August 5, 2025, 10:06 pm
বানারীপাড়া প্রতিনিধি//
বাংলাদেশে ৫ই জুলাই ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে যে অগ্নিৎপাত, তা অচিরেই রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে। রাজপথে নামেন লাখো ছাত্র, যুবা ও সাধারণ মানুষ। সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ঝরে যায় শত শত প্রাণ। তবু দমানো যায়নি জনতার বিক্ষোভ।১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ বুক পেতে দাঁড়ালে, নিরস্ত্র এ তরুণকে সরাসরি গুলি করে হত্যা করে । আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পরে। পূর্বের আক্রোশ ও দীর্ঘ পরিকল্পনায় ১৮ জুলাই বানারীপাড়ায় দুঃসাহসিকতা দেখিয়ে সাব্বির, আতিক,আরিফ ও নাঈম সহ কয়েক জন ছাত্রের নেতৃত্বে উপজেলায় দুইটি মিছিল বের হয়।যার একটি বানারীপাড়া পৌর শহরের দক্ষিণ নাজিরপুর থেকে অন্যটি চাখার সরকারি ফজলুল হক কলেজ ক্যাম্পাস থেকে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। উভয় স্থলেই পুলিশি বাঁধা থাকলেও সরকারি ফজলুল হক কলেজের শিক্ষার্থীদের উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এসময়ে সামনের সারিতে থাকা শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন লাঠির আঘাতে গুরুতর আহত হয়। এছাড়াও শেখ তারেকসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয় এবং দ্রুত শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পরে। এতে ওই সময়ে পুলিশ আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী শিক্ষার্থীদের নাম,ঠিকানা নিয়ে করে দিনরাত বাড়ি বাড়ি তল্লাসি চালায়। ঘর ছাড়া বানারীপাড়ার নেতৃত্ব দানকারী ছাত্ররা আন্দোলন না থামিয়ে বরিশাল নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে ১৮ জুলাই থেকে ৩ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সক্রিয় থাকতেন। হাসিনা সরকার কারফিউ জারি করার পরও ৪ আগস্ট সাধারণ ছাত্র জনতার নিজ এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো অবরোধ করে হাসিনা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে নেমে পরে। বানারীপাড়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে যোগাযোগ রেখে সরকারি ফজলুল হক কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছাত্রনেতা সাব্বির হোসেন একত্রিত হয়ে উপজেলার গুয়াচিত্রা বাজারের ত্রিমুখী সড়কে অবস্থান নেয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সাথে সম্মুখ লড়াইয়ে পরাজয় স্বীকার করে। পুলিশ বাধাঁ দিলে ছাত্র জনতা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের সামনে তারাও বাধ্য হয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়।
১৮ জুলাই থেকে ৪ আগস্টের দীর্ঘ সময়ে ছাত্রনেতা সাব্বির হোসেনের বাড়িতে পুলিশের বারবার তল্লাশিতে ফেরারির মতো ঘর ছাড়া হয় সাব্বির। আদরের বড় ছেলে কলেজ শেষে বাড়িতে না ফেরায় তার পিতা আব্দুস ছালাম পাগলের প্রহর গুনতেন ছেলে ঘরে ফিরে আসার।আর যখনই সে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর শুনতেন নির্বাক হয়ে চোখের অশ্রু ঝড়াতেন।
নির্বিচারে গুলি চালিয়ে জনস্রোত থামানোর চেষ্টায় ব্যর্থ হয় রাষ্ট্রযন্ত্রের,দিনশেষে সেই ত্যাগ আর সংগ্রামের বিনিময়ে জয় ছিনিয়ে আনে ছাত্র-জনতা। গণআন্দোলনের মুখে নতি স্বীকার করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের পতন ঘটে।
৫ আগস্ট, সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়েন শেখ হাসিনা। ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বিমানে করে পাড়ি জমান ভারতে। তার আগেই দেশের রাজপথ জনসমুদ্র হয়ে ওঠে—কোটি মানুষের বিজয় উল্লাসে মুখরিত হয় চারদিক।এদিকে ছাত্র জনতা নিয়ন্ত্রণ নেয় গণভবনের।