ময়মনসিংহে তিনদফা দা-বীতে বাকৃবি শিক্ষার্থীদের রেলপথ অব-রোধ, ভো-গান্তিতে যাত্রীরা

আরিফ রববানী ময়মনসিংহ।।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বিএডিসি এবং অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের দশম গ্রেডের পদগুলো শুধুমাত্র কৃষিবিদদের জন্য উন্মুক্ত রাখাসহ তিন দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা।

রবিবার (৩১আগস্ট)সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাকৃবি জব্বারের মোড়ে ঢাকাগামী হাওর এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে দিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা।

এ আন্দোলনের ফলে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথে ট্রেন চলাচল প্রায় এক ঘণ্টা বন্ধ থাকে। পরে হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনটি এক ঘণ্টা আটকে রাখাসহ দুপুর একটার দিকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা মোহনগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনটিও আটকে রাখেন শিক্ষার্থীরা।

ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আক্তার হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে বিভিন্ন স্টেশনে বেশ কয়েকটি ট্রেন আটকা পড়েছে। এতে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানায়, এই আন্দোলন ’কৃষিবিদ ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে পরিচালিত হচ্ছে। তারা বলছেন, তাদের মূল দাবিগুলো হলো—কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বিএডিসি এবং অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের দশম গ্রেডের পদগুলো শুধুমাত্র কৃষিবিদদের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।

ময়মনসিংহের জব্বারের মোড়ে ঢাকাগামী হাওর এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে বিক্ষোভ করেন বাকৃবির শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ময়মনসিংহের জব্বারের মোড়ে ঢাকাগামী হাওর এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে বিক্ষোভ করেন বাকৃবির শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
এছাড়াও, কোনো ডিপ্লোমাধারীরা যেন নামের পাশে ’কৃষিবিদ’ পদবি ব্যবহার করতে না পারেন, সে বিষয়েও তারা সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানায়- তারা তাদের পেশাগত সম্মান এবং অধিকার রক্ষা করতে চান।

রুবেল আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা দীর্ঘ পাঁচ বছর পড়াশোনা করে এই ডিগ্রি অর্জন করি। অথচ ডিপ্লোমাধারীরা যদি আমাদের মতোই পদবি ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে আমাদের এই ডিগ্রির গুরুত্ব কোথায়? আমরা চাই সরকার দ্রুত আমাদের দাবিগুলো মেনে নিক।”

সুমাইয়া আক্তার নামের শিক্ষার্থী জানান, “আমরা চাই না সাধারণ মানুষের কোনো দুর্ভোগ হোক। কিন্তু আমাদের দাবিগুলো আদায়ের জন্য এর চেয়ে ভালো কোনো উপায় আমাদের কাছে নেই। যদি সরকার আমাদের দাবিগুলো না মানে, তাহলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাব।”

শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-১. কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ও অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ১০ম গ্রেডের পদ (উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা/উপ-সহকারী বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা/সমমান) কেবল কৃষিবিদদের জন্য উন্মুক্ত করা।

২. নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়ে ৯ম গ্রেডে পদোন্নতির কোনো সুযোগ রাখা যাবে না (বিএডিসির কোটা বাতিল করতে হবে)।

৩. কৃষি বা কৃষি-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি না থাকলে নামের সঙ্গে ‘কৃষিবিদ’ পদবি ব্যবহার না করার বিষয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা।

অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

এদিকে ৩ দফা দা’বি নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ঢাকা- ময়মনসিংহ রেলপথে চলাচল ব’ন্ধ থাকার খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মফিদুল আলম ও জেলা পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম। জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম এর সাথে আলোচনার পর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ ও অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন।

তবে আন্দোলনে অংশ নেওয়া কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী মো. সানাউল্লাহ বলেন, আমরা বারবার শান্তিপূর্ণভাবে দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। বাধ্য হয়ে আজ রেল অবরোধ করেছি। আমাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে আরও কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *