মোংলায় ৭ম শ্রেণীর শিশু ধর্ষণ, পাশের একটি চিংড়ি ঘেরের বাসায় ডেকে নিয়ে যায় যুবক

মোংলা প্রতিনিধি।
মোংলায় ৭ম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক শিশু শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে রাস্তা থেকে ডেকে ওই শিশুকে পাশের একটি চিংড়ি ঘেরের বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করেন মুসা খাঁন নামের এক যুবক। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন শিশুটির পিতা।
ভুক্তভোগী পরিবার, এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, উপজেলার চাঁদপাই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাকড়ঢোন গ্রামের বাসিন্দা মোঃ সাইফুল খাঁন ওরফে সাইফুল মুহুরির বাড়ীতে গত তিন দিন আগে বেড়াতে আসেন তার ছেলে মিঠু খাঁনের শ্যালক মুসা খাঁন (২০)। ওই শিশুটি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার দাদা বাড়ী থেকে নিজ বাড়ী যাওয়ার পথিমধ্যে সাইফুল মুহুরির বাড়ীর সামনে পৌঁছালে সাইফুলের বাড়ীতে বেড়াতে আসা পুত্রা (ছেলের শ্যালক) মুসা খাঁন একই গ্রামেরই সেকেন্দার খাঁনের ছেলে আহাদ খাঁনের সহায়তায় ডেকে পাশের একটি চিংড়ি ঘেরের বাসায় নিয়ে যায়। সেই ফাঁকা বাসায় নিয়ে ওই শিশুটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন মুসা। তখন শিশুটির চিৎকার শুনে ঘেরের বাসার পাশের বাড়ীর হালিমা বেগম সেখানে ছুটে যান। হালিমা বেগমকে যেতে দেখে মুসা সেখান থেকে সরে পড়েন। পরে ওই শিশুটিকে সেখান থেকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করে হালিমা বেগম দুপুর ১২টার দিকে তার বাড়ীতে নিয়ে গিয়ে শিশুর পরিবারকে খবর দেন। খবর পেয়ে তার বাবা-মা শিশুটিকে নিয়ে দুপুর ১টায় থানায় যান। এরপর থানা থেকে বিকেল ৩টায় শিশুটির চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায় পুলিশ। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বিকেলেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আফসানা নাঈমা হাসান বলেন, শিশুটিকে এখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ রোগীর পরবর্তী যে চিকিৎসা, ডিএনও পরীক্ষা ও মানসিক সাপোর্টের প্রয়োজন সেই ব্যবস্থা আমাদের এখানে নেই। প্রয়োজনীয় উপযুক্ত চিকিৎসার জন্য রোগীকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। মোংলা থানার এসআই মোঃ নুরে আলম বলেন, শিশুটির পরিবার আমাদের শরণাপন্ন হলে দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই, পরে তাকে খুলনায় রেফার করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এ শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, এখনও মামলা হয়নি, মামলা হলে তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিশুটির পিতা বলেন, ধর্ষণের শিকার আমার মেয়েটিকে নিয়ে থানায় যাওয়ার পথিমধ্যে তিন জায়গায় আমাকে আটকাতে বাঁধার সৃষ্টি করেন সাইফুল মুহুরি ও তার ড্রাইভার বাবু শেখ। প্রথমে মাকড়ঢোন রাস্তায় তারপর কুমারখালী ব্রিজের কাছে আমাকে আটকে থানায় যেতে নিষধ করেন তারা। সেখান থেকে চলে আসলে পৌর শহরের রিমঝিম সিনেমা হলের সামনে আবারো আমাকে আটকায় সাইফুলের সহযোগী জুলফিকার মল্লিক। সকল বাঁধা উপেক্ষা করে মেয়েকে থানায় নিয়ে যাই। সাইফুল মুহুরি ও তার লোকজন আমাকে পথে আটকে বিষয়টির মিমাংসার কথা বলেন। কিন্তু আমি মিমাংসায় রাজি হয়নি। আমার মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় আমি মামলা করবো, বিকেল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত থানায় বসে আছি মামলা দেয়ার জন্য। আর মেয়েটিকে খুলনায় পাঠানো হয়েছে। শিশুটির পিতা পেশায় ইজিবাইক চালক। তার দুই মেয়ের মধ্যে এ মেয়েটি ছোট। এদিকে ধর্ষণের এ ঘটনায় উভয় ছেলে-মেয়েক বিয়ে দিয়ে মামলা ঠেকানোর অপতৎপরতা চালানোর অভিযোগ উঠেছে সাইফুল মুহুরির বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে সাইফুল খাঁন বলেন, বিষয়টি নিয়ে মিমাংসার চেষ্টা চলছে। বিয়ে দিয়ে দেয়ার জন্য মেয়ের পরিবারের সাথে কথা চলছে। মেয়েটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক বিয়ে দেয়া সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখি চেষ্টা করে কি করা যায়। অভিযুক্ত মুসা পিরোজপুর জেলার মঠবাড়ীয়া উপজেলার বড় মাছুয়া গ্রামের আব্দুল হাকিম খাঁনের ছেলে। এ ঘটনার পর থেকে মুসা পলাতক রয়েছে। মোংলা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, ধর্ষণের খবর পাওয়া মাত্রই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি ও অভিযুক্তকে গ্রেফতারের কার্যক্রম চলছে বলে জানান তিনি।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *