এনআইডি থেকে বঞ্চিত পর্দানশীন নারীরা, পঞ্চগড়ে ৩ দফা দাবিতে সমাবেশ

মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম,তেতূলিয়া প্রতিনিধিঃ পর্দানশীন নারীদের বিগত ১৬ বছর যাবত জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) না দেওয়ার প্রতিবাদে ঘন্টাব্যাপী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ১১টায় পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কে জেলার পর্দানশীন নারী সমাজের আয়োজনে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ আর এই দেশে পরিপূর্ণ পর্দা করতে গেলে পর্দানশীন নারীদের বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে মৌলিক ও নাগরিক অধিকার আটকে রেখে ছবি তুলতে ও চেহারা দেখাতে বাধ্য করা হচ্ছে। আজ পরিস্থিতি আমাদের বাধ্য করছে রাস্তায় নামতে। এখনো অসংখ্য পর্দানশীন নারী জাতীয় পরিচয়পত্র পাননি। জন্মসূত্রে বাংলাদেশী হলেও শুধুমাত্র পরিপূর্ণ পর্দা করার কারণে এদেশের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে।

বিগত ১৬ বছর যাবৎ জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সাবেক কতিপয় স্বৈরাচারী কর্মকর্তা শুধুমাত্র মুখচ্ছবি না তোলার অজুহাতে পর্দানশীন নারীদের নাগরিকত্ব আটকে রেখেছে। এতে বিরম্বনার শিকার হতে হচ্ছে আমাদের। ব্যাংক থেকে লোন তুলতে গেলে, বাসা-বাড়ি ভাড়া নিতে গেলে, ওয়ারিশন সূত্রে প্রাপ্ত জমি বিক্রি করতে গেলে, বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করাতে গেলে, জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া এসব সেবা থেকে বঞ্চিতের শিকার হতে হচ্ছে।

বক্তারা বলেন, একটি বিষয়ে আমাদের সবার জানার প্রয়োজন একজন নারী মুখমন্ডলসহ ছবি তুললে ২টি গুনাহ হয়। একটি ছবি তোলার, অন্যটি বেপর্দা হওয়ার গুনাহ। আবার এই ছবিটি যতজন পুরুষ দেখবে বেপর্দা হওয়ার গুনাহ তত বাড়তেই থাকবে। এমন কি মৃত্যুর পরও ঐ ছবির কারণে বেপর্দার গুনাহ জারী থাকবে। আমরা সেই গুনাহ থেকে বাঁচতে চাই।

বক্তারা আরও বলেন, মানুষের মুখের ছবি পরিবর্তনশীল বয়সের সাথে সাথে মানুষের চেহারার দৃশ্য পরিবর্তন হয়। তাই আমরা বলতে চাই মুখচ্ছবি পরিচয় যাচাইয়ের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম নয়। ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে মানুষের পরিচয় জানা যায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর যুগে ছবির অপব্যবহার অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এ কারণে সমাজে পচন ধরেছে। যেখানে ফিঙ্গারপ্রিন্টের মাধ্যমে পরিচয় যাচাই করে হাজিরা নিশ্চিত করা হয়। অফিসগুলোতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা গেলে পর্দানশীন মহিলাদের পরিচয় যাচাইয়ের জন্য কেন মুখ খুলে বেপর্দা হতে হবে।

সমাবেশে ভুক্তভোগী পর্দানশীন নারীরা যেসব দাবিসমূহ পেশ করেন তা হল বিগত ১৬ বছরে যাবত যে সমস্ত নির্বাচন কমিশনার (ইসি) কর্মকর্তা পর্দানশীন নারীদের নাগরিকত্ব আটকে রেখে মানবাধিকার বঞ্চিত করেছে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা, পর্দানশীন নারীদের ধর্মীয় ও প্রাইভেসির অধিকার অক্ষুন্য রেখে অবিলম্বে এনআইডি ও শিক্ষার অধিকার প্রদান করা ও পর্দানশীন নারীদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়ার সময় পুরুষ নয় নারী সহকারী বাধ্যতামূলক রাখতে হবে।

এসময় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মুসলিম রাইটস ফাউন্ডেশন সদস্য মারজিয়া ইসলাম, আটোয়ারি শিক্ষক কিতাব খানা শামছুন্নেহার, সোহানা বেগম, মমতাজ বেগম প্রমূখ।

সমাবেশ শেষে ৩ দফা দাবি সমুহের স্মারকলিপি স্থানীয় নির্বাচন কমিশনারের মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও জেলা শিক্ষা অফিসার কে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। ৩ দফা দাবি না মানা হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দেন পর্দানশীন নারীরা।

মুহম্মদ তরিকুল ইসলাম।।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *