August 15, 2025, 6:55 pm

বিজ্ঞপ্তি :
বিশেষ সতর্কীকরন - "নতুন বাজার পত্রিকায়" প্রকাশিত সকল সংবাদের দ্বায়ভার সম্পুর্ন প্রতিনিধি ও লেখকের। আমরা আমাদের প্রতিনিধি ও লেখকের চিন্তা মতামতের প্রতি সম্পুর্ন শ্রদ্ধাশীল। অনেক সময় প্রকাশিত সংবাদের সাথে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে। তাই যেকোনো প্রকাশিত সংবাদের জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। নতুন বাজার পত্রিকা- বাংলাদেশের সমস্ত জেলা, উপজেলা, ক্যাম্পাস ও প্রবাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! বিস্তারিত: ০১৭১২৯০৪৫২৬/০১৯১১১৬১৩৯৩
শিরোনাম :
কুমিল্লায় জেলা ক্রীড়া সংস্থা ছা-ড়া গ্রাম বাংলা থেকে হারি-য়ে যাচ্ছে হাডুডু, ফুটবল শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দুদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তারেক রহমান স্বরূপকাঠী পৌর বিএনপির নবগঠিত কমিটিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আ-লোচনায় মাহমুদ হোসেন র‌্যাব-১২ এর অভি-যানে ২৯৮০ পিচ ইয়া-বা ট্যাবলেটসহ ২ জন মা-দক ব্যবসায়ী গ্রে-ফতার ঋ-ণ ও খাওয়ার অ-ভাবে পরিবারকে হ-ত্যা করে আত্মহ-ত্যা করল কর্তা বাবুগঞ্জে দোয়ারিকা সেতুর নিচে বিটুমিন মিক্সচার প্লান চু-রি, ২ চো-র আ-টক বেগম খালেদা জিয়া রাজ-নীতির আ-লোকবর্তিকা, আ-স্তার প্রতীক বেগম খালেদা জিয়ার ৮০ তম জন্মবার্ষিকীতে চাঁদপাই ইউনিয়ন বিএনপির আ-লোচনা ও দো-য়া শার্শার ব-ন্যা উপদ্রু-ত এলাকা পরি-দর্শনে মাওলানা আজিজুর রহমান শেখ হাসিনা জনগণের বন্ধু হতে পা-রেনি – গণশ-ত্রু জনশ-ত্রুতে পরিণত হয়েছে :এ্যানি
বেগম খালেদা জিয়া রাজ-নীতির আ-লোকবর্তিকা, আ-স্তার প্রতীক

বেগম খালেদা জিয়া রাজ-নীতির আ-লোকবর্তিকা, আ-স্তার প্রতীক

লেখকঃ মোঃ হায়দার আলীঃ কি নিয়ে লিখবো ভাবছিলাম, যেন ঠিক করতে পারছিলাম না। আজ শুক্রবার মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায়ের পর বাসায় এসে টিভি, স্থানীয় ও জাতীয়, অনলাইন পত্রিকা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাবে প্রচারিত হচ্ছিল বেগম খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকীর বিষয়ে। তাই এবিষয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে লিখা শুরু করলাম। জানি না পাঠকগন কতটা উপকৃত হবেন।

বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৫ আগস্ট তিনি পা রাখবেন ৮১ বছরে। জাতীয়তাবাদী শক্তির অবিসংবাদিত আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন এবার এমন একসময় উপস্থিত হয়েছে যখন পতিত শেখ হাসিনা সরকারের রাজনৈতিক রোষানলে পড়ে বিনা বিচারে দীর্ঘকাল অসুস্থ অবস্থায় বন্দি জীবন যাপন শেষে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর মুক্ত জীবন ফিরে পেয়েছেন তিনি। মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট অবিভক্ত ভারত বর্ষের জলপাইগুঁড়ির নয়াবস্তির ছোট্ট শহরে বেগম জিয়ার জন্ম হয়।

বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর হাত ধরেই বাংলাদেশে বিকশিত হয়েছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ‘আলোকবর্তিকা’ হিসেবে একজন আপসহীন নেত্রীর দেখা পেয়েছে এদেশের মানুষ। স্বৈরাচারের পতনের পর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রথম নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার উপর আস্থা রেখেছেন তারা।

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তম-এর উদ্যোগে বহুদলীয় গণতন্ত্রের শুরুটা হলেও বাধাগ্রস্ত হয় স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের অবৈধ ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে। স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে টানা নয় বছরের সংগ্রামের মাধ্যমে কয়েক দফা কারাবরণ করেন আপসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

আশির দশকের শুরুতেই স্বামী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হারিয়ে অল্প বয়সে বিধবা হয়ে দুই সন্তানকে নিয়ে জীবন সংগ্রাম শুরু করতে না করতেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে যখন অন্ধকারের পথে দেশের রাজনীতি, তখন আলোকবর্তিকা হয়ে সামনে আসেন বেগম খালেদা জিয়া।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করতে ঘরকন্না থেকে রাজপথে নেমে আসেন দেশের রাজনীতির এই আপসহীন নেত্রী।
নীতি ও আদর্শে অটুট থাকায় তিনি আপসহীন নেত্রী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। বেগম খালেদা জিয়া তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে তিনি তিন দশকের বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৮২ সালের ২ জানুয়ারি খালেদা জিয়া বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে যোগ দেন। বছরখানেক যেতে না যেতেই নিজের রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় প্রশংসা অর্জন করেন। পরের বছর মার্চে তিনি দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদোন্নতি পান। এক মাস পর ১ এপ্রিল তিনি দলের বর্ধিতসভায় প্রথম বক্তৃতা করেন।

রাজনীতিতে বেশ সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন তিনি। চারবারের সংসদে পাঁচটি করে আসনে বিজয়ী হন তিনি। আর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনবার দেশ পরিচালনায় নেতৃত্ব দেন। আর সেই আপসহীন নেতৃত্বকেই এদেশের জনগণ রায় দিয়েছিলো একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে সরকার গঠনের জন্য।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন একটা ভয়ংকর রকমের অরাজকতা ও দেউলিয়াত্ব চলছে। গত বছর জুলাই আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের কণ্ঠোচ্চারিত ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’ বিখ্যাত স্লোগানের কথা সবার মনে আছে। একটি বছর পার হয়ে গেল শিক্ষার্থীরা কি সে অধিকার পেয়েছে।

সাম্প্রতিক গোপালগঞ্জে এনসিপির দলীয় সভার ওপর ছাত্রলীগের ক্যাডাররা যেরূপ হামলা চলিয়ে মারপিট ও ভাঙচুর করেছে, তাতে মনে হতে পারে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়েছেন, কিন্তু ফ্যাসিবাদ রেখে গেছেন। খুনখারাবি, চুরিডাকাতি, চাঁদাবাজি, ঘুষ, অবৈধ দখল নারীনির্যাতন, দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদির বিরুদ্ধে আন্দোলন হলো, তা তো বন্ধ হয়নি, বরং অনেককিছু বেড়েই চলেছে। তবে প্রশ্ন এসে যায় আন্দোলনে শত শত নিরীহ ছাত্রজনতা প্রাণ দিল কেন? শত সহস্র আহতের আর্তনাদ ও আহাজারি এখনো থামেনি। যে আশা ভরসা স্বপ্ন নিয়ে লোকজন জীবনবাজি রেখে আন্দোলন করলো, তা কি ভোগ করতে পারছেন?

জাতীয় নির্বাচনে দল পরাজিত হলে গণতন্ত্রের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে সরে যান। অপর দিকে শেখ হাসিনা করেছেন উল্টোটা। তাঁর আমলের তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে ২০১৪ সালের নির্বাচন ছিল বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও জালভোটের, ২০১৮ সালের নির্বাচন ‘রাতের ভোটের’, ২০২৪ সালের নির্বাচন আমি, মামি, ‘ডামি ভোটের’। বিএনপিসহ বিরোধী বহু রাজনৈতিক দল সরকারকে ‘অবৈধ সরকার’ বলে আখ্যায়িত করে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি জানালেও শেখ হাসিনা কর্ণপাত না করে রাষ্ট্রক্ষমতা কুক্ষিগত করেন এবং গুম-খুন, হামলা-মামলা,জেল-জুলুম,দখলদারি-চাঁদাবাজি ইত্যাদি দমনপীড়ন-শোষণশাসন নীতি গ্রহণ করে একনায়কতন্ত্র কায়েম করেন। শুধু তাই নয়, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলিকে দলীয়করণ করে ছদ্ম একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। বছরের পর বছর ধরে সর্বস্তরের মানুষের জমানো ক্ষোভ-বিদ্বেষ থেকে জুলাই ’২৪ এর ছাত্র-জনতার সম্মিলিত গণঅভ্যুত্থান হয়, জনরোষে পড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চরম অপদস্ত হয়ে গদি ছেড়ে স্বৈরাচার আখ্যা নিয়ে ভারতে পালাতে বাধ্য হন। তাঁর প্রতি জনগণের ন্যূনতম শ্রদ্ধা বা সহানুভূতি ছিল না। তাঁর রাষ্ট্রীয় আবাস গণভবন, নিজস্ব বাসভবন, পিতৃভবন পুড়িয়েছে, তাঁর প্রতিকৃতিতে জুতা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ক্ষান্ত হয়নি, জুতার মালা পরিয়েছে। এ সবকিছুই ছিল জনগণের প্রচন্ড ক্ষোভ ও ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ। পালাবার সময় তিনি নিজে কাঁদলেন, আর কারো চোখ থেকে এক ফোটাও অশ্রু ঝরেনি। আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা তখন বিজয়ানন্দে উল্লাসে-উচ্ছ্বাসে বিভোর। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস!

দলগতভাবে বিএনপি এবং ব্যক্তিগতভাবে খালেদা জিয়া ছিলেন শেখ হাসিনার চক্ষুঃশূল। ক্ষমতায় থেকে তিনি খালেদা জিয়াকে অমার্জিত ভাষায় কেবল হেনস্থা করেননি, রাষ্ট্রের বরাদ্দকৃত বাসভবন থেকে উৎখাত করেছেন, মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে জেলে পুরেছেন, নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হলে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছেন। জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন চালিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে, তিনি এখনও বিদেশেই রয়েছেন। তাঁর লক্ষ্য ছিল বিএনপিকে নেতৃত্বশূন্য করে ধ্বংস করা।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তিত হলে বেগম খালেদা জিয়া কারামুক্ত হন। তিনি সম্প্রতি বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরেছেন। গুলশানের বাসা-এয়ারপোর্ট যাতায়াতের সময় রাজপথে জনতার ঢল নেমেছিল। এ ছিল তাঁর প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা-ভালবাসার প্রতিফলন, যা তিনি ক্ষমতায় এবং ক্ষমতার বাইরে থেকে অর্জন করেছেন। কারামুক্তির পর তিনি প্রতিহিংসা থেকে বিরত থাকতে দলের নেতাকর্মীদের ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান, যা ছিল তাঁর স্বভাবসুলভ বদান্যতা ও মহানুভবতা। তিনি ঐ সময় জনগণের মধ্যে ঐক্য ও দেশের প্রতি ভালবাসার কথা বলেন। আমরা তাঁকে কখনো কারো প্রতি কটাক্ষ বা মুখখিস্তি করে কথা বলতে শুনিনি। স্বৈরাচার নয়, শীলাচার ও সদাচার তাঁর ভূষণ, যা তিনি পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে পেয়েছেন।

রাজনীতিতে নেমেই বেগম খালেদা জিয়া হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল ও অগণতান্ত্রিক রাজনীতির বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেন এবং তাঁর অধীনে সকল প্রকার নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন। নানাবিধ অপশাসন ও অপকর্মের জন্য এরশাদ ‘স্বৈরাচার’ খেতাব পেয়ে যান; ‘বিশ্ববেহায়া’ তাঁর অপর তকমা। স্বৈরশাসকের সঙ্গে কোনো আপোস চলে না। ১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ
নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করে। অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলনের মাধ্যমে এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রবর্তন করতে সক্ষম হন। তিনি ১৯৯১ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে জয়ী হন ও সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রীর পদ আলংকৃত করেন। বেগম খালেদা জিয়া তাঁর নীতিতে অটল থেকে যেরূপ অনমনীয় মনোবল ও সাহসিকতার পরিচয় দেন, তার ফলে দেশবাসী তাঁকে ‘আপোসহীন দেশনেত্রী’ আখ্যায় ভূষিত করে। বর্তমানে দেশে জাতীয় নির্বাচনের ঢেউ উঠতে শুরু করেছে। এটা হবে জাতীয় সংসদের ১৩তম নির্বাচন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস সরকারের এক বছর পূর্তিতে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। উপরন্তু তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দ্রুত একটি ‘ইলেকশন অ্যাপ’ চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। অপরদিকে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির দিকে জাতীয় নির্বাচন হবে। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচন কমিশন গত ১০ আগস্ট হালনাগাদ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে। এ তালিকা মতে, বর্তমানে দেশে ভোটারের সংখ্যা ১২ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার ৯০০। তথ্যে ভুল থাকলে সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে ১২ দিন। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা আগামী ৩১ আগস্ট প্রকাশিত হবে। এবারের হালনাগাদ ভোটার তালিকায় সর্বপ্রথম প্রবাসীরাও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার আগেই দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দ করা প্রতীকসহ ব্যালট পেপার প্রবাসী ভোটারদের কাছে পাঠানো হবে বলে ইসি জানিয়েছে। এটা প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন। সরকারের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ইতিহাসের সবচেয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন। অর্থ বিভাগ নির্বাচন পরিচালনার প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করেছে। সরকারের নির্বাচনের ঘোষণাকে দেশের সব রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ স্বাগত জানিয়েছে।

