মোরেলগঞ্জে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃ-ত্যু: আত্মহ-ত্যা নাকি পরিকল্পিত হ-ত্যাকাণ্ড

শেখ সাইফুল ইসলাম কবির,

সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার:বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পৌর শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বয়রাতলা এলাকায় এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। বুধবার (২২ জানুয়ারি) ভোরে মোসাম্মৎ উর্মি আক্তার তানিয়া (৩০)-এর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে মোরেলগঞ্জ থানা পুলিশ।নিহত উর্মি ভাইজোড়া এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. সালেহ শাহ ও ফরিদা বেগমের মেয়ে এবং পৌর ৪ নং ওয়ার্ড বয়রাতলা এলাকার বাসিন্দা শিব্বির তালুকদারের স্ত্রী।নিহতের পরিবার জানায়, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উর্মি পরিবারের সঙ্গে সর্বশেষ কথা বলেন। ভোর সাড়ে ৬টায় তার বড় ভাসুর হিমু মৃত্যুর খবর জানালে উর্মির বাবা-মা ঘটনাস্থলে গিয়ে বরই গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মরদেহ দেখতে পান।তার গলায় কাপড় পেঁচানো অবস্থায় দেখা গেছে এবং তার পা মাটির সঙ্গে লেগে ছিল। গলায় পেঁচানো কাপড়টি একটি বরইগাছের মগডালে বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়। এছাড়া ঘটনাস্থলে একটি প্লাস্টিকের চেয়ার পড়ে থাকতে দেখা গেছে। প্রাথমিক সুরতহাল দেখে নিহতের পরিবার এটিকে আত্মহত্যা নয়, বরং হত্যাকাণ্ড হিসেবে সন্দেহ করছে।নিহতের পরিবার আরও জানান, চার মাস বয়সী সন্তানের মা উর্মি তার বেকার ও মাদকাসক্ত স্বামী শিব্বির তালুকদারের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার ছিলেন। নিহতের ছোট ভাই মো. নাইম বলেন, “আমার বোন আত্মহত্যা করেনি; তাকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে।” তিনি এই ঘটনার সঠিক তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।উর্মির ফুফাতো ভাই মিলন বলেন, “উর্মি বাগেরহাট পিসি কলেজ থেকে বিএ পাশ করেছিলেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরির লোভ দেখিয়ে এবং চক্রান্ত করে হিমু তাকে জোরপূর্বক তার মাদকাসাক্ত ভাই শিব্বিরের সঙ্গে বিয়ে দেন। বিয়ের পর উর্মি জানতে পারেন, শিব্বির নেশাগ্রস্ত। তাকে এক সময় পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখা হয়েছিল।”এছাড়া, উর্মির ভাসুরের স্ত্রী রাজিয়া বেগমের সঙ্গেও তার মনোমালিন্য ছিল বলে নিহতের পরিবার থেকে জানা যায়।
মোরেলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, “প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা মনে হলেও পরিবারের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। নিহতের স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।”
উর্মির মৃত্যুতে তার বাবার বাড়ি এলাকায় স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। তারা আরও জানান, মোরেলগঞ্জে নারীদের প্রতি সহিংসতা এবং আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে, যা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
বিশ্লেষকদের মতে, এমন ঘটনার পেছনে নারীদের প্রতি সহিংসতা, আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা এবং সামাজিক অবহেলা বড় কারণ। তারা নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা কামনা করেন।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *