পাইকগাছার একমাত্র সরকারি পাঠাগারটি এখন ধ্বং-সের দ্বার-প্রান্তে

ইমদাদুল হক,পাইকগাছা(খুলনা)।।
পাইকগাছা উপজেলার একমাত্র সরকারি পাঠাগারের অবস্থা এখন জরাজীর্ন।বেহাল অবস্থার কারনে এখন পাঠকরাও কম আসেন। প্রতিদিন পত্রিকাও রাখা হয় না। অব্যবস্থাপনা ও তদারকির অভাব, পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাব এবং কর্তৃপক্ষের অনাগ্রহের কারণেই পাঠাগারের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পাঠাগারে হাতে গোনা কয়েকটি টেবিল—চেয়ার ও আলমারি ছাড়া বাকি সব আসবাবপত্রের অবস্থা ভঙ্গুর। নতুন কোন বই নেই। ধুলোবালি আর অযত্ন অবহেলায় রয়েছে পাঠাগার। দেয়ালের রঙ চটা অবস্থা আর বিভিন্ন স্থানে ধরেছে ফাটল। পাঠাগারের ভবন ফেটে পানি পড়ে এবং জানালা—দরজাও প্রায় সব ভাঙ্গা অবস্থায় রয়েছে।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময় উপজেলার এই পাঠাগারে বই পড়তে ভিড় জমাতেন ছাত্র—ছাত্রী, চাকরিপ্রার্থী ও সাধারণ পাঠকরা। এখন মাত্র হাতে গোনা ৫—৬ জন চাকরি প্রত্যাশীরা এই লাইব্রেরীতে আসেন। পূর্বে স্থানীয় এবং জাতীয় অনেক পত্রিকা রাখা হতো। কিন্তু এখন পত্রিকাও আসে না। শিক্ষার্থীদের আনা গোনাও অনেকটা কমে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে পাঠাগারটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। একসময়ের পাইকাগাছা উপজেলার জ্ঞান চর্চার কেন্দ্র এখন কেবল মাত্র নামেই টিকে আছে। কিন্তু এমন বেহাল অবস্থায় থাকলে আর কিছুদিন পর পাঠাগারের নাম মানুষ ভুলে যাবে। প্রত্যেক বছর এই পাঠাগারের জন্য সরকার কর্তৃক একটি বাজেট দেওয়ার কথা থাকলেও আদৌ কাজ হয় না।
স্থানীয় বাসিন্দা বিজয় সানা জানান, কয়েকবছর আগেও এই লাইব্রেরীতে বহু ছাত্র—ছাত্রী পড়াশোনা করার জন্য আসতো। এখন উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, স্যোশাল মিডিয়া, নতুন বইয়ের কালেকশন, প্রচার প্রচারণা এই লাইব্রেরীতে না থাকার কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে পাঠাগারের গুরুত্ব। তিনি আরও বলেন, পাঠাগারকে সচল করতে হলে অবিলম্বে ভবন সংস্কার, নতুন বই সংযোজন আধুনিক সুযোগ—সুবিধা চালু করতে হবে নইলে তরুণ প্রজন্ম বই থেকে আরও দূরে সরে যাবে।
শিক্ষার্থী জোবায়ের ইসলাম বলেন, বর্তমানে তরুণ প্রজন্ম ডিজিটাল মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের বেশি আগ্রহী। ফলে প্রযুক্তিহীন লাইব্রেরীর কদর কমে গেছে। ডিজিটাল লাইব্রেরী থাকলে পাঠক সহজেই ই—বুক প্রবন্ধ ও গবেষণা ডাটাবেজ ব্যবহার করতে পারতো। এছাড়াও তথ্য সংগ্রহের অনেক সময় নষ্ট করতে হয়। কিন্তু ডিজিটাল প্রযুক্তি থাকলে সময় কম লাগে। তিনি আরো বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার একটি আধুনিক লাইব্রেরীর অপরিহার্য অংশ। শিক্ষা গবেষণায় সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে অবিলম্বে লাইব্রেরির ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগ জরুরি। একই সাথে বই সংরক্ষনেরও প্রয়োজন রয়েছে। বই পড়লে মানষিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
চাকরি প্রত্যাশী শিক্ষার্থী তানজিলা আক্তার বলেন, একটি উপজেলায় লাইব্রেরী থাকলে অনেক গরিব শিক্ষার্থী লাইব্রেরী থেকে পড়াশোনা করতে পারেন। অনেকের বই ক্রয়ের সামর্থ্য নেই, যার কারণে অনেক সময় তাঁদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। তবে উপজেলার লাইব্রেরীতে নতুন নতুন বইয়ের সংগ্রহ থাকলে সকলে সুবিধা পাবেন।
পাইকগাছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াহাব বলেন, উপজেলার এই পাঠাগারটি এখন জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। সর্বপ্রথম পাঠাগার সংস্কার করতে হবে। পাঠাগারে বর্তমানে পাঠকের সংখ্যা নেই বললে চলে। একটা সময় দেখেছি এই পাঠাগারে পাঠকরা ভিড় জমাতেন। তিনি আরো বলেন, উন্নত প্রযুক্তির যুগে এখন সকলের কাছে অ্যান্ড্রয়েড ফোন থাকায় পাঠাগারে আসার আগ্রহ অনেকের নেই বললেই চলে। ইচ্ছা করলে ফোনের মাধ্যমে সব দেখতে পায়। তবে পাঠাগার সংস্কার এবং আধুনিকায়ন করলে পাঠকরা আকৃষ্ট হবে। একটা সময় দেখেছি সেখানে অনেক পত্রিকা পাওয়া যেতো। পাঠকরা পত্রিকা এবং চাকরি প্রত্যাশীরা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখতেন পাঠাগারে এসে। কিন্তু এখন বন্ধ রয়েছে সব। দুই একটা পত্রিকা নেওয়া হয় লাইব্রেরীতে। তিনি উল্লেখ করে বলেন, সব ধরনের পত্রিকার ব্যবস্থা করতে হবে এবং নতুন নতুন বই যোগ করতে হবে। তাহলে আস্তে আস্তে আবারো পাঠকরা এই লাইব্রেরীতে আসবেন।
এ বিষয়ে কথা হয় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যুৎ রঞ্জন সাহার সাথে। তিনি বলেন, আমি অনেক আগে দেখেছি এই লাইব্রেরীতে অনেক পাঠক আসতো কিন্তু এখন মাত্র কয়েকজন পাঠক আসেন। এখন কেন পাঠকরা এই লাইব্রেরীতে কম আসেন, তা আমাদের আগে খুঁজে বের করতে হবে। এছাড়াও পাঠকের চাহিদা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এখন উন্নত প্রযুক্তির যুগে সব কিছু মানুষ খুব সহজেই মোবাইল, কম্পিউটারে দেখতে পাচ্ছেন। পাঠকরা চাইলে তারা মূহুর্তের মধ্যে গুগলের মাধ্যমে সার্চ করে পড়তে পারেন। তিনি বলেন, এই লাইব্রেরীতে যদি ডিজিটাল সিস্টেমের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে নতুন প্রজন্মের জন্য সুবিধা হবে। তিনি আরো বলেন ডিজিটাল প্রযুক্তির পাশাপাশি নতুন নতুন বইয়ের সাথে পাঠকের পরিচয় করানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
পাইকগাছা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাহেরা নাজনীন বলেন, আমরা পাঠাগারের কার্যক্রম পুনর্জীবিত করার পরিকল্পনা নিচ্ছি। পাঠাগার কেবল বই রাখার স্থান নয়, এটি মানুষের চিন্তা চেতনা ও মানবিকতার বিকাশের জায়গা। উপজেলার পাঠাগারের অবস্থা উন্নয়নের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে নতুন বই, আসবাবপত্র, ডিজিটাল সুবিধার সংযোজন এর উদ্যোগ নেওয়া হবে। যাতে তরুণরা বইয়ের গন্ধে ফিরে আসে। পাশাপাশি পাঠাগারটি সিসি ক্যামেরার আওয়াতায় এনে নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হবে।

ইমদাদুল হক,
পাইকগাছা খুলনা।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *