১৫ বছরের বকেয়া বেতন প-রিশোধ করে ইতিহাস গড়লেন প্রশাসক ফয়সাল আহমেদ

রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলীঃ রাজশাহী জেলার প্রথম শ্রেনীর গোদাগাড়ী পৌরসভায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বৃত্তি চালু করে এবং গত ১৫ বছরের জমতে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফয়সাল আহমেদ।

শিক্ষার উন্নয়ন ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে গোদাগাড়ী পৌরসভার মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তি প্রদান করেছে। ২৩ সেপ্টেম্বর বিকাল সাড়ে ৩টায় পৌরসভা কার্যালয়ে সুন্দর আয়োজন করে বৃত্তি প্রদান করা হয়।

জিপিএ – ৫ বৃত্তিপ্রাপ্ত ৬৯ শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়া হয় দেড় হাজার টাকার প্রাইজবন্ড, একটি সনদপত্র, দুটি বই এবং দুটি ফলের গাছ।

গোদাগাড়ী পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল আহমেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার রাজশাহীর উপপরিচালক, মো: জাকিউল ইসলাম।

বক্তরা বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড, যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত।
শুধুমাত্র আর্থিক সহায়তা নয়, এই ধরনের বৃত্তি শিক্ষার্থীদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে সামাজিক দায়বদ্ধতা তৈরি করে। বৃত্তির সঙ্গে বই ও ফলের গাছ দেওয়ার মধ্য দিয়ে শিক্ষা ও পরিবেশ সচেতনতার প্রতি শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

প্রধান অতিথি মো: জাকিউল ইসলাম বলেন, “শিক্ষার্থীরা দেশের ভবিষ্যৎ। তাদের প্রতিভা বিকাশে সরকারি ও স্থানীয় পর্যায়ে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে। গোদাগাড়ী পৌরসভার এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়।”

সভাপতির বক্তব্যে পৌর প্রশাসক ফয়সাল আহমেদ বলেন, “আমরা চাই আমাদের পৌর এলাকার শিক্ষার্থীরা শুধু পড়াশোনাতেই নয়, নৈতিকতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধেও সমৃদ্ধ হোক। এ ধরনের বৃত্তি তাদের অনুপ্রাণিত করবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষার ব্যপারে আগ্রহী করে তুলবে।

অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এ ধরনের উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে এ কর্মসূচি আরও সম্প্রসারণের দাবি জানান।

মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী রাইসা ও মাফিয়া বলেন, আমরা পৌরসভা চিনতাম না। আমাদের মত অনেকের অবস্থা একই। বৃত্তি অর্থ, বই, গাছ দারুন ভাল লাগছে। পৌরসভার কর্মকর্তার সাথে পরিচিত হলাম, সারা জীবণ মনে থাকবে। এর আগে পৌরসভা কোনদিন এধরনের উদ্যোগ গ্রহন করেন নি। এটা খুব ভাল কাজ। আগামীতে বৃত্তির এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন দুই মেধাবী ছাত্রী।

অপর দিকে রবিবার ৩২ জন স্থায়ী কর্মকর্তা কর্মচারী কে ৪ মাসের বকেয়া বেতন বাবদ ৬০ লাখ ৪ হাজার ১শ ৩১ টাকা ও মৃত কর্মচারী অবসরে যাওয়া কর্মচারীদের ৮ জন কে ২০ হাজার টাকা করে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন।

পৌর সচিব সারওয়ার জাহান মুকুল বলেন, ইউএনও ফয়সাল আহমেদ মহোদয় প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ২ বারে ৬ মাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করেছেন । এখন থেকে কর্মকর্তা কর্মচারীদের সকল বেতন পরিশোধ থাকলো সবাই বকেয়া বেতন পেয়ে অনেক পেয়ে খুশি হয়েছেন।

বর্তমান সরকারের মেয়াদে পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক ফয়সাল আহমেদের কারণেই এই পরিবর্তন হয়েছে। যা গত ১৫ বছরে কেউ করতে পারেন নাই বলেও এই কর্মকর্তা।

এক দিকে যেমন পৌর ভবনের অভ্যন্তরীন সাজ সজ্জাসহ বিল্ডিং এর নতুনভাবে রং করা হয়েছে। অন্য দিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দীর্ঘ সময়ের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। যার ফলে সবার মাঝেই নতুন করে কাজ করার মানষিকতা তৈরি হয়েছে।
বর্তমান প্রশাসনের সুন্দর পদক্ষেপের ফলে বিগত সময়ে পৌরসভা থেকে মৃত্যু ও অবসরগ্রহণকারী কর্মচারীদের প্রাপ্য ভাতা প্রতি মাসে নির্দিষ্ট হারে প্রদান করা হচ্ছে।

বিগত সরকারের আমলে মেয়রদের ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, লুটপাটের কারণে পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারীরা ২২ মাসের বকেয়া বেতন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন । তারা ঠিকমত কাজে মনোযোগ দিচ্ছিলনা বলেও জানান একজন কর্মকর্তা।

উচ্চমান সহকারি শফিকুল ইসলাম জানান সাবেক মেয়র আমাদের বেতনগুলো বকেয়া রেখেছিল। বর্তমান প্রশাসক আমাদের বকেয়া ছয় মাসের বেতন পরিশোধ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক ফয়সাল আহমেদ বলেন, আমি চেষ্টা করেছি সবার মাঝে কর্ম চাঞ্চল্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য, যেন তারা কাজ করতে পারে নাগরিক সেবায় নিজেকে সম্পূর্ণ নিয়োজিত করতে পারে। কারণ কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে কর্ম চাঞ্চল্যতা
থাকলে সঠিক ও দ্রুত সেবা পাবে পৌরবাসী।
মোঃ হাযদার আলী
গরাজশাহী
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *