November 14, 2024, 6:36 am

বিজ্ঞপ্তি :
বিশেষ সতর্কীকরন - "নতুন বাজার পত্রিকায়" প্রকাশিত সকল সংবাদের দ্বায়ভার সম্পুর্ন প্রতিনিধি ও লেখকের। আমরা আমাদের প্রতিনিধি ও লেখকের চিন্তা মতামতের প্রতি সম্পুর্ন শ্রদ্ধাশীল। অনেক সময় প্রকাশিত সংবাদের সাথে মাধ্যমটির সম্পাদকীয় নীতির মিল নাও থাকতে পারে। তাই যেকোনো প্রকাশিত সংবাদের জন্য অত্র পত্রিকা দায়ী নহে। নতুন বাজার পত্রিকা- বাংলাদেশের সমস্ত জেলা, উপজেলা, ক্যাম্পাস ও প্রবাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! বিস্তারিত: ০১৭১২৯০৪৫২৬/০১৯১১১৬১৩৯৩
শিরোনাম :
বিরামপুরে ট্রাক চাপায় সাংবাদিক আহত “ঘাতক ট্রাককে আটকাতে গিয়ে পথচারী হুদার মৃ-ত্যু ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব সংস্কারের প্রয়োজনে ১৫১ সদস্য বিশিষ্ঠ কমিটি ঘোষণা চাকরি দেওয়ার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সুজানগরে এক প্রতারক গ্রেফতার লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলায় বিএসটিআই এর মোবাইল কোর্ট অভিযানে ৩০,০০০/- টাকা জরিমানা উপজেলা ক্লাইমেট স্মার্ট জাস্টিস ফোরামের অর্ধ বার্ষিক সভা অনুষ্ঠিত র‌্যাব-১২ এবং র‌্যাব-১ এর যৌথ অভিযানে পলাতক আসামি কামরুল ইসলাম তালুকদার ঢাকা হতে গ্রেফতার নেছারাবাদে সমবায় সমিতির পাওনা টাকার বিপরীতে দুই কোটি টাকার সম্পদ বায়না করে নেয়ার অভিযোগ নড়াইলে পৃথক অভিযানে চারজন গ্রেফতার লালমনিরহাটে পুলিশের মাসিক কল্যান সভা অনুষ্ঠিত যশোরে কানের দুলের জন্য শিশু হত্যা, মাদকাসক্ত নারী আটক 
নূর হোসেন দিবস ও কিছু কথা

নূর হোসেন দিবস ও কিছু কথা

লেখকঃ মোঃ হায়দার আলীঃ মহান ও নিবেদিত পেশা হিসেবে শিক্ষকতা সর্বজন স্বীকৃত। মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবেই মনে করা হয় শিক্ষকদের। পাঠদানে আত্ম-নিয়োগ, শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিহিত থাকা সুপ্ত মেধা জাগ্রত করা, দুঃস্থ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিজের অর্থ ব্যয়ে দেশ সেরা হিসেবে গড়ে তোলা শিক্ষকও দেশে বিরল নয়। এ জন্যই সমাজে শিক্ষকরা সবচেয়ে বেশি সম্মানিত, শিক্ষার্থীরাও যুগে যুগে স্মরণ রাখেন। পেশা হিসেবে শিক্ষকতা সর্বজন স্বীকৃত। মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবেই মনে করা হয় শিক্ষকদের। পাঠদানে আত্ম-নিয়োগ, শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিহিত থাকা সুপ্ত মেধা জাগ্রত করা, দুঃস্থ ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিজের অর্থ ব্যয়ে দেশ সেরা হিসেবে গড়ে তোলা শিক্ষকও দেশে বিরল নয়। আজ কেন? বেসরকারী শিক্ষক সমাজ অবহেলিত, লাঞ্চিত হচ্ছে, পুলিশ কর্মকর্তা ও শিক্ষা উপদেষ্টার পায়ে ধরে কাঁদতে হচ্ছে কেন ? বেসরকারী শিক্ষক সমাজ কেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকায় ২২ দিন লাখ লাখ শিক্ষক কর্মচারীগণ আন্দোলন করেছেন। দিন দিন যেন শিক্ষক সমাজের সম্মান তলানীতে নেমে যাচ্ছে, সরকার আসে সরকার যায় বেসরকরী শিক্ষক, কর্মচারীদের ভাগ্যের পরিবর্তন নাহি হয়। সাবার বেলায় ১৬ আনা আর বেসরকারী শিক্ষকদের বেলায় আনা। অবহেলিত বেসরকারী শিক্ষক সমাজের এব্যপারে লিখার জন্য বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত নিয়ে বসলাম, লেখাটি শেষ না হতেই চলে ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবস। টেলিভিশন, স্থানীয়, জাতীয়, অনলাইন পত্রিকা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নূর হোসেন কথা ও ছবি ভেসে আসছে, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তাই লিখার থিম পরিবর্তন করে এ বিষয়ে আল্লাহ নাম নিয়ে লিখা শুরু করলাম।

মানব জাতি মানব সভ্যতার ধারাবাহিক ইতিহাসের ধারায় এমন কিছু দুঃখজনক, বেদনাদায়ক, হৃদয় গ্রাহী ঘটনা সংযোজিত হয়েছে যা অধ্যায়ন করলে মন শুধু ব্যথিত ও মর্মহত হয় । আর এ সব ঘটনা সংঘটনের নায়কদের উদ্দেশ্যে মন থেকে বেরিয়ে আসে নানা ধিক্কারজনক উক্তি। ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায় এমন কিছু মহাস্থানের জীবন এই পূথিবীতে অকালে ঝরে গেছে, যাদের এই অপমৃত্য বিবেকই কোন অবস্থাতেই মেনে নিতে পারে না । মানব জাতি ও মানব সভ্যতার চিরকল্যানকামী এ রকম এক তরুণ নক্ষত্রের নাম “নূর হোসেন”।

গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে নূর হোসেন একটি অবিস্মরণীয় নাম। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর এদিনে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের এক লড়াকু সৈনিক হিসেবে তিনি রাজপথে নেমে এসেছিলেন বুকে পিঠে ’গণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ স্লোগান লিখে। গণতন্ত্রের দাবিতে সোচ্চার এই যুবকের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল স্বৈরাচারের বন্দুক। স্বৈরাচারের বুলেট বুকে বরণ করে নিয়েছিলেন নূর হোসেন, তাই তো বেঁছে আছে সবার মাঝে, নূর হোসেনেরা মরে না তারা বেঁছে থাকে কোটি কোটি মানুষের মাঝে।”

আজ ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস। গণতন্ত্রের জন্য নূর হোসেনের প্রাণ দেওয়ার তিন যুগ পরও গণতন্ত্রকামী মানুষকে রাস্তায় নামতে হয়েছে। সহস্র প্রাণের বিনিময়ে আরেক স্বৈরশাসনের অবসান ঘটাতে হয়েছে। এখনও গনতন্ত্র ফিরে আসেনি।
ঢাকার নারিন্দায় এক অটোরিকশাচালকের ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন এই নূর হোসেন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া শেষে নূর হোসেন গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ নেন।
জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন ১৯৮৭ সালের এই দিনে নূর হোসেন বুকে ও পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ স্লোগান লিখে রাজপথে বের হয়েছিলেন। সেদিন পল্টন এলাকার ‘জিরো পয়েন্ট’ অতিক্রম করার সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছুড়ে মিছিলটিকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তখন নূর হোসেনসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

নূর হোসেনের সেদিনের আত্মত্যাগ মানুষের মনকে নাড়া দিয়েছিল। বুকে-পিঠের স্লোগান সংবলিত তার শরীর হয়ে উঠেছিল আন্দোলনের প্রতীক। ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আরও রক্তপাতের মধ্য দিয়ে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সরকারের পতন ঘটে। নূর হোসেন শহীদ হওয়ার পর মাস না পেরোতেই ৬ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন এরশাদ। এর তিন মাস পর তিনি জাতীয় সংসদের আরেকটি নির্বাচনের আয়োজন করেন। ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে বড় দলগুলো অংশ না নেওয়ায় ওই সংসদ রাজনৈতিক বৈধতা পায়নি।

