February 5, 2025, 6:35 am
হেলাল শেখঃ ঢাকার প্রধান শিল্পা ল আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের নরসিংহপুরে প্রায় দুই শতাধিক বাসা বাড়ি ঘরের ভেতরে দূষিত পানিতে বেহাল অবস্থা। একদিকে ড্রেনের ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, অন্যদিকে অপরিকল্পিত বাড়ি ঘর ও কল কারখানা নির্মাণ করায় রাস্তায় পানি ছেড়ে দেয়ায় রাস্তার বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার শ্রমিকসহ জনগণের চরম ভোগান্তি হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীরা জানায়। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে একাধিকবার মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা তবুও কোনো ফায়দা হয়নি বলে অনেকেই অভিযোগ করেন।
মঙ্গলবার (১ নভেম্বর ২০২২ইং) সকাল ৮টার দিকে ঢাকার আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকাবাসী একটি মানববন্ধন করেন, মানববন্ধনে ঢাকা থাই লিমিটেডের দূষিত পানি বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন স্থানীয়রা। অন্যদিকে আশুলিয়ার বিভিন্ন সড়কের দুইপাশের ফুটপাত হকারদের দখলে রয়েছে আর ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে, পাশে সরকারি নয়নজুলি খালটিও প্রভাবশালিদের দখলে রয়েছে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
দেখা যায়, আশুলিয়ার জামগড়াসহ বেশিরভাগ রাস্তার পাশে বাঁশের মাচাল দিয়ে রেখেছে ড্রেনের উপর। মহাসড়ক ও শাখা রোডগুলোর বেশ কয়েকটি রাস্তায় মানুষের চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রায় বেশিরভাগ রাস্তার বেহাল অবস্থা। অন্যদিকে সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে অপরিকল্পিত ভাবে বাড়ি ঘর নির্মাণসহ সরকারি রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে রেখেছে প্রভাবশালীরা, কিছু মার্কেটের মালিকরাও হকারদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে থাকেন দালাল চক্র। দেখা যায়, জামগড়া পল্লীবিদ্যুৎ জোনাল অফিসের আওতায় অবৈধ ভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা এ বিষয়ে এড়িয়ে যান, আর সংশ্লিষ্ট প্রশাসন নিরব ভুমিকায় থাকার কারণে এলাকাবাসী নাগরিক সুবিধা থেকে বি ত হচ্ছেন বলে অনেকেই অভিমত প্রকাশ করেন। কেউ কারো খবর রাখে না বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নানারকম ভাবে দোষ দিচ্ছেন অনেকেই।
এ বিষয়ে আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ আব্দুল জলিল (রাজন) বলেন, আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখছি এলাকায় অপরিকল্পিত বাসা বাড়ি করা হয়েছে, ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই, সেই সাথে পানি যাওয়ার যায়গা না থাকায় সমস্যা হচ্ছে, আর নয়নজুলি খালটি উদ্ধার করা না হলে আশুলিয়ার নরসিংহপুরসহ পুরো আশুলিয়ার বাড়ি ঘর রাস্তায় পানি জমে থাকবে সবসময়। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ সবার সহযোগিতা চেয়েছেন এ ব্যাপারে।
এ ব্যাপারে ঢাকা থাই লিমিটেডের এডমিন জিএম ফিরোজ সাহেব বলেন, আমাদের কোনো সমস্যা নেই, একাধিক পোশাক কারখানার দূষিত পানি গিয়ে এলাকার বাসা বাড়িতে ডুকে পড়ে এই অবস্থা হয়েছে, তিনি বলেন, রাজন মেম্বার এই এলাকায় এসে পরিদর্শন করেছেন। আমাদের করার কিছু নেই।
এ ব্যাপারে ইয়ারপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার হাজী হালিম মৃধা বলেন, আশুলিয়ার বাইপাইল থেকে জিরাবো সড়ক, জামগড়া-বাগবাড়ি রোড, জামগড়া-মধ্যপাড়া থেকে শাহজাহান মার্কেট পর্যন্ত এবং জামগড়া হিয়ন মোড় থেকে মনির মার্কেটের রাস্তার মুখ পর্যন্ত, জামগড়া-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রোড ও মোল্লাবাড়ি রোডসহ বিভিন্ন রোডের পাশে অনেকেই অপরিকল্পিত ভাবে বাড়ি ঘর উঁচু করে নির্মাণ করায় রাস্তা নিচু হয়ে যায়। এর কারণে সবসময় রাস্তায় পানি জমে থাকে। সেই সাথে এলাকার কিছু বাড়ি ও পোশাক কারখানার ময়লা পানি রাস্তায় ছাড়ায় প্রায় সবসময় নিচু রাস্তায় সেই পানি জমে থাকে। রাস্তা দেখে মনে হয় ড্রেনের মতো, জমে থাকা ময়লা পানি গাড়ির চাকায় ঢেউ খেলে রাস্তায়। বৃষ্টি না হলেও রাস্তায় পানি জমে থাকে আর বৃষ্টি হলেতো রাস্তায় হাটু পানি হয় বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, আশুলিয়া থানা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন আহমেদ ভুঁইয়ার সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম খাঁন (লিটন) বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান ও উপজেলা প্রশাসনকে এলাকার সমস্যার বিষয়ে জানানো হয়েছে, তারা নয়নজুলি খাল ও রাস্তা পরিদর্শন করলেও কোনো কাজ হয়নি। তিনি আরও বলেন, রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে আমরা যারা নামাজের সময় মসজিদে আসা যাওয়া করি আমাদের নানারকম সমস্যা হয়, এর সমাধান করার কেউ নেই। তিনি আরও বলেন, এলাকার মসজিদের সাথে সংযুক্ত রাস্তা নির্মাণ কাজ করাসহ ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হলে এবং নয়নজুলি খালটি উদ্ধার করা হলে এই সমস্যার সমাধান হবে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সাংবাদিক সংস্থা’র ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও আশুলিয়া সাংবাদিক সমন্বয় ক্লাবের সভাপতি সাইফুল ইসলাম জয় (হেলাল শেখ) বলেন, বর্তমান সরকার পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন এর জন্য ধন্যবাদ, কিন্তু আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের জামগড়াসহ বিভিন্ন রাস্তার বেহাল অবস্থা, ড্রেনেজ ব্যবস্থাও ভেঙ্গে পড়েছে। শত বছরের সরকারি নয়নজুলি খালটিও উদ্ধার হয়নি। বিশেষ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান, ঢাকা-১৯ আসনের এমপি’র এলাকা এটি কিন্তু এই এলাকায় রাস্তার বেহাল অবস্থা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ছে, বৃষ্টি না থাকলেও রাস্তায় নোংরা পানি থাকে সবসময়, এই সমস্যা দেখবে কে? এ ব্যাপারে এলাকার কয়েক লক্ষ শ্রমিক ও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে প্রতিমন্ত্রী’র হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ এনামুর রহমান বলেছেন, এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিসহ দলীয় নেতা কর্মীরা সহযোগিতা করলে নয়নজুলি খালটি উদ্ধার করা হবে, সেই সাথে ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা যাবে, তাহলে রাস্তার বেহাল অবস্থা আর থাকবে না। তিনি আরও বলেছেন, চলমান রাস্তার কাজ করা হচ্ছে, সরকার উন্নয়নমূলক কাজ করছে। তিনি আরও বলেছেন, উন্নয়নমূলক যেকোনা কাজে আপনাদের পাশে আমি আছি, থাকবো।