কে এম সোয়েব জুয়েল।
শারদীয় দুর্গোৎসব- ২০২৫ উপলক্ষে গতকাল ২৭ সেপ্টেম্বর শনিবার মহাপঞ্চমীতে বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি- (বিএমজেপি) বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শন শেষে ঢাকা রামপুরা হাতিরঝিল শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ মন্দির সার্বজনীন দূর্গা মন্ডপে পূজা উদযাপন কমিটির সাথে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেন বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি-(বিএমজেপি)’র সহ-সভাপতি- আর কে মন্ডল (রবিন), এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন পূজা উদযাপন কমিটি নেতৃবৃন্দ ও বাংলাদেশ সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মানিত কর্মকর্তাগণ।
বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি’র সহ-সভাপতি আর কে মন্ডল রবিন সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে শারদীয় দুর্গাপূজার প্রতিপাদ্য বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন
শাস্ত্রীয় দুর্গোৎসবের ঐতিহ্য দুর্গাপূজা কেবল একটি উৎসব নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিক চেতনার প্রতিচ্ছবি। মুণ্ডমালাতন্ত্রে বলা হয়েছে, “দুর্গার সমান পূজ্যা নেই,” যা এই পূজার গভীরতা ও গুরুত্বকে তুলে ধরে। তবে বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই এই উৎসব তার শাস্ত্রীয় তাৎপর্য হারিয়েছে, যা আমাদের সমাজের জন্য কল্যাণকর নয়। আমাদের উচিত, উৎসবকে সাত্ত্বিক চেতনার মাধ্যমে আবার তার সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা।
সাত্ত্বিক পূজার মূলমন্ত্র: সরলতা এবং উদ্দেশ্য
শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার সপ্তদশ অধ্যায়ে সুস্পষ্টভাবে তিন প্রকার যজ্ঞ বা পূজার কথা বলা হয়েছে: সাত্ত্বিক, রাজসিক এবং তামসিক। সাত্ত্বিক পূজা হলো সেই পূজা, যা কোনো ফল বা দম্ভের প্রত্যাশা না করে কেবল ঈশ্বরের সন্তুষ্টির জন্য করা হয়। এর বিপরীতে রাজসিক পূজা হলো লোক-দেখানো ও ফল-কামনার জন্য, আর তামসিক পূজা হলো নিয়ম-নীতি, ভক্তি ও শ্রদ্ধা ছাড়া পরিচালিত। আমাদের সবারই প্রচেষ্টা থাকা উচিত, যেন প্রতিটি পূজা সাত্ত্বিক মনোভাব নিয়ে সম্পন্ন হয়। এর মধ্য দিয়ে আমরা নিজেদের আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করতে পারব।
অর্থের সদ্ব্যবহার: জনকল্যাণে দুর্গোৎসব
দুর্গাপূজার নামে অনেক সময় অর্থের অপচয় হয়, যা শাস্ত্রীয় ভাবনার পরিপন্থী। যদি আমরা শাস্ত্রীয়ভাবে পূজা করি, তাহলে অপ্রয়োজনীয় বাহুল্য পরিহার করে অনেক অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব। এই সাশ্রয়কৃত অর্থ জনকল্যাণে ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন:
শিক্ষাবৃত্তি: অভাবগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করা।
অভাবগ্রস্তদের সহায়তা: দুস্থ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
ধর্মীয় গ্রন্থ প্রচার: বেদ, গীতা এবং সপ্তশতী চণ্ডীর মতো শাস্ত্রগ্রন্থগুলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া, যাতে সবাই নিজ ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে।
এভাবে দুর্গাপূজা কেবল ব্যক্তিগত উপাসনা নয়, বরং সামগ্রিক সামাজিক কল্যাণের উৎস হয়ে উঠতে পারে।
ঐতিহ্য রক্ষা এবং সুস্থ পরিবেশ
পূজার সময় উচ্চস্বরে গান-বাজনা, ডিজে ও শব্দদূষণ আমাদের উৎসবের পবিত্রতাকে নষ্ট করছে। আমরা এই ধরনের কর্মকাণ্ড পরিহার করে এর পরিবর্তে ধর্মীয় সংগীত, ঐতিহ্যবাহী ধুনুচি নৃত্য এবং ঢাকের ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে পারি। এটি একদিকে যেমন আমাদের সংস্কৃতির ঐতিহ্য রক্ষা করবে, অন্যদিকে তেমনি এই উৎসবের ওপর নির্ভরশীল গরিব ঢাকি সম্প্রদায়ের প্রতিও আমাদের মানবিক দায়িত্ব পালন করা হবে। মনে রাখতে হবে, তাদের আর্থিক সুরক্ষা আমাদেরই নিশ্চিত করা উচিত, কারণ তাদের ঢাকের শব্দ ছাড়া পূজার পূর্ণতা আসে না।
পূজার প্রতিমা ও ভাবনার পবিত্রতা
প্রতিমা তৈরি ও বিসর্জনের ক্ষেত্রেও আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। আধুনিকতার নামে রুচিহীন বা কুরুচিপূর্ণ প্রতিমা তৈরি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রতিমা এমনভাবে তৈরি করা উচিত, যা দেবীর মাতৃরূপ এবং আধ্যাত্মিক ভাবকে প্রকাশ করে। একইভাবে, প্রতিমা বিসর্জনের সময় উচ্ছৃঙ্খলতা বা অশ্লীলতা নয়, বরং একটি আবেগঘন ও পবিত্র ভাব বজায় রাখা জরুরি। সবশেষে, পূজার পবিত্র দিনে কোনো ধরনের মাদক সেবন থেকে বিরত থাকা এবং শুদ্ধ হৃদয়ে দেবীর আরাধনায় নিজেকে নিবেদন করা উচিত।
আমি বিশ্বাস করি, এই পরিবর্তনগুলো আনার মাধ্যমে আমরা আমাদের দুর্গাপূজাকে আরও অর্থপূর্ণ ও সার্থক করে তুলতে পারব। এই উৎসব যেন কেবল আনন্দ-উচ্ছ্বাসের নয়, বরং আধ্যাত্মিক চেতনা, সামাজিক দায়িত্ববোধ এবং মানব কল্যাণের প্রতীক হয়ে ওঠে।
পরিশেষে বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি-(বিএমজেপি)’র পক্ষ থেকে সকলের প্রতি সর্বজনীন শারদীয় দুর্গাপূজার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন, শারদীয় দুর্গাপূজা সুশৃংখল, উৎসবমুখর ও সার্বজনীন পূজায় রূপান্তরিত হোক দেশবাসীর কাছে এই আহ্বান রাখেন।
Leave a Reply