এরশাদ এরপরও ক্ষমতায় টিকে ছিলেন পৌনে তিন বছর। ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে ঘটনাবহুল একটি দশক শেষ হয়। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশ নেয়। বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে। যে জায়গাটিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন নূর হোসেন, সেই জিরো পয়েন্ট এখন শহীদ নূর হোসেন চত্বর।
বিএনপি দিনটি পালন করে ‘ঐতিহাসিক ১০ নভেম্বর দিবস’ হিসেবে।

এক শ্রমজীবী নিম্নবিত্ত পরিবারের এই তরুণ কী ভেবে সেদিন নিজের শরীরকে জীবন্ত পোস্টার করে তুলেছিলেন? কে তার শরীরে লিখে দিয়েছিল এই শ্লোগান? গুলিবিদ্ধ নূর হোসেনকে সেদিন ঢাকার শাহবাগের পুলিশ কন্ট্রোলরুমের যে সেলে ফেলে রাখা হয়েছিল, সেখানে তখন রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে আটক ছিলেন আরও অনেকে। তাদের মধ্যে ছিলেন লেখক, বিবিসির মোয়াজ্জেম হোসেনও।

নূর হোসেনের পৈতৃক বাড়ি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার ঝাটিবুনিয়া গ্রামে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তাঁর পরিবার স্থান পরিবর্তন করে ঢাকার ৭৯/১ বনগ্রাম রোডে আসে। পিতা মুজিবুর রহমান ছিলেন পেশায় রিকশা চালক। তাঁর মায়ের নাম মরিয়ম বিবি। অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কারণে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর নূর হোসেন পড়াশোনা বন্ধ করে গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। নূর হোসেন আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি ঢাকা জেলা আওয়ামী মটর চালক লীগের বনগ্রাম শাখার প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন।

নূর হোসেনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর নামে স্মারক ডাকটিকেট প্রকাশ করা হয়েছে। ১৯৯১ সালে তার চতুর্থ মৃত্যুবাষির্কী উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রথম দুই টাকা মূল্যের স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়। প্রতি বছরের ১০ই নভেম্বর বাংলাদেশে ” নূর হোসেন দিবস ” হিসেবে পালন করা হয়। এছাড়া তিনি যে স্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত হন, তাঁর নামানুসারে সেই জিরো পয়েন্টের নামকরণ করা হয়েছে নূর হোসেন চত্বর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ নূর হোসেনের একটি মুরাল রয়েছে। ১০ই নভেম্বর তাঁর মৃত্যুর কিছু সময় পূর্বে তোলা তাঁর গায়ে লেখাযুক্ত আন্দোলনরত অবস্থার ছবিটি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।

নতুন প্রজন্মের সংগ্রামী মানুষেরা :দেশ এবং কাল নির্বিশেষে বর্তমান মুহূর্তের পৃথিবীর সকল নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষ। মহৎ ঐতিহ্যের এমন প্রতীকের মৃত্যু নেই। মৃত্যু থাকে না। সেই মহৎ ঐতিহ্যকে আমাদের ক্রমাধিকভাবে অনুসন্ধান করতে হবে; আবিষ্কার করতে হবে এবং ঐতিহ্যের সেই সম্ভবের অপরাজেয় শক্তির বোধে আমাদের উদ্বুদ্ধ হতে হবে। আর কোন হত্যা, গুম, নির্যাতন নয়, প্রকৃত গণতন্ত্র ফিরে আসুক এপ্রত্যশায় দেশের কোটি মানুষ তীর্থের কাকের ন্যয় চেয়ে আছেন।

লেখক : মোঃ হায়দার আলী।।

Please Share This Post in Your Social Media






© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Design & Developed BY AMS IT BD