৭০ বছর পর আদালতের মাধ্যমে জমি ফিরে পেলেও ,প্রতিনিয়তই দিচ্ছে প্রা-ণনাশের হু-মকি

খলিলুর রহমান খলিল, নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
দীর্ঘ ৭০ বছর আইনি লড়াই শেষে পৈত্রিক জমি ফিরে পেলেও স্বস্তি মেলেনি মো. আব্দুল জব্বারের পরিবারের। জমি দখলমুক্তির দিনই হামলার শিকার হন তিনি। এরপর থেকে প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে দিন কাটছে পরিবারটির।

আব্দুল জব্বার রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের বেলাইচন্ডী সর্দারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। বয়স ৬৮ বছর। খড়ের ছাউনি দেওয়া মাত্র ১০ হাতের একটি ঘরে স্ত্রী ও চার সন্তানকে নিয়ে অমানবিক পরিস্থিতিতে বসবাস করছিলেন তিনি। গোসল করতে হতো পাশের সেচ ক্যানেলে, প্রাকৃতিক কাজ সারতে হতো ঝোপঝাড়ে। অন্যের নলকূপের পানি দিয়েই চলছিল তাদের জীবন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, খড়ের ছাউনি দেওয়া ১০ হাত একটি ঘরে তিন মেয়ে এক ছেলেকে নিয়ে থাকতেন আব্দুল জব্বার। জায়গার অভাবে গোসল করতেন সেচ ক্যানেলে। স্ত্রী সন্তানদের প্রাকৃতিক কাজ সারতে হতো ঝোপঝাড়ে। অন্যের নলকূপের পানি দিয়ে চলতো জীবন। অথচ নিজের বাপদাদার জমি দখল করে নিয়ে কোন ঠাকা করে রেখেছিল দুর্বৃত্তরা।

জানা যায়, তার দাদা জমির উদ্দিনের নামীয় ৬৮ শতক জমি দীর্ঘদিন ধরে দখলে রেখেছিল স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র। এ নিয়ে প্রায় ৭০ বছর আগে মামলা হয়। একে একে মামলার বাদী হন জমির উদ্দিনের ছেলে তমিজ উদ্দিন ও পরে তার ছেলে আব্দুল জব্বার। ২০১৫ সালে মামলার দায়িত্ব নেওয়ার পর সম্প্রতি আদালতের রায়ে জব্বারের পক্ষে জমি ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ আসে।

গত ১৩ জুলাই উপজেলা জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, থানা পুলিশ ও আদালতের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে জমিটি পুনরুদ্ধার করে তার দখলে দেওয়া হয়। কিন্তু একই দিন বিকালে প্রতিপক্ষ হামলা চালায়। বর্তমানে তারা বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ পরিবারের।

এ ঘটনায় তারাগঞ্জ থানায় গত বৃহস্পতিবার রাজু, জামাল উদ্দিন ওরফে টোল্লা, দুলু, খোকন সরদার, রেজাউল হোসেন, রফিক আলী, চন্টু, কালা মিয়া, জিকরুল ইসলাম, জিয়ারুল ইসলাম, সম্ভারু, আরজিনা বেগম, দুলালী বেগম, রফিকা বেগম, মশিয়ার রহমান ওরফে কালুয়া, লাল বাহাদুর, মাসুদ ও আফেজা বেগমসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

আব্দুল জব্বার বলেন, “আমার বাপ-দাদার জমি আমি ফেরত পাইলাম, কিন্তু এখনো শান্তিতে থাকতে পারছি না। ছোট একটা ঘরে থাকি, ওরা ধোঁয়ায় ঘর ভরায় দিতো, জায়গা চাইলেও দেয়নি। এখন তো মারতেই আসছে। খুব ভয় লাগছে। আমাকে রাস্তায় মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। জমিতে যাইতে দিচ্ছে না। ”

তার মেয়ে জেসমিন আক্তার বলেন,”প্রতিদিন হুমকি দেয়। পুলিশের সামনেই হামলা করতে এসেছে। এখন আমাদের রাস্তায় চলাও দায়। আমাদের পেশী শক্তি নেই। আমরা আইনের মাধ্যমেই সরকারের কাছে ন্যায়বিচার চাই। আমাদের নিরাপত্তা চাই ”

অন্যদিকে এক অভিযুক্ত সম্ভারু বলেন, “বাপ-দাদার সময় থেকে ওই জমিতে ছিলাম। ওরা জমি পাইছে, নিতে চাইলে নিক। তবে আমরা হুমকি দেইনি।”

তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ ফারুক বলেন, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *