মাগুরায় না-নাবিধ সম-স্যায় জ-র্জরিত রেড ক্রিসেন্ট মা ও শিশু হাসপাতাল

জিল্লুর রহমান,
মাগুরা প্রতিনিধি।

মাগুরার শ্রীপুরে গত ২০২২ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অবঃ) এটিএম আবদুল ওয়াহহাব শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী মা ও শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় হাসপাতালটি হওয়ায় এলাকার গরীব ও অসহায় মানুষগুলো এ হাসপাতাল থেকে স্বল্প খরচে উন্নত চিকিৎসা সেবা গ্রহন করছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার তিন বছর পেরিয়ে গেলেও পূর্ণতা পায়নি হাসপাতালটি। বরং দীর্ঘদিন যাবত হাসপাতালটি নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নই, একটি কুচক্রী মহল হাসপাতালটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পায়তারা চালিয়ে আসছে। এলাকার নেতৃত্ব স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সেবা নিতে যাওয়া রোগী ও রোগীর স্বজনেরা এবং এলাকাবাসী হাসপাতালটি অন্যত্র সরিয়ে না নিয়ে পরিপূর্ণ একটি হাসপাতাল গড়ে তোলার জোর দাবি জানিয়েছেন। সেই সাথে হাসপাতালটির নাম পরিবর্তন করে শ্রীপুর মডেল রেড ক্রিসেন্ট মা ও শিশু হাসপাতাল নামকরণের জোর দাবি তাদের। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী মাগুরা জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করেছেন।

রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মাগুরা-শ্রীপুর সড়কের টুপিপাড়া গ্রামে অত্যন্ত নিরিবিলি ও মনোরম পরিবেশে হাসপাতালটি স্ব-গর্বে দাড়িয়ে আছে। অনেক নারী-পুরুষ ও শিশু রোগী ডাক্তার দেখানোর জন্য অপেক্ষা করছে। এমবিবিএস ডাক্তার মাত্র ৫০ টাকা ফিস নিয়ে রোগী দেখছেন। প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা-নিরীক্ষা ৫০% ছাড়ে করা হলেও ল্যাবের দায়িত্বে থাকা একজন মাত্র ল্যাব টেকনোলজিস্টকে গত ২০২৫ সালের ১৪ আগস্ট অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। যার ফলে ল্যাবের সকল পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। রোগীদের মাগুরা এবং শ্রীপুরের বিভিন্ন ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাড়তি টাকা খরচের পাশাপাশি চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। হাসপাতালটি চালানোর জন্য কমপক্ষে ১০ জন জনবল থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ৫ জন। গত ২০২৫ সালের ২০ জুলাই দুইজন সিকিউরিটি গার্ডের মধ্যে একজনকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। শুরু থেকেই অফিস সহকারী ও একাউন্টিং পদটি শূণ্য রয়েছে। হাসপাতালটিতে নেই কোন ডিপ্লোমা নার্স। এছাড়া হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য একটি কমিটি থাকার কথা থাকলেও কোন কমিটি গঠন করা হয়নি।

হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনেরা জানান, হাসপাতালটি আমাদের কাছে হওয়ায় আমরা গ্রামের মানুষ স্বল্প খরচে উন্নত সেবা পাচ্ছি। কয়েকদিন ধরে ল্যাব বন্ধ থাকায় দূরদূরান্তে গিয়ে পরীক্ষা করাতে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। এমনকি আমরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। শুনছি হাসপাতালটি এখান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পায়তারা চলছে। আমরা এই নেক্কারজনক কর্মকাণ্ড ও ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে সমাজের বেশ কয়েকজন নেতৃত্ব স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সাথে কথা বললে তারা জানান, হাসপাতালটি আমাদের এলাকাবাসীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে হাসপাতালটি হওয়ায় প্রত্যন্ত এলাকার মানুষগুলো উন্নত স্বাস্থ্য সেবা পেয়ে আসছে। হাসপাতালটি দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন সমস্যা জর্জরিত। আমরা দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে এই হাসপাতালটিকে একটি পরিপূর্ণ হাসপাতাল হিসেবে দেখতে চাই। শুনছি একটি কুচক্রী মহল হাসপাতালটি এখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার পায়তারা করছে। যদি তাই হয়, আমরা হাসপাতালটিকে এখান থেকে নিয়ে যেতে দিবো না। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যানের প্রতি আমাদের আকুল আবেদন হাসপাতালটি এখান থেকে সরিয়ে না নিয়ে হাসপাতালটিকে একটি পরিপূর্ণ হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তুলবেন বলে আশা করছি।

হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার লিংকু কুমার বিশ্বাস জানান, হাসপাতালে আড়াই বছর ভালই চলছিল। গত ছয় মাস ধরে হাসপাতালটি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এখানে শুধু জনবল সংকট নয়। এখান থেকে কয়েকদিনের ব্যবধানে সিকিউরিটি গার্ড ও ল্যাব টেকনোলজিস্টকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। গত ৪ মাস যাবত আমার বেতন বন্ধ। কর্তৃপক্ষ ৪ মাস হাসপাতালের কোন বিল ভাউচারে সই করছেন না। হাসপাতালটি পরিপূর্ণতা না পেলেও অন্তত আগের পরিবেশে চললে প্রত্যন্ত এলাকার অসহায় মানুষগুলোর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত হবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *