মুন্সীগঞ্জে যুবদল নেতা শান্ত হ-ত্যা মামলা নিয়ে নানা প্রশ্ন

লিটন মাহমুদ,
মুন্সীগঞ্জে যুবদল নেতা শান্ত হত্যা না দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে এই নিয়ে ঝট খুলেনি। মামলায় একজনকে আটকের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু মেডিকেল রিপোর্টে হত্যার কোন আলামত পাওয়া যায়নি। শান্ত নিহতকে কেন্দ্র করে দুইটি পক্ষ তৈরি হয়েছে। মামলাও হয়েছে দুইটি।
মেডিকেল রিপোর্টে শান্ত মৃত্যুবরনের ঘটনায় হত্যার কোন আলামত না থাকায় পুলিশ নিশ্চুপ হয়ে যায়। এরপর হত্যা দাবি করে মুন্সীগঞ্জ শহরে শান্তকে হত্যা করার দাবি তুলে শান্ত’র পরিবার ও একটি পক্ষ মিছিল সমাবেশ করলে পরদিন পুলিশ স্পিডবোট চালককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।
এদিকে শান্ত’র মৃত্যুবরন নিয়ে মুন্সীগঞ্জ থানায় দুইটি মামলা হয়েছে।
একটি মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ১ নভেম্বর রাত ৯ টার দিকে ঢাকার সদরঘাট থেকে শান্ত, কিবরিয়া মিজি, শাহাদাত প্রধানসহ ৮ জন স্পিডবোট দিয়ে মুন্সীগঞ্জের মেঘনার আধারায় আসছিলেন। স্পিডবোটটি রাত সোয়া ১০ টার দিকে মেঘনা নদীর জাজিরা-বকচর এলাকার পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে একটি মাছ ধরার ট্রলার তাদের স্পিডবোটকে সজোরে ধাক্কা দিলে স্পিডবোটটির একপাশ ভেঙ্গে তলিয়ে যায়। এ সময় শান্ত সরকার, শামীম, মিন্টু ও কিবরিয়া মিজি গুরুতর আহত হয়।
তাদেরকে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে আনা হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ঢাকায় রেফার করে। পরে ১ নভেম্বর দিবাগত রাত দেড়টায় ঢাকার স্কয়ার হসপিটালে শান্ত সরকার মারা যায়। গত ১০ নভেম্বর মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় এই মামলাটি দায়ের করেন বকচর গ্রামের শামীম। মামলা নং ১৩।
এদিক, গত বছরের ৬ নভেম্বর আরেকটি মামলা করেন নিহত শান্ত’র ছোট ভাই মামুন সরকার। মুন্সীগঞ্জ থানার মামলা নম্বর ৮। মামলায় স্পিডবোট চালক টিপু, শাহাদাত প্রধান, কিবরিয়া মিজি, এছাক আলী, সাইফুল, শামীম, জাফর ও নাছির নামে ৮ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়।
এ মামলায় বলা হয়, ১ নভেম্বর রাত ৭টা ৩৫ মিনিটে মুন্সীগঞ্জ সদরের মুক্তারপুর পুরাতন ফেরিঘাট থেকে আসামিদের সাথে শান্ত স্পিডবোট দিয়ে ঢাকার সদরঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রাত ৭টা ৩৫ মিনিট থেকে রাত ১০ টা ১৩ মিনিটের মধ্যে সদরের চিতলিয়া বাজারের দক্ষিণ পাশের জমিতে নিয়ে শান্তকে হত্যা করা হয়।
শান্ত’র মেডিকেল পরীক্ষায় হত্যার কোন আলামত না পাওয়া গেলে আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশ নিরব থাকে।
এ ঘটনায় শান্ত’র হত্যা মামলায় স্পিডবোট চালক ছাড়া সবাই উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেয়।
পরবর্তীতে গত ১৭ ডিসেম্বর সকালে মুন্সীগঞ্জ প্রেসক্লাব ও সুপার মার্কেট এলাকায় যুবদল নেতা আবু ইলিয়াস শান্ত হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার এবং বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী।
এই কর্মসূচির দিন রাতেই পুলিশ শান্ত হত্যা মামলার প্রধান আসামি টিপু মোল্লাকে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে। পরদিন টিপুকে পুলিশ রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠায়।
মেডিকেল প্রতিবেদনে হত্যার কোন আলামত না থাকলেও স্থানীয় বিএনপি এই ঘটনা নিয়ে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
শান্ত হত্যা মামলার আসামিদের দাবি, শান্তকে হত্যা করা হয়নি। এটা একটা দুর্ঘটনা। এই দুর্ঘটনায় তারাও রক্তাক্ত আহত হয়েছেন এবং হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। একটি পক্ষ তাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে সুবিধা ও হয়রানি করছেন বলে তাদের দাবি।
এ ব্যাপারে শান্ত হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই সাদ্দাম মোল্লা বলেন, পোস্টপোর্টেম রিপোর্টে রোড ট্রাফিক (আর টি) এসেছে, অর্থাৎ রোড দুর্ঘটনায় কারণ মৃত্যুরকারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। মামলাটির তদন্ত চলছে।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *