আকস্মিক বন্যায় চলনবিল প্লাবিত : ডুবে গেছে ধানক্ষেত

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : 

আকস্মিক বন্যায় চলনবিলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় সরিষা পরবর্তী নাবিজাতের বোরো ধান ডুবে যাওয়ায় এ এলাকার কৃষকের কোরবানি ঈদের আনন্দ  ম্লান হয়ে গেছে। ঈদ কে সামনে রেখে মৌসুমী শ্রমিকেরা বাড়ি চলে যাওয়ার পরপরই আকস্মিক বন্যায় চলনবিলের তাড়াশ, উল্লাপাড়া,শাহজাদপুর, সিংড়া ও গুরুদাসপুর উপজেলার বিস্তৃর্ণ্  অঞ্চল তলিয়ে যায়। ধান ডুবে যাওয়ায় দিশেহারা কৃষক  ধান কাটার শ্রমিক না পেয়ে হারভেস্টার মেশিন এনে ধান কাটার চেষ্টা চালায়। কিন্তু পানি অব্যাহত বৃদ্ধি পাওয়ায় সে চেষ্টাও বিফলে যায়। নিরুপায় অনেককেই ঈদের আনন্দ ফেলেই নৌকা নিয়ে ডুবে যাওয়া ধান কাটতে দেখা গেছে। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এ অঞ্চলে প্রায় ৯০ ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। সরিষার জমিতে নাবি জাতের ব্রিধান-২৯ থাকায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র জানায়, উজানে ঢলগড়া পানি ও স্থানীয়ভাবে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে চলনবিল অঞ্চলে এ বন্যা দেখা দিয়েছে। চলনবিলে মাঝ দিয়ে প্রবাহিত ১৬ টি নদনদীর মধ্যে আত্রাই ও ভদ্রাবতী নদী দিয়ে উজানের ঢলের পানি নিম্নধারা যমুনায় গিয়ে মিশে যায়। কিন্তু বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ৫ দিন যমুনার পানি বিপৎসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হবে।

সরেজমিনে নাটোরের সিংড়া উপজেলার বিয়াস , গুরুদাসপুর উপজেলার রুহাই, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাগুড়াবিনোদ, উল্লাপাড়া উপজেলার রহিমপর ও শাহজাদপুর এলাকার পোতাজিয়া পয়েন্টে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটতে নেয়া হচ্ছে বিঘা প্রতি ৬ হাজার টাকা। কিন্তু পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে মেশিন ডুবে যাওয়ায় তা দিয়েও আর ধান কাটা সম্ভব হচ্ছেনা।

সিংড়ার বিয়াস গ্রামের বাসিন্দা রোজিনা আক্তার মিতু বলেন, অনেক কৃষক ধানকাটার শ্রমিক না পেয়ে ধানের আশা ছেড়ে দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ অর্ধেক  ভাগ দিয়ে  ধান ঘরে তুলছেন। একই রকম কথা বলেন, শাহজাদপুরের পোতাজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন বাচ্চু। রাউতারা বাঁধের কারণে কিছু রক্ষা হলেও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফসল তলিয়ে যাচ্ছে। তাড়াশ উপজেলার মাগুড়া মুকন্দ গ্রামে গিয়ে দেখা যায় গলা পানিতে নেমে কৃষক ধান কাটার চেষ্টা চালচ্ছেন। সেই সঙ্গে বৃষ্টি পানি তাদের দুর্ভোগ আরো বৃদ্ধি করেছে।

 সিংড়া-তাড়াশ সংযোগস্থলের রানী ভবানী ব্রিজের উজানে গিয়ে দেখা যায়, ভদ্রাবতী নদীর উপর নির্মিত জলকপাট উপচে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এমরান হোসেন বলেন, ঈদের আগে ২৪ ঘণ্টায় আত্রাইয়ে ৩ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেলেও ঈদ পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৩ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। তবে স্থানীয় ভাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় চলনবিলের নিম্নাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তাড়াশ কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সূত্র বলছে, আগামী ৫ দিন এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *