রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে উচ্চতর সেলাই প্রশি-ক্ষণ পুরো-দমে চলছে – প্র-শিক্ষণ শেষে হবেন স্বাব-লম্বী, উদ্যোক্তা

রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলীঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পুরোদমে চলছে সেলাই প্রশিক্ষনের কাজ। উপজেলা পরিষদের পুরাতন অডিটারিয়ামে উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে উচ্চতর এ সেলাই প্রশিক্ষকের কার্যক্রম চলে প্রতিদিন বিকাল ৩ টা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত।
এ প্রশিক্ষণে প্রথম ব্যাচে অংশ গ্রহন করছেন ৩৫ জন গরীব, দুস্থ্য, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধী, স্বচ্ছল অবস্থাশালী পরিবারের বেকার নারী, পুরুষ, যুবক, যুবতীরা।
প্রশিক্ষণ শেষে তাদের চোখে, মুখে স্বপ্ন একটি মিনি গার্মেন্টস এর মালিক হওয়া, উদ্যোক্তা হওয়া, নিজের পরিবারের কাজগুলি করা, আশেপাশের মানুষের কাজ করে কিছু ইনকাম করে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনা, সুখে শান্তিতে বসবাস করা।

উচ্চতর সেলাই প্রশিক্ষন আবেদন ফি ভর্তি ফি ২০০ টাকা, কোর্স ফি মাসিক বেতন ২০০০ টাকা। বিভিন্ন এনজিও, সংস্থা, যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ শেষে একটি সেলাই মেশিন প্রদান করে কিংবা প্রশিক্ষণ শেষে ১০/১২ হাজার টাকা অনুদান দিয়েও লোক পায় না সেখানে এ উচ্চতর প্রশিক্ষণে তিন মাসে ৬ হাজার ২শ টাকা ব্যয় করে প্রশিক্ষণ গ্রহন করছেন। সত্যি এটা উচ্চতর প্রশিক্ষন তাই কয়েকজন প্রশিক্ষাথী নিজে বেকার মানুষকে টাকার বিনিময়ে কাজ শিখায়, সেলাইয়ের কাজ জানেন তারাও এখানে প্রশিক্ষণ গ্রহন করছেন।
কেবল মাত্র যারা প্রকৃত অর্থে কাজ শিখতে আগ্রহী ও উদ্যোক্তা হতে ইচ্ছুক তাদেরকেই আবেদন করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছিল।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল আহমেদ জানান, উচ্চতর দক্ষতা সম্পূর্ণ সেলাই প্রশিক্ষণ চলছে। এখানে প্রথম ব্যাচে ৩৫ জন প্রশিক্ষার্থী অংশগ্রহন করেছেন। কিছুদিনের মধ্যে দ্বিতীয় ব্যাচ শুরু হবে। মাষ্টার ট্রেনার শাহানারা বিশ্বাস শাহিনুর খুবই দক্ষ, খুব সহজে ভালভাবে শিখাচ্ছেন। তিনি এলাকার মেয়ে। আমি মাঝে মধ্যে সেখানে যায় তাদের কাজগুলি দেখি, খুব ভাল লাগে। প্রশিক্ষণ শেষে মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের পায়জামা, কামিজ, টি শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, প্রভূতি তৈরী করতে সক্ষম হবেন। তিন মাস প্রশিক্ষণ শেষে সবাইকে একটি সনদপত্র, কিছু টিলস দেয়া হবে যেন তারা বাড়ীতে গিয়ে নিজে প্রশিক্ষণ অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারেন।

পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরকেও এগিয়ে যেতে হবে। নিজে কিছু করার জন্য আগে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষতা বাড়াতে হবে। এজন্য সেলাই প্রশিক্ষণ খুবই গুরুত্বপর্ণ। সেলাই প্রশিক্ষণ নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার মাধ্যমে নারীরা সমাজে নিজেদের একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে পারে। সেলাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নারীরা নতুন দক্ষতা অর্জন করতে পারে এবং নিজেদের জন্য একটি স্থায়ী আয়ের পথ তৈরি করতে পারে। এধরনের নিয়ে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। যা দেশের অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখছে। বেকার যুবক ও নারীদের স্বাবলম্বী করতে সেলাই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মাষ্টার ট্রেনার শাহানারা বিশ্বাস শাহিনুর বলেন, যারা কাজ শিখছেন তারা খুব আন্তরিক, মনোযোগসহকারে প্রশিক্ষণ গ্রহন করছেন। সেলাই প্রশিক্ষণ ভবিষ্যতে অনেকভাবে উপকারী আসতে পারে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নিজস্ব দক্ষতা ব্যবহার করে একদিকে যেমন আয় করতে পারেন অন্যদিকে তেমনী দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবেন। কেন না অন লাইন মার্কেটিং করে বিদেশে তৈরীপুন্য রপ্তানী করতে পারবেন। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে সেলাই ও ড্রেস মেকিং এর মতো ক্ষেত্রে বিভিন্ন কাজ রয়েছে যেমন বাড়িতে দর্জির কাজ, দোকানে পোশাক তৈরি করা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হওয়। কম বিনিয়োগ সেলাই মেশিন কিনে একটি ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করা সম্ভব যা পরিবারের আয়ের উৎস হতে পারে।

তিনি আরও বলেন সেলাই প্রশিক্ষনের মাধ্যমে নতুন ডিজাইন তৈরি এবং পোশাকের ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা বাড়ানো যায়। আধুনিক বিশ্বে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে নিজের এবং পরিবারের পোশাক তৈরির সাথে সাথে নিজকে উপস্থাপন করা যায়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং উপকারী দক্ষতা।
নিজের মেধা, দক্ষতা কলা-কৌশল কাজে লাগিয়ে যুগোপযোগী, সৃজনশীলতা, রুচিশীল, চাহিদা সম্পন্ন, উন্নত মানসম্পূর্ন্ন পোশাক তৈরী করা যায়।

দক্ষ সেলাই জানলে ভবিষ্যতে নিজস্ব বুটিকস বা ফ্যাশন ডিজাইনিং এর উদ্যোগ শুরু করার পথ খুলে যেতে পারে। আধুনিক বিশ্বে ফ্যাশান ও পোশাকের চাহিদা সবসময় থাকে তাই সেলাই চাহিদা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে ইনসাল্লাহ।

তিনি আরও জানান, প্রতিবন্ধী, গরীর, দুস্থ্য, অসাহায় অনেক মেধাবী রয়েছে। ভাল কাজ জানেন যদি কোন অবস্থাশালী, প্রবাসী, কোন সংস্থা তাদের কয়েকটি সেলাই মেশিনের ব্যবস্থা করে দেন। পরিবার গুলির সদস্যগণ দুবেলা দুমুঠো খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারেন।

প্রশিক্ষনার্থী মেহেরুন্নেসা বলেন, আমি কাজ জানি, আমি ৬৫ জনকে কাজ শিখিয়েছি তার পরেও প্রশিক্ষণ নিতে এসেছি। আরও বেশী শেখার জন্য। শিক্ষার শেষ নেই।

গৃহবধূ ও প্রশিক্ষনার্থী মোসাঃ জোহরুন নেসা বলেন, উদ্যোক্তা হওয়ার জন্যই কাজ শিখতে এসেছি। আমাদের মাষ্টার ট্রেনার শাহানারা বিশ্বাস শাহিনুর ম্যাডাম খুব ভাল মনের মানুষ, আমি সেলাইয়ের কোন কিছু জানতাম না। এখনও একমাস হয় নি অনেক কিছু শিখেছি। ম্যাডাম আমাদেরকে একটি কাজ ৫/৭ বার পর্যন্ত হাতে কলমে, সহজ উপায়ে শিখিয়ে দেন। আমরা বুঝতে না পারলে ম্যাডামের নিকট ছুটে যায়। কেউ ডাকলে ম্যাডামও চলে এসে একধিকবার করে বুঝিয়ে দেন, কোন বিরক্ত বোধ করেন না। একই মন্তব্য করেন প্রশিক্ষার্থী, প্রতিবন্ধী নেত্রী ঝর্ণা।

বিধবা সুরভী বলেন, দেড় বছর আগে স্বামী মারা গেছেন, দুইটি ছেলে নিয়ে কষ্ট করে সংসার চালাই। বড় ছেলে ১০ বছর ছোট ছেলেটি ১৮ মাসের। ২ ছেলেকে শাশুড়ীর নিকট রেখে এসে সেলাই প্রশিক্ষন অংশ গ্রহন করি। মন টিকে না, তাদের কথা সব সময় মনে পড়ে। সংসার চালাতে হিমসিম খাই। প্রশিক্ষন শেষে কিছু ইনকাম করতে পারবো ইসসাল্লাহ। চেষ্টা করছি, ম্যাডামকে বার বার বিরাক্ত করি। কিন্তু ম্যাডাম বিরক্তবোধ করেন না আন্তরিকতার সাথে সহজ পদ্ধতিতে শিখিয়ে দেন। সংসারে সচ্ছলতা ফিরে

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *