মশার য-ন্ত্রণায় অতি-ষ্ঠ গোদাগাড়ী পৌরসভাবাসী

রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলী।। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে রাজশাহী গোদাগাড়ী পৌরসভার মানুষের জীবন যাপন। পৌর এলাকায় যেন রাজত্ব কায়েম করছে মশা।

সে সাথে যোগ হয়েছে বিদ্যুতের লোড শেডিং মশার অত্যাচারে রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে ওঠছে জনজীবন। মশার উপদ্রব এতটায় বৃদ্ধি পেয়েছে যে, সন্ধ্যায় বসতবাড়ির দরজা-জানালা খোলা যাচ্ছে না। এ সন্ধ্যায় কোনো স্থানে স্থির হয়ে বসা তো দূরের কথা, দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চতুর্দিকে মশা আক্রমণে নামে।
মসজিদ, বাসা-বাড়ি, স্কুল-কলেজ, অফিস হাট-বাজার, রাস্তাঘাট সর্বত্র মশার যন্ত্রণা থেকে স্বস্তি পাচ্ছে না পৌরবাসী। শুধু সন্ধ্যা বা রাতে নয় বরং প্রতি মুহূর্তে চলছে, এদের অবিরাম অত্যাচার। কয়েল, মশক নিধন ব্যাট, স্প্রে ব্যবহার করেও মশার আক্রমণ থেকে শতভাগ মুক্তি মিলছে না।

পশ্চিম আকাশে সূর্য্য ডুবার সাথে সাথে মশা ঝাঁকে ঝাঁকে আক্রমন করে। মশা থেকে রক্ষা পাবার জন্য অনেকে মশরীর মধ্যে অবস্থান করতে হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠার তিন যুগ পেরিয়ে গেলেও রাজশাহীর প্রথম শ্রেণীর গোদাগাড়ী পৌরসভাবাসী নূন্যতম নাগরিক সুবিধা হতে বঞ্চিত। ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে গোদাগাড়ী পৌরবাসী চরম অসুবিধা, দুর্ভোগ আর যন্ত্রনার মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করছেন। আর এর প্রধান, প্রধান কারন বিভিন্ন সময়ে পৌর মেয়রেদের এমপির সাথে বিরোধ, ব্যপক অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করন, টেন্ডারবাজি করে সরকারী রাজস্ব লুটপাট করা আর উন্নায়ন বৈষম্য স্বীকার পৌরবাসীকে আশার আলো দেখিয়ে গেছেন সাবেক পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল হায়াত। এখন দেখাচ্ছেন
বর্তমান পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী ফয়সাল আহমেদ।
সাবেক প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আবুল হায়াত ও ফয়সাল আহমদের নির্দেশনা পৌরসভার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে যা অব্যাহতভাবে চলছে। এধরনের কার্যক্রমে পৌরবাসী দারুন খুশি।
তারা বকেয়া করসহ নিয়মিত কর পরিশোধ করছেন।

স্থানীয়রা জানান, পৌরসভার অধিকাংশ সড়কের পাশে উন্মুক্ত ড্রেন, পৌর এলাকার যত্রতত্র বর্জ্য-আবর্জনা ফেলা এবং পরিকল্পিত ড্রনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে মশার উপদ্রব বেড়েছে। দিনের বেলায়ও অফস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়িতে কয়েল জ্বালিয়েও রক্ষা হচ্ছে না তাদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, ২৮ দশমিক ২৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে ১৫টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত লক্ষ্মীপুর পৌরসভা। প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভায় প্রায় দেড় লাখ মানুষের বসবাস। পৌরসভার অধিকাংশ সড়কের পাশে উন্মুক্ত ড্রেন। ময়লা-আবর্জনা পূর্ণ পানিতে জন্ম নিচ্ছে মশা। এতে করে লক্ষ্মীপুর পৌরসভা এখন যেন মশার স্বর্গরাজ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পৌরসভার প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ ড্রেন লাইনের অধিকাংশ স্থানেই রয়েছে ঢাকনা খোলা। এসব খোলা ড্রেনে ময়লা-আবর্জনা ফেলায়, তা পচে একদিকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, অন্য দিকে প্রজনন হচ্ছে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন জীবাণুবাহী মশার। আর এ মশার অত্যাচারে এখন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন পৌরবাসী।
পৌর বাসিন্দাদের অভিযোগ ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগের দোসর সাবেক মেয়র অয়েজ উদ্দিন বিশ্বাস ও দীর্ঘ একযুগ থেকে সচিব, সহকারী প্রকৌশালী, পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা এ তিনটি পদ দখলকারী ক্ষমতাধর সারোয়ার জাহান মুকুলের যোগসাজসে বাড়ী দোকানে গিয়ে খেয়ালখুশিমত পৌরকর বৃদ্থি করেন। জোর পূ্র্বক আদায় করে পৌরসভার ফান্ডে জমা না করে লুটপাট করার ব্যপক অভিযোগ রেয়েছে। সবসময় ক্ষমতাধর মুকুলের কারণেই পৌরসভায় কাজের কোন গতি নেই। পৌরবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তন না হলেও এ দুজনের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ, তারপর বটবৃক্ষ হয়েছেন। পৌরবাসী নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত বছের পর বছর ধরে । পৌরসভার যে কর্মকর্তা, কর্মচারী অনিয়ম, দুর্নীতির কথা বলবেন তাইকে বিগত দিনের মত এখনো দাবিয়ে রাখেন ক্ষমতাধর সারোয়ার জাহান মুকুল,
বিগত দিনে পৌরসভার কর্মকর্তা, কর্মচারীর গ্রহনযোগ্য ব্যক্তি পৌসভার চিকিৎসা বিভাগের গর্ব যিনি বিনা ফি এ রোগি দেখে সুনাম অর্জন করেছিলেন কর্মরত ডাক্তার অলিউল রহমান । তাকে সারানোর জন্য সারোয়ার জাহান মুকুল কৌশলে মেয়রকে হাত করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভায় করা হয়। গত এক যুগ থেকে প্রথম শ্রেণীর গোদাগাড়ী পৌরসভা এমবিবিএস ডাক্তারবিহীন চলছে। চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে।

নিয়মিত পৌর কর পরিশোধ করলেও, চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত পৌরবাসী, মশা নিধনে কোন প্রকার কার্যকারী বাস্তবধর্মী পদক্ষেপনগ্রহন করেন নি।

এমন কি মশা নিধক স্প্রে করা হয় না। যত্রতত্র ফেলা ময়লা ফেলে রাখা হয়েছে। মহিশালবাড়ী গরুর হাট, গোদাগাড়ী হাট, রেলবাজার থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব পেলেও কোন সংস্কার কাজ উন্নয়ন কাজ হাতে নেয়া হয় নি। মহিশালবাড়ী গরুর হাটে বিশাল ময়লার ভাগাড়, কাসাই পাড়া, মহিশালবাড়ী গ্রামীনফোন টাওয়ারের সামনে রাজশাহী – চাঁপাই নবাবগঞ্জ মহনগরী সড়কের পাশে সব ময়লা, মুরগীর নাড়ী ভূড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছেন দেখে মনে হয় মশা মাছি উৎপাদন ক্ষেত্র, ডেঙ্গুকে নিমন্ত্রন যানাচ্ছেন । এগুলি দেখার সময় নেই তিন পদ ধরে রাখা ক্ষমতাধর কর্কর্তার। হাতে থেকে ক আবর্জনা ও ড্রেন পরিষ্কার করছে না পৌর কর্তৃপক্ষ। এতে ভোগান্তি বেড়েছে তাদের। অনেক ড্রেনের সাথে বাসাবাড়ী, মসজিদের বাথরুম টয়লেটের সংযোগের কারণে দুগন্ধের সৃষ্টি হয়। মানুষের চলাচলের অসুবিধা হয়। মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের পশের ড্রেনে টয়লেট বাথরুমের পানি ও মলের লাইন সংযোগ ছাত্রীর ক্লাসচলাকালীন সময়ে জানালা খুলতে পারে না।
পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাহাতাব উদ্দিন বলেন, পৌরসভার ‘সাবেক মেয়র ইচ্ছামত পৌরকর বৃদ্ধি করেছিল আমরা সমিতি গঠন করে মাসের পর আন্দোলন করেছি। আদালতে মামলা করেছি। পরে সাবেক পৌর প্রশাসক আবুল হায়াত কর কমানোর ফলে নিয়মিত কর পরিশোধ করচ্ছি। তিনি আরও জানান, মশা এতো বেশি, মশার জ্বালায় আমরা এখন অতিষ্ঠ। শুধু বাইরে নয়, এখন ঘরে থাকতেও আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষ ড্রেনের ময়লা পরিষ্কার না করায় মশার উপদ্রব বেড়েছে।’

৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী সাদিকুল বলেন, ‘মশার জ্বালায় কিন্তু মশার কামড় থেকে রক্ষা পাই না। যেখানেই যাই এতো মশা বেড়েছে এখন থাকাটাই দায়। অথচ এই বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো নজরই নেই। মশার কামড়ে অনেকেই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।’
সুলতানগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মজি্ুবুর রহমান বলেন, ‘দিনের বেলায়ও মশারি টাঙিয়ে শুতে হয়। মশার উপদ্রবে আমাদের জীবনযাত্রা এখন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। মশার উপদ্রব বাড়লেও পৌর কর্তৃপক্ষ যেন নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন। এই বিষয়ে এখনও পদক্ষেপ নিচ্ছেন না, অথচ আমরা নিয়মিত পৌর কর দিচ্ছি।’

নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন এমবিবিএস ডাক্তার জানান, পৌরসভার বেশীরভাগ ড্রেন খোলা, বিভিন্ন স্থানে ময়লা, নোংরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার কারণে মারাত্বক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে পৌরবাসী। ছাত্র ছাত্রী, শিশু, বয়স্কগন সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। স্বাস্থ্য ঝঁকির কথা মনে করে দ্রুত সমাধান হওয়া প্রয়োজন।প্রথম শ্রেণীর গোদাগাড়ী পৌরসভায় ডাক্তার নেই এটা হাস্যকর, দুঃখজনক।

সাবেক কাউন্সিল, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মাহাবুবুর রহমান বিপ্লব বলেন, পৌরসভা মশা নিধনে কোন পদক্ষেপ দেখি না। মশার কামড়ে পৌরবাসী আতঙ্কিত। আমি গোদাগাড়ী পৌরসভার তিন বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর। আওয়ামীলীগের দোসর মেয়র অয়েজ উদ্দিন, পৌরসভার কার্য সহকারী যুবলীগ নেতা গোলাম কাওসার মাসুম, ক্ষমতাধর সারোয়ার জাহান মুকুল বিগত ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে, দলীয় লোকজনদের কথিত নিয়োগ দিয়ে, রাস্তা না করে বিল উত্তোলন, টেন্ডারবাজি, পৌরকর আদায় করে পৌরসভার ব্যাংক হিসাবে জমা করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। যুবলীগ নেতা মাসুমকে ক্ষমতাধর মকুল সুকৌশলে চাঁপাই নবাবাগঞ্জ পৌরসভায় বদলী করেন তার অনিয়ম দুর্নীতি গোপন করতে। বিনা ভোটের মেয়র অয়েজ উদ্দিন পালিয়ে গেলেও বহাল তবিয়াতে রয়েছেন আওয়ামীলীগ ও সাবেক এমপি ফারুক চৌধুরীর দোসর সারোয়ার জাহান মুকুল।
পৌর প্রশাসকদের ভুল বুঝিয়ে নিজেরসহ সকল কর্মকর্তা কর্মচারী ১৫ বছরের বেতনভাতা গ্রহন করেছেন। কিন্তু কাউন্সিলদের বকেয়া সম্মানি দেয়া হয় নি। কেউ মারা গেছেন, কারো স্বামী মারা গেছেন, কেউ অসুস্থ্য, ওষুধ কেনার টাকা নেই। কন্যা দায় গ্রস্থ মেযের বিয়ে দিতে পারছেন না। সংসার চালাতে পারছেন না। কর্মকর্তা কর্মচারীগণ মাস শেষে বেতন পাচ্ছেন। তাদের কথা ভাবা হলো কাউন্সিলদের কথা বিবেচনা করা হলো না। সারোয়ার জাহান মুকুল অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হবে ইনসাল্লাহ।

আরেক কাউন্সিল আব্দুল্লাহ আল মামুম বলেন, মশা নিধন করা জরুরী। আমরা বার বকেয়া সম্মনী দাবী করে পারছি না। অনেকে কষ্টে আছে, অসুস্থ্য, সংসার চলে তাদের কথা বিবেচনা করে বকেয়া সম্মানীর জোর দাবী জানাচ্ছি।

গোদাগাড়ী পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল আহমেদ জানান, পৌরসভা ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে, কর্মকর্তা কর্মচারীর ১৫ বছরের বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে। ফগার মেশিনসহ বিভিন্ন যত্নপাতি আছে। মশা নিধন ও ড্রেন পরিস্কার করার জন্য কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমার বদলীর আদেশ হওয়ায় সব কাজ দেখভাল করা সম্ভাব হয় নি। পদক্ষেপ নেয়া যায়নি। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর উপদ্রব থেকে পৌরবাসীকে রক্ষায় মাসব্যাপী পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগসহ সকল বিভাগে কাজের গতিবৃদ্ধির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

মোঃ হায়দার আলী
রাজশাহী।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *