August 2, 2025, 7:30 pm
খলিলুর রহমান খলিল, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনে নজির গড়েছে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা। জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের জাতীয় মূল্যায়নে উপজেলাটি দেশের দ্বিতীয় এবং রংপুর বিভাগের শীর্ষস্থান অর্জন করেছে। সদ্য সমাপ্ত এক বছরের মূল্যায়নে তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রুবেল রানা দেশ সেরা হয়েছেন।
নিবন্ধনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১৩৩ শতাংশ কাজ করে সারাদেশে দ্বিতীয় এবং রংপুর বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেছে । রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় (জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন) এবং বিভাগীয় কশিমনার কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ তথ্যটি নিশ্চিত করেছে।
সূত্রে জানা যায়, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের কাজের মূল্যায়ন প্রকাশ করা হয়। এতে ১২ মাসে লক্ষ্যমাত্রার ১৩৩ দশমিক ৪০ শতাংশ কাজ করে সারা দেশে দ্বিতীয় অবস্থান পায় রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা। আর ১৩৫ দশমিক ২২ শতাংশ কাজ করে প্রথম হয় চট্টগ্রামের বাঁশখালি উপজেলা। এবং একই জেলার সীতাকুন্ড তৃতীয় অবস্থান অর্জন করেন।
এই সাফল্য শুধু পরিসংখ্যানগত অর্জন নয়, বরং এটি তারাগঞ্জের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের নিবেদিতপ্রাণ কার্যক্রম, সচেতনতামূলক উদ্যোগ এবং স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণের ফসল। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য, সচিব, গ্রাম পুলিশ, তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা নিরলস পরিশ্রম করেছেন এই অর্জনের জন্য।
এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসগরী অঞ্চলের সব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও ২০২৪ সালের মধ্যে শতভাগ জন্ম ও অন্তত ৫০ভাগ মৃত্যু নিবন্ধনের প্রতিশ্রুতি দেয়। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকার রেজিস্ট্রার জেনারেল-এর কার্যালয় স্থাপনসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক উদ্যোগ নেয়, যার মধ্যে রয়েছে সিআরভিএস স্টিয়ারিং কমিটি গঠন, জেলা-উপজেলা প্রশাসনের কর্মসম্পাদন চুক্তিতে এ লক্ষ্য অন্তর্ভুক্তকরণ এবং চার হাজারের বেশি রেজিস্ট্রেশন সহকারীকে প্রশিক্ষণ প্রদান।
এসব উদ্যোগে ২০২১-২০২৩ সালে নিবন্ধনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যায়, ২০২১ সালে জন্ম ২৯ ভাগ ও মৃত্যু ৩৯ ভাগ, ২০২২ সালে জন্ম ৫৮ ভাগ ও মৃত্যু ৪২ ভাগ, ২০২৩ সালে জন্ম ৫৪ ভাগ ও মৃত্যু ৪৯ ভাগ। একটি ত্রৈমাসিকে জন্ম নিবন্ধনের হার ৯০ ভাগ পর্যন্ত উঠলেও ধারাবাহিকতা রক্ষা সম্ভব হয়নি। ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন যথাক্রমে ৫২ ভাগ ও ৫৪ ভাগ।
রংপুর বিভাগ উল্লেখযোগ্যভাবে পিছিয়ে: ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে রংপুরে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন মাত্র ৩২ভাগ ও ৩৫ভাগ এবং রংপুর জেলায় আরও কম: ২৪ ভাগ ও ২৮ ভাগ। তবে ২০২৩ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে রংপুর জেলা জাতীয়ভাবে শীর্ষে ছিল (জন্ম ১৭৭ ভাগ, মৃত্যু ১৫৩ ভাগ)-যা টেকসই হয়নি। ২০২৫ সালের ১৩৩ শতাংক কাজ করে দেশের দ্বিতীয় অবস্থান অর্জন করে রংপুর।
তারাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল রানা বলেন, “এই সাফল্য কেবল প্রশাসনের নয়-এটি তারাগঞ্জবাসীর সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। আমি প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদ, উদ্যোক্তা, গ্রাম পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা চাই, এই ধারা যেন সামনের দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকে।”
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে ইকরচালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইদ্রিস উদ্দিন বলেন, “নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে এই নিবন্ধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা স্কুলে ভর্তি, পাসপোর্ট করা, জমি নিবন্ধন, এমনকি বিভিন্ন সরকারি সেবা গ্রহণেও অপরিহার্য।”
সয়ার ইউনিয়নের উদ্যোক্তা সাদ্দাম হোসেন বলেন, “ডিজিটাল নিবন্ধন ব্যবস্থার ফলে সাধারণ মানুষ এখন দ্রুত ও নির্ভুলভাবে সেবা পাচ্ছে। আমরাও নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ পেয়ে কার্যক্রমকে আরও সহজ ও জনবান্ধব করতে পারছি।”
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি ইউনিয়নে জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে এবং মৃত্যুর ৩০ দিনের মধ্যে নিবন্ধনের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এ লক্ষ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে গণসচেতনতা কার্যক্রম, স্কুল-কলেজে প্রচার, গ্রাম পুলিশদের মাধ্যমে ঘরে ঘরে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে সহজীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
একসময় তারাগঞ্জের বেশ কিছু ইউনিয়নে জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন ছিল উপেক্ষিত ও অনিয়মিত একটি প্রক্রিয়া। তবে গত এক বছর ধরে কঠোর তদারকি, নিয়মিত মনিটরিং এবং পুরস্কারপ্রাপ্তির সুযোগ তৈরি হওয়ায় প্রতিযোগিতার মনোভাব জন্মেছে ইউনিয়নগুলোর মধ্যে। তার ফলেই আজকের এই জাতীয় স্বীকৃতি।
উপজেলা প্রশাসন আশা করছে, আগামী বছরগুলোতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তারাগঞ্জ জাতীয় পর্যায়ে আরও এগিয়ে যাবে। একইসঙ্গে অন্যান্য উপজেলাগুলোর জন্য এটি একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।