রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলীঃ মসজিদ-মক্তবে কুরআন শিক্ষা হলো একটি ঐতিহ্যবাহী ব্যবস্থা যেখানে শিশুরা মসজিদ বা অনুরূপ স্থানে একত্রিত হয়ে কুরআন তেলাওয়াত, আরবি ভাষা, এবং ইসলামিক মূল্যবোধ শেখে। এটি সাধারণত ছোট শিশুদের জন্য প্রথমিক ইসলামি শিক্ষার একটি মাধ্যম, যা তাদের নৈতিক ও ধর্মীয় ভিত্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
দু যুগ আগেও ছেলে মেয়ে স্কুল, কলেজ মাদ্রাসাসহ যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়া লেখা করুক না কেন? অভিভাবকগণ তার ছেলে মেয়ে বাড়ী পাশ্ববর্তী মসজিদে হুজুরের হতে কুরআন শিক্ষা, দুয়া, কালাম গ্রহন করতে বাধ্য করতেন। বিনিময়ে হুজুরকে সপ্তাহে দেয়া হতো বাড়ী বাড়ী উঠানো মুষ্ঠির চাউল।বয়স্ক লোকজনও কুরআন শিক্ষা গ্রহন করতেন। এখন এগুলি রুপকথার গল্প। কোন মসজিদ কতৃপক্ষ আগ্রহ দেখালো, শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না কোচিং, প্রাইভেট বানিজ্যের কারণে।
আগেও খুব ভোরে প্রতিটি বাড়ি থেকে ছেলে মেয়েরা দল বেধে বুকে আমপারা বা কোরআন অত্যন্ত উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে আরবি শিক্ষা নিতে যেত, দুয়া কালাম, আযান দেয়া, সালাম দেয়া, বাবা, মা, বয়স্কদেরকে শ্রোদ্ধা, সালাম কালাম করা শিখাতেন এবং আসার সময় মক্তব থেকে প্রফুল্ল মনে বাড়ি ফিরত। গ্রামাঞ্চলেতো বটেই শহরাঞ্চলেও এই দৃশ্য দেখা যেত। যা প্রত্যেক শিশুদের জন্য সারা জীবনের প্রাপ্তি হয়ে থাকতো।
কিন্তু বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এবং কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের চাপে সেই স্মৃতি এখন অতীত। এখন শহরেতো নেই বরং গ্রামাঞ্চলেও উঠে গেছে মসজিদ, মক্তবে গিয়ে ধর্মীয় শিক্ষা নেওয়ার প্রবণতা নেই। কোচিং, প্রাইভেট বানিজ্য তবে এই বন্ধাত্বতাকে কাটিয়ে উঠে কিছুটা হলেও সেই ঐতিহ্য ধরে রেখেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম।
মহিশালবাড়ী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সাবেক ইমাম ও মহিশালবাড়ী শাহ সুলতান (রহ.) কামিল মাদ্রাসার আরবী বিভাগের অধ্যাপক মোঃ দুরুল হোদা বলেন, আরবি শিক্ষা অর্জনকারী, কোন ব্যক্তি তার বৃদ্ধ বাবা মা কে রেল স্টেশনে ফেলে রেখে আসেন না। বাড়ী থেকে বের করে দেন না। সেবা বঞ্চিত করেন না।
সত্যি কথা বলতে আমরাও ছোট বেলায় পাশ্ববর্তী মসজিদের মক্তবে আমপারা এবং কোরআন শিক্ষা নিয়েছি এবং সেখানেই নামাজ শিক্ষা থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব কিছু শিখেছি যা এখনো আমাদের মনে গেথে আছে। তবে বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায়, কোচিং, প্রাইভেট, কেজি স্কুল সকালে হওয়ার কারণে আর ছেলে মেয়েরা মসজিদ, মক্তবমূখি হয় না, তাই এখন অভিবাবকগণ আগেরমত শিশুদের মক্তবে পাঠায় না বরং ভোরে কিন্ডার গার্ডেন, প্রাইভেট, কোচিং হাত ধরে নিয়ে যায়। ফলে ধর্মীয় শিক্ষার অভাব রয়ে যাচ্ছে। তবে আমি দেখেছি ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক বেশ কিছু মসজিদে বিনামূল্যে কোরআন শিক্ষা বা মক্তব্যের ব্যবস্থা করেছে সেখানও উপস্থিতি কম। এযদিও এই কার্যক্রম সব মসজিদে নেই আমি মনে করি এটা সব মসজিদে করা দরকার।
গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিশালবাড়ী জামে মসজিদের ঈমাম মাসুদ রানা বলেন, ছোটবেলায় যে, শিক্ষা মানুষ পায় সেটা কখনো ভুলেনা। তাই ছোট বেলা থেকে সঠিক ধর্মীয় শিক্ষা দিতে পারলে মানুষ বিপদগামী হওয়ার সম্ভবনা কম। মসজিদ কতৃপক্ষ ও আমি ব্যক্তিগত ভাবে এ মসজিদে কুরআন শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করে বার বার ব্যর্থ হচ্ছি। আভিভাবকগণ তার ছেলে মেয়েদের মসজিদে পাঠাতে যাচ্ছেন না। ২৫/৩০ ছেলে ছেলে মেয়ের বেশি পাওয়া যাচ্ছে না।
তবে অনেক অভিভাবকগণ মনে করেন সকাল বেলায় প্রাইভেট, কোচিং, কেজি স্কুলগুলোর সময় পরিবর্তন করা দরকার। কারণ সেই সময়ে যদি শিশুদের মসজিদে মসজিদে ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা যায় তাহলে খুবই ভাল হতো। আর স্বল্প সংখ্যক মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এই গণশিক্ষা কার্যক্রম চলছে এটা খুবই ভাল দিক, এর মাধ্যমে এখনো গ্রামে অনেক ছেলেমেয়ে বিনাপয়সায় কোরআন শিক্ষা পাচ্ছে তাই এর পরিধি আরো বাড়ানো দরকার।
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক ফয়সাল আহমেদ বলেন, মসজিদে, মক্তব্য কুরআন শিক্ষা দিন দিন কমে যাওয়া আমাদের জন্য কষ্টকর। আমরা এখান থেকে প্রথম ইসলামের জ্ঞান অর্জন করি। শুদ্ধভাবে সুরা-কেরাত পড়ার যোগ্যতা অর্জন, বিশুদ্ধভাবে নামাজ আদায়ের মাসয়ালা শেখানোর সঙ্গে সঙ্গে অজু, গোসল, তায়াম্মুম, দোয়া-দরুদ, কালেমা, নামাজ, রোজা, মৃত ব্যক্তির গোসল, কাফনের কাপড় পরানো, দাফন করার নিয়মসহ বিভিন্ন বিষয় শেখানো হয়। এ সসজিদ মক্তব ব্যবস্থা শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত আছে।
আলেমগণসহ সচেতন মহল মনে করেন, শিশুদের ইসলামি জ্ঞান, কুরআনের জ্ঞান না থাকার কারণে শিশু, কিশোরগণ বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতায় জড়িয়ে পড়ছে। পৃর্বের মত মসজিদে মসজিদে কুরআন শিক্ষা চালু করা প্রয়োজন। এব্যপারে প্রধান উপদেষ্টা, ধর্মীয় উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মোঃ হায়দার আলী
রাজশাহী।
Leave a Reply