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের কাজকর্ম ইসি কর্তৃক স্থগিত করা হয়েছে। তবুও দলটির কাজকর্ম বন্ধ হয়নি। গোপনে চলছে। কলকাতায় অফিস খুলে দলের নিয়মিত কার্যক্রর্ম পরিচালনা করছে। তাতে ভারতে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। দেশের অনেক মিডিয়াতেও বিষয়টি হাইলাইট হয়েছে। উপরন্তু দেশে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদের সাথে হাসিনা ও কিছু নেতা টেলিফোনে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করছে এবং নানা অপতৎপরতা তথা নাশকতা চালানোর উসকানি দিচ্ছে। তাই আওয়ামী লীগের কার্যক্রমের উপর স্থগিতাদেশ দিয়ে খুব একটা লাভ হচ্ছে না। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর ইতিহাসের ঘৃণ্যতম অপশাসন চালানোর পরও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ফ্যাসিবাদী মনোভাব এতটুকু কমেনি। এত হত্যা-নির্যাতনেও মোটেই তাদের অনুশোচনা নেই। আওয়ামী লীগের সব ধরনের অপকর্মে ভারতের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তাই আওয়ামী লীগের সাথে ভারতপন্থী খ্যাত বামপন্থীরা এবং জাতীয় পার্টির সখ্য অটুট আছে। দ্বিতীয়ত ব্যবসা, মিডিয়া ও সামাজিক সংগঠনগুলোতে আওয়ামী লীগ ও তার ঘরানার শক্তি বেশি। এই অবস্থায় গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ তাদের পতনের দিন ঢাকার শাহবাগে কয়েক লাখ লোকের সমাবেশ ঘটিয়ে ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। কিন্তু পরিকল্পনাটি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সরকারের কঠোর পদক্ষেপের কারণে তা ভেস্তে গেছে। কিন্তু তাদের সে পরিকল্পনা পরিত্যক্ত হয়নি। বলবত রয়েছে। তাই যে কোনো সময় সুযোগ পেলেই বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করবে।

বর্তমানে দেশে সর্বাধিক জনপ্রিয় দল বিএনপি। দলটির ব্যাপক জনসমর্থন থাকলেও সেভাবে সাংগঠনিক শক্তি গড়ে উঠেনি। মূল দলসহ সব অঙ্গ সংগঠন দুর্বল। তাই সমর্থকদের বেশিরভাগ ভাসমান, যাকে বলে আওয়ামী লীগ ঠেকাও সমর্থন। বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতার প্রধান কারণ হচ্ছে, দলটির বেশিরভাগ নেতাকর্মী ফুল টাইম রাজনীতিবিদ নন, পার্টটাইম রাজনীতিবিদ। অধিকাংশই ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িত। সরকারের সাবেক আমলার সংখ্যাও অনেক। নেতাদের বেশিরভাগ থাকেন ঢাকায়। জীবনযাপন করেন আলীশানভাবে। নিজস্ব কাজ শেষে দলে একটু সময় ও অর্থ দেন। নির্বাচন এলে মনোনয়ন পান, গণপ্রতিনিধি হন, ক্ষমতায় গেলে মন্ত্রী হন। কিন্তু তাদের সাধারণ মানুষের সাথে সম্পর্ক খুব কম। দলে তাদের প্রধান কাজ নেতাদের মোসাহেবি করা। দলটির প্রচার মাধ্যমও তেমন নেই। যেটুকু আছে তা শক্তিশালী নয়। দেশের বেশিরভাগ ইসলামপন্থী দলেরও একই অবস্থা। দু’চারটি রাজনৈতিক দল ছাড়া বেশিরভাগ দলের স্থানীয় পর্যায়ে কোনো সাংগঠনিক ভিত্তি নেই। অফিসও নেই। তাই স্থানীয় নির্বাচনে দু’চারটি আসনও পায় না। বিএনপি সর্বাধিক জনপ্রিয় দল হিসেবে নির্বাচনে এককভাবে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার অবস্থানে রয়েছে।

পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, ভোটের দিন যত এগিয়ে আসবে, বিএনপির প্রতি ভোটারদের সমর্থনের হারও ততই বাড়বে। বিএনপিকে নিজের দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। বিশেষ করে, প্রচারের দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, আধুনিক যুগে প্রচারণার গুরুত্ব অপরিসীম। মিথ্যা-প্রোপাগান্ডা তথা অপতথ্যকে প্রকৃত তথ্য দিয়ে মোকাবেলা করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

‘বিএনপির চেয়ারপারসন হিসাবে বেগম খালেদা জিয়ার উপস্থিতি দলের এবং দেশবাসীর জন্য এক পরম ভরসা। তিনি অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ, তাঁর জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত, ভাবমর্র্যাদা অবিতর্কিত। তিনি আছেন, যেন মাথার ওপর একজন অভিভাবক আছেন। আজ জনগণের কাছে একমাত্র তিনিই ‘আস্থার প্রতীক’। তিনি রাজনীতিবিদদের আলোকবর্তিকা।

লেখক: মো. হায়দার আলী।।

Please Share This Post in Your Social Media






© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY AMS IT BD