রাজশাহী থেকে মোঃ হায়দার আলীঃ রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ৫৪ বছরের ঘাটপ্রথা অবসানের অপেক্ষায় তীর্থের কাঁকের মত চেয়ে আছেন পদ্মানদীর ওপারের চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ।
গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ, কাঁনাপাড়া, মধ্যচর, মানিকচক, চাঁপাই নবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ঝালিয়াপাড়া, ক্লাবঘাট, আলাতুলি প্রভূতি এলাকার বিভিন্ন পেশার মানুষ, শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন একাধিক বার নদী পারাপার হতে হয়। চরাঞ্চলের উৎপাদিত ফসল, গরু ছাগল হাঁস মুরগিসহ আসবাবপত্র নদীর এপার থেকে ওপারে অথবা ওপার থেকে এপারে আনা নেয়া করতে হয়। এ সুযোগে ঘাট ইজারাদারগণ সরকার নির্ধারিত টোল না নিয়ে ইচ্ছামত মনগড়া জোরপূর্বক বেশী করে টোল আদায় করে আসছিল। এমন কি কয়েকটি মুরগি, দৈনিক বাজার করে নিয়ে গেলেও টোল নেয়া হতো। নির্যাতিত বিভিন্ন পেশার মানুষ কয়েক মাস আগে বাস, ট্রাক ভাড়া করে রাজশাহীতে গিয়ে মিটিং মিছিল, বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করেছিলেন। রেলওয়ে বাজার, বিদিরপুর, গোদাগাড়ী, সুলতানগঞ্জ
ঘাট ইজারাদারগণের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছিল।
স্থানীয় প্রভাবশালীদের এমন চাপে অতিষ্ঠ হয়ে কয়েক মাস ধরে ঘাট ইজারা প্রথা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু হলে সাড়া দেয় প্রশাসন। বন্ধ হয় ঘাটপ্রথার নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়। তবে ভোগান্তির স্থায়ী অবসান চান রাজশাহীর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নবাসী।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সরেজমিনে চরবাসীর বক্তব্য শুনতে চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যান রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের প্রতিনিধিদল। এ সময় স্থায়ীভাবে ঘাটপ্রথা বাতিলের দাবিতে ব্যানার-ফেস্টুন হাতে দাঁড়ান স্থানীয়রা।
জানা গেছে, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিবছর ঘাটটি ইজারা দেওয়া হতো। ইজারামূল্য বেশি হওয়ায় এবার দরপত্রে কেউ আগ্রহ না দেখালে স্থানীয়ভাবে কয়েকজনকে ২৮ দিনের জন্য দেড় লাখ টাকায় ঘাটটি ইজারা দেওয়া হয়।
প্রশাসনের নির্ধারিত ভাড়া ছিল ৫ টাকা, অথচ আদায় হচ্ছিল ২০ টাকা পর্যন্ত। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় শুরু করায় চরবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ফের আন্দোলনের মুখে তিন মাস আগে ঘাটের ইজারা বাতিল করে জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি।
সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য জোহরুল ইসলাম বলেন, গতকাল রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ কয়েকজন কর্মকর্তা ইউনিয়ন পরিষদে এসেছিলেন ঘাটের স্থায়ীসমাধানসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়েছে
ঘাট ইজারাদারদের অত্যাচার নীলকরদের অত্যাচারকে হার মানিয়েছিল। তাদের সাথে বসে কয়েকদফা বসে বুঝানো হয়েছিল কিন্তু তারা অতিরিক্ত, মনগড়া টোল উঠানো থেকে বিরত থাকেন নি। কয়েক মাসের আন্দোলনের সুফল হিসেবে চরাঞ্চলের গত ৫৪ বছরের অত্যাচার থেকে মুক্তি পাবেন।
চরের বাসিন্দা আবদুল্লাহীল কাফি বলেন, ‘ঘাটমালিকদের কাছে আমরা জিম্মি। সরকার নির্ধারিত ভাড়া মানা হয় না, জোর করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। এ অবস্থার স্থায়ী সমাধান চাই।’
বেসরকারি স্কুল, কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, আমরা শিক্ষার্থী আমাদের কোন ছাড় দেয়া হয় না। প্রতিদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আসতে যেতে ঘাট মালিকদের দিতে হয় ৪০ টাকা, অন্যান্য ব্যয়সহ ১দিনে ১০০ টাকা গরীব বাবা মা কোথা থেকে দিবেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘চরবাসীর ভোগান্তি লাঘবে আমরা চেষ্টা করছি। ঘাট ইজারা প্রথা স্থায়ীভাবে বাতিলের সুপারিশ পাঠানো হবে স্থানীয় সরকার বিভাগে।’@
এ সময় রাজশাহীর স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক মো. জাকিউল ইসলাম, জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজা হাসান এবং গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল আহমেদ উপস্থিত ছিলেনফয়সাল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
মোঃ হায়দার আলী
নিজস্ব প্রতিবেদক,
রাজশাহী।
Leave a Reply