কুমিল্লাতে লাউ চাষে সফল দুই গ্রামের তিন কৃষক

তরিকুল ইসলাম তরুন, কুমিল্লা থেকে,

বসত বাড়ির সামনে তিন কৃষকের ভিন্ন ভিন্ন তিন খন্ডে বিভক্ত মোট ১ একর জমি, তাও আবার উচুনিচু পরিত্যক্ত জায়গা, এগুলোতে প্রথমবারের মতো হাজারী জাতের উচ্চ ফলনশীল লাউ চাষ করে সফল হয়েছেন ফারুক মিয়া , সাইফুল ইসলাম , দুলাল মিয়া নামে তিন কৃষক।
প্রান্তিক কৃষকদের সফলতার হাসি যেন তিন পরিবারের মাঝে ছড়িয়েছে। এই সফলতার হাসি যেন দুগ্রামের জনসাধারণের মধ্যে ও ছড়িয়ে পড়ছে এমনটাই কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়।

কৃষকদের মধ্যে ফারুকের বাড়ি বুড়িচং উপজেলার বাকশিমুল ইউনিয়নের কালিকাপুর দঃ পাড়ায়,পিতা আঃ আজিজ মিয়া, বাকিরা পাশের গ্রাম জঙ্গল বাড়ির পূর্ব পাড়াতে। সাইফুল ইসলাম ও দুলাল মিয়া,
৪০শতকে সাইফুল ইসলাম আর বাকি ৪০ শতকে দুলাল মিয়া লাউ চাষ করেন। এবিষয়ে স্থানীয়রা বলেন কালিকাপুরের দক্ষিণ পাড়াতে ২০ শতক জমিতে ফারুক মিয়া লাউ চাষে সফলতা অর্জন করেছে তার সাথে সাথে একই পদ্ধতিতে পাশের গ্রামের সাইফুল, দুলাল মিয়াও একই ভাবে লাউ চাষে সফল হয়েছে।

লাউ চাষে তাদের মোট খরচ হয়েছে মাত্র ৬০/৭০ হাজার টাকা। প্রথম বিক্রিতে হাতে এসেছে ৬৫ হাজার টাকা। এবিষয়ে কালিকাপুরের দঃপাড়ার কৃষক ফারুক মিয়া জানান

প্রথম দিনে বিক্রি করেছেন প্রায় ১০ হাজার টাকা।
তার জমির পরিমান ২০ শতক, তার মোট খরচ ৮/৯ হাজার টাকা।
আরও ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা বিক্রি করার আশা করছেন তিনি।

খরচ বাদে তার সম্ভাব্য লাভের পরিমাণ প্রতি শতাংশে প্রায় ২ হাজার টাকা হতে পারে শেষ পর্যন্ত যদি গাছ গুলো বেচে থাকে, লাউ গাছে লস নেই, আগা ডগাও বিক্রি করে আয় করা সম্ভব । কম খরচ ও অল্প সময়ে এমন লাভের হিসাব দেখে লাউ চাষে আগ্রহ বাড়ছে গ্রামের স্থানীয় কৃষকদের।

ফারুক লাউ চাষের পাশাপাশি লম্বা বেগুন,শশা, চালকুমড়া, জিঙ্গে চাষ করেছেন এবছর। এছাড়া সফল ধান ও বেন্ডি চাষি হিসেবেও কৃষক ময়দানের এলাকায় বেশ সুনাম রয়েছে ফারুক মিয়ার।এছাড়া তার বিশস্ত লোক জাহাঙ্গীরের সুনাম রয়েছে বেগুন চাষের জন্যে।

এবার মাত্র দুই মাসের মধ্যে লাউ চাষে অভাবনীয় লাভ পেয়ে খুশি হয়েছেন তিনি।

উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা আফরিন আক্তার বলেন
বর্তমানে আমরা খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ কিন্তু নিরাপদ ফসল উৎপাদনে কৃষকরা পিছিয়ে আছে। আমারা কৃষক দের উঠান বৈঠকের মাধ্যমে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করি,কৃষকরা যেন প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হতে পারে।
এবিষয়ে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোসাঃ তানজিনা আক্তার জানায়, হাজারী লাউ একটি উচ্চ ফলনশীন লাউ জাত। এ জাতের লাউ রোপণের ৫ থেকে ৭ দিনে চারা হয় এবং ৪২ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে ফুল ও ফল ধরে। এ ছাড়া ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যেই বাজারজাত করা যায়।

এ লাউ দেখতে সুন্দর ও তরতাজা, খেতেও সুস্বাদু। এ ছাড়া বাজারে চাহিদা ও ফলন বেশি হওয়ায় এ লাউ চাষে কৃষকের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।গতকাল
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক ফারুক মিয়ার বাড়ি সংলগ্ন পূর্ব দিকে সবজি বাগানের মাচায় ঝুলছে লম্বা সবুজ রঙের হাজারী জাতের অসংখ্য লাউ। যেদিকে তাকানো যায় শুধু লাউ আর লাউ। বাগানের এসব ঝুলন্ত সবুজ কচি লাউ দেখলে যে কোনো মানুষের চোখ জুড়িয়ে যায়।

কৃষক ফারুক আরো বলেন এ সবজি বাগানে জৈব সারের সাথে সামান্য রাসায়নিক সার ব্যবহার করেছেন। অন্যদিকে কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয়নি। এজন্য বিষমুক্ত নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব ময়দানের সবজি বাগানের লাউ খেতে যেমন সুস্বাদু, বাজারেও এ সবজির চাহিদা বেশি।

প্রতিবেশী পল্লী চিকিৎসক শরিফুর রহমান জানান, বাড়ির সামনে আনুমানিক ২০ শতাংশ জায়গা সারাবছর পরিত্যক্ত থাকে কখনো কখনো ফারুক মিয়া কৃষি অফিসারদের পরামর্শ নিয়ে অনেক বার লাউ চাষ করেছে কিন্তু এবার নিজের সিন্ধান্তেই শুরু করে বেশ সফল হয়েছে। এ বিষয়ে ফারুক মিয়া আরো বলেন হাজারী লাউ বীজ সংগ্রহ করে গত শ্রাবণ মাসের প্রথম সপ্তাহে রোপণ করেছিলাম। দুই মাস পরিচর্যা করার পর আমার সবজি বাগানে অসংখ্য লাউ আসে। আজ থেকে সপ্তাহ আগে থেকেই লাউ বাজারজাত করা শুরু করেছি। এ পর্যন্ত আমি প্রায় ১০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছি।

ওজন ভেদে প্রতিটি লাউ খুচরা ৫০-৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, এলাকার বাজারের চাহিদা মিটিয়ে কুমিল্লা শহরে যাচ্ছে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *