মুন্সিগঞ্জে নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একই স্টেশনে দীর্ঘ ২৭ বছর : নেপথ্যে ‘অ-দৃশ্য শক্তি’

লিটন মাহমুদ,
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

সরকারি চাকরির বিধি অনুযায়ী সাধারণত এক স্টেশনে তিন বছরের বেশি থাকার নিয়ম নেই। অথচ এই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে একই উপজেলায় শিকড় গেড়ে বসে আছেন এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা। সম্প্রতি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকে বদলি করলেও অদৃশ্য এক শক্তির ইশারায় রহস্যজনকভাবে সেই আদেশ স্থগিত করা হয়েছে।

দীর্ঘ সময় একই স্থানে কর্মরত থাকায় তিনি গড়ে তুলেছেন অনিয়ম ও দুর্নীতির নিজস্ব সিন্ডিকেট। এমন পরিস্থিতিতে অফিসের অন্য কর্মচারী ও সাধারণ সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায়। অভিযুক্ত ওই প্রশাসনিক কর্মকর্তার নাম মোহাম্মদ বশির আহমেদ লস্কর।

জানা যায়, ১৯৯৮ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ২৭ বছর মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন মোঃ বশির আহমেদ লস্কর। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগ থেকে তাকে নতুন কর্মস্থলে একাধিকবার বদলি করা হয়। দীর্ঘ আড়াই যুগের জঞ্জাল সরবে এমন আশায় স্থানীয়রা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন। কিন্তু বদলি আদেশের কয়েক দিনের মাথাতেই তা স্থগিত করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, মোটা অংকের অর্থের লেনদেন এবং ওপর মহলের শক্তিশালী লবিং ব্যবহার করে তিনি বদলি আদেশ স্থগিত করাতে সক্ষম হয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ২৭ বছর একই চেয়ারে থাকার সুবাদে তিনি অফিসটিকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করেছেন। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো যেকোনো ফাইলের ছাড়পত্র বা স্বাক্ষর নিতে হলে তাকে নির্দিষ্ট হারে ঘুষ দিতে হয়। টাকা ছাড়া তিনি কোনো ফাইলের কাজ করেন না।

স্থানীয় দালাল চক্রের সাথে তার গভীর সখ্যতা রয়েছে। সাধারণ মানুষ সরাসরি সেবা নিতে গেলে হয়রানির শিকার হন, অথচ দালালদের মাধ্যমে গেলে দ্রুত কাজ হয়।

দীর্ঘদিনের দাপটে তিনি অধস্তন কর্মচারীদের সাথে অসিদাচরণ করেন। তার ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পান না।
অফিসের বিভিন্ন কেনাকাটা ও সংস্কার কাজের ভুয়া ভাউচার বানিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সরকারি দিবসে এ উপজেলায় সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকাশ্যে চাঁদা তোলার প্রমাণ রয়েছে। কুরবানীর ঈদে হাট-বাজার থেকে প্রকাশ্যে চাঁদা তোলার প্রমাণ রয়েছে। অবৈধ ড্রেজার এবং মাটি কাটা কাটা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার কথা অনেকেই বলেছেন। সরকারি জমি নিজের নামে লিজ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছেসহ বহু অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই অফিসের এক কর্মচারী বলেন, “বদলির খবর শুনে আমরা মিষ্টি খেয়েছিলাম। কিন্তু স্যার আবারও আদেশ স্থগিত করে ফিরে এসেছেন। এখন তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তার খুঁটির জোর কোথায়, আমরা জানি না।”

সেবা নিতে আসা এক ভুক্তভোগী বলেন, “সামান্য একটি কাজের জন্য তিনি আমাকে মাসের পর মাস ঘুরিয়েছেন। শেষে দাবিকৃত টাকা দেওয়ার পর কাজ হয়েছে। ২৭ বছর এক লোক কীভাবে এক জায়গায় থাকে, এটা আমার বোধগম্য নয়।”

এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ বশির আহমেদ লস্কর এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়ার পরেও তিনি কল রিসিভ করে নাই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুম্পা ঘোষ বলেন, আমি এ উপজেলায় যোগদান করেছি কিছুদিন হয়। এ বিষয়ে সঠিক তদন্ত করা হবে ওনি অভিযুক্ত হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রশাসনিক কারণে বদলি আদেশ স্থগিত হতে পারে। তবে তার বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

একই স্থানে দীর্ঘকাল থাকার ফলে প্রশাসনিক স্থবিরতা ও দুর্নীতির যে পাহাড় জমেছে, তা নিরসনে অবিলম্বে এই কর্মকর্তার বদলি কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহল##

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *