকাজ, মাছ ধরা, গবাদি পশু পালনসহ বহিরাঙ্গন কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার ফলে মৃত্যুর হারও বেশি। বজ্রপাতের ফলে আহতের সংখ্যাও উদ্বেগজনক। এই সময়কালে বজ্রপাতজনিত আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৩৪ জনে। ২০১৬ সালে সবচেয়ে বেশি আহত হন ১৯৬ জন। এছাড়া, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরও সারা দেশে বজ্রপাতের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বিশেষ করে এপ্রিল ও মে এই বজ্রপাত মৌসুমে প্রাণহানির ঘটনা চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। মাত্র একদিনেই, অর্থাৎ গত ২৮ এপ্রিল বজ্রপাতে প্রাণ হারিয়েছেন ২৩ জন।আর এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, বছরে দেশে গড়ে মৃত্যু ৩০০’র বেশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বজ্রপাতে দেশের ১৩টি জেলায় মৃত্যু বেশি। জেলাগুলো হলো সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নওগাঁ, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নেত্রকোনা, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, সিলেট, গাইবান্ধা, পাবনা ও দিনাজপুর। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। হিলিয়ন জার্নালে প্রকাশিত ‘জিআইএস-বেজড স্পেশাল অ্যানালাইসিস ফর লাইটিনিং সিনারিও ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৫-২০২২ সালে ৮ বছরে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি ১৪০ জন মারা গেছেন সুনামগঞ্জে। একই সময়ে ১১১ জনের মৃত্যু নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে হবিগঞ্জ জেলা। এরপরই নওগাঁয় ৮২, কিশোরগঞ্জে ৭৮ এবং ময়মনসিংহে ৭৭ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়াও একই সময়ে বজ্রপাতে রাজশাহীতে ৬৭, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৬৫, সিরাজগঞ্জে ৬৪, নেত্রকোনায় ৬৩, সিলেটে ৬১ এবং পাবনা ও গাইবান্ধায় ৫৩ জন করে মারা গেছেন। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বজ্রপাতে দেশে ২১৪২ জন মারা গেছেন এবং আহত হয়েছেন ৫৩৮ জন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর থেকে পাওয়া জেলাভিত্তিক মৃত্যুর তথ্যের সঙ্গে এসব তথ্যের মিল পাওয়া যায়। অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে, দেশে প্রতিবছর বাড়ছে বজ্রপাতে মৃত্যু। ২০১৯ সালে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৯৮ জন, ২০২০ সালে তা ছিল ২৫৫ জন। কিন্তু ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল-তিন বছরে বজ্রপাতে গড়ে মৃত্যুর সংখ্যা ৩০০ জনের অধিক ছিল। তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ১৯ মে পর্যন্ত বজ্রপাতে মারা গেছেন ৫৬ জন এবং আহত হয়েছেন ১৩ জন।
বাংলাদেশের বজ্রপাতবিষয়ক আরেক গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৯০ থেকে ১৯৯৯ সালে দেশে বজ্রপাতে গড়ে মারা গেছেন ৩০ জন আর আহত হয়েছেন ২২ জন। ২০০০ থেকে ২০০৯ সালে গড়ে মারা গেছেন ১০৬ জন এবং আহত হয়েছেন ৭২ জন। অন্যদিকে ২০১০ থেকে ২০১৭ সালে প্রতিবছর গড়ে মারা গেছেন ২৬০ জন এবং আহত হয়েছেন ২১১ জন। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৩০০ জন মারা যান এবং এ সংখ্যা অনেক। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর বজ পাতে ২০ জনের কম মারা যান।
বিশেষজ্ঞারা বলছেন, তালগাছে কার্বনের স্তর বেশি থাকায় তা বজ্রপাত নিরোধে সহায়তা করে। কারণ, তালগাছের বাকলে পুরু কার্বনের স্তর থাকে। তালগাছের উচ্চতা ও গঠনগত দিক থেকেও বজ্রপাত নিরোধে সহায়ক।
মাত্রাতিরিক্ত বজ্রপাতের কারণে মৃত্যুঝুঁকির কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে এবং এর প্রতিকারে করণীয় নির্ধারণে তৎপর হয়। বজ্রপাতের কারণে অতি উচ্চ ভোল্টেজ সম্পন্ন বিদ্যুৎ সাধারণত ভূ-পৃষ্ঠের সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা বা বস্তুতে আঘাত হানে। এজন্য পরিবেশ বিজ্ঞানী ও আবহাওয়াবিদগণ পরিবেশ সুরক্ষায় বিশেষ করে বজ্রপাতের হাত থেকে বাঁচার জন্য অধিকহারে তালগাছ রোপণের উপর গুরুত্ব দিয়ে সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছেন। তালগাছ সাধারণত ৩০ মিটার (৯৮ ফুট) পর্যন্ত লম্বা হয়, এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি বজ্রপাতে সৃষ্ট অতি উচ্চ ভোল্টেজ সম্পন্ন বিদুৎ পরিবহন করে মাটিতে পৌঁছে দিয়ে বজ্রাহতের হাত থেকে রক্ষা করে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকার ইতোমধ্যে সারা দেশব্যাপী কয়েক মিলিয়ন তালগাছ রোপণও করেছে। তাছাড়া, ভাঙ্গন ও মাটি ক্ষয়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায়ও তালগাছের জুড়ি মেলা ভার।
তালগাছ গুচ্ছমূলীয় হওয়ার কারণে নদীর ভাঙ্গন ও মাটির ক্ষয়রোধে এর রয়েছে বিরাট ভূমিকা। প্রতি বছরই এইসব অঞ্চলে রাস্তা ও বাঁধ পুন:নির্মাণে জন্য মোটা অংকের রাজস্ব ব্যয় হয়। এ সমস্ত বন্যাপ্রবণ এলাকার রাস্তা ও বাধের দুই পাশে তালগাছ রোপণ করে ভাঙ্গনের হাত থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
এ জন্য বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট বজ্রপাত, বন্যাসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকারের পাশাপাশি সামাজিক ও ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগী হয়ে আমাদের সকলকে পরিবেশবান্ধব এই বৃক্ষ রোপণে সচেষ্ট হতে হবে।
বজ্রপাত প্রতিরোধক পরম বন্ধু তালগাছ
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে বজ্রপাতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটছে। বাংলা ও বাঙালির জনপ্রিয় ফল তাল। ভাদ্র মাসের তাল না খেলে কালে ছাড়ে না বলে বাঙালি সমাজে প্রবাদও রয়েছে। তালগাছের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।আবহাওয়াবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বজ্রপাত হলো একটি প্রাকৃতিক বৈদ্যুতিক নির্গমন প্রক্রিয়া, যা মূলত আকাশে জমে থাকা বিশাল পরিমাণ ইলেকট্রিক চার্জের হঠাৎ মুক্তি। এটি তখন ঘটে যখন মেঘের ভেতরে কিংবা মেঘ থেকে ভূমির মধ্যে পজিটিভ ও নেগেটিভ চার্জের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়।
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে সারা দেশে রাস্তার দুই পাশে তালগাছের চারা-আঁটি রোপণের
বিকল্প নেই।বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুহার নামিয়ে আনতে দেশের সর্বত্র বেশি করে উঁচু গাছ যেমন তাল, নারিকেল, সুপারি, খেজুরগাছ লাগাতে হবে। উন্মুক্ত স্থানে বসাতে হবে লাইটনিং টাওয়ার বা উঁচু ধাতব পোস্ট। খোলা স্থানে উঁচু টাওয়ারে আরথিং করে নিলে বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। বজ্রপাত সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করে তুলতে পারলে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যু কমিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে?
-

ঝিনাইদহে কি-ন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের সংবা-দ স-ম্মেলন
ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতাঃ
প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনের সুযোগ না দিয়ে জেলায় জেলায় প্রথমিক শিক্ষা অফিস ঘেরা ও মার্চ ফর ঢাকা কর্মসুচি গ্রহন হুসিয়ারী দিয়েছে ঝিনাইদহ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশন।সংগঠনটির জেলা শাখা মঙ্গলবার দুপুরে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসুচির হুসিয়ারী দেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের ঝিনাইদহ জেলা শাখার সভাপতি শাহীনুর আলম লিটন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের জেলা নেতা গোলাম মোস্তফা চঞ্চল, আতিয়ার রহমান, বজলুর রহমান, কাজী মনজুরুল হক ও কামরুজ্জামান লিটন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বৃত্তি পরীক্ষা শুধু আর্থিক অনুদান নয়, এটি একটি শিশুর আত্মবিশ্বাস ও সামাজিক স্বীকৃতি। শিশুদের এই মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার কারো ক্ষমতা নেই। অথচ সচিবালয় ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে ঘাপটি মেরে থাকা কুচক্রি মহল প্রাথমিক শিক্ষায় যুগান্তকারী অবদান রাখা কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহনের সুযোগ না দিয়ে বৈষম্যমুলক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে না পারলে যে মানসিক চাপ ও যন্ত্রনার শিকার হবে তার দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।
আতিকুর রহমান
ঝিনাইদহ।। -

সুজানগরে বর্ণা-ঢ্য আয়োজনে জাতীয় যুব দি-বস পালিত
এম এ আলিম রিপন, সুজানগর : প্রযুক্তি নির্ভর যুবশক্তি, বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্বে অগ্রগতি, এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে যুব র্যালি, শপথ পাঠ,আলোচনা সভা, প্রশিক্ষিত যুবক এবং যুব মহিলাদের মাঝে সনদপত্র ও ঋণের চেক বিতরণের মাধ্যমে পাবনার সুজানগরে পালিত হয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস-২০২৫।
মঙ্গলবার(১২ আগস্ট) বেলা ১১টায় বের হওয়া র্যালিটি পৌর শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে সুজানগর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ লুৎফর রহমানের সভাপতিত্বে ও উপজেলা সহকারী যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা আব্দুল গাফফারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবসের আলোচনা সভায় বৈষম্যহীন দেশ গড়তে যুব সমাজের দক্ষতার উপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুজানগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ বলেন, যুব সমাজ যে কোন দেশের উন্নয়নের প্রধান চালিকা শক্তি। তাদের মেধা,সৃজনশীলতা,সাহস ও প্রতিভাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠে একটি জাতির অর্থনৈতিক,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল। তাই দেশের যুবকদের মাদক, সন্ত্রাস, চঁাদাবাজি এবং ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ পরিহার করে প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে হবে ।
দেশের উন্নয়নের ধারায় সরকার যুব সমাজকে সম্পৃক্ত করেছে ব্যাপকভাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সুযোগ গ্রহণ করে নতুন বাংলাদেশ বির্নিমাণে যুব সমাজকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে যুব সমাজ নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সভাপতির বক্তব্যে সুজানগর উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ লুৎফর রহমান বলেন, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর দেশের যুব সমাজকে দক্ষ মানবসম্পদে উন্নীত করার লক্ষ্যে প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন কারিগরি ,বৃত্তিমূলক এবং কৃষিভিত্তিক বহুমুখী প্রশিক্ষণ প্রদান করে আসছে। যুবরাই দেশের প্রাণশক্তি। সবাই যুবদের ক্ষমতায়ন ও তাদের অধিকার রক্ষায় আরো বেশি সচেতন হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা বলেন,একটি জাতিকে এগিয়ে নিতে সর্বমহল থেকে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
অবৈধ উপায়ে অর্থ রোজগারের পথ পরিহার করে যুবদের দক্ষতাপূর্ণ আত্মনির্ভরশীল ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে বলে জানান। সুজানগর উপজেলা প্রশাসন ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আয়োজনে আলোচনা সভায় উপজেলা প্রকৌশলী মো.আসাদুন্নবী, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ জাহিদ হোসেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শামীম এহসান, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা শামীম হোসেন, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান পিন্টু, ছাত্র প্রতিনিধি আমির ফাহাদ, নাবিল হোসেন, নাজিম উদ্দিন মন্ডল ও দেলোয়ার হোসেন সাইদী খান প্রমুখ বক্তব্য রাাখেন। অনুষ্ঠানে স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। শেষে উপজেলার ১৫ জন যুব প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত যুবক এবং যুব মহিলাদের মাঝে ১৫ লাখ টাকার ঋণের চেক ও প্রশিক্ষণের সনদ বিতরণ করা হয়।
এম এ আলিম রিপন
সুজানগর(পাবনা)প্রতিনিধি।। -

ঝিনাইদহের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে দি-শেহারা কৃষক
ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতাঃ
ঝিনাইদহে টানা বৃষ্টিতে জেলার ছয়টি উপজেলার প্রায় সাড়ে ৭ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় জমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এতে ফসল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক কৃষক এখনো জমিতে নতুন করে ধান রোপণ করতে পারছেন না। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ঝিনাইদহের কৃষকরা। ঝিনাইদহ সদর, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, কালীগঞ্জ, হরিণাকু-ু ও শৈলকূপা উপজেলায় সবজি ক্ষেত, ধানের বীজতলা ও সদ্য রোপণ করা আমন ধান ডুবে গেছে। ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, জেলার ছয়টি উপজেলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের তেতুলতলা, বিষয়খালী, মহারজপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের জমিতে এখনো পানি জমে থাকায় নতুন করে ধান রোপণ করতেও পারছেন না।
সদর উপজেলার ভাদালিয়াডাঙ্গার কৃষক আনিছুর রহমান জানান আমদের মাঠে ধান বলতে আর কিছু নেই সব পানির নিচে তলিয়েগেছে। তিনি আরও বলেন কিছু মানুষ যারা বিলে পুকুর কেটে মাছ চাষ করছে তাদের জন্যও মাঠের পানি খাল দিয়ে বের হচ্ছে না যার ফলে মাঠে পানি জমেছে বেশি।
শৈলকূপা উপজেলার চড়িয়ারবিল গ্রামের আলমগীর হোসেন জানান, আমার ১০ কাঠা মরিচ, দশ কাঠা পটল, পাঁচ কাঠা বেগুন আবাদ ছিল। টানা বৃষ্টির কারণে সব পানির নিচে তলিয়ে আছে। পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছগুলো মরে যাবে। আমি এ ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে উঠব বুঝ
তে পারছি।কালীগঞ্জ উপজেলার তেতুলবাড়িয়া গ্রাামের কৃষক জাহিদ হাসান জানান, আমার ১০ কাঠা মরিচ ও ১০ কাঠা পটল পানিতে তলিয়ে আছে। পানি সরার সঙ্গে সঙ্গে গাছগুলো মরতে থাকবে। কোটচাঁদপুর উপজেলার গুড়পাড়া গ্রামের কৃষক শাহাজান আলী জানান, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে আমার এক বিঘা জমির ধান পানিতে ডুবে আছে। কম বেশি সব কৃষকের ক্ষতি হয়েছে। আমন ধান আদৌ ঘরে তুলতে পারব কি না জানি না।
মহেশপুর উপজেলার জলিলপুর গ্রামের মিজানুর রহমান জানান, আমার চার বিঘা জমির ধান পানির নিচেই তলিয়ে গেছে। আবারও নতুন করে ধানের চারা রোপণ করতে হবে। কিন্তু ধানের চারা পাব কোথায়।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্ঠি চন্দ্র রায় বলেন, ‘কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের সহায়তায় বাঁধ অপসারণের কাজ চলছে। বেশ কিছু জায়গায় সমস্যা সমাধান করা হয়েছে, বাকি অংশেও কাজ চলছে। যেখানে যেখানে বাঁধের কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল ইতিমধ্যে সেগুলো অপসারণ করা হয়েছে। বাকি সে সব বাঁধ এখনো অপসারণ করা হয়নি, সেগুলোও অপসারণের চেষ্টা করে যাচ্ছি।
আতিকুর রহমান
ঝিনাইদহ। -

দোয়ারাবাজারে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিব-স উপলক্ষে র্যালি ও আলো-চনা সভা অনুষ্ঠিত
দোয়ারাবাজার সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
প্রযুক্তি নির্ভর যুবশক্তি বহুপাক্ষিক অংশীদারিত্বে অগ্রগতি প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে, উপজেলা প্রশাসন ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আয়োজনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুবদিবস উপলক্ষ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।মঙ্গলবার (১২ আগষ্ট) সকাল ১১ টায়
উপজেলা পরিষদ হলরুমে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা প্রিয়ব্রত নাগ,
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরূপ রতন সিংহ। প্রথমে তিনি সবাইকে শপথ বাক্য পাঠ করান।
সহকারী যুব উন্নয়ন অফিসার আসাদ উল্যাহ’র সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন,
কৃষি কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ মহসিন, উপজেলা প্রকৌশলী মো.আব্দুল হামিদ উপজেলা শিক্ষা অফিসার পঞ্চানন কুমার সানা, সহকারী শিক্ষা অফিসার দীন মোহাম্মদ, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা এমদাদুল হক,
মৎস্য কর্মকর্তা তুষার কান্তি বর্মন
সমবায় কর্মকর্তা বিজিত রঞ্জন কর, দোয়ারাবাজার প্রেসক্লাবের যুগ্ম আহবায়ক ও সিনিয়র সাংবাদিক হারুন অর রশিদ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- উপজেলার বিভিন্ন সমবায় ও যুব সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।আলোচনা সভায় বক্তরা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান উত্তর তারুণ্যের জয়যাত্রাকে কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর যুবশক্তিকে মানবসম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে কর্মমুখী প্রশিক্ষণ, আত্মকর্মসংস্থান ঋণ, সংগঠনভিত্তিক স্বেচ্ছা ও সেবামূলক কাজে যুবদের সম্পৃক্তকরণে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কার্যক্রম অব্যাহত আছে। যুবরাই উন্নয়ন ও উৎপাদনের প্রধান হাতিয়ার। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ন্যায় বৈষম্য ও অন্যায়ের প্রতিরোধ যুদ্ধে বিজয়ী যুব সমাজকে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক কারিগরি প্রশিক্ষণ, প্রশিক্ষণোত্তর আর্থিক ও উপকরণ সহায়তার মাধ্যমে মানব সম্পদে পরিণত করার মহান ব্রত নিয়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কাজ করছে।
এসময় যুবসংগঠনের মধ্যে যুব ঋণের চেক, সাটিফিকেট, ও গাছের চারা বিতরণ করা হয়েছে। -

ধামইরহাটে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দি-বস পালিত
আবুল বয়ান: ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি:
নওগাঁর ধামইরহাটে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস পালিত হয়েছে। ধামইরহাট উপজেলা প্রশাসন ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আয়োজনে ১২ আগষ্ট মঙ্গলবার বেলা ১১টায় দিবসটি উপলক্ষে আলোচনা সভা, সনদ বিতরণ, পুরস্কার বিতরণ ও ঋণ বিতরণ করা হয়। উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে যুব ফোরাম সভাপতি জাহিদ ইকবাল ও সালমা খাতুন জুলির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান সরদার। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ভারপ্রাপ্ত) জেসমিন আক্তার। যুব সমাজের উদ্দেশ্যে উদ্দোক্তা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি সর্বোপরি সৎ ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ইউএনও জেসমিন আক্তার তরুন যুবকদের আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে যুব দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরে আরও বক্তব্য প্রদান করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তৌফিক আল জুবায়ের, উপজেলা শিক্ষা অফিসার রবিউল ইসলাম, ওসি ইমাম জাফর, সমাজসেবা কর্মকর্তা এ টি এম ফসিউল আলম, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বেদারুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ, ছাত্র প্রতিনিধি রিফাতুল হাসান চৌধুরী সৈকত, আলমগীর হোসেন আরাফ, সফল সংগঠক নূর ইসলাম, বিভিন্ন যুব সংগঠনের প্রতিনিধিগণ। শপথ বাক্য পাঠ করান যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান সরদার। আলোচনা শেষে গাভী ও গবাদি পশু পালনের জন্য ৪ জনকে বিভিন্ন অংকের মোট ২লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ঋণের চেক প্রদান এবং সফল যুব সংগঠক নূর ইসলাম, জাহিদ ইকবাল ও রাসেল মাহমুদকে সম্মননা ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়।