November 14, 2024, 4:35 pm
এম এ আলিম রিপন ঃ ধর্ষণ মামলা প্রত্যাহার না করায় বাদীর হাতে অস্ত্র দিয়ে পুলিশে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আসামীর পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে। পাবনার সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রামে সোমবার সন্ধ্যা ৭টা দিকে এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, পাবনার সুজানগর উপজেলার নাজিরগঞ্জ ইউনিয়নের উদয়পুর গ্রামের বাসিন্দা সোবাহান মল্লিক পেশায় রিক্সা চালক তার ৯ বছরের একমাত্র মেয়ে এবং স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার সাভারে স্থানীয় জহির খানের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করে রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। এমতাবস্থায় গত ৩০-১২-২০২২ তারিখে ওই ভাড়া বাসায় তার সুজানগর উদয়পুর গ্রামের বাড়ির পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা ও পূর্ব পরিচিত মোশারফ হোসেন ওরফে মন্দির মন্ডলের ছেলে মো.আলমগীর হোসেন(৩০)বেড়াতে যায়। এর মধ্যে ১/১২/২০২২ তারিখ রাত অনুমান ০৮.৩০ দিকে মেয়েটির হত দরিদ্র পিতা রিক্সা চালানোর জন্য বাসার বাহিরে চলে যায় এবং তার মা লাভলী খাতুন বাসার রান্না কাজে রান্না ঘরে থাকায় তার ৯ বছরের মেয়েকে জোরপূর্বক বসত ঘরের সামনের ফাকা রুমের ভিতরে নিয়ে মেয়েটিকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত আলমগীর হোসেন। পরে বিষয়টি বুঝতে পেরে পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা প্রদান করে মেয়েটিকে। ধর্ষণের এ ঘটনায় মেয়েটির পিতা সোবাহান মল্লিক গত ৩-১২-২০২২ তারিখে সাভার মডেল থানায় মো.আলমগীর হোসেনকে অভিযুক্ত করে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নং-১১। এরপর মামলা দায়েরের ৩ দিনের দিনের মধ্যে একমাত্র পলাতক আসামী আলমগীর হোসেনকে র্যাব গ্রেফতার করে পুলিশের নিকট হস্তান্তর করলে সাভার মডেল থানা পুলিশ তাকে আদালতে প্রেরন করে। এবং জামিন না হওয়ায় প্রায় ২ বছর ধরে এখন পর্যন্ত আসামী জেল হাজতে রয়েছে। এরপর ঢাকা থেকে এসে মেয়েটির পরিবার তার নানা বাড়ী আতাইকুলার কাঁচারপুর গ্রামে বসবাস করতে শুরু করে। এমতাবস্থায় ধর্ষণ মামলার বাদী মেয়েটির পিতা সোবাহান মল্লিককে মামলা প্রত্যাহারের জন্য বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন করতে থাকে অভিযুক্ত ধর্ষক আলমগীরের পরিবারের লোকজন। এরই মধ্যে অসহায় মেয়েটির পিতাকে সুজানগরের নাজিরগঞ্জের স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে শালিস মিমাংসার কথা বলে মেয়েটির পিতাকে আতাইকুলা থেকে ডেকে নিয়ে এসে অভিযুক্ত ধর্ষকের পিতার উদয়পুর মোড়ের মুদি দোকানে আটকে রেখে মারপিট করে হাতে একটি রিভালবার ও ২ রাউন্ড গুলিসহ ধরিয়ে দিয়ে পুলিশকে খবর দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে পুলিশ মেয়েটির বাবাকে অস্ত্রসহ আটক করে থানায় নিয়ে গিয়ে অস্ত্র মামলায় মঙ্গলবার পাবনা আদালতে পাঠিয়ে দেয় । ধর্ষণের শিকার মেয়েটির মা লাভলী খাতুন কান্না জড়িত কন্ঠে মঙ্গলবার জানান, তার মেয়েকে ধর্ষণের মামলার বুধবার ১৩ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে ঢাকার আদালতে শুনানীর দিন ধার্য রয়েছে। এর মধ্যে আতাইকুলা আমার বাবার বাড়ি থেকে ধর্ষক আলমগীরের চাচা মিজান মোবাইল ফোনে আমার স্বামীকে মামলাটি আপস মিমাংসার কথা বলে সোমবার বিকাল ৩টার দিকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে এদিন রাতে শুনি আমার স্বামীকে অস্ত্র হাতে দিয়ে ধর্ষক আলমগীরের পিতার দোকানের ভেতর থেকে পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত করে আমার স্বামীর হাতে কে অস্ত্র দিল,এ অস্ত্র কোথা থেকে এলো এবং কারা কারা এ অস্ত্র যোগান দিয়েছে তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন পাশাপাশি তার নির্দোষ স্বামীর মুক্তির দাবি জানান। এ বিষয়ে সুজানগর থানার ওসি গোলাম মোস্তফা মঙ্গলবার জানান স্থানীয় কতিপয় কয়েকজন ব্যক্তি পুলিশকে ফোন দিয়ে অস্ত্রসহ একজনকে ধরা হয়েছে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অস্ত্রসহ সোবাহানকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে। পরে পুলিশ জানতে পারে যে দোকান থেকে অস্ত্রসহ সোবাহান মল্লিক নামক ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করে সে দোকানের মালিক ধর্ষণের অভিযোগে বর্তমানে জেল হাজতে থাকা আলমগীরের পিতা মোশারফ হোসেন ওরফে মন্দির মন্ডলের। আর ওই ধর্ষণ মামলার বাদী সোমবার অস্ত্রসহ আটক হওয়া সোবাহান মল্লিক। এ সময় তিনি আরো বলেন অস্ত্র উদ্ধারের পেছনে অন্য কোন কারণ রয়েছে কিনা এবং এর সাথে অন্য কারা কারা জড়িত রয়েছে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এর রহস্য উদঘাটন করতে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। এবং যারাই জড়িত থাক তাদের প্রত্যেককেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এদিকে ষড়যন্ত্রের শিকার হত দরিদ্র রিক্সা চালক সোবাহান মল্লিক যেন সঠিক বিচার পান এজন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট দাবি জানানোর পাশাপাশি তার মুক্তির দাবী জানিয়েছেন সুজানগরবাসী।
এম এ আলিম রিপন
সুজানগর(পাবনা)প্রতিনিধি।