August 18, 2025, 2:10 pm
এম এস সাগর,
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধ:
কুড়িগ্রামে অসুস্থ মায়ের সেবা করায় স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর যৌতুক মামলা। পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজন ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল মা। আমাদের সমাজে বৃদ্ধ বাবা-মাকে রাস্তায় আর বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে রাখার নিষ্ঠুরতাও নিত্য শিরোনাম। এর বিপরীতে এ সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন কুড়িগ্রামের ভারায় অটো-চালক ও হতদরিদ্র মা পাগল সাইফুল ইসলাম।
সরজমিনে গিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীর খামার আন্ধারীঝার গ্রামের দিনমজুর আব্দুল লতিফ মন্ডল ও ছকিনা বেগমের একমাত্র সন্তান সাইফুল ইসলাম। পার্শ্ববর্তী রামখানার আজমাথা গ্রামের শামসুল আলমের কন্যা মিষ্টি খাতুন কে ২০১৬সালে বিয়ে করে এবং আড়াই বছরের কন্যা সন্তান সামিয়া কে নিয়ে সংসার ভালোই চলছিল। আড়াই বছর আগে সাইফুলের মা ছকিনা বেগম ডাইবেটিস সহ বিভিন্ন রোগে শয্যাশায়ী। ছাইফুল তার মায়ের চিকিৎসায় আর্থিক ব্যয় করায় স্ত্রী মিষ্টি ও তার বাবা মা চিকিৎসা সেবায় বাধা সৃষ্টি করা সহ তাদের বাড়িতে ঘর জামাই থাকতে বলেন। উন্নত চিকিৎসার অভাবে সাইফুলের মায়ের ডান পায়ে পচন ধরে। মা পাগল সাইফুল ভারায় অটোরিকশা চালিয়ে মায়ের চিকিৎসা সেবা এবং সংসারের বোঝা টেনে আসছেন। সাইফুল তার শয্যাশায়ী মায়ের চিকিৎসার কারণে গত ১এপ্রিল ২০২৪সালে মিষ্টি তার স্বামীর বাড়ী থেকে বাবার বাড়িতে পালিয়ে যায়। আন্ধারীঝার এলাকার সামিউল হক খোকা মুহুরী, মিজু মাস্টার, বাদল হোসেন, আজাহারুল ইসলাম স্থানীয়ভাবে কয়েকবার সালিশি বৈঠকে মিষ্টি ও তার পরিবার জানায়, সাইফুলের শেষ সম্বল ৩শত বসতবাড়ি লিখে দেয়া সহ ঘরজামাই থাকতে হবে। অন্যথায় ঘর-সংসার সম্ভব না। সাইফুল জানায় তার শয্যাশায়ী মাকে বুকে আগলে রাখবেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শামসুর আলম তার কন্যা মিষ্টি কে দিয়ে সাইফুল ও তার বাবা আব্দুল লতিফকে বিবাদী করে মনগড়া একটি যৌতুক মামলা করেন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
স্থানীয় বাদল হোসেন, সাইফুর ইসলাম, আব্দুল আলিম বলেন, সাইফুল তার মায়ের সেবার কারণে স্ত্রী চলে যায়। কুড়িগ্রামে মিথ্যা যৌতুক মামলা করে হয়রানি করছে। ছোটকাল থেকে সাইফুল অনেক দুঃখ-কষ্টে মানুষ হয়েছে। যে পরিবারে বিয়ে করেছেন সে পরিবার অত্যন্ত লোভী।
সাইফুল ইসলামের নানী সাহেরা বেগম আমার মেয়ের ডাইবেটিস রোগে পায়ে ঘা হয়েছে। আমার নাতি ভুরুঙ্গামারী থেকে রংপুর পর্যন্ত সাইফুল মায়ের চিকিৎসা করায় স্ত্রী মিষ্টি বেগম বলছে হয় মায়ের সংসার করো নয়তো আমার সংসার করো। সাইফুল ইসলামের বাবা আব্দুল লতিফ মন্ডল বলেন, আমার ছেলের বউ আমার স্ত্রীর সেবা করে না। বসতবাড়ি ৩শতক জমিও তার নামে লিখে চায়। মায়ের সেবা করার কারণে মিষ্টি বাদী হয়ে আদালতে আমার এবং আমার ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা যৌতুক মামলা করে। সাইফুল ইসলামের মা ছকিনা বেগম এবং সাইফুল ইসলাম বলেন, ছেলেকে ওদের বাড়ি যেতে বলে। আমার চিকিৎসা করতে না বলে আমি মরে যামু গা। আমার সেবার কারণে আমার সাইফুল এখন মিথ্যা যৌতুক মামলার আসামি। আমার মা ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে ডান পা পৌছে গেছে। মায়ের চিকিৎসা সেবার কারণে আমার স্ত্রী মিষ্টি বেগম তার বাবা মায়ের ও পরামর্শে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে আমার এবং আমার বাবার নামে মিথ্যা যৌতুক মামলা করে।
মিষ্টি খাতুনের বাবা শামসুল আলম বলেন, আমার মেয়ে জামাই সাইফুল তার সব টাকা-পয়সা খরচ করে তার অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা করছে। টাকা শেষ করলে আমার মেয়ে কি খাবে। সাইফুল তার অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা করার জন্য আমার মেয়ে কে সংসার করতে দেবো না। তাই আদালতে যৌতুক মামলা করেছি। যেমনে পারি সাইফুলকে একটা শিক্ষা দেব।
স্থানীয় প্রধান সামিউল হক খোকা মুহুরী, মিজু মাস্টার, আজাহারুল ইসলাম জানায়, ২/৩বার সংসার গড়তে সালিশ হয়েছে। মিষ্টি বেগম ও তার বাবা-মায়ের কথা অসুস্থ মাকে ফেলে দিয়ে ঘর জামাই হয়ে সাইফুলকে থাকতে হবে। সাইফুল তার মায়ের চিকিৎসা করার কারণে তারা মিথ্যা যৌতুক মামলায় আসামি হয়েছেন। প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন তারা।