রাজশাহী অঞ্চলে ১৪ লাখ তালগাছের হদিস নাই

আলিফ হোসেন,তানোরঃ
রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চল প্রচন্ড বজ্রপাত ও খরাপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত।ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলে বজ্রপাতে প্রাণহানি কমাতে তালগাছ রোপণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে।
প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ কোটি ২০ লাখ টাকা। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় এসব তালবীজ রোপণ করার কথা। সেই অনুযায়ী এতদিনে তালগাছ মাটি ছেড়ে বেশ বড় হওয়ার কথা। কিন্তু প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তালগাছ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে খাতা-কলমে প্রকল্প ঠিকঠাক থাকলেও বাস্তবে প্রায় অস্তিত্বহীন। কাজির গরু কেতাবে আছে,গোয়ালে নেই।
জানা গেছে, ওই সময় বিএমডিএর চেয়ারম্যান ছিলেন নওগাঁ-৩ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক সাংসদ আকরাম হোসেন চৌধুরী। ওই সময় তার ঘনিষ্ঠ ঠিকাদাররাই তালবীজ রোপণের কাজ পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায় রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ১৪ লাখ তালবীজ লাগানোর কথা। দুই কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক ও খালের কাছে রোপণ করার কথা এসব বীজ। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, এক বছর পাহারা ও পরিচর্যা শেষে তালগাছ বুঝে নেওয়ার কথা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বিএমডিএর।
সরেজমিন কাজের মান দেখে খুশি হয়ে বিলও পরিশোধ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের। কিন্তু এখন সেসব গাছের অস্তিত্ব নেই।
জানা গেছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মির্জাপুর খাড়ির প্রথম সোলার থেকে বান্ধারা ক্রসড্যাম পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারে ১২ হাজার, সরমংলা খাড়ির বেইলি ব্রিজ থেকে জগপুর ব্রিজ খালের পাড় পর্যন্ত ৮ কিলোমিটারে ৪ হাজার এবং সরমংলা খাড়ির ভাসপুর মৌজার সীমানা থেকে সয়িলা মৌজা পর্যন্ত ৮ কিলোমিটারে ৪ হাজার তালবীজ রোপণ করার কথা। পুঠিয়া উপজেলার বিহারিপাড়া শাহবাজপুর কান্দ্রা থেকে বাড়ইপাড়া খালের পাড়ে ১৪ কিলোমিটারে ২০ হাজার, চারঘাটের জয়পুর বাজার থেকে তারাপুর শলুয়া বালাদিয়াড় পর্যন্ত খালের দুই পাড়ের ১০ কিলোমিটারে ২০ হাজার, তানোর উপজেলার জোহাখালি খাল-জুরানপুর থেকে চান্দুড়িয়া পর্যন্ত ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারে ২০ হাজার, কাঁকনহাট রেলগেট থেকে কুন্দলিয়া পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে ১৫ কিলোমিটারে ২০ হাজার তালবীজ রোপণ করার কথা।এছাড়াও পবা উপজেলার দর্শনপাড়া ইউনিয়নের (ইউপি) চকপ্রসাদপাড়া ক্রসড্যাম থেকে বাকশিমইল পর্যন্ত খাড়ির ধারে ২০ হাজার তালবীজ লাগানোর কথা।
কিন্ত্ত সরেজমিন বিভিন্ন উপজেলার প্রকল্প এলাকা ঘুরে শতকরা ১০ ভাগ গাছও চোখে পড়েনি। গোদাগাড়ির কাঁকনহাট রেলক্রসিং থেকে কুন্দলিয়া হয়ে মালমপাড়া পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে তালবীজ লাগানোর কথা ছিল। কিন্তু সড়কটিতে বাস্তবে হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া তালগাছ নেই।
স্থানীয়রা জানান, কোথাও কোথাও গর্ত খুঁড়ে তালবীজ লাগানো হয়েছিল। আবার কোথাও কোথাও না লাগিয়েই তড়িঘড়ি করে বীজ ফেলে পালিয়ে যান ঠিকাদার। ঠিকমতো বীজ না লাগানোর কারণে পবা উপজেলা দর্শনপাড়ার খাড়িধার এলাকায় ঠিকাদারের লোকজন গ্রামবাসীর তোপের মুখেও পড়েছিল।
বরেন্দ্র এলাকায় তালবীজ রোপণ কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক ও বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম বলেন, এই প্রকল্পের সব তালগাছ নেই। কোথায় আছে আর কোথায় নেই তাও বলা যাচ্ছে না। তবে বিভিন্ন উপজেলার কমিটি গণনা শেষে প্রতিবেদন দেওয়ার পর বিল পেয়েছেন ঠিকাদাররা। শর্ত ছিল, রোপণ করা চারার ৫০ শতাংশ গাছ না পেলে বিল পাবেন না ঠিকাদার। সেই হিসাবে ৮১ জন ঠিকাদারের মধ্যে বিল পাননি ১৩ জন। এ কারণে কিছু টাকা বেঁচে গিয়েছিল। মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়াতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তা আর হয়নি।

Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *