August 23, 2025, 5:57 pm
মোহাম্মদ বাবুল হোসেন পঞ্চগড়:
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে চলা পতিতাব্যবসার বিরুদ্ধে অবশেষে সরব হয়েছেন স্থানীয়রা। উপজেলার ডকসাপাড়া গ্রামে শনিবার (২২ আগস্ট) রাতে জনতার হাতে এক নারীসহ আটক হয়েছেন কুখ্যাত ওসমান আলী ওরফে চান্দু মিয়া। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম পুলিশের সহযোগিতায় তাদের থানায় সোপর্দ করা হলেও মামলা নেওয়া নিয়ে টালবাহানা করছে পুলিশ বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, বোদার বামুনেরহাট এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি কালামের ছত্রছায়ায় চান্দু মিয়া দীর্ঘদিন ধরে পতিতাব্যবসা চালিয়ে আসছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী এনে এ ব্যবসা পরিচালনা করতেন তিনি।
স্থানীয়দের উদ্যোগে শনিবার রাত ৯টার দিকে চান্দু মিয়া ও এক নারীকে হাতেনাতে আটক করা হয়। পরে বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশকে জানানো হয়। রাতেই তারা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
গ্রাম পুলিশ সদস্য সামিউল ইসলাম বলেন, “স্থানীয়দের ফোন পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আটককৃতরা নিজেদের দোষ স্বীকার করে। পরে রবিবার সকাল ১০টার দিকে আমরা তাদের থানায় হস্তান্তর করি।”
ইউপি সদস্য রিনা পারভীন বলেন, “আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি স্থানীয়রা দু’জনকে আটকে রেখেছে। মেয়েটি নিজেই স্বীকার করেছে যে এটিই তার পেশা। তাদের পরিবারের লোকজনকে ডাকা হলেও কেউ আসেনি। তাই সকালে থানার হেফাজতে দেওয়া হয়।”
ঘটনার পর থেকেই স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অভিযোগ উঠেছে, থানায় নেওয়ার পরও মামলার বিষয়ে পুলিশ গড়িমসি করছে। স্থানীয়দের দাবি, থানার ওসি মামলা না নিয়ে আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এ বিষয়ে বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজীম উদ্দিন বলেন, “অবৈধ কাজ করলে তা মানুষের ঘরের ভেতর থেকে ধরতে হয়। রাস্তায় আটক করা হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। স্বীকারোক্তি দিলেই মামলা হয় না।”
পুলিশের এমন বক্তব্যে স্থানীয়রা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাদের প্রশ্ন, হাতেনাতে ধরা পড়া সত্ত্বেও স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? তারা ন্যায়বিচারের স্বার্থে উচ্চপদস্থ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
স্থানীয়রা বলেন, “আমরা বহুদিন ধরে চেষ্টা করছিলাম এই চক্রকে হাতেনাতে ধরার। অবশেষে গতরাতে সেটা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু পুলিশ যদি এখন মামলা না নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়, তাহলে ভবিষ্যতে অপরাধীরা আরও উৎসাহিত হবে। আমরা চাই, আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
ঘটনার পর থেকে এলাকায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ মনে করছেন, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের অনৈতিক ব্যবসা চালু থাকলেও প্রশাসনের চোখে তা অদৃশ্য থেকে গেছে। এবার হাতেনাতে ধরা পড়ার পরও যদি মামলা না হয়, তাহলে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা আরও কমে যাবে।
স্থানীয়দের দাবি, এ ধরনের অনৈতিক ব্যবসা সমাজকে ধ্বংস করছে। তরুণ সমাজকে অপরাধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর অবস্থান নেওয়া জরুরি।