September 16, 2025, 6:43 pm

বিজ্ঞপ্তি :
বিশেষ সতর্কীকরন - "নতুন বাজার পত্রিকায়" প্রকাশিত সকল সংবাদের দ্বায়ভার সম্পুর্ন প্রতিনিধি ও লেখকের। আমরা আমাদের প্রতিনিধি ও লেখকের চিন্তা মতামতের প্রতি সম্পুর্ন শ্রদ্ধাশীল। অনেক সময় প্রকাশিত সংবাদের সাথে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে। তাই যেকোনো প্রকাশিত সংবাদের জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। নতুন বাজার পত্রিকা- বাংলাদেশের সমস্ত জেলা, উপজেলা, ক্যাম্পাস ও প্রবাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! বিস্তারিত: ০১৭১২৯০৪৫২৬/০১৯১১১৬১৩৯৩
শিরোনাম :
রাজশাহী জেলার ডিবি পুলিশ কর্তৃক ডাকা-তি মাম-লায় লু-ন্ঠিত মা-লামাল উ-দ্ধার’সহ ৮ জন গ্রে-ফতার সুজানগরে প-রিত্যক্ত অবস্থায় অ-স্ত্র উ-দ্ধার নতুন জীবন পেল সুজানগরে শি-কারির ফঁা-দে আট-কা ৪৫টি পাখি পাইকগাছায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ঘেরের আ-ইলে সবজি চাষ গোদাগাড়ীতে স-র্বনাশা পদ্মা নদীর ভ-য়াবহ ভাঙ্গনের শি-কার ৩ শত পরিবার দোয়ারাবাজারে বয়স্ক, বিধবা ও প্র-তিবন্ধী ভাতার ২৬৭টি বই বিত-রণ পাইকগাছায় গলায় ও-ড়না পেঁ-চিয়ে এক কিশোরীর আত্মহ-ত্যা শ্রীপুর উপজেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি মোবারক হোসেন প-দ হারালেন আশুলিয়ায় গু-লিবিদ্ধ অ-জ্ঞাত এক যুবকের লা-শ উদ্ধার করেছেন পুলিশ নলছিটি সেটেলমেন্ট অফিসে ঘু-ষের রা-জত্ব
গোদাগাড়ীতে স-র্বনাশা পদ্মা নদীর ভ-য়াবহ ভাঙ্গনের শি-কার ৩ শত পরিবার

গোদাগাড়ীতে স-র্বনাশা পদ্মা নদীর ভ-য়াবহ ভাঙ্গনের শি-কার ৩ শত পরিবার

রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলীঃ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা দিয়ে শুরু করি এ কূল ভাঙে ও কূল গড়ে, এই তো নদীর খেলা সকাল বেলার আমির রে ভাই ফকির সন্ধ্যাবেলা॥ সেই নদীর ধারে কোন ভরসায় (ওরে বেভুল) বাঁধলি বাসা সুখর আশায়, যখন ধরল ভাঙন পেলিনে তুই
পারে যাবার ভেলা॥
এই দেহ ভেঙে হয় রে মাটি, মাটিতে হয় দেহ,
যে কুমোর গড়ে সেই দেহ – তার খোঁজ নিল না কেহ। রাতে রাজা সাজে নাট-মহলে
দিনে ভিক্ষা মেগে পথে চলে
শেষে শ্মশান-ঘাটে গিয়ে দেখে
সবই মাটির ঢেলা।
এই তো বিধির খেলা রে ভাই
ভব-নদীর খেলা॥ কবির কথা গুলি যেন সবই সত্য হয়ে গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের মানুষের জন্য।

সর্বনাশা পদ্মাই যেন কাল হলো শতাধিক পরিবারের ভাগ্যে । পদ্মার ভাঙ্গনে সর্বশেষ মাথা গুজার আশ্রয়স্থল, ঘরবাড়ী নদী গ্রাস করে নিয়েছে। আশ্রয়স্থল হারিয়ে চার পুরুষের ভিটে মাটি ত্যাগ করে চলে যাচ্ছে অন্যত্রে। এপারে কেউ আত্নীয়স্বজনের কাছে কেউ রাস্তারধারে খাস জমিতে কেউ বরেন্দ্র এলাকার নিজস্ব জমিতে কোন উপায়ে থাকার ব্যবস্থা করছেন।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার পদ্মানদীর ওইপার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে আবারও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে পদ্মার ভাঙন। গত এক সপ্তাহে ইউনিয়নের অন্তত চারটি গ্রামের নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে তিন শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি।

সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য উজ্জল হোসেন বলেন, আবার বন্যার পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নদী ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত দুই যুগে নদী ভাঙ্গনের এমন ভয়াবহরুপ দেখিনি। তিন শতাধিক পরিবার নদী ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি হারিয়ে উপায়হীনভাবে অন্যত্রে চলে গেছে। অনেকে যাওয়ার জন্য জিনিসপত্র বাঁধাবাধি করছে। তিনি আরো বলেন, জামাইপাড়া গ্রামের সাইদুর রহমান “পদ্মার ভাঙনে দুইবার বাড়ি সরিয়েছে। এবার চরে থাকার জায়গা না থাকায় ভাইয়ের বাড়িতে ওপারে চলে গেছেন।”

গত কয়েক বছরে হাজার হাজার বিঘা ফসলী জমি, আম ও মেহগুনী, শিশুবাগান, ৫ শতাধিক বসতবাড়ি, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, ব্রিজ, কালভাট, রাস্তা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়া হুমর্কীর মুখে পেড়েছে মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, হাজার একর ফসলী জমি, রাস্তা, সরকারী গবাদিপশু উন্নয়ন খামার, ছাগল উন্নয়ন খামার, আঞ্চলিক হাঁসমুরগী, কয়েকটি বিজিপি ক্যাম্পসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

এদিকে জানা যায়, চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নটির আয়তন প্রায় ৩৬ বর্গকিলোমিটার। পদ্মার বিশাল জলরাশির ওপারে অবস্থিত এই চরাঞ্চলটি। চরাঞ্চলটি ঘেঁষে ভারতীয় সীমান্ত। প্রতিবছরই নদীভাঙনের শিকার হয়ে চরের জমির পরিমাণ বেশ কমছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে একসময় পুরো ইউনিয়নই মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।

মঙ্গলবার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের সরেজমিনে দেখা যায় হঠাৎপাড়া, চর বয়ারমারি, কামারপাড়া, জামাইপাড়া, চর নওশেরা, হবুপাড়া, ও আমতলা খাসমহল গ্রামের মানুষ, অনেকেই ঘরবাড়ি ভেঙে নৌকায় মালামাল তুলছেন। কারও বাড়ির অর্ধেক ভাঙনের কবলে পড়েছে, কেউ আবার সবকিছু সরিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন। এমনকি নদী ভাঙ্গনে নদীতে তলিয়ে গেছে ১নং ওয়ার্ডের সম্পুর্ন এলাকা।

হঠাৎপাড়া গ্রামের মোঃ আশরাফুল হক জানান, ১৫ বছর আগে একবার ভাঙনে বাড়ি সরাইছিলাম। এবার আর থাকার জায়গা নাই। বাইপাস মোড়ে দুই কাঠা জমি কিনছি, সেখানেই যাচ্ছি।

নৌকায় মালামাল নিয়ে পার হচ্ছিলেন বয়ারমারি গ্রামের গৃহবধূ রোজিনা বেগম। তিনি বলেন, ছয় বছর আগে একবার বাড়ি ভাঙ্গায়াছিল। জন্মের পর থেকে চরে থাকতেছি, কিন্তু এবার আর থাকা হলো না। ভাসুরের বাড়িতে উঠমু, পরে জমি কিনে আবার ঘর করমু।

চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম বলেন, নদীর পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন বেড়েছে। অন্তত ৩০০ পরিবার চরের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। আমরা শুধু ১০ কেজি করে চাল দিতে পেরেছি। যাদের সবকিছু নদীতে গেছে, তাদের কাছে এটা কিছুই না। সরকারকে দ্রুত পাশে দাঁড়াতে হবে।

গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল আহমেদ বলেন, “আমাদের তথ্যমতে এখন পর্যন্ত ১১০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত। তালিকা প্রক্রিয়া চলছে। পুনর্বাসনের জন্য ঢেউটিন দেওয়া হবে।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, রাজশাহী শহরসংলগ্ন পদ্মার বিপৎসীমা ১৮.০৫ মিটার। গত সপ্তাহে পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৭.৪৯ মিটার। সোমবার পানি নেমে ১৬.৮৫ মিটারে দাঁড়ালেও চরের বিস্তীর্ণ এলাকা এখনও তলিয়ে আছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন আরও তীব্র হচ্ছে।

সচেতন মহল মনে করছেন, এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে গোটা চর আষাড়িয়াদহ একসময় পদ্মায় বিলীন হয়ে যাবে। এতে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের ভেতরে প্রবাহিত হওয়ার ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে, যা বড় ধরনের ভৌগোলিক সমস্যার কারণ হবে।

মোঃ হায়দার আলী
নিজস্ব প্রতিবেদক,
রাজশাহী।

Please Share This Post in Your Social Media






© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY AMS IT